alt

আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ

ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, তাদের ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসে

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারেন না অনেকেই। পড়াশোনার মান, হলের পরিবেশ নিয়ে অসন্তষ্টি, জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিং, যৌন হয়রানি, ভবিষ্যৎ পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তা, মন খুলে কথা বলতে না পারার কারণে হতাশা এবং বিষণ্নতায় ভুগছেন ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে কথনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসে।

বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়দ জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শিরোনামে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, হতাশা, বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চলার মতো প্রস্তত করে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের। তাঁদের মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দেশের ৮৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী জরিপে অংশ নেন।

জরিপে বলা হয়, প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে হতাশার বিভিন্ন উপসর্গে ভোগেন। তাঁদের ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, কোনো কিছু উপভোগ না করা, ঘুমের ধরনের পরিবর্তন, আত্মহত্যার চিন্তা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা ইত্যাদি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা এ ধরনের উপসর্গের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি করতে চান, প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, মাত্র ৭ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করতে চান। পেশাজীবন নিয়ে এখনি কোনো ভাবনা নেই প্রায় ২২ শতাংশ শিক্ষার্থীর।

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জানিয়েছেন, জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিং, যৌন হয়রানি তাঁদের বিষণ্নতার দিকে ধাবিত করে। ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন সহপাঠী ও জ্যেষ্ঠ সহপাঠীদের হাতে, এ হার প্রায় ৮৬ শতাংশ। প্রায় ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে অসন্তষ্ট। ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা মন খুলে কথা বলার মতো কোনো শিক্ষক পান না।

জরিপে বলা হয়, প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারা থেকে অনেকের মনে আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে কিন্তু আত্মহত্যা চেষ্টা করেননি ৩৯ শতাংশ, আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে এবং উপকরণও জোগাড় করেছেন ৭ শতাংশ। তবে প্রায় ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁদের মাথায় কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসেনি। এ ছাড়া মা–বাবার সঙ্গে অভিমান, প্রেমঘটিত বিষয়, অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্যরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করায় আত্মহত্যা করার চিন্তা এসেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সামাজিক সংস্কার, অসচেতনতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অপ্রতুলতার বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে জরিপে। প্রায় ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় না। ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এই সম্পর্কে কিছু জানেন না।

৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিষণ্নতার উপসর্গগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। বাকি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের মাঝে হতাশার উপসর্গ দেখা যায়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশার চিত্র তুলনামূলক কম। ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা হতাশার উপসর্গগুলো অনুভব করেছেন। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা এই ধরনের উপসর্গের মধ্য দিয়ে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসে কাউন্সেলিং ইউনিটের ব্যবস্থা করা, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা, নিরাপদ বাসস্থান ও উন্নতমানের খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক উন্নয়ন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাসংক্রান্ত মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থীরা কেন হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছে, তা বোঝা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। বিশেষ করে হলের পরিবেশ নিয়ে যে অস্থিরতা সেই সমস্যার সমাধান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিশালী একটি পক্ষের সদিচ্ছা দরকার। মা–বাবাকেও সচেতন হতে হবে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে। প্রতিকূল পরিবেশ থেকেও যে উঠে দাঁড়ানো যায় সেই সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিপর্যয় নেমে আসে। তরুণেরা সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। প্রস্ততির অভাবে তাঁরা পরিবারে একটি গণ্ডির মধ্য থেকে নতুন পরিবেশে এসে সব সময় খাপ খাওয়াতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও এখানে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ছবি

দুর্গাপূজা উপলক্ষে ১১ দিনের লম্বা ছুটিতে স্কুল-কলেজ

ছবি

তৃতীয় আবেদনেও কলেজ পায়নি জিপিএ-৫ পাওয়া ২৯৫ জনসহ ৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

২০২৬ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই: প্রাথমিকের বই ছাপা শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহে

ছবি

ঢাকা কলেজ অর্থনীতি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠিত

ছবি

এসএসসি ২০২৬: নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত, অনিয়মিতদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস

ছবি

একাদশে ভর্তির দ্বিতীয় ধাপের আবেদন শুরু

ছবি

এসএসসি খাতা মূল্যায়নে অবহেলা, কালো তালিকায় ৭১ শিক্ষক

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে গেল সাত কলেজ

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নয়, পরীক্ষার্থী তৈরি করছে: উপাচার্য

ছবি

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত: ১৫ দিন পর মাইলস্টোন কলেজে লেখাপড়া শুরু

ছবি

পরীক্ষার্থীদের সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ

ছবি

মারিয়া স্কোডোস্কা-কুরি ডক্টরাল ফেলোশিপ পেলেন আইইউবির আবরার

ছবি

প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে মানব বন্ধন

ছবি

কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল নারায়ণগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে এআই অ্যাপ ‘এলসা স্পিক’ এর যাত্রা শুরু

ছবি

ইসলামপুরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট উপহার

ছবি

সর্বোচ্চ ফি সাড়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ, একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নীতিমালা প্রকাশ

ছবি

স্থগিত হওয়া চার দিনের এইচএসসি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

সহিংসতায় রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, এক বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

স্বতন্ত্র কাউন্সিলের দাবিতে আন্দোলন: ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত

ছবি

পাসের হার ও জিপিএ-৫-এ ছাত্রীদের এগিয়ে থাকার ধারা বজায়

ছবি

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে এসএসসি ও সমমানের ফল, পুনঃনিরীক্ষার আবেদন ১১ জুলাই থেকে

ছবি

এসএসসির ফল ১০ থেকে ১২ জুলাইয়ের মধ্যে

ছবি

শিক্ষার্থীর ‘কটূক্তি’র অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষায় বসছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

ছবি

২৬ জুন শুরু এইচএসসি, কেন্দ্র এলাকায় চলাচলে ডিএমপির বিধিনিষেধ জারি

ছবি

রাতের ঘটনায় আসন বাতিল, শৃঙ্খলা কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমার প্রস্তুতি

পরীক্ষার আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ, জানাল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

মহামারির আশঙ্কায় এইচএসসি কেন্দ্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের নির্দেশ

পরীক্ষা পেছানোর পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ডগুলো

ছবি

ভিসি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ২৬ জুন

ছবি

আদালতের রায়ে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ছবি

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির অধীনেই চলবে সাত কলেজ

ছবি

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, আন্দোলনে ছাত্রদলসহ শিক্ষার্থীরা

ছবি

শাহরিয়ার সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে অর্ধদিবস শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল স্থানান্তর ও রাজস্ব ফাঁকিতে দুদকের নজরে দুই প্রতিষ্ঠান

tab

news » education

আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপ

ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, তাদের ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসে

খালেদ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারেন না অনেকেই। পড়াশোনার মান, হলের পরিবেশ নিয়ে অসন্তষ্টি, জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিং, যৌন হয়রানি, ভবিষ্যৎ পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তা, মন খুলে কথা বলতে না পারার কারণে হতাশা এবং বিষণ্নতায় ভুগছেন ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে কথনো কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসে।

বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশনের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। শুক্রবার অনলাইনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্ববিদ্যালয়দ জীবনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণ’ শিরোনামে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন, হতাশা, বিষণ্নতা ও আত্মহত্যার প্রবণতা ঠেকাতে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে চলার মতো প্রস্তত করে তুলতে হবে শিক্ষার্থীদের। তাঁদের মানসিক দৃঢ়তা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। দেশের ৮৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী জরিপে অংশ নেন।

জরিপে বলা হয়, প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে হতাশার বিভিন্ন উপসর্গে ভোগেন। তাঁদের ক্লান্তি, ওজন কমে যাওয়া, কোনো কিছু উপভোগ না করা, ঘুমের ধরনের পরিবর্তন, আত্মহত্যার চিন্তা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা ইত্যাদি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৩ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা এ ধরনের উপসর্গের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৩২ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী সরকারি চাকরি করতে চান, প্রায় ১০ শতাংশ ব্যবসা বা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, মাত্র ৭ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করতে চান। পেশাজীবন নিয়ে এখনি কোনো ভাবনা নেই প্রায় ২২ শতাংশ শিক্ষার্থীর।

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ জানিয়েছেন, জ্যেষ্ঠ সহপাঠী ও শিক্ষকদের বুলিং, যৌন হয়রানি তাঁদের বিষণ্নতার দিকে ধাবিত করে। ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হয়েছেন সহপাঠী ও জ্যেষ্ঠ সহপাঠীদের হাতে, এ হার প্রায় ৮৬ শতাংশ। প্রায় ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে অসন্তষ্ট। ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁরা মন খুলে কথা বলার মতো কোনো শিক্ষক পান না।

জরিপে বলা হয়, প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতা ও প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে উঠতে না পারা থেকে অনেকের মনে আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন, আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে কিন্তু আত্মহত্যা চেষ্টা করেননি ৩৯ শতাংশ, আত্মহত্যার চিন্তা এসেছে এবং উপকরণও জোগাড় করেছেন ৭ শতাংশ। তবে প্রায় ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তাঁদের মাথায় কখনো আত্মহত্যার চিন্তা আসেনি। এ ছাড়া মা–বাবার সঙ্গে অভিমান, প্রেমঘটিত বিষয়, অর্থনৈতিক সমস্যা, অন্যরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করায় আত্মহত্যা করার চিন্তা এসেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সামাজিক সংস্কার, অসচেতনতা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অপ্রতুলতার বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে জরিপে। প্রায় ৩৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয় না। ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এই সম্পর্কে কিছু জানেন না।

৮৩ দশমিক ৪ শতাংশ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিষণ্নতার উপসর্গগুলোর মুখোমুখি হয়েছেন। বাকি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের মাঝে হতাশার উপসর্গ দেখা যায়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশার চিত্র তুলনামূলক কম। ৭৯ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন তারা হতাশার উপসর্গগুলো অনুভব করেছেন। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা এই ধরনের উপসর্গের মধ্য দিয়ে গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পাসে কাউন্সেলিং ইউনিটের ব্যবস্থা করা, মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা, নিরাপদ বাসস্থান ও উন্নতমানের খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক উন্নয়ন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাসংক্রান্ত মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষার্থীরা কেন হতাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছে, তা বোঝা ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। বিশেষ করে হলের পরিবেশ নিয়ে যে অস্থিরতা সেই সমস্যার সমাধান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শক্তিশালী একটি পক্ষের সদিচ্ছা দরকার। মা–বাবাকেও সচেতন হতে হবে সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে। প্রতিকূল পরিবেশ থেকেও যে উঠে দাঁড়ানো যায় সেই সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে বিপর্যয় নেমে আসে। তরুণেরা সবচেয়ে বেশি মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। প্রস্ততির অভাবে তাঁরা পরিবারে একটি গণ্ডির মধ্য থেকে নতুন পরিবেশে এসে সব সময় খাপ খাওয়াতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও এখানে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

back to top