পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার নিরীক্ষা বা সেফটি অডিট ছাড়াই রাজধানীর মতিঝিল থেকে উত্তরা রুটের মেট্রোরেল সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। তাই নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রোরেল তৈরিতে যে টাকা খরচ হয়েছে, তাতে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেট্রো হওয়ার কথা ছিল
দুর্ঘটনায় দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়, যে বিয়ারিং লাগিয়েছে সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না?
নিহত ব্যক্তির পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক নিশ্চয়তা
এছাড়াও মেট্রোরেল পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাথমিকভাবে চার কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে- ডিজাইন ফল্ট (নকশায় ত্রুটি) থাকতে পারে; সঠিকভাবে বসানো হয়নি, সঠিক সরঞ্জাম দেয়া হয়নি ও সঠিকভাবে পরামর্শককে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
তাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে পুরো মেট্রো রেললাইন অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রীকে চাকরি দেয়ার পাশাপাশি তার পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন ডিএমটিএল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার,(০৩ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গত ২৬ অক্টোবর মেট্রোরেলের পিলারে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর পরবর্তী ২৩ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
এর আগেও গত বছর ফার্মগেট এলাকায় একইভাবে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। তবে কোনো হতাহত হয়নি। এই দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
প্রেস বিফ্রিংয়ে মেট্রোরেল এমডি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করবো। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে।
ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাবো।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি।
যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এরমধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
দুর্ঘটনায় সম্পর্কে এমডি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনায় দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কিনা? যার আসলে বুঝে নেয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কিনা, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
নিরাপত্তা নিরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন: সংবাদ সম্মেলনে ডিএমটিসিএলর এমডি জানান, মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এসব কাজ বুঝে নেয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে। প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের।
তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারবো না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনও আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনও অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এজন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সবকটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো- যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে। ঢাকা মেট্রোরেলের লাইন-৬ তৈরিতে যে খরচ হয়েছে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেট্রো হওয়ার কথা ছিল। মেট্রোরেলের স্থায়িত্ব ১০০ বছর আর বিয়ারিং প্যাডের ৫০ বছর ধরা হলেও এক বছরের মাথায়ই কেন বিয়ারিং প্যাড নিয়ে আতঙ্কিত থাকতে হবে? প্রতিদিন সকালে কেন বিয়ারিং প্যাড চেক করতে হবে?’
তাড়াহুড়া করে চালু হয়েছিল: চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ডিএমটিসিএলর এমডি ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ৬-৯ মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল।
তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে- এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার পর ৬-৭ বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় ৩ বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রো রেললাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেয়া হয়েছিল, তা কীসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রো রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো- দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো- একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
নিহত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক নিশ্চিয়তা:
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রো রেলস্টশনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নিহত পথচারী আবুল কালাম আজাদের পরিবারের জন্য স্থায়ী সমাধান খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                                        
                        ইপেপার
                        
                                                	                            	জাতীয়
                           	                            	সারাদেশ
                           	                            	আন্তর্জাতিক
                           	                            	নগর-মহানগর
                           	                            	খেলা
                           	                            	বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
                           	                            	শিক্ষা
                           	                            	অর্থ-বাণিজ্য
                           	                            	সংস্কৃতি
                           	                            	ক্যাম্পাস
                           	                            	মিডিয়া
                           	                            	অপরাধ ও দুর্নীতি
                           	                            	রাজনীতি
                           	                            	শোক ও স্মরন
                           	                            	প্রবাস
                           	                            নারীর প্রতি সহিংসতা
                            বিনোদন
                                                                        	                            	সম্পাদকীয়
                           	                            	উপ-সম্পাদকীয়
                           	                            	মুক্ত আলোচনা
                           	                            	চিঠিপত্র
                           	                            	পাঠকের চিঠি
                           	                                            সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫
পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তার নিরীক্ষা বা সেফটি অডিট ছাড়াই রাজধানীর মতিঝিল থেকে উত্তরা রুটের মেট্রোরেল সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। তাই নতুন করে নিরাপত্তার নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রোরেল তৈরিতে যে টাকা খরচ হয়েছে, তাতে পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেট্রো হওয়ার কথা ছিল
দুর্ঘটনায় দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়, যে বিয়ারিং লাগিয়েছে সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কি না?
নিহত ব্যক্তির পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক নিশ্চয়তা
এছাড়াও মেট্রোরেল পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে দুর্ঘটনায় প্রাথমিকভাবে চার কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে- ডিজাইন ফল্ট (নকশায় ত্রুটি) থাকতে পারে; সঠিকভাবে বসানো হয়নি, সঠিক সরঞ্জাম দেয়া হয়নি ও সঠিকভাবে পরামর্শককে বুঝিয়ে দেয়া হয়নি।
তাই ভবিষ্যতের নিরাপত্তার জন্য থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে পুরো মেট্রো রেললাইন অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রীকে চাকরি দেয়ার পাশাপাশি তার পরিবারকে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন ডিএমটিএল কর্তৃপক্ষ।
সোমবার,(০৩ নভেম্বর ২০২৫) রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয়ের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় গত ২৬ অক্টোবর মেট্রোরেলের পিলারে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারীর মৃত্যু হয়। এরপর পরবর্তী ২৩ ঘণ্টার বেশি সময় শাহবাগ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ ছিল।
এর আগেও গত বছর ফার্মগেট এলাকায় একইভাবে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। তবে কোনো হতাহত হয়নি। এই দুর্ঘটনার সার্বিক বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
প্রেস বিফ্রিংয়ে মেট্রোরেল এমডি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মেট্রোরেলের আগে সেফটি অডিট হয়নি। তাই সেফটি অডিট করতে চাইছি। যত দ্রুত করা যায়, সেটা আমরা করবো। থার্ড পার্টিকে (তৃতীয় পক্ষ) দিয়ে এই অডিট করানো হবে।
ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়েই করানো হবে। আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগির টেন্ডারের প্রক্রিয়ায় যাবো।
বিয়ারিং প্যাড পড়ে যাওয়ার পর এগুলোর নিরাপত্তা সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস নয়। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে, ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে, সেটা বলতে পারি, ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেয়ার কথা ছিল, সেটা বসানো হয়নি।
যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এরমধ্যে কোনো একটা কারণেও হতে পারে।’
দুর্ঘটনায় সম্পর্কে এমডি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনায় দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের নয়। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, সেটি বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কিনা? যার আসলে বুঝে নেয়ার দায়িত্ব ছিল, সে বুঝে নিয়েছে কিনা, সেগুলো এখন দেখতে হবে।’
নিরাপত্তা নিরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন: সংবাদ সম্মেলনে ডিএমটিসিএলর এমডি জানান, মেট্রোরেল চালুর আগে নিরাপত্তার পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা (সেফটি অডিট) ছাড়াই যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকার মেট্রোরেলের। এসব কাজ বুঝে নেয়ার জন্য হাজার কোটি টাকায় বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করা আছে। প্রথম ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেবেন পরামর্শক। আমাদের বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্ব পরামর্শকদের।
তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে, সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারবো না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট আছে। ফলে সেটা এখনও আমরা বুঝে নিইনি।’
ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল, ওই অংশের ত্রুটি সারিয়ে দেয়ার সময়সীমা (ডিফেক্ট লায়াবেলিটি) গত জুন পর্যন্ত ছিল। কিন্তু ডিএমটিসিএল তাদের এই সময়সীমা গ্রহণ করেনি। কারণ, এখনও অনেক বড় ত্রুটি রয়ে গেছে। যত সমস্যা আছে, এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে। এজন্য ‘ডিফেক্ট লায়াবেলিটি’ দুই বছর বাড়ানোর জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার পর মেট্রোরেলের সবকটি পিলার পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, এর আগে পুরো পথের বিয়ারিং প্যাডের ছবি ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে তোলা হয়েছে। এরপর কর্মকর্তারা সরজমিনে নিরীক্ষা করেছেন। যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে।
ডিএমটিসিএলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো- যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে। ঢাকা মেট্রোরেলের লাইন-৬ তৈরিতে যে খরচ হয়েছে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেট্রো হওয়ার কথা ছিল। মেট্রোরেলের স্থায়িত্ব ১০০ বছর আর বিয়ারিং প্যাডের ৫০ বছর ধরা হলেও এক বছরের মাথায়ই কেন বিয়ারিং প্যাড নিয়ে আতঙ্কিত থাকতে হবে? প্রতিদিন সকালে কেন বিয়ারিং প্যাড চেক করতে হবে?’
তাড়াহুড়া করে চালু হয়েছিল: চার বছর আগে তাড়াহুড়া করে ঢাকার মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন ডিএমটিসিএলর এমডি ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ৬-৯ মাসের পরীক্ষামূলক চলাচল নিশ্চিত করার প্রয়োজন ছিল।
তিন বছরে মেট্রোরেল চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রোরেল সম্পূর্ণ হবে- এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য সব ঠিকাদার নিয়োগ দেয়ার পর ৬-৭ বছর লাগে। এর আগে প্রকল্প প্রণয়ন, সম্ভাব্যতা যাচাই ও অন্যান্য প্রস্তুতিতে চলে যায় ৩ বছর।
২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রো রেললাইন নির্মাণের যে লক্ষ্যমাত্রা আগে নেয়া হয়েছিল, তা কীসের ভিত্তিতে হয়েছে, তা তার বোধগম্য নয় বলে মন্তব্য করেন ডিএমটিসিএলের এমডি।
নতুন মেট্রো রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প তাহলে মুখ থুবড়ে পড়ছে কিনা, এমন প্রশ্ন করা হলে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েনি। মেট্রোরেল আমাদের লাগবে। আমাদের লক্ষ্য হলো- দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। সরকারের উদ্দেশ্য হলো- একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নত মানের মেট্রোরেল নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রোরেল আমাদের করতেই হবে; তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’
নিহত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক নিশ্চিয়তা:
রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রো রেলস্টশনের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় নিহত পথচারী আবুল কালাম আজাদের পরিবারের জন্য স্থায়ী সমাধান খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ।