২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। পরে এই সংঘাত দেশটিতে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। প্রাণ বাঁচাতে এরই মধ্যেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন লাখো মানুষ। যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে; এতে বাড়ছে ক্ষুধা সংকট। এর ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন সুদানের নাগরিকরা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণভাবে সুদান বিশ্বের বৃহত্তম বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এর ফলে দেশটির ১৮টি রাজ্যের ১৮৫টি এলাকার ১০ হাজার ৯২৯টি স্থান থেকে ৯৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ দারফুর থেকে ১৮ লাখ ৪০ হাজার, উত্তর দারফুর থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ও মধ্য দারফুর থেকে ৯ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিলে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। আরএসএফ দারফুরে নৃশংসতার সঙ্গেও জড়িত। জাতিসংঘ বলেছে, এটি গণহত্যা।
গত বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরোধ, অনাহার ও বোমাবর্ষণের পর গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশের ও এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় আরএসএফ। দখল নেওয়ার পর এই অঞ্চল থেকে এ পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮১৭ জন মানুষ পালিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই পায়ে হেঁটে এলাকা ছেড়েছেন। সংস্থাটি বলছে, এলাকা ছেড়ে যাওয়াদের অনেকেই উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশেরের বিভিন্ন অংশে ও নিকটবর্তী শহর তাওয়িলায় আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর শহরের ভেতরে হাজারো মানুষকে মেরে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। মুক্তিপণের জন্য অনেককে আটকে রেখেছে। কলেরা ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আলজাজিরার তথ্যমতে, বর্তমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আইওএম ধারণা করেছিল, সুদানে ২৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই দারফুরে আশ্রয় নিয়েছেন।
সুদানের অভ্যন্তরে এ পর্যন্ত ৭২ লাখ ৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে খার্তুম থেকে ২৭ লাখের কাছাকাছি, দক্ষিণ দারফুর থেকে ২০ লাখ ও উত্তর দারফুর থেকেও ২০ লাখের মতো মানুষ দেশে ছেড়েছেন। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্ষুধা, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততার কারণে সুদানিরা দেশ ছাড়ছেন। যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে, ফলে বাড়ছে ক্ষুধা সংকট। ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন সুদানের বাসিন্দারা।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পূর্ব চাদে পাড়ি জমিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ নারী এবং শিশু। এই সংখ্যা ২০২৪ সালে এক সপ্তাহের রেকর্ড সংখ্যা। চাদ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চাদে এখন পর্যন্ত সুদানের ৬ লাখের বেশি আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সুদানের দারফুর অঞ্চলের ফারচানা শিবিরের পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। শিবিরে থাকা শরণার্থীরা গার্ডিয়ানকে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। অনেকেই ইতালি, ইউরোপের অন্যান্য দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ফারচানা ক্যাম্পের পরিচালক হাতিম আবদুল্লাহ এল-ফাদিল বলেছেন, সংকট এতটাই দেখা দিয়েছে যে, সুদানিরা খাবারের জন্য শহরের বাজারে ভিক্ষা করতে যান। এছাড়া দারফুরের জমজম বাস্তুচ্যুতি শিবিরে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘাতের কারণে এই অঞ্চলে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন। ২৬ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত শুরু হয়। পরে এই সংঘাত দেশটিতে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। প্রাণ বাঁচাতে এরই মধ্যেই ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন লাখো মানুষ। যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে; এতে বাড়ছে ক্ষুধা সংকট। এর ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন সুদানের নাগরিকরা।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, অভ্যন্তরীণভাবে সুদান বিশ্বের বৃহত্তম বাস্তুচ্যুতি এবং মানবিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। এর ফলে দেশটির ১৮টি রাজ্যের ১৮৫টি এলাকার ১০ হাজার ৯২৯টি স্থান থেকে ৯৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। সংস্থাটি বলছে, দক্ষিণ দারফুর থেকে ১৮ লাখ ৪০ হাজার, উত্তর দারফুর থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার ও মধ্য দারফুর থেকে ৯ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। যাদের মধ্যে ৫১ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিলে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের বিরুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। আরএসএফ দারফুরে নৃশংসতার সঙ্গেও জড়িত। জাতিসংঘ বলেছে, এটি গণহত্যা।
গত বুধবার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, প্রায় ১৮ মাস ধরে অবরোধ, অনাহার ও বোমাবর্ষণের পর গত ২৬ অক্টোবর এল-ফাশের ও এর আশপাশের এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় আরএসএফ। দখল নেওয়ার পর এই অঞ্চল থেকে এ পর্যন্ত ৮১ হাজার ৮১৭ জন মানুষ পালিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই পায়ে হেঁটে এলাকা ছেড়েছেন। সংস্থাটি বলছে, এলাকা ছেড়ে যাওয়াদের অনেকেই উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশেরের বিভিন্ন অংশে ও নিকটবর্তী শহর তাওয়িলায় আশ্রয় নিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর শহরের ভেতরে হাজারো মানুষকে মেরে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন চালিয়েছে। মুক্তিপণের জন্য অনেককে আটকে রেখেছে। কলেরা ও অন্যান্য মারাত্মক রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। আলজাজিরার তথ্যমতে, বর্তমান যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আইওএম ধারণা করেছিল, সুদানে ২৩ লাখ ২০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই দারফুরে আশ্রয় নিয়েছেন।
সুদানের অভ্যন্তরে এ পর্যন্ত ৭২ লাখ ৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যার মধ্যে খার্তুম থেকে ২৭ লাখের কাছাকাছি, দক্ষিণ দারফুর থেকে ২০ লাখ ও উত্তর দারফুর থেকেও ২০ লাখের মতো মানুষ দেশে ছেড়েছেন। গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ক্ষুধা, হতাশা, অবসাদগ্রস্ততার কারণে সুদানিরা দেশ ছাড়ছেন। যুদ্ধের কারণে দেশটির কৃষি উৎপাদন ৭৮ শতাংশ কমে গেছে, ফলে বাড়ছে ক্ষুধা সংকট। ফলে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন সুদানের বাসিন্দারা।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পূর্ব চাদে পাড়ি জমিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ নারী এবং শিশু। এই সংখ্যা ২০২৪ সালে এক সপ্তাহের রেকর্ড সংখ্যা। চাদ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। গত বছর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে চাদে এখন পর্যন্ত সুদানের ৬ লাখের বেশি আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। সুদানের দারফুর অঞ্চলের ফারচানা শিবিরের পরিস্থিতি দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। শিবিরে থাকা শরণার্থীরা গার্ডিয়ানকে তাদের হতাশার কথা জানিয়েছেন। অনেকেই ইতালি, ইউরোপের অন্যান্য দেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর দিকে অগ্রসর হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ফারচানা ক্যাম্পের পরিচালক হাতিম আবদুল্লাহ এল-ফাদিল বলেছেন, সংকট এতটাই দেখা দিয়েছে যে, সুদানিরা খাবারের জন্য শহরের বাজারে ভিক্ষা করতে যান। এছাড়া দারফুরের জমজম বাস্তুচ্যুতি শিবিরে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘাতের কারণে এই অঞ্চলে কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন। ২৬ মিলিয়ন মানুষ মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে।