মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও শিক্ষা-সাংবাদিকতা-অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ও ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চুন্টা ও কালীকচ্ছ গ্রামের অবদান অবিস্মরণীয়। স্বাভাবিক কারণেই ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার ও এদেশীয় রাজাকারদের টার্গেট ছিল এ দুই গ্রামের ওপর; যার নির্মম সাক্ষী সরাইল-নাসিরনগর সড়কের পাশে ধর্মতীর্থ বধ্যভূমি। ’৭১-এর ১৮ অক্টোবর এখানে হত্যা করা হয় দুই গ্রামের অগণিত মানুষকে। এর কয়েক দিন আগে মুক্তিবাহিনীর অভিযানে থানার রাজাকার ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই বর্বরতা চালানো হয় নিরীহ মানুষদের ওপর। যুদ্ধের শুরুতে কালীকচ্ছ পাঠশালার শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস, ইউপি সদস্য জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরী, জীবেশ বন্ধু চৌধুরী ও প্রাণ গোপাল চৌধুরীসহ কয়েকজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে নির্মমতা শুরু করেছিল হানাদার বাহিনী ও এদের দালালরা তার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটায় ১৮ অক্টোবর। সেই সময় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল কালীকচ্ছ ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌড়াগোদা গ্রামের অসংখ্য বাড়ি-ঘর। চৌড়াগোদা ছিল মুক্তিবাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এ পর্যন্ত পাওয়া ৭১ সালে শহীদ কালীকচ্ছ গ্রামের ২২ জন হলেন : ১. নবী হোসেন বক্স, পিতা-হামিদ হোসেন বক্স; ২. আ. মন্নাফ, পিতা-গেদু মিয়া; ৩. রহমান উদ্দিন, পিতা-আহাম্মদ মিয়া; ৪. মনলস্কর, পিতা-আশ্রব আলী লস্কর; ৫. আব্দুল মালেক, পিতা-আব্দুল খালেক; ৬. প্রাণ লাল চৌধুরী, পিতা-গোবর্ধন চৌধুরী; ৭. বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস, পিতা-মহেস চন্দ্র দাস; ৮. জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, পিতা-কাশীনাথ চৌধুরী; ৯. দিনেশ চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস; ১০. সুরেশ চন্দ্র দাস, পিতা-পুলক চন্দ্র দাস; ১১. আনন্দ চন্দ্র দাস, পিতা-পুলক চন্দ্র দাস; ১২. ধরণী দেব/শাখা ব্যাপারী, পিতা-প্রযতেœ বলাই সেন; ১৩. জীবেশ বন্ধু চৌধুরী, পিতা-গোবিন্দ চৌধুরী; ১৪. গোপাল চন্দ্র দাস, পিতা-রাজেশ চন্দ্র দাস; ১৫. সন্তুনাথ সাহা, পিতা-রাম গোবিন্দা সাহা; ১৬. প্রাণ কুমার সেন, পিতা-প্রাণ কুমার সেন, পিতা-হরিবল সেন; ১৭. বিনয় চক্রবর্তী ঠাকুর, পিতা-ঠাকুর কাছন গোসাই; ১৮. যতীন্দ্র চন্দ্র দাস, পিতা-রাজিন্দ্র চন্দ্র দাস; ১৯. নিরোদ দাস, পিতা-নবীন চন্দ্র দাস; ২০. প্রাণ কুমার দাস, পিতা-কন্ঠিরাম দাস; ২১. ধনঞ্জয় চন্দ্র দাস, গ্রাম-জলধর দাস; ২২. উপেন্দ্র চন্দ্র দাস, পিতা-নারায়ণ চন্দ্র দাস।
চুন্টা গ্রামের শহীদরা হলেন : ২৩. সুখলাল মালাকার, পিতা-মহানন্দ মালাকার; ২৪. যোগেশ চন্দ্র সেন, পিতামৃত ভগবান চন্দ্র সেন; ২৫. রমনী কান্ত সরকার, পিতা-মৃত রজনী কান্ত সরকার; ২৬. রনধীর সরকার, পিতা-মৃত রমনী কান্ত সরকার; ২৭. তরনী চন্দ্র ভট্টাচার্য্য; ২৮. পরেশ চন্দ, পিতা-পিতাম্বর; ২৯. ননী ভূষণ বিশ্বাস, পিতা-মৃত ভবদাচরণ বিশ্বাস; ৩০. পরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত ননী ভূষণ বিশ্বাস; ৩১. সোনারচান বিশ্বাস, পিতা-মৃত লালচান বিশ্বাস; ৩২. রূপচান বিশ্বাস, পিতা-মৃত লালচান বিশ্বাস; ৩৩. সুকুমার বিশ্বাস, পিতা-মৃত লালচান বিশ্বাস; ৩৪. যতীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত রাজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস; ৩৫. মাখন চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত বক্স চন্দ্র বিশ্বাস; ৩৬. দুর্জধন নমসুদ্র, পিতা-মৃত বুধাই নমসুদ্র; ৩৭. প্রসন্ন কুমার পাল, পিতা-মৃত কৃষ্ণ কুমার পাল; ৩৮. গোপাল চন্দ্র পাল, পিতা-মৃত বলারাম চন্দ্র পাল; ৩৯. মরন চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস; ৪০. ধীরেন্দ্র চন্দ্র পাল, পিতা-মৃত গুরুচরণ পাল; ৪১. অখিল চন্দ্র পাল, পিতা-মৃত কুলচন্দ্র পাল; ৪২, প্রফুল্ল চন্দ্র ভদ্র, পিতা-মৃত নবীন চন্দ্র ভদ্র; ৪৩. সুধীন চন্দ্র ভদ্র, পিতা-মৃত রমেশ চন্দ্র ভদ্র; ৪৪. কালাচান দেবনাথ, পিতা-মৃত বলারাম দেবনাথ।
ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে শহীদদের এই তালিকাটি ডা. আবুল কাসেম তালুকদার কর্তৃক সংগৃহীত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নান্নু শাহের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
শহীদদের রক্তের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল ৯ মাসে; কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এ শহীদদের স্মরণে কালীকচ্ছে বা ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে ১৮অক্টোবর ফুল দিতে জড়ো হন স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজন ও এলাকার সচেতন মানুষেরা। তাই এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সময়ের দাবি। শহীদদের স্মৃতিসৌধে তাদের নাম লিখে রাখা হলে বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাস ও পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা।
শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ, সভাপতি, সরাইল ইতিহাস পরিষদ
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৪
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও শিক্ষা-সাংবাদিকতা-অসাম্প্রদায়িক আদর্শ ও ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চুন্টা ও কালীকচ্ছ গ্রামের অবদান অবিস্মরণীয়। স্বাভাবিক কারণেই ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার ও এদেশীয় রাজাকারদের টার্গেট ছিল এ দুই গ্রামের ওপর; যার নির্মম সাক্ষী সরাইল-নাসিরনগর সড়কের পাশে ধর্মতীর্থ বধ্যভূমি। ’৭১-এর ১৮ অক্টোবর এখানে হত্যা করা হয় দুই গ্রামের অগণিত মানুষকে। এর কয়েক দিন আগে মুক্তিবাহিনীর অভিযানে থানার রাজাকার ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই বর্বরতা চালানো হয় নিরীহ মানুষদের ওপর। যুদ্ধের শুরুতে কালীকচ্ছ পাঠশালার শিক্ষক গোপাল চন্দ্র দাস, ইউপি সদস্য জ্ঞানেন্দ্র চৌধুরী, জীবেশ বন্ধু চৌধুরী ও প্রাণ গোপাল চৌধুরীসহ কয়েকজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে নির্মমতা শুরু করেছিল হানাদার বাহিনী ও এদের দালালরা তার চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটায় ১৮ অক্টোবর। সেই সময় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল কালীকচ্ছ ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের চৌড়াগোদা গ্রামের অসংখ্য বাড়ি-ঘর। চৌড়াগোদা ছিল মুক্তিবাহিনীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
এ পর্যন্ত পাওয়া ৭১ সালে শহীদ কালীকচ্ছ গ্রামের ২২ জন হলেন : ১. নবী হোসেন বক্স, পিতা-হামিদ হোসেন বক্স; ২. আ. মন্নাফ, পিতা-গেদু মিয়া; ৩. রহমান উদ্দিন, পিতা-আহাম্মদ মিয়া; ৪. মনলস্কর, পিতা-আশ্রব আলী লস্কর; ৫. আব্দুল মালেক, পিতা-আব্দুল খালেক; ৬. প্রাণ লাল চৌধুরী, পিতা-গোবর্ধন চৌধুরী; ৭. বীরেন্দ্র চন্দ্র দাস, পিতা-মহেস চন্দ্র দাস; ৮. জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী, পিতা-কাশীনাথ চৌধুরী; ৯. দিনেশ চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-আনন্দ চন্দ্র বিশ্বাস; ১০. সুরেশ চন্দ্র দাস, পিতা-পুলক চন্দ্র দাস; ১১. আনন্দ চন্দ্র দাস, পিতা-পুলক চন্দ্র দাস; ১২. ধরণী দেব/শাখা ব্যাপারী, পিতা-প্রযতেœ বলাই সেন; ১৩. জীবেশ বন্ধু চৌধুরী, পিতা-গোবিন্দ চৌধুরী; ১৪. গোপাল চন্দ্র দাস, পিতা-রাজেশ চন্দ্র দাস; ১৫. সন্তুনাথ সাহা, পিতা-রাম গোবিন্দা সাহা; ১৬. প্রাণ কুমার সেন, পিতা-প্রাণ কুমার সেন, পিতা-হরিবল সেন; ১৭. বিনয় চক্রবর্তী ঠাকুর, পিতা-ঠাকুর কাছন গোসাই; ১৮. যতীন্দ্র চন্দ্র দাস, পিতা-রাজিন্দ্র চন্দ্র দাস; ১৯. নিরোদ দাস, পিতা-নবীন চন্দ্র দাস; ২০. প্রাণ কুমার দাস, পিতা-কন্ঠিরাম দাস; ২১. ধনঞ্জয় চন্দ্র দাস, গ্রাম-জলধর দাস; ২২. উপেন্দ্র চন্দ্র দাস, পিতা-নারায়ণ চন্দ্র দাস।
চুন্টা গ্রামের শহীদরা হলেন : ২৩. সুখলাল মালাকার, পিতা-মহানন্দ মালাকার; ২৪. যোগেশ চন্দ্র সেন, পিতামৃত ভগবান চন্দ্র সেন; ২৫. রমনী কান্ত সরকার, পিতা-মৃত রজনী কান্ত সরকার; ২৬. রনধীর সরকার, পিতা-মৃত রমনী কান্ত সরকার; ২৭. তরনী চন্দ্র ভট্টাচার্য্য; ২৮. পরেশ চন্দ, পিতা-পিতাম্বর; ২৯. ননী ভূষণ বিশ্বাস, পিতা-মৃত ভবদাচরণ বিশ্বাস; ৩০. পরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত ননী ভূষণ বিশ্বাস; ৩১. সোনারচান বিশ্বাস, পিতা-মৃত লালচান বিশ্বাস; ৩২. রূপচান বিশ্বাস, পিতা-মৃত লালচান বিশ্বাস; ৩৩. সুকুমার বিশ্বাস, পিতা-মৃত লালচান বিশ্বাস; ৩৪. যতীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত রাজেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস; ৩৫. মাখন চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত বক্স চন্দ্র বিশ্বাস; ৩৬. দুর্জধন নমসুদ্র, পিতা-মৃত বুধাই নমসুদ্র; ৩৭. প্রসন্ন কুমার পাল, পিতা-মৃত কৃষ্ণ কুমার পাল; ৩৮. গোপাল চন্দ্র পাল, পিতা-মৃত বলারাম চন্দ্র পাল; ৩৯. মরন চন্দ্র বিশ্বাস, পিতা-মৃত গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস; ৪০. ধীরেন্দ্র চন্দ্র পাল, পিতা-মৃত গুরুচরণ পাল; ৪১. অখিল চন্দ্র পাল, পিতা-মৃত কুলচন্দ্র পাল; ৪২, প্রফুল্ল চন্দ্র ভদ্র, পিতা-মৃত নবীন চন্দ্র ভদ্র; ৪৩. সুধীন চন্দ্র ভদ্র, পিতা-মৃত রমেশ চন্দ্র ভদ্র; ৪৪. কালাচান দেবনাথ, পিতা-মৃত বলারাম দেবনাথ।
ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে শহীদদের এই তালিকাটি ডা. আবুল কাসেম তালুকদার কর্তৃক সংগৃহীত এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা নান্নু শাহের সৌজন্যে প্রাপ্ত।
শহীদদের রক্তের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল ৯ মাসে; কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও এ শহীদদের স্মরণে কালীকচ্ছে বা ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে নির্মিত হয়নি কোনো স্মৃতিসৌধ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মতীর্থ বধ্যভূমিতে ১৮অক্টোবর ফুল দিতে জড়ো হন স্থানীয় প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার-পরিজন ও এলাকার সচেতন মানুষেরা। তাই এখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ সময়ের দাবি। শহীদদের স্মৃতিসৌধে তাদের নাম লিখে রাখা হলে বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারবে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাস ও পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা।
শাহ শেখ মজলিশ ফুয়াদ, সভাপতি, সরাইল ইতিহাস পরিষদ