alt

আরএসএফের নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

দারফুরের এল-ফাশের শহর থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত লোকজন তাবিলায় অস্থায়ী তাঁবুর চারপাশে জড়ো হয়েছেন -এএফপি

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত ও নির্যাতনের শিকার মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গতকাল রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এর পর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ, গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন—এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা কোরো না।” এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, “থামো থামো”। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’ পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা জানিয়েছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রবি থেকে বুধবারের মধ্যে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ এল-ফাশের থেকে পালিয়েছেন। আগস্টের শেষ নাগাদ করা হিসাব অনুযায়ী, এল-ফাশেরে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল।

শুক্রবার চিকিৎসা সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) একটি বিবৃতি দিয়েছে। ঘটনাস্থলে কাজ করা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গত পাঁচ দিনে মাত্র পাঁচ হাজারের কিছু বেশি মানুষ তাবিলায় পৌঁছাতে পেরেছেন।

এমএসএফের জরুরি বিভাগের প্রধান মিশেল অলিভিয়ে লাসাহিত বলেছেন, চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের কাছে তাঁরা শুনেছেন যে দারফুর থেকে পালিয়ে আসার সময় সাধারণ নাগরিকদের হন্যে হয়ে খোঁজা, আটক করা ও হত্যা করা হচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। এমএসএফ বলেছে, গত ২৭ অক্টোবর তাবিলায় আসা ৭০ শিশুর মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী সব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছিল। তাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ভুগছিল তীব্র মাত্রার অপুষ্টিতে।

আরএসএফের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা সহায়তা সংস্থাগুলোকে বলেছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা মানুষকে লিঙ্গ, বয়স বা জাতিগত পরিচয় অনুযায়ী আলাদা করছিলেন। অনেককে মুক্তিপণ চাইতে আটকে রাখা হয়েছিল। মুক্তিপণের পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড (৮ হাজার থেকে প্রায় ৫০ হাজার ডলার)। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা; পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, আরএসএফের যোদ্ধারা কয়েকজন বন্দীকে গাড়িচাপায় হত্যা করেছেন।

ছবি

নিউইয়র্কে আজ মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি

ছবি

বিশ্বকে ১৫০ বার ধ্বংস করার মতো পারমাণবিক অস্ত্র আমাদের আছে: ট্রাম্প

ছবি

ইউক্রেনকে আপাতত টমাহক দেওয়া হবে না : ট্রাম্প

ছবি

আফগানিস্তানে ৬.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, নিহত ২০

ছবি

দুই সপ্তাহের মধ্যে তীব্র খাবার পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছে তেহরান

ছবি

যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলি অবরোধে বিপর্যয়ের মুখে ফিলিস্তিনিরা

ছবি

জেন জি’ ও পরবর্তী সব প্রজন্মের জন্য ধূমপান নিষিদ্ধ করল মালদ্বীপ

ছবি

ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করে লেবাননে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ৪

ছবি

চীনের সর্বকনিষ্ঠ নভোচারীর সঙ্গে মহাকাশে পাঠানো হলো ৪টি কালো ইঁদুর

ছবি

‘সুদানে বিদ্রোহীদের চীনা ড্রোন-কামান দিচ্ছে আরব আমিরাত’

ছবি

‘গ্রে জোনে’ হাজার হাজার রুশ সেনা, কোণঠাসা ইউক্রেনের বাহিনী

ছবি

ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ করবে না ইরান : আরাগচি

ছবি

ওনেই পানি-খাবার, বাঁচার আশায় মাইলের পর মাইল হাঁটছে মানুষ

ছবি

চুক্তি ভেঙে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল, চালাচ্ছে হামলা

ছবি

৩০ প্যালেস্টাইনির মৃতদেহ ফেরত দিয়েছে ইসরায়েল, গাজায় ফের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি

ছবি

ট্রাম্পের কাছে ক্ষমা চাইলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নি

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ১০ বছরের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন ঠেকাতে রাশিয়া-চীন-ইরানের দ্বারে মাদুরো

ছবি

‘না যুদ্ধ’, ‘না শান্তির’ মরণফাঁদে পড়ার ঝুঁকিতে গাজা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনের মধ্যেও খাদ্য সহায়তা দিতে আদালতের নির্দেশ

ছবি

গৃহযুদ্ধে নাকাল সুদান

ছবি

প্রিন্স উপাধি হারালেও আপাতত রয়েল লজেই থাকছেন অ্যান্ড্রু

এক সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে রাজি পাকিস্তান আফগানিস্তান

ওমরাহ ভিসা নিয়ে সৌদির নতুন সিদ্ধান্ত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ১০ বছর মেয়াদী প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন

ছবি

পাকিস্তান–আফগানিস্তান যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে সম্মত

ছবি

গাজায় ‘শক্তিশালী’ হামলা চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর

ছবি

নেটোর সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া, সমন্বয়ের অভাব ইউরোপে

ছবি

ট্রাম্পের আগমন ঘিরে দ. কোরিয়ায় বিক্ষোভ

ছবি

কানাডায় এবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পপতিকে খুন করল বিষ্ণোই গ্যাং

ছবি

ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের আগে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা

ছবি

এক মাসে রেকর্ড ১ কোটি ১৭ লাখ মানুষের ওমরাহ পালন

ছবি

ভারতের অন্ধ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘মোনথা’র তাণ্ডব, নিহত ১

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৩৩, যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে বড় সহিংসতা

tab

আরএসএফের নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা

সুদানের দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

দারফুরের এল-ফাশের শহর থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত লোকজন তাবিলায় অস্থায়ী তাঁবুর চারপাশে জড়ো হয়েছেন -এএফপি

সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত ও নির্যাতনের শিকার মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ।

উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গতকাল রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এর পর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ, গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন—এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা কোরো না।” এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’

তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, “থামো থামো”। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’

আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’

ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।

ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’ পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা জানিয়েছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।

গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত। ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।

তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, রবি থেকে বুধবারের মধ্যে ৬২ হাজারের বেশি মানুষ এল-ফাশের থেকে পালিয়েছেন। আগস্টের শেষ নাগাদ করা হিসাব অনুযায়ী, এল-ফাশেরে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল।

শুক্রবার চিকিৎসা সহায়তাবিষয়ক সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) একটি বিবৃতি দিয়েছে। ঘটনাস্থলে কাজ করা সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গত পাঁচ দিনে মাত্র পাঁচ হাজারের কিছু বেশি মানুষ তাবিলায় পৌঁছাতে পেরেছেন।

এমএসএফের জরুরি বিভাগের প্রধান মিশেল অলিভিয়ে লাসাহিত বলেছেন, চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের কাছে তাঁরা শুনেছেন যে দারফুর থেকে পালিয়ে আসার সময় সাধারণ নাগরিকদের হন্যে হয়ে খোঁজা, আটক করা ও হত্যা করা হচ্ছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। এমএসএফ বলেছে, গত ২৭ অক্টোবর তাবিলায় আসা ৭০ শিশুর মধ্যে পাঁচ বছরের কমবয়সী সব শিশু অপুষ্টিতে ভুগছিল। তাদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ভুগছিল তীব্র মাত্রার অপুষ্টিতে।

আরএসএফের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা সহায়তা সংস্থাগুলোকে বলেছেন, আরএসএফ যোদ্ধারা মানুষকে লিঙ্গ, বয়স বা জাতিগত পরিচয় অনুযায়ী আলাদা করছিলেন। অনেককে মুক্তিপণ চাইতে আটকে রাখা হয়েছিল। মুক্তিপণের পরিমাণ ছিল ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি সুদানি পাউন্ড (৮ হাজার থেকে প্রায় ৫০ হাজার ডলার)। জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা; পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেছেন, আরএসএফের যোদ্ধারা কয়েকজন বন্দীকে গাড়িচাপায় হত্যা করেছেন।

back to top