দিনব্যাপী নানাবিধ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগোতে ‘অ্যাকাউন্টিং ডে’ সর্বপ্রথম পালন করা হয়। পরে অন্যান্য দেশের হিসাববিদরাও এ দিবসটি পালন করা শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য যাত্রা শুরু হওয়া এআইএস বিজনেস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স ক্লাবের উদ্যোগে এবং একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।
আজ সোমবার সকাল সোয়া নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে নয়টায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়, যা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় অনুষদের সামনে এসে সমাপ্ত হয়। এরপর সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করে।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিলা হোসাইন। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সহকারী অধ্যাপক মাহাদী হাসান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাঈফ মো. মুনতাকিমুল বারী চৌধুরী এবং একাউন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শুভ হাওলাদার।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসিসিএ’র বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার প্রমা তাপসী খান, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো.তারেক কামাল, হোসাফ গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার ও আইসিএমএবি’র কাউন্সিল মেম্বার এস এম জহির উদ্দিন হায়দার, হুদা ভাসী চৌধুরী এন্ড কোং চার্টার্ড একাউন্টেন্টসের এর পার্টনার এসকে মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ব্রাকের হেড অফ ইন্টারনাল অডিট প্রশান্ত সাহা ও সিমেনস হেলথকেয়ারের ডিজিএম শোভন কৃষ্ণ সাহা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত বিস্তৃত এবং বহুমাত্রিক। হিসাববিজ্ঞান শুধু সংখ্যা গণনার বিদ্যা নয়—এটি এখন প্রযুক্তি, ডেটা বিশ্লেষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ববিষয়ক জ্ঞানসমূহের সমন্বিত একটি আধুনিক বিদ্যায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন বৈশ্বিক ও ডিজিটাল কাঠামোর দিকে দ্রুত এগোচ্ছে; সেই সমাজে হিসাববিদদের দায়িত্ব শুধু আর্থিক হিসাব মেলানো নয়, বরং অর্থনীতি, সমাজ, পরিবেশ এবং সুশাসন—এই চার স্তম্ভের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখা।”
উপাচার্য আরও বলেন, স্থায়িত্ব হলো সঠিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মূল ধারণা, আর দেশ-সমাজ সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে দক্ষ হিসাববিদদের সহায়তায়। তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান আধুনিক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (SDGs), অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন—এসব বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করার জন্য। তাঁর মতে, শক্তিশালী ব্যালান্সশিট প্রদর্শনই হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণই এর প্রকৃত লক্ষ্য। তিনি বলেন, সমালোচনামূলক চিন্তা, যুক্তিবোধ, মানবিক মূল্যবোধ এবং আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের সমন্বয়—এই যুগে একজন দক্ষ হিসাববিদের অপরিহার্য গুণ। বক্তব্যের শেষাংশে তিনি অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপিত হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিবসটি এত আনুষ্ঠানিক ও বর্ণাঢ্য পরিবেশে পালিত হওয়ায় আমি সকলকে সাধুবাদ জানাই। হিসাববিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিসাববিদদের ভূমিকা অপরিহার্য। দেশব্যাপী চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। আমি আশা করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে দেশের নানা খাতে উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।”
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেছেন, “আজকের এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি অধ্যাপক বায়েস স্যারকে, যাঁর হাত ধরে এই ফ্যাকাল্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই ফ্যাকাল্টি ভবন থেকেই জাহাঙ্গীরনগরের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু। এই ভবনেই প্রথম উপাচার্যের প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জাহাঙ্গীরনগরে অপরিকল্পিত স্থাপনা। নিড-বেসড বিল্ডিং না করে আবাসিক ভবন তৈরি করা হয়েছে। অথচ বিজনেস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রুম সংকটে ভুগছেন। আশা করি, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন আবু সাঈফ মো. মুনতাকিমুল বারী চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উপলক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিদের একত্রিত হওয়া এ বিভাগের একাডেমিক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। শিক্ষা একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা যেমন শিক্ষার্থীদের শেখান, তেমনি শিক্ষার্থীদের থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়—এই পারস্পরিক শিক্ষার ধারাই বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রায়োগিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভবিষ্যতেও এমন শিক্ষামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিলা হোসাইন বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এ উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞ অতিথিদের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে তারা নিজেদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়। তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে—করপোরেট সেক্টর, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ফার্মসহ শীর্ষস্থানীয় পেশাগত পরিমণ্ডলে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড, বিতর্ক এবং নানা প্রতিযোগিতায়ও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভালো অবস্থান অর্জন করছে। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এআইএস বিজনেস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স ক্লাবের যাত্রা শুরু করেছে, যা গবেষণা ও পেশাগত উন্নয়নকে আরও শক্তিশালী করবে। বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক মাহাদী হাসানের সঞ্চালনায় একাউন্টিং পেশা এবং তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত নানাবিধ প্রশ্ন আগত বক্তাদের সাথে আলোচনা করা হয় এবং দুপুর দেড়টায় নেটওয়ার্কিং পর্বের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
দিনব্যাপী নানাবিধ আয়োজনের মধ্য দিয়ে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হয়েছে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস। ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়াগোতে ‘অ্যাকাউন্টিং ডে’ সর্বপ্রথম পালন করা হয়। পরে অন্যান্য দেশের হিসাববিদরাও এ দিবসটি পালন করা শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নব্য যাত্রা শুরু হওয়া এআইএস বিজনেস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স ক্লাবের উদ্যোগে এবং একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় এই আয়োজন সম্পন্ন হয়।
আজ সোমবার সকাল সোয়া নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। অনুষ্ঠানের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে নয়টায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়, যা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে পুনরায় অনুষদের সামনে এসে সমাপ্ত হয়। এরপর সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে অংশগ্রহণ করে।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাউন্টিং বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিলা হোসাইন। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ও সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন সহকারী অধ্যাপক মাহাদী হাসান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) আবু সাঈফ মো. মুনতাকিমুল বারী চৌধুরী এবং একাউন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শুভ হাওলাদার।
সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসিসিএ’র বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার প্রমা তাপসী খান, ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো.তারেক কামাল, হোসাফ গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার ও আইসিএমএবি’র কাউন্সিল মেম্বার এস এম জহির উদ্দিন হায়দার, হুদা ভাসী চৌধুরী এন্ড কোং চার্টার্ড একাউন্টেন্টসের এর পার্টনার এসকে মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ব্রাকের হেড অফ ইন্টারনাল অডিট প্রশান্ত সাহা ও সিমেনস হেলথকেয়ারের ডিজিএম শোভন কৃষ্ণ সাহা।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত বিস্তৃত এবং বহুমাত্রিক। হিসাববিজ্ঞান শুধু সংখ্যা গণনার বিদ্যা নয়—এটি এখন প্রযুক্তি, ডেটা বিশ্লেষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ববিষয়ক জ্ঞানসমূহের সমন্বিত একটি আধুনিক বিদ্যায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, “বিশ্ব এখন বৈশ্বিক ও ডিজিটাল কাঠামোর দিকে দ্রুত এগোচ্ছে; সেই সমাজে হিসাববিদদের দায়িত্ব শুধু আর্থিক হিসাব মেলানো নয়, বরং অর্থনীতি, সমাজ, পরিবেশ এবং সুশাসন—এই চার স্তম্ভের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখা।”
উপাচার্য আরও বলেন, স্থায়িত্ব হলো সঠিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার মূল ধারণা, আর দেশ-সমাজ সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে দক্ষ হিসাববিদদের সহায়তায়। তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানান আধুনিক প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার সিকিউরিটি, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (SDGs), অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন—এসব বিষয়ে গভীরভাবে জ্ঞান অর্জন করার জন্য। তাঁর মতে, শক্তিশালী ব্যালান্সশিট প্রদর্শনই হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য নয়, বরং একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণই এর প্রকৃত লক্ষ্য। তিনি বলেন, সমালোচনামূলক চিন্তা, যুক্তিবোধ, মানবিক মূল্যবোধ এবং আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের সমন্বয়—এই যুগে একজন দক্ষ হিসাববিদের অপরিহার্য গুণ। বক্তব্যের শেষাংশে তিনি অনুষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, “আজ বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপিত হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিবসটি এত আনুষ্ঠানিক ও বর্ণাঢ্য পরিবেশে পালিত হওয়ায় আমি সকলকে সাধুবাদ জানাই। হিসাববিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে হিসাববিদদের ভূমিকা অপরিহার্য। দেশব্যাপী চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টরা দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। আমি আশা করি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে দেশের নানা খাতে উন্নয়নের ধারাকে আরও গতিশীল করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।”
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেছেন, “আজকের এই দিনে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি অধ্যাপক বায়েস স্যারকে, যাঁর হাত ধরে এই ফ্যাকাল্টির যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই ফ্যাকাল্টি ভবন থেকেই জাহাঙ্গীরনগরের ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু। এই ভবনেই প্রথম উপাচার্যের প্রশাসনিক কার্যালয় ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জাহাঙ্গীরনগরে অপরিকল্পিত স্থাপনা। নিড-বেসড বিল্ডিং না করে আবাসিক ভবন তৈরি করা হয়েছে। অথচ বিজনেস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা রুম সংকটে ভুগছেন। আশা করি, এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন আবু সাঈফ মো. মুনতাকিমুল বারী চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উপলক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অতিথিদের একত্রিত হওয়া এ বিভাগের একাডেমিক পরিবেশকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। শিক্ষা একটি দ্বিমুখী প্রক্রিয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষকরা যেমন শিক্ষার্থীদের শেখান, তেমনি শিক্ষার্থীদের থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়—এই পারস্পরিক শিক্ষার ধারাই বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রায়োগিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভবিষ্যতেও এমন শিক্ষামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান তানজিলা হোসাইন বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক হিসাববিজ্ঞান দিবস উদযাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এ উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞ অতিথিদের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে তারা নিজেদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা গড়ে তুলতে পারে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম হয়। তিনি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা দেশজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে—করপোরেট সেক্টর, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ফার্মসহ শীর্ষস্থানীয় পেশাগত পরিমণ্ডলে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াড, বিতর্ক এবং নানা প্রতিযোগিতায়ও শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভালো অবস্থান অর্জন করছে। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এআইএস বিজনেস অ্যান্ড অ্যানালিটিক্স ক্লাবের যাত্রা শুরু করেছে, যা গবেষণা ও পেশাগত উন্নয়নকে আরও শক্তিশালী করবে। বক্তব্যের শেষাংশে তিনি বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক মাহাদী হাসানের সঞ্চালনায় একাউন্টিং পেশা এবং তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত নানাবিধ প্রশ্ন আগত বক্তাদের সাথে আলোচনা করা হয় এবং দুপুর দেড়টায় নেটওয়ার্কিং পর্বের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।