alt

গাজায় জাতিসংঘ কেন এত অক্ষম, এত অসহায়

বিদেশী সংবাদ মাধোম : রোববার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজা সিটির বাসিন্দারা নিজেদের মালপত্র নিয়ে গাজা উপত্যকার দক্ষিণে চলে যাচ্ছেন -এএফপি

১৯৫৬ সাল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তাদের গন্তব্য ছিল মিসরের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিনাই উপদ্বীপ ও গাজা উপত্যকা। আর পাঠানোর কারণ, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল মিলে মিসরের সুয়েজ খাল আক্রমণ করেছিল। এখন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ চলছে এবং জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন সামনে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, জাতিসংঘ এখন গাজায় কী করতে পারে কিংবা কেন কিছুই করছে না?

যদিও সুয়েজ সংকট ও বর্তমান গাজা পরিস্থিতি আলাদা। তবু ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘ জরুরি বাহিনীর অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের গাজা দখল অভিযানে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে। ক্রমেই বেশিসংখ্যক আইনজ্ঞ ও গবেষক বলছেন, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড জাতিহত্যা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ছয়বার ভেটো দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবারও; যাতে নরকে পরিণত হওয়া গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা বা মানবিক সাহায্যের পথ খোলার প্রস্তাব পাস না হয়।

তবে ১৯৫৬ সালেও নিরাপত্তা পরিষদ অচল হয়ে পড়েছিল। কারণ, তখনকার দুই আগ্রাসী দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভেটো ক্ষমতা রাখত। ওই সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৫০ সালের ‘ইউনাইটিং ফর পিস’ প্রস্তাব ব্যবহার করে সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়। জাতিসংঘ সনদের অধ্যায়-৭ অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিরক্ষী মোতায়েন বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

তবে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও বড় ভূমিকা রেখেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইসরায়েলের মিসর আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন। যদিও সুয়েজ সংকট ও বর্তমান গাজার পরিস্থিতি আলাদা। তবু ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘ জরুরি বাহিনীর অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। জাতিসংঘ তখন একজন বলিষ্ঠ মহাসচিবও পেয়েছিল-দ্যাগ হ্যামারশোল্ডকে। তিনি জোটভুক্ত নয়, এমন দেশগুলোকে শান্তিরক্ষী পাঠাতে রাজি করাতে সক্ষম হন। মিসরও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করে।

কিন্তু কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আজ গাজাকে আন্তর্জাতিক ইস্যু করতে মোটেই রাজি নয়। আজকের শিক্ষাটা হলো, সাধারণ পরিষদ চাইলে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটাতে পারে। তবে দিন শেষে জাতিসংঘ কার্যকর হয় শুধু তখনই, যখন সদস্যরাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখায়।

জাতিগত নিধন: জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর সম্মিলিত রেকর্ড একেবারেই ভালো নয়। রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় জাতিগত নিধনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শুধু ঘটনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছিল যে সেখানে জাতিগত নিধন হয়েছে। রুয়ান্ডার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে চোখে পড়েছিল। তখন দেশটিতে অবস্থানকারী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের কমান্ডার রোমিও ড্যালেয়ার বারবার সতর্ক করেছিলেন, জাতিগত নিধনের ঘটনা ঘটতে চলেছে। তবে এ ব্যাপারে জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

গাজায় জাতিগত নিধন ও আধুনিক ইতিহাসের অন্যান্য জাতিগত নিধনের ঘটনার মধ্যে এটি (যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন অংশগ্রহণ) মূল পার্থক্যের জায়গা।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তখন থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বোমা হামলা ও ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস করার বিষয়ে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী প্রকাশ্যে গর্ব করেছেন। গাজার বাড়িঘরকে ধ্বংস করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবাসিক খাতের উন্নয়ন ও গাজা পুনর্গঠনের পথ পরিষ্কার করছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল–বিষয়ক সর্বোচ্চ তদন্ত সংস্থা গত মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে, গাজায় জাতিগত নিধনের ঘটনায় ইসরায়েল দোষী। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ‘জাতিগত নিধন’–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মার্টিন শ বলেছেন, গাজায় জাতিগত নিধন ও আধুনিক ইতিহাসের অন্যান্য জাতিগত নিধনের ঘটনার মধ্যে এটি (যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন অংশগ্রহণ) মূল পার্থক্যের জায়গা।

এ সপ্তাহে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিন প্রশ্নে আলোচনা হবে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশ ফ্রান্স ও সৌদি আরব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি নেবে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে উদ্বুদ্ধ করবে তারা। মার্টিন শ মিডল ইস্ট আইকে বলেন, গাজা আলাদা। এখানে জাতিগত নিধন হয়েছে বলে স্বীকার করতে জাতিসংঘ যে দেরি করেছে, তা নয়। এটা সত্যি, অস্ত্রশস্ত্র ও রাজনৈতিক সহায়তার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত অংশীদারের ভূমিকায় (জাতিগত নিধনের ক্ষেত্রে) থেকেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুটি কারণে জাতিসংঘ গাজায় জাতিগত নিধন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া এখন ছোট–বড় দেশগুলোর মধ্যে বিদেশে হস্তক্ষেপ করার আগ্রহ কম।

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের পরের ‘টার্গেট’ কি তুরস্ক

ছবি

সাইবার হামলা, ইউরোপের বিভিন্ন বিমানবন্দরে বিপর্যয়

ছবি

ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ৮০ শতাংশ ভিসা আবেদন বাতিল করেছে কানাডা

ছবি

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন সানায়ে তাকাইচি

ছবি

তালেবানরা বাগরাম ঘাঁটি দিতে না চাওয়ায় এবার ট্রাম্পের হুমকি

ছবি

এইচ-১বি ভিসায় এককালীন এক লাখ ডলার ফি, বিদ্যমান ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়: হোয়াইট হাউস

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনির মৃত্যু

ছবি

অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে ডাচ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

ছবি

দক্ষ কর্মী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে গেলে বছরে ১ লাখ ডলার ফি দিতে হবে

ছবি

বাংলাদেশসহ ৯ দেশের ওপর আরব আমিরাতের ভিসা নিষেধাজ্ঞা

ছবি

মণিপুরে অতর্কিত হামলায় দুই ভারতীয় সেনা নিহত

ছবি

এবার চার্লস–ক্যামিলাকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণের পরিকল্পনা ট্রাম্পের

ছবি

সুদানে মসজিদে ড্রোন হামলায় নিহত ৭৮

ছবি

ইরানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

ছবি

বাগরাম ঘাঁটি ফেরত চান ট্রাম্প, প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান তালেবানের

ছবি

পাকিস্তান-সৌদি আরব চুক্তির নেপথ্যে কি অর্থ ও অস্ত্রের বিনিময়?

ছবি

ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে পর্তুগাল

ছবি

জাতিসংঘে ইরানের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব নাকচ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অক্টোবরে ট্রাম্প–সি বৈঠক

ছবি

সুদানে মসজিদে ড্রোন হামলায় নিহত ৭৮ জন

ছবি

ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত: বছরে ১ লাখ ডলার এইচ-১বি ভিসা ফি

ছবি

আফগানিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করলো তালেবান

ছবি

ইসরায়েলের অস্ত্রের চালান আটকে দিলো ইতালির বন্দর

ছবি

ক্ষমতাচ্যুতির পর প্রথম বিবৃতিতে তীব্র ভাষায় ভারতের সমালোচনা করলেন অলি

ছবি

ইউক্রেন যুদ্ধে কতজন রুশ সেনা লড়ছে, জানালেন পুতিন

ছবি

জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ষষ্ঠবার ভেটো দিলো যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

পাকিস্তান কি সৌদি আরবকে পারমাণবিক সুরক্ষা দেবে?

ছবি

ইসরায়েলকে কি দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোণঠাসা করা সম্ভব?

ছবি

ভারতে মাটিচাপা দেয়া কন্যাশিশু উদ্ধার, বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চিকিৎসকদের

ছবি

বন্যা, দুর্নীতি আর ‘নেপো বেবি’দের নিয়ে ক্ষোভ ফিলিপাইনেও

ছবি

ভারত-পাকিস্তানসহ ২৩ দেশকে ‘প্রধান মাদক পাচারকারী’ বললেন ট্রাম্প

ছবি

এমপিদের নতুন গাড়ি ও বাড়তি সুবিধার প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব তিমুর

ছবি

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির দাবিতে পিটিশন ইসরায়েলে

ছবি

আক্রান্ত হলে পরস্পরকে রক্ষা করবে সৌদি আরব-পাকিস্তান

ছবি

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

ছবি

নেপালে জেন-জিরা কেন প্রবীণ প্রধানমন্ত্রী বেছে নিল

tab

গাজায় জাতিসংঘ কেন এত অক্ষম, এত অসহায়

বিদেশী সংবাদ মাধোম

গাজা সিটির বাসিন্দারা নিজেদের মালপত্র নিয়ে গাজা উপত্যকার দক্ষিণে চলে যাচ্ছেন -এএফপি

রোববার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৯৫৬ সাল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। তাদের গন্তব্য ছিল মিসরের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিনাই উপদ্বীপ ও গাজা উপত্যকা। আর পাঠানোর কারণ, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইসরায়েল মিলে মিসরের সুয়েজ খাল আক্রমণ করেছিল। এখন ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ চলছে এবং জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশন সামনে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, জাতিসংঘ এখন গাজায় কী করতে পারে কিংবা কেন কিছুই করছে না?

যদিও সুয়েজ সংকট ও বর্তমান গাজা পরিস্থিতি আলাদা। তবু ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘ জরুরি বাহিনীর অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের গাজা দখল অভিযানে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছে। ক্রমেই বেশিসংখ্যক আইনজ্ঞ ও গবেষক বলছেন, ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ড জাতিহত্যা। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ছয়বার ভেটো দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবারও; যাতে নরকে পরিণত হওয়া গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা বা মানবিক সাহায্যের পথ খোলার প্রস্তাব পাস না হয়।

তবে ১৯৫৬ সালেও নিরাপত্তা পরিষদ অচল হয়ে পড়েছিল। কারণ, তখনকার দুই আগ্রাসী দেশ ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভেটো ক্ষমতা রাখত। ওই সময় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৫০ সালের ‘ইউনাইটিং ফর পিস’ প্রস্তাব ব্যবহার করে সশস্ত্র শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠায়। জাতিসংঘ সনদের অধ্যায়-৭ অনুযায়ী, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ শান্তিরক্ষী মোতায়েন বা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

তবে তখন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও বড় ভূমিকা রেখেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার ব্রিটেন-ফ্রান্স-ইসরায়েলের মিসর আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন। যদিও সুয়েজ সংকট ও বর্তমান গাজার পরিস্থিতি আলাদা। তবু ১৯৫৬ সালের জাতিসংঘ জরুরি বাহিনীর অভিজ্ঞতা এটাই দেখায়, জাতিসংঘ চাইলে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। জাতিসংঘ তখন একজন বলিষ্ঠ মহাসচিবও পেয়েছিল-দ্যাগ হ্যামারশোল্ডকে। তিনি জোটভুক্ত নয়, এমন দেশগুলোকে শান্তিরক্ষী পাঠাতে রাজি করাতে সক্ষম হন। মিসরও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করে।

কিন্তু কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র আজ গাজাকে আন্তর্জাতিক ইস্যু করতে মোটেই রাজি নয়। আজকের শিক্ষাটা হলো, সাধারণ পরিষদ চাইলে নিরাপত্তা পরিষদকে পাশ কাটাতে পারে। তবে দিন শেষে জাতিসংঘ কার্যকর হয় শুধু তখনই, যখন সদস্যরাষ্ট্রগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখায়।

জাতিগত নিধন: জাতিগত নিধন বন্ধে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর সম্মিলিত রেকর্ড একেবারেই ভালো নয়। রুয়ান্ডা ও বসনিয়ায় জাতিগত নিধনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ শুধু ঘটনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছিল যে সেখানে জাতিগত নিধন হয়েছে। রুয়ান্ডার ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে চোখে পড়েছিল। তখন দেশটিতে অবস্থানকারী জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের কমান্ডার রোমিও ড্যালেয়ার বারবার সতর্ক করেছিলেন, জাতিগত নিধনের ঘটনা ঘটতে চলেছে। তবে এ ব্যাপারে জাতিসংঘ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

গাজায় জাতিগত নিধন ও আধুনিক ইতিহাসের অন্যান্য জাতিগত নিধনের ঘটনার মধ্যে এটি (যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন অংশগ্রহণ) মূল পার্থক্যের জায়গা।

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তখন থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বোমা হামলা ও ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস করার বিষয়ে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী প্রকাশ্যে গর্ব করেছেন। গাজার বাড়িঘরকে ধ্বংস করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবাসিক খাতের উন্নয়ন ও গাজা পুনর্গঠনের পথ পরিষ্কার করছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল–বিষয়ক সর্বোচ্চ তদন্ত সংস্থা গত মঙ্গলবার ঘোষণা দিয়েছে, গাজায় জাতিগত নিধনের ঘটনায় ইসরায়েল দোষী। সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং ‘জাতিগত নিধন’–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ মার্টিন শ বলেছেন, গাজায় জাতিগত নিধন ও আধুনিক ইতিহাসের অন্যান্য জাতিগত নিধনের ঘটনার মধ্যে এটি (যুক্তরাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন অংশগ্রহণ) মূল পার্থক্যের জায়গা।

এ সপ্তাহে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিন প্রশ্নে আলোচনা হবে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদেশ ফ্রান্স ও সৌদি আরব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগটি নেবে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে উদ্বুদ্ধ করবে তারা। মার্টিন শ মিডল ইস্ট আইকে বলেন, গাজা আলাদা। এখানে জাতিগত নিধন হয়েছে বলে স্বীকার করতে জাতিসংঘ যে দেরি করেছে, তা নয়। এটা সত্যি, অস্ত্রশস্ত্র ও রাজনৈতিক সহায়তার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কার্যত অংশীদারের ভূমিকায় (জাতিগত নিধনের ক্ষেত্রে) থেকেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দুটি কারণে জাতিসংঘ গাজায় জাতিগত নিধন বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া এখন ছোট–বড় দেশগুলোর মধ্যে বিদেশে হস্তক্ষেপ করার আগ্রহ কম।

back to top