অবৈধ ব্যবসায়িক চক্রের কারণে সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা কার্যক্রম
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এ ধরনের দাম বৃদ্ধির জন্য আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলেছে, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আড়তদাররা বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে, যার ফলে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই সংস্থাটি নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় বাজার পর্যবেক্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে।
বাজার তদারকিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলায় অভিযান পরিচালনা করছেন। শনিবারও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে এসব তদারকি কার্যক্রম চালানো হয়।
ঢাকা মহানগরে ভোক্তা অধিদপ্তরের মোট ছয়টি দল বিভিন্ন কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে। সহকারী পরিচালক মো. আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি দল কারওয়ান বাজার ও বনানী কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনা করে। তাদের তদারকিতে উঠে আসে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের নানা তথ্য।
অবৈধ ফড়িয়াদের কারসাজি
কারওয়ান বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাত ১২টার দিকে বাজারে সবজির ট্রাক এসে পৌঁছায়। এরপর এসব সবজি অন্তত ৬ থেকে ৭ বার হাতবদল হয়, যা পাইকারি বিক্রির পর্যায়ে পণ্য পৌঁছাতে দেরি করে এবং দাম বেড়ে যায়। ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, কারওয়ান বাজারে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন অবৈধ ফড়িয়া ব্যবসায়ী সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
এদের বেশিরভাগের কোনো ব্যবসায়িক নিবন্ধন বা অনুমোদন নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, এই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
অভিযানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টতার দায়ে কারওয়ান বাজারে ৫ জনকে ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার প্রমাণও পাওয়া যায়।
বনানী কাঁচাবাজারের পরিস্থিতি
অন্যদিকে বনানী কাঁচাবাজারেও ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। তদন্তে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ পাওয়া দোকানগুলো অনেক ব্যবসায়ী নিজেরা পরিচালনা না করে অন্যদের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন। এই দোকানগুলো সাধারণত প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেওয়া হয়। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা এই ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত খরচ বহন করে থাকেন, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপানো হয়।
অভিযানে বনানী কাঁচাবাজারের ৮টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১ লাখ ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ধরনের কারসাজি বাজারে পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সাধারণ ভোক্তারা এর ফল ভোগ করছেন।
অন্যান্য অঞ্চলে অভিযান ও জরিমানা
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান শুধু ঢাকা মহানগরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দেশের ৩৬টি জেলায় ৪২টি দল গতকাল অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। মোট ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়, যা ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ।
সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এ ধরনের অভিযানগুলোতে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন
বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য সহ্য করতে পারছে না। আড়তদারদের কারসাজি এবং অবৈধ ফড়িয়াদের সক্রিয়তা বাজার ব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খল করে তুলেছে।
তাই, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু জরিমানা ও অভিযানের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন আরও কঠোর আইন ও নিয়মতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থা। পণ্য সরবরাহের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারি পর্যায়ে আরও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
সরকারের বিশেষ টাস্কফোর্স ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজারের ওপর আড়তদারদের অবৈধ নিয়ন্ত্রণ কমানো গেলে ভোক্তারা পণ্যের দাম নিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।
রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
অবৈধ ব্যবসায়িক চক্রের কারণে সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের জরিমানা কার্যক্রম
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে সবজি, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার মতো পণ্যের দাম বেড়ে চলেছে। এ ধরনের দাম বৃদ্ধির জন্য আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটি বলেছে, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আড়তদাররা বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখছে, যার ফলে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভোক্তা অধিদপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা এই সংস্থাটি নিয়মিত বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সম্প্রতি তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় বাজার পর্যবেক্ষণ করেছে এবং বিভিন্ন অনিয়ম ও কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে।
বাজার তদারকিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্কফোর্সসহ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত বাজার তদারকির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব বিভাগ ও জেলায় অভিযান পরিচালনা করছেন। শনিবারও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারে এসব তদারকি কার্যক্রম চালানো হয়।
ঢাকা মহানগরে ভোক্তা অধিদপ্তরের মোট ছয়টি দল বিভিন্ন কাঁচাবাজার পরিদর্শন করে। সহকারী পরিচালক মো. আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি দল কারওয়ান বাজার ও বনানী কাঁচাবাজারে অভিযান পরিচালনা করে। তাদের তদারকিতে উঠে আসে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও অবৈধ ব্যবসায়িক কার্যক্রমের নানা তথ্য।
অবৈধ ফড়িয়াদের কারসাজি
কারওয়ান বাজারে সবজির দাম বৃদ্ধি নিয়ে তদন্তে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাত ১২টার দিকে বাজারে সবজির ট্রাক এসে পৌঁছায়। এরপর এসব সবজি অন্তত ৬ থেকে ৭ বার হাতবদল হয়, যা পাইকারি বিক্রির পর্যায়ে পণ্য পৌঁছাতে দেরি করে এবং দাম বেড়ে যায়। ভোক্তা অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে আরও উঠে আসে, কারওয়ান বাজারে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন অবৈধ ফড়িয়া ব্যবসায়ী সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
এদের বেশিরভাগের কোনো ব্যবসায়িক নিবন্ধন বা অনুমোদন নেই। তাঁদের বিরুদ্ধে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিদপ্তর জানায়, এই ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
অভিযানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্টতার দায়ে কারওয়ান বাজারে ৫ জনকে ৮৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার প্রমাণও পাওয়া যায়।
বনানী কাঁচাবাজারের পরিস্থিতি
অন্যদিকে বনানী কাঁচাবাজারেও ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে। তদন্তে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বরাদ্দ পাওয়া দোকানগুলো অনেক ব্যবসায়ী নিজেরা পরিচালনা না করে অন্যদের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন। এই দোকানগুলো সাধারণত প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেওয়া হয়। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, কারণ খুচরা ব্যবসায়ীরা এই ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত খরচ বহন করে থাকেন, যা শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর চাপানো হয়।
অভিযানে বনানী কাঁচাবাজারের ৮টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১ লাখ ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ধরনের কারসাজি বাজারে পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং সাধারণ ভোক্তারা এর ফল ভোগ করছেন।
অন্যান্য অঞ্চলে অভিযান ও জরিমানা
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান শুধু ঢাকা মহানগরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দেশের ৩৬টি জেলায় ৪২টি দল গতকাল অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। মোট ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়, যা ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ।
সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত এ ধরনের অভিযানগুলোতে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন
বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষেরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য সহ্য করতে পারছে না। আড়তদারদের কারসাজি এবং অবৈধ ফড়িয়াদের সক্রিয়তা বাজার ব্যবস্থাকে বিশৃঙ্খল করে তুলেছে।
তাই, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু জরিমানা ও অভিযানের মাধ্যমে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন আরও কঠোর আইন ও নিয়মতান্ত্রিক বাজার ব্যবস্থা। পণ্য সরবরাহের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারি পর্যায়ে আরও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
সরকারের বিশেষ টাস্কফোর্স ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বাজারের ওপর আড়তদারদের অবৈধ নিয়ন্ত্রণ কমানো গেলে ভোক্তারা পণ্যের দাম নিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে।