চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে বিদেশি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বন্দর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু উন্নতি করতে হলে প্রযুক্তি, অর্থ ও দক্ষতা প্রয়োজন। বন্দর ঘিরে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার, (১০ নভেম্বর ২০২৫) সকালে নগরীর পতেঙ্গা এলাকার লালদিয়া চরে কন্টেইনার ইয়ার্ডের নির্মাণকাজ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার বিরোধিতাকারীদের ‘একহাত’ নিয়েছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, কিছু করলেই খালি চলে গেল, চলে গেল, আরে কী চলে গেল ভাই! গত ১৭ বছর কথা বলেননি কেন- এ প্রশ্নও তুলেছেন উপদেষ্টা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর এবং বে-টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব ইজারার ভিত্তিতে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনও এতে একাত্ম হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় একমাসের জন্য সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নগর পুলিশ।
এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে নৌ উপদেষ্টাকে পেয়ে সাংবাদিকরা বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি এই দেশকে আগায়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে এই বন্দরকে আগায়ে নিয়ে যেতে হবে। বন্দরকে আগায়ে নিয়ে যাবার মতো আমাদের ম্যাক্সিমাম ক্ষমতা যা ছিল, তা এখানে দেখা যাচ্ছে। যারা কথা বলেন, তাদের যদি আমি বলি যে, গত ১৭ বছর কথা বলেননি কেন? গত ১৭ বছরে এই বন্দরে যখন লুটপাট চলছিল, তখন তো কথা বলেননি। আই অ্যাম সরি, আমি জানি আমার ওপর অনেক ইটপাটকেল নিক্ষেপ হবে, বাট আই ডোন্ট কেয়ার।
বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত আরও বলেন, আপনি কোনো কিছু করলেই খালি চলে গেল, চলে গেল, চলে গেল, আরে কী চলে গেল রে ভাই। আমি তো এখন মুখ ফুটে অনেক কথা বলতে পারছি না। যখন একমাথা থেকে আরেক মাথা দেয়ার ব্যবস্থা করছিল, তখন তো কোনো কথা বলেননি। তখন তো বলেননি, চলে গেল, চলে গেল। কিচ্ছু চলে যায়নি। অনলি পোর্টের অ্যাফিশিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাতে আসি, আমি কিন্তু ‘যদি’ বলছি, যদি আমাদের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন ফুলফিল হয়, যদি আমরা দেই, তাহলে আপনারাই দেখবেন। আমি জানি না আল্লাহ ক’দিন আমার হায়াত রেখেছেন, আপনারাই দেখবেন, এই পোর্টের চেহারা বদলেছে কী বদলায়নি।
তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে, আমাদের একবিংশ শতাব্দীতে থাকতে হবে, আবার একবিংশ শতাব্দী থেকে বেরও হয়ে যেতে হবে। এক সময় তো আমরা মোবাইল টেলিফোন দেখিনি। এখন মোবাইল টেলিফোন আছে। আজকাল আবার মোবাইল টেলিফোনের বাইরে গিয়ে দেখছি আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই)। চীনে আমি একটা পোর্ট দেখে আসছি, যেখানে পাঁচজন লোক পোর্ট চালাচ্ছে, অনলি ফাইভ। যদি আপনাদের কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে আমি বলব যে উনি (বন্দর চেয়ারম্যান) দুই-তিনজনকে ওখানে পাঠাক, তারা গিয়ে দেখে আসুক।
আমি ওখানে ঢুকে মনে হলো যে- আমি একটা গোস্ট ছবি দেখছি। কোনো মানুষ নাই, জন নাই তৈরি হচ্ছে, যাচ্ছে আর বের হয়ে যাচ্ছে। আবার সামনে বাধা পাচ্ছে, সরে যাচ্ছে। আমরা এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকব নাকি এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকবো না ?
নগরীর পতেঙ্গায় লালদিয়ার চরে প্রায় ৩২ একর জায়গার ওপর একটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৪ একর জায়গায় ইয়ার্ড করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বন্দরের ১০ হাজার একক কন্টেইনার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
এ সময় বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যারিফ বাড়ানোর আগে সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু আদালতে গেছে, এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আদালতে ট্যারিফ বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে।
এরপর নৌ পরিবহন উপদেষ্টা বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা বে-টার্মিনাল এলাকায় নির্মিত পরিবহন টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। এছাড়া বন্দর এলাকায় ইস্ট কলোনিসংলগ্ন তালতলায় নির্মিত কন্টেইনার ইয়ার্ডেরও উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা। তিনি বন্দরের এক্স-ওয়াই শেড এবং কাস্টমস অকশন শেডও পরির্দশন করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ও সচিব মো. ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের করতে বিদেশি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, বন্দর নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলবে। কিন্তু উন্নতি করতে হলে প্রযুক্তি, অর্থ ও দক্ষতা প্রয়োজন। বন্দর ঘিরে চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার, (১০ নভেম্বর ২০২৫) সকালে নগরীর পতেঙ্গা এলাকার লালদিয়া চরে কন্টেইনার ইয়ার্ডের নির্মাণকাজ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার বিরোধিতাকারীদের ‘একহাত’ নিয়েছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, কিছু করলেই খালি চলে গেল, চলে গেল, আরে কী চলে গেল ভাই! গত ১৭ বছর কথা বলেননি কেন- এ প্রশ্নও তুলেছেন উপদেষ্টা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), লালদিয়ার চর এবং বে-টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব ইজারার ভিত্তিতে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। এর প্রতিবাদে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠনও এতে একাত্ম হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় একমাসের জন্য সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে নগর পুলিশ।
এ পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে নৌ উপদেষ্টাকে পেয়ে সাংবাদিকরা বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি এই দেশকে আগায়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে এই বন্দরকে আগায়ে নিয়ে যেতে হবে। বন্দরকে আগায়ে নিয়ে যাবার মতো আমাদের ম্যাক্সিমাম ক্ষমতা যা ছিল, তা এখানে দেখা যাচ্ছে। যারা কথা বলেন, তাদের যদি আমি বলি যে, গত ১৭ বছর কথা বলেননি কেন? গত ১৭ বছরে এই বন্দরে যখন লুটপাট চলছিল, তখন তো কথা বলেননি। আই অ্যাম সরি, আমি জানি আমার ওপর অনেক ইটপাটকেল নিক্ষেপ হবে, বাট আই ডোন্ট কেয়ার।
বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশ্যে সাখাওয়াত আরও বলেন, আপনি কোনো কিছু করলেই খালি চলে গেল, চলে গেল, চলে গেল, আরে কী চলে গেল রে ভাই। আমি তো এখন মুখ ফুটে অনেক কথা বলতে পারছি না। যখন একমাথা থেকে আরেক মাথা দেয়ার ব্যবস্থা করছিল, তখন তো কোনো কথা বলেননি। তখন তো বলেননি, চলে গেল, চলে গেল। কিচ্ছু চলে যায়নি। অনলি পোর্টের অ্যাফিশিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাতে আসি, আমি কিন্তু ‘যদি’ বলছি, যদি আমাদের টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন ফুলফিল হয়, যদি আমরা দেই, তাহলে আপনারাই দেখবেন। আমি জানি না আল্লাহ ক’দিন আমার হায়াত রেখেছেন, আপনারাই দেখবেন, এই পোর্টের চেহারা বদলেছে কী বদলায়নি।
তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে, আমাদের একবিংশ শতাব্দীতে থাকতে হবে, আবার একবিংশ শতাব্দী থেকে বেরও হয়ে যেতে হবে। এক সময় তো আমরা মোবাইল টেলিফোন দেখিনি। এখন মোবাইল টেলিফোন আছে। আজকাল আবার মোবাইল টেলিফোনের বাইরে গিয়ে দেখছি আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই)। চীনে আমি একটা পোর্ট দেখে আসছি, যেখানে পাঁচজন লোক পোর্ট চালাচ্ছে, অনলি ফাইভ। যদি আপনাদের কোনো সন্দেহ থাকে, তাহলে আমি বলব যে উনি (বন্দর চেয়ারম্যান) দুই-তিনজনকে ওখানে পাঠাক, তারা গিয়ে দেখে আসুক।
আমি ওখানে ঢুকে মনে হলো যে- আমি একটা গোস্ট ছবি দেখছি। কোনো মানুষ নাই, জন নাই তৈরি হচ্ছে, যাচ্ছে আর বের হয়ে যাচ্ছে। আবার সামনে বাধা পাচ্ছে, সরে যাচ্ছে। আমরা এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকব নাকি এই প্রযুক্তির মধ্যে থাকবো না ?
নগরীর পতেঙ্গায় লালদিয়ার চরে প্রায় ৩২ একর জায়গার ওপর একটি কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১৪ একর জায়গায় ইয়ার্ড করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে বন্দরের ১০ হাজার একক কন্টেইনার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।
এ সময় বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্যারিফ বাড়ানোর আগে সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি যেহেতু আদালতে গেছে, এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না। আদালতে ট্যারিফ বাড়ানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে।
এরপর নৌ পরিবহন উপদেষ্টা বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে নির্মাণের অপেক্ষায় থাকা বে-টার্মিনাল এলাকায় নির্মিত পরিবহন টার্মিনালের উদ্বোধন করেন। এছাড়া বন্দর এলাকায় ইস্ট কলোনিসংলগ্ন তালতলায় নির্মিত কন্টেইনার ইয়ার্ডেরও উদ্বোধন করেন উপদেষ্টা। তিনি বন্দরের এক্স-ওয়াই শেড এবং কাস্টমস অকশন শেডও পরির্দশন করেন। এ সময় চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান ও সচিব মো. ওমর ফারুকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।