alt

নগর-মহানগর

বাস মালিকদের ওয়েবিলের জালে বন্দী যাত্রীরা, সর্বনিম্ন ১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ : বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে রামপুরার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে এই রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া হয় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু রাইদা বাসের কর্মচারীরা এক যাত্রীর কাজ থেকে ভাড়া নিচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। কারণ ওয়েবিল (চেকার) হিসাব অনুযায়ী রামপুরার যাত্রীর কাছ থেকে বাড্ডার ভাড়াসহ দুইগুণ টাকা কেটে রাখা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য রুটের পরিবহনে। জাফর নামের পোস্তগোলার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘বোরাক পরিবহন জুরাইন থেকে গুলিস্তানের আগে নিত ১০ টাকা। এহন নেয় ২০ টাকা। কেউ কিছু কইতে পারে না। কইলেই গাড়ি থেকে নামাই দেয়।’

ওয়েবিল নামের (যাত্রাপথে মালিক পক্ষ যাত্রীর হিসাব নেয়া) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন রুটে দুই-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। গত বছর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং, গেইটলক ও বিরতিহীন সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পক্ষ থেকে এই সার্ভিস সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ওয়েবিল (চেকার) সার্ভিস বন্ধের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী সংবাদকে বলেন, ‘এসব সার্ভিস অবৈধ। প্রতিদিন বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। সোমবারও (৮ আগস্ট) প্রায় আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু বাস শ্রমিকরা মালিকের কাজ থেকে চুক্তিভিত্তিক পরিবহন চালায়। যাত্রীদের কাছ বেশি ভাড়া নেয়া হয়।’ তাই এখন থেকেই সব জায়গার বিআরটিএর অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

রোববার (৭ আগস্ট) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া এক টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী মিনিবাস এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ০৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৪০ পয়সা। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ ও মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এই ভাড়া অমান্য করছে বাস শ্রমিকরা। তাই নিয়ে প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে বাস কর্মচারীদের বাগবিত-া হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার থেকে একটু বেশি। প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে এই পথের বাস ভাড়া হয় ৪২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু মৌমিতা নামের একটি পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে ৬০-৬৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। এই বাসটি কাঁচপুর থেকে সাভার রুটে চলাচল করে। সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হলেও এই পরিবহনে নেয়া হয় ৩০ টাকা। ওয়েবিল নামের কেউ এক কিলোমিটারের কম পথ অতিক্রম করলেই তার কাছ থেকেও ৩০ ভাড়া আদায় করা হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন।

ওসমান নামের গুলিস্তানের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘এই বাসে উঠলেই ৩০ টাকা নেয়। শনির আখড়া থেকে চানখারপুল আইলাম ভাড়া নিলো ৩০ টাকা। গাড়ি কোন ভাড়া তালিকা-টালিকা দেখলাম না। ওয়েবিলের কথা বলে ওরা ইচ্ছেমতো ভাড়া নেয়।’

ওয়েবিল নামের যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের ট্রান্স সিলভা পরিবহন ১০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১৫-২০ টাকা। এই রুটের শিকড় ও খাজাবাবা প্রতি ওয়েবিলে ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। কাঁচপুর থেকে সাভার রুটে ঠিকানা পরিবহন ওয়েবিলে সর্বনিম্ন নিচ্ছে ভাড়া ৩০ টাকা, সদরঘাট-রামপুরা-আব্দুল্লাহপুর রুটের ভিক্টরি ক্লাসিক ও আকাশ পরিবহনসহ সব বাসে ওয়েবিল নামে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫-৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত বাসে সরকারনির্ধারিত ভাড়া যাত্রীপ্রতি ১৫ টাকা। মিরপুর ও সাভার থেকে আসা বাসগুলো টেকনিক্যাল মোড় থেকে যাত্রী তোলে। দিশারি, বাহন, ট্রান্সসিলভা, সাভার ও মৌমিতা পরিবহনে এই দূরত্বের ভাড়া নেয়া হয় ২৫-৩০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হয় ওইসব বাসে।

শ্যামলী থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১৩ টাকা। এই পথে চলাচলকারী বসুমতী পরিবহনে ভাড়া নেয়া হয় ৩০, তানজিল পরিবহনে ২৫ টাকা এবং লাব্বাইক, লাভলী ও গাবতলী মিনিবাস মালিক সমিতির (৮ নম্বর লোকাল) বাসে ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়।

হাসিব নামের শ্যামলীর এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানীতে সবচেয়ে ময়লাযুক্ত বাস হলো গাবতলীর ৮ নম্বর পরিবহন। এই বাসে এখন উঠলেই ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়। গাদাগাদি করে যাত্রী উঠানো হয়। সিটগুলো নোংরা ও তৈলাক্তযুক্ত। তবুও ভাড়া নেয়া হয় অতিরিক্ত। সরকার এসব বাসের বিরুদ্ধে কোন অভিযান চালায় না।’

গুলিস্তান ফ্লাইওভারের চলাচলরত বাস সরকারি নির্দেশ মানে না

রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে ডেমরা রুটে চলাচল করে রানীমহল পরিবহন। এই বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় ৩৫ টাকা। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী কাজলার পাড় পর্যন্ত সড়কপথের গুরুত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। এই রুটের ১০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এই রুটের বাসে সরকারি কোন নির্দেশ মানা হয় না বলে জানান এক বাস কর্মচারী।

নারীমহল বাসের এক শ্রমিক বলেন, ‘ফ্লাইওভারে টোল দিতে হয়। সরকারি কোন ওডার এই বাসে চলবে না। গেলে যান, না গেলে চইল্যা যান। যেনে নামবেন ৩৫ টাকা।’

একই অবস্থা অন্যান্য পরিবহনেও। যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করা সব বাসে ওয়েবিলের নামের সর্বনিম্ন ১০ টাকার ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। শাবাব নামের শনির আখড়ার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়া থেকে ফ্লাইওভারের টোলের হিসাবে ৫ টাকা বেশি নিতে পারে। সেই হিসাবে ১০ টাকা ভাড়া ১৫ টাকা নিতে পারে। কিন্তু ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করা সব বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা। অথচ গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ওয়েবিল নামের এসব অরাজকতা করছে বাস মালিকরা।’

ওয়েবিল সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা মালিক সংগঠনের

নগরীর প্রতিটি রুটেই কয়েক কিলোমিটার পরপর বাস পরিবহনগুলো অনেকদিন ধরে ‘চেক পয়েন্ট’ বসিয়ে যাত্রীর হিসাব রাখে। প্রতিটি পয়েন্টে রাখা হয়েছে কর্মী। বাস ওইসব ‘চেক পয়েন্ট’ অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করে নির্ধারিত একটি শিটে সই করে দেন। এটাকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ভাষায় বলা হয়, ‘ওয়েবিল’। তবে এখন থেকে ওয়েবিল ও চেকার পয়েন্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এ বিষয়ে সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ সংবাদকে বলেন, ‘এখন থেকে সব বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন চেকার বা ওয়েবিল থাকবে না। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে মালিক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল অভিযানে অংশ নিবে। তারপর কোন মালিক বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ছবি

রাজধানীতে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় আইডিয়াল ছাত্রের মৃত্যু

ছবি

আনু মুহাম্মদের ক্ষতিগ্রস্ত পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে

ছবি

সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চের আগুন নিয়ন্ত্রণে

ছবি

সদরঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চে আগুন

ছবি

এবার এডিসের লার্ভা পেলেই জেল-জরিমানা: মেয়র আতিক

ছবি

রিহ্যাবের মতামত ছাড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা চূড়ান্ত না করার দাবি

ছবি

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের স্ত্রী গ্রেপ্তার

নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য সস্তা, দাম বাড়ানোর দাবি

ছবি

ট্রেনে পায়ের আঙুল কাটা পড়েছে আনু মুহাম্মদের

ছবি

রেকি করে ফাঁকা ঢাকায় চুরি করতেন তারা

ছবি

প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আইনজীবীদের গাউন পড়নে শিথিলতা

ছবি

হাতিরঝিলে ভাসছিল যুবকের মরদেহ

ছবি

শিশু হাসপাতালে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না: ফায়ার সার্ভিস

ছবি

শিশু হাসপাতালে আগুন, ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

ছবি

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাইদা বাস থার্ড টার্মিনালে, প্রকৌশলী নিহত

ছবি

ঢাকা শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক বিভাগে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

ছবি

ভাষানটেকে বাবা-মা-দাদির পরে চলে গেল লামিয়াও

ছবি

যমুনা এক্সপ্রেসের লাইনচ্যুত বগি উদ্ধার, ঢাকামুখী পথ সচল

ছবি

রাজধানীতে স্বস্তির বৃষ্টি

ছবি

ভাসানটেকে গ্যাসের আগুন: শাশুড়ি ও স্ত্রীর পর স্বামীও মারা গেছে

ছবি

পহেলা বৈশাখে জাহানারা জাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনী

ছবি

চট্টগ্রামে বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

ছবি

ঢাকায় পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ৮

ঢাবি চারুকলার বকুলতলায় গান-নাচ-আবৃত্তিতে চৈত্রসংক্রান্তি উদ্‌যাপন

ছবি

ঢাকায় এসেছে ইসরায়েলের ফ্লাইট, বেবিচকের ব্যাখা

ছবি

বর্ষবরণের অপেক্ষায় রমনা

ছবি

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর গাড়িতে আগুন লাগে জানান পুলিশ

লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে ৫ জনের মৃত্যু : আসামিদের তিন দিনের রিমান্ড

ছবি

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর প্রাইভেট কারে আগুন

রাজধানীর শাহজাদপুরে বুথের নিরাপত্তা প্রহরীকে হত্যা

ছবি

যাত্রীদের পিটুনিতে হয়নি চালক-সহকারীর মৃত্যু, হেলপার গল্প সাজিয়েছে বলছে পুলিশ

ছবি

ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল

ছবি

মেট্রোরেলের পিলারে বাসের ধাক্কা

ছবি

কেএনএফের তৎপরতা নিয়ে ঢাকায় কোনো শঙ্কা নেই: ডিএমপি কমিশনার

ছবি

আবাসিক হোটেল থেকে নির্মাতা সোহানুর রহমানের মেয়ের মরদেহ উদ্ধার

কেটলির শর্টসার্কিট থেকে লিকেজের গ্যাসে বিস্তার

tab

নগর-মহানগর

বাস মালিকদের ওয়েবিলের জালে বন্দী যাত্রীরা, সর্বনিম্ন ১০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩৫ টাকা

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

বুধবার, ১০ আগস্ট ২০২২

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে রামপুরার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে এই রুটে সরকার নির্ধারিত ভাড়া হয় ১২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু রাইদা বাসের কর্মচারীরা এক যাত্রীর কাজ থেকে ভাড়া নিচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা। কারণ ওয়েবিল (চেকার) হিসাব অনুযায়ী রামপুরার যাত্রীর কাছ থেকে বাড্ডার ভাড়াসহ দুইগুণ টাকা কেটে রাখা হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান। একই অবস্থা রাজধানীর অন্যান্য রুটের পরিবহনে। জাফর নামের পোস্তগোলার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘বোরাক পরিবহন জুরাইন থেকে গুলিস্তানের আগে নিত ১০ টাকা। এহন নেয় ২০ টাকা। কেউ কিছু কইতে পারে না। কইলেই গাড়ি থেকে নামাই দেয়।’

ওয়েবিল নামের (যাত্রাপথে মালিক পক্ষ যাত্রীর হিসাব নেয়া) ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন রুটে দুই-তিনগুণ ভাড়া আদায় করছে বাস মালিকরা। গত বছর সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিটিং, গেইটলক ও বিরতিহীন সার্ভিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পক্ষ থেকে এই সার্ভিস সম্পূর্ণ অবৈধ ঘোষণা করা হলেও ওয়েবিল (চেকার) সার্ভিস বন্ধের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার।

এ বিষয়ে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী সংবাদকে বলেন, ‘এসব সার্ভিস অবৈধ। প্রতিদিন বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছে। সোমবারও (৮ আগস্ট) প্রায় আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু বাস শ্রমিকরা মালিকের কাজ থেকে চুক্তিভিত্তিক পরিবহন চালায়। যাত্রীদের কাছ বেশি ভাড়া নেয়া হয়।’ তাই এখন থেকেই সব জায়গার বিআরটিএর অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।

রোববার (৭ আগস্ট) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ ভাড়া এক টাকা ৮০ পয়সার জায়গায় ২ টাকা ২০ পয়সা; ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ১৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে সরকার। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী মিনিবাস এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি ভাড়া ২ টাকা ০৫ পয়সার স্থলে ২ টাকা ৪০ পয়সা। বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ ও মিনিবাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সরকার নির্ধারিত এই ভাড়া অমান্য করছে বাস শ্রমিকরা। তাই নিয়ে প্রতিদিন যাত্রীদের সঙ্গে বাস কর্মচারীদের বাগবিত-া হচ্ছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়ক পথের দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার থেকে একটু বেশি। প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবে এই পথের বাস ভাড়া হয় ৪২ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু মৌমিতা নামের একটি পরিবহন যাত্রীদের কাছ থেকে ৬০-৬৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। এই বাসটি কাঁচপুর থেকে সাভার রুটে চলাচল করে। সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা হলেও এই পরিবহনে নেয়া হয় ৩০ টাকা। ওয়েবিল নামের কেউ এক কিলোমিটারের কম পথ অতিক্রম করলেই তার কাছ থেকেও ৩০ ভাড়া আদায় করা হয় বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন।

ওসমান নামের গুলিস্তানের এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘এই বাসে উঠলেই ৩০ টাকা নেয়। শনির আখড়া থেকে চানখারপুল আইলাম ভাড়া নিলো ৩০ টাকা। গাড়ি কোন ভাড়া তালিকা-টালিকা দেখলাম না। ওয়েবিলের কথা বলে ওরা ইচ্ছেমতো ভাড়া নেয়।’

ওয়েবিল নামের যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের ট্রান্স সিলভা পরিবহন ১০ টাকার ভাড়া নিচ্ছে ১৫-২০ টাকা। এই রুটের শিকড় ও খাজাবাবা প্রতি ওয়েবিলে ১০-২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। কাঁচপুর থেকে সাভার রুটে ঠিকানা পরিবহন ওয়েবিলে সর্বনিম্ন নিচ্ছে ভাড়া ৩০ টাকা, সদরঘাট-রামপুরা-আব্দুল্লাহপুর রুটের ভিক্টরি ক্লাসিক ও আকাশ পরিবহনসহ সব বাসে ওয়েবিল নামে সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫-৩০ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে যাত্রীরা জানান।

রাজধানীর মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকে সায়েন্স ল্যাব পর্যন্ত বাসে সরকারনির্ধারিত ভাড়া যাত্রীপ্রতি ১৫ টাকা। মিরপুর ও সাভার থেকে আসা বাসগুলো টেকনিক্যাল মোড় থেকে যাত্রী তোলে। দিশারি, বাহন, ট্রান্সসিলভা, সাভার ও মৌমিতা পরিবহনে এই দূরত্বের ভাড়া নেয়া হয় ২৫-৩০ টাকা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আদায় করা হয় ওইসব বাসে।

শ্যামলী থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ১৩ টাকা। এই পথে চলাচলকারী বসুমতী পরিবহনে ভাড়া নেয়া হয় ৩০, তানজিল পরিবহনে ২৫ টাকা এবং লাব্বাইক, লাভলী ও গাবতলী মিনিবাস মালিক সমিতির (৮ নম্বর লোকাল) বাসে ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়।

হাসিব নামের শ্যামলীর এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘রাজধানীতে সবচেয়ে ময়লাযুক্ত বাস হলো গাবতলীর ৮ নম্বর পরিবহন। এই বাসে এখন উঠলেই ১৫ টাকা ভাড়া দিতে হয়। গাদাগাদি করে যাত্রী উঠানো হয়। সিটগুলো নোংরা ও তৈলাক্তযুক্ত। তবুও ভাড়া নেয়া হয় অতিরিক্ত। সরকার এসব বাসের বিরুদ্ধে কোন অভিযান চালায় না।’

গুলিস্তান ফ্লাইওভারের চলাচলরত বাস সরকারি নির্দেশ মানে না

রাজধানীর গুলিস্তান থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে ডেমরা রুটে চলাচল করে রানীমহল পরিবহন। এই বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া নেয়া হয় ৩৫ টাকা। গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী কাজলার পাড় পর্যন্ত সড়কপথের গুরুত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। এই রুটের ১০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এই রুটের বাসে সরকারি কোন নির্দেশ মানা হয় না বলে জানান এক বাস কর্মচারী।

নারীমহল বাসের এক শ্রমিক বলেন, ‘ফ্লাইওভারে টোল দিতে হয়। সরকারি কোন ওডার এই বাসে চলবে না। গেলে যান, না গেলে চইল্যা যান। যেনে নামবেন ৩৫ টাকা।’

একই অবস্থা অন্যান্য পরিবহনেও। যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করা সব বাসে ওয়েবিলের নামের সর্বনিম্ন ১০ টাকার ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। শাবাব নামের শনির আখড়ার এক যাত্রী সংবাদকে বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়া থেকে ফ্লাইওভারের টোলের হিসাবে ৫ টাকা বেশি নিতে পারে। সেই হিসাবে ১০ টাকা ভাড়া ১৫ টাকা নিতে পারে। কিন্তু ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করা সব বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৩০-৩৫ টাকা। অথচ গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ওয়েবিল নামের এসব অরাজকতা করছে বাস মালিকরা।’

ওয়েবিল সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা মালিক সংগঠনের

নগরীর প্রতিটি রুটেই কয়েক কিলোমিটার পরপর বাস পরিবহনগুলো অনেকদিন ধরে ‘চেক পয়েন্ট’ বসিয়ে যাত্রীর হিসাব রাখে। প্রতিটি পয়েন্টে রাখা হয়েছে কর্মী। বাস ওইসব ‘চেক পয়েন্ট’ অতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করে নির্ধারিত একটি শিটে সই করে দেন। এটাকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ভাষায় বলা হয়, ‘ওয়েবিল’। তবে এখন থেকে ওয়েবিল ও চেকার পয়েন্ট বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এ বিষয়ে সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ সংবাদকে বলেন, ‘এখন থেকে সব বন্ধ করে দেয়া হবে। কোন চেকার বা ওয়েবিল থাকবে না। বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে মালিক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল অভিযানে অংশ নিবে। তারপর কোন মালিক বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

back to top