মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়ছে। রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে জরুরি রোগীরাও সঠিক সময়ে সেবা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটি এখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার একটি সঙ্কটময় বাস্তবতা। এই সংকটের মূল কারণ হলো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সেবা কেন্দ্রগুলোর দুর্বল অবস্থা এবং কার্যকর রেফারেল সিস্টেমের অভাব।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা তিনটি স্তরে বিভক্ত। প্রাথমিক স্তরের সেবা ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে, যেখানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো অন্তর্ভুক্ত। এগুলোতে সাধারণত জ্বর, ঠান্ডা, পেটের সমস্যা, এবং মাতৃস্বাস্থ্যসহ ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। মাধ্যমিক স্তরের সেবা উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে প্রদান করা হয়, যেখানে শল্য চিকিৎসা, প্রসূতি সেবা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাথমিক পরামর্শ পাওয়া যায়। তৃতীয় স্তরের সেবা বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিশেষায়িত হাসপাতালে, যেমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়। এখানে উন্নত শল্য চিকিৎসা, জটিল রোগ নির্ণয় এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হয়।
ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের সেবা কেন্দ্রগুলো প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, সরঞ্জাম এবং ওষুধের অভাবে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না। একই সঙ্গে, অনেক চিকিৎসক গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে অনাগ্রহী। আবাসন, নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে তারা এসব স্থানে পোস্টিং নিতে চান না। এর ফলে প্রাথমিক স্তরের সেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের সেবা ব্যবস্থার এই করুণ অবস্থার কারণে রোগীরা সরাসরি তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভর করছেন। যার ফলে বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দৈনিক ১০০-১৫০ রোগী দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। যা মানসম্মত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে রোগীরা প্রাথমিক স্তরে চিকিৎসা না নিয়ে সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চলে যাওয়াতে জেনারেল র্প্যাকটিশনার (জিপি) চিকিৎসকদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।
এই সংকট সমাধানে একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা জরুরি। রোগীরা প্রথমে প্রাথমিক স্তরের সেবা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে রেফার করা হবে। এছাড়া, চিকিৎসকদের গ্রামীণ এলাকায় কাজ করতে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা, যেমন বাড়তি বেতন, নিরাপত্তা এবং আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। যার ফলে, তৃতীয় স্তরের হাসপাতালের রোগীর চাপ কমবে এবং দেশের প্রত্যেক মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ পাবে।
মাহাদিয়া মুতমাইন্না বিনতে আহমেদ
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলো রোগীতে উপচে পড়ছে। রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে জরুরি রোগীরাও সঠিক সময়ে সেবা পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটি এখন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার একটি সঙ্কটময় বাস্তবতা। এই সংকটের মূল কারণ হলো প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সেবা কেন্দ্রগুলোর দুর্বল অবস্থা এবং কার্যকর রেফারেল সিস্টেমের অভাব।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা তিনটি স্তরে বিভক্ত। প্রাথমিক স্তরের সেবা ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে, যেখানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো অন্তর্ভুক্ত। এগুলোতে সাধারণত জ্বর, ঠান্ডা, পেটের সমস্যা, এবং মাতৃস্বাস্থ্যসহ ছোটখাটো রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়। মাধ্যমিক স্তরের সেবা উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে প্রদান করা হয়, যেখানে শল্য চিকিৎসা, প্রসূতি সেবা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রাথমিক পরামর্শ পাওয়া যায়। তৃতীয় স্তরের সেবা বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ের বিশেষায়িত হাসপাতালে, যেমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়। এখানে উন্নত শল্য চিকিৎসা, জটিল রোগ নির্ণয় এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে সেবা নিশ্চিত করা হয়।
ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের সেবা কেন্দ্রগুলো প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, সরঞ্জাম এবং ওষুধের অভাবে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না। একই সঙ্গে, অনেক চিকিৎসক গ্রামীণ বা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করতে অনাগ্রহী। আবাসন, নিরাপত্তা এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে তারা এসব স্থানে পোস্টিং নিতে চান না। এর ফলে প্রাথমিক স্তরের সেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের সেবা ব্যবস্থার এই করুণ অবস্থার কারণে রোগীরা সরাসরি তৃতীয় স্তরের হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভর করছেন। যার ফলে বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা দৈনিক ১০০-১৫০ রোগী দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। যা মানসম্মত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অন্যদিকে রোগীরা প্রাথমিক স্তরে চিকিৎসা না নিয়ে সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চলে যাওয়াতে জেনারেল র্প্যাকটিশনার (জিপি) চিকিৎসকদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে।
এই সংকট সমাধানে একটি কার্যকর রেফারেল সিস্টেম চালু করা জরুরি। রোগীরা প্রথমে প্রাথমিক স্তরের সেবা কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং গুরুতর রোগের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা তৃতীয় স্তরের হাসপাতালে রেফার করা হবে। এছাড়া, চিকিৎসকদের গ্রামীণ এলাকায় কাজ করতে উৎসাহিত করতে বিশেষ প্রণোদনা, যেমন বাড়তি বেতন, নিরাপত্তা এবং আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব। যার ফলে, তৃতীয় স্তরের হাসপাতালের রোগীর চাপ কমবে এবং দেশের প্রত্যেক মানুষ মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ পাবে।
মাহাদিয়া মুতমাইন্না বিনতে আহমেদ
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়