alt

চিঠিপত্র

বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

: বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

উন্নয়নের নামে বনভূমি নিধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটা যেন বেড়েই চলেছে। শিল্প কারখানা নির্মাণ, জ্বালানি চাহিদা মেটানো, জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল তৈরি করতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত বনভূমি নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, বিভিন্ন চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যাপকহারে বনভূমি উজাড় করে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ঋঅঙ এর মতে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মোট ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ, যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।

বর্তমানের এই যুগে এসে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে আধুনিক সব স্থাপনা, কলকারখানা, ইটভাটা এবং বসতবাড়ি। ফলে ব্যাপক পরিমাণ কাঠের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আজ হিমশিম খাচ্ছে। ব্যাপক মাত্রায় বন নিধনের ফলে জলবাছুর ভারসাম্যহীনতা হ্রাস, মাটি ক্ষয়, বন্যা, বন্য জীবন বিলুপ্তি এবং জনজীবনের মান হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও বন জঙ্গলে বসবাসকারী জীবজন্তুরা আবাসস্থলের সমস্যায় ভুগছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১১% এর জন্য বন উজাড় দায়ী। গ্রীষ্মম-লীয় বন উজাড় থেকে কার্বন নির্গমন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে আমাদের পরিবেশ, ক্রমশ ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনের উপায় কী? আর কিভাবেই বা আমরা বন সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি?

আর্থিক এবং পরিবেশগত উভয় দিক থেকেই বনের গুরুত্ব অবর্ণনীয়। আমরা জানি, গাছ পরিবেশের ক্ষতিকারক কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে অক্সিজেন প্রবাহের মাধ্যমে আমাদের জীবন ধারণে ভূমিকা রাখে। এছাড়া

বন সৌর বিকিরণের তীব্রতা হ্রাস, আবহাওয়া শীতলীকরণ, তাপমাত্রা পরিবর্তন, মাটি থেকে বাষ্পীভবন হ্রাস এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে জলবাছুর উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর মোট ভূমির ৩১% জুড়ে রয়েছে বনভূমি। প্রতি বছর, ৭৫,৭০০ বর্গকিলোমিটার (১৮.৭ মিলিয়ন একর) বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমির ক্ষতি ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে। বন উজাড়ের অনেক কারণ এবং চালিকাশক্তি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: কৃষিকাজ , গবাদি পশুচারণ, কাঠের জন্য কাঠ কাটা এবং দাবানল। সম্প্রতি লস এঞ্জেলেসে সংঘটিত দাবানলে ৪০ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিরিতে কাঠ চোর চক্রের থাবায় উজার হচ্ছে বনভূমি। যেহেতু বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি, তাই চাহিদা পূরণে বনের উপর প্রভাব পড়াটাও স্বাভাবিক। কেননা আমরা এখনো বন থেকে প্রাপ্ত কাঠ, ফলমূল, মধু, ভেষজ, ঔষধি গাছ, জৈব সারের ওপর নির্ভরশীল।

ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বন উজাড় প্রক্রিয়া চলছে। যদিও মানুষেরই প্রয়োজনে এই মূল্যবান সম্পদ উজাড় করা হচ্ছে তবে আমাদের চাহিদা পূরণ যেন আমাদের অস্তিত্বের বিলুপ্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টিপাত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন: কাঠের বিকল্প হিসেবে যথাসম্ভব রডের ব্যবহার করা, রাস্তা ও রেললাইনের দুই পাশে, বাসা বাড়ির ছাদে এবং বারান্দায় গাছ লাগানো, চাহিদা পূরণে কাঠের বিকল্প হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ আরও বেশ কিছু কাজ করতে পারি। তবেই আশা করা যায় বন সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব।

আয়শা আক্তার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শুধু ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দরদ?

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা

জমি দখলের ক্ষতিপূরণ চাই

পুরান ঢাকায় মশার উৎপাত

গুইমারায় স্বাস্থ্যসেবা সংকট : অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : একটি জাতীয় সংকট

নাম পাল্টে গেলে কত কী যে হয়

অনুপ্রেরণা হোক তুলনাহীন

দূষণ রোধে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস জরুরি

পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়ান

গণরুম প্রথার বিলুপ্তি কবে?

রেলসেবার মান বাড়ান

নওগাঁ সরকারি কলেজের সংকট

টিকিটের দাম আকাশচুম্বী

জকিগঞ্জে গ্রামীণ সড়কের দুরবস্থা

রেলে দুর্নীতি

নবায়নযোগ্য শক্তির বিকল্প নেই

পথশিশুদের ভয়ঙ্কর নেশাদ্রব্য থেকে রক্ষা করুন

ঢাকা-ময়মনসিংহ ননস্টপ ট্রেন ও ডাবল লাইন নির্মাণের দাবি

শিশুদের প্রতি প্রতিহিংসা বন্ধ করুন

চরবাসীর নদী পারাপারে নিরাপত্তার প্রয়োজন

জন্মনিবন্ধন সেবায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় : ব্যবস্থা নিন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে স্পিডব্রেকার চাই

উন্নয়নের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান কারিগরি শিক্ষা

পোস্তগোলায় নিম্নমানের ড্রেন নির্মাণ

দিনমজুর সংকটে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত

পানাম সেতু : ঐতিহ্য রক্ষায় অবহেলা নয়

যাত্রাবাড়ীর চৌরাস্তা থেকে ধোলাইখাল বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত রাস্তার দুরবস্থা

মহেশখালী-কক্সবাজার নৌপথে সেতু চাই

পাঠ্যবই খোলাবাজারে কেন?

বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক : একটি অদৃশ্য প্রভাবের রাজনীতি

সাইবার সিকিউরিটি ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা

শহরের সবুজায়ন : টিকে থাকার লড়াই

ইজতেমার ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত হোক

নারী ফুটবল ও সামাজিক সংকীর্ণতা

tab

চিঠিপত্র

বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

উন্নয়নের নামে বনভূমি নিধন নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এটা যেন বেড়েই চলেছে। শিল্প কারখানা নির্মাণ, জ্বালানি চাহিদা মেটানো, জনসংখ্যার অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল তৈরি করতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত বনভূমি নিধন চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী, বিভিন্ন চক্র নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যাপকহারে বনভূমি উজাড় করে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ঋঅঙ এর মতে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা আবশ্যক কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মোট ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ, যা পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।

বর্তমানের এই যুগে এসে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে আধুনিক সব স্থাপনা, কলকারখানা, ইটভাটা এবং বসতবাড়ি। ফলে ব্যাপক পরিমাণ কাঠের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আজ হিমশিম খাচ্ছে। ব্যাপক মাত্রায় বন নিধনের ফলে জলবাছুর ভারসাম্যহীনতা হ্রাস, মাটি ক্ষয়, বন্যা, বন্য জীবন বিলুপ্তি এবং জনজীবনের মান হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও বন জঙ্গলে বসবাসকারী জীবজন্তুরা আবাসস্থলের সমস্যায় ভুগছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রায় ১১% এর জন্য বন উজাড় দায়ী। গ্রীষ্মম-লীয় বন উজাড় থেকে কার্বন নির্গমন ত্বরান্বিত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে আমাদের পরিবেশ, ক্রমশ ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোলনের উপায় কী? আর কিভাবেই বা আমরা বন সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি?

আর্থিক এবং পরিবেশগত উভয় দিক থেকেই বনের গুরুত্ব অবর্ণনীয়। আমরা জানি, গাছ পরিবেশের ক্ষতিকারক কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস শোষণ করে অক্সিজেন প্রবাহের মাধ্যমে আমাদের জীবন ধারণে ভূমিকা রাখে। এছাড়া

বন সৌর বিকিরণের তীব্রতা হ্রাস, আবহাওয়া শীতলীকরণ, তাপমাত্রা পরিবর্তন, মাটি থেকে বাষ্পীভবন হ্রাস এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি করে জলবাছুর উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর মোট ভূমির ৩১% জুড়ে রয়েছে বনভূমি। প্রতি বছর, ৭৫,৭০০ বর্গকিলোমিটার (১৮.৭ মিলিয়ন একর) বনভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমির ক্ষতি ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে। বন উজাড়ের অনেক কারণ এবং চালিকাশক্তি রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়: কৃষিকাজ , গবাদি পশুচারণ, কাঠের জন্য কাঠ কাটা এবং দাবানল। সম্প্রতি লস এঞ্জেলেসে সংঘটিত দাবানলে ৪০ হাজার একরেরও বেশি জমি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন টেংরাগিরিতে কাঠ চোর চক্রের থাবায় উজার হচ্ছে বনভূমি। যেহেতু বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি, তাই চাহিদা পূরণে বনের উপর প্রভাব পড়াটাও স্বাভাবিক। কেননা আমরা এখনো বন থেকে প্রাপ্ত কাঠ, ফলমূল, মধু, ভেষজ, ঔষধি গাছ, জৈব সারের ওপর নির্ভরশীল।

ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বন উজাড় প্রক্রিয়া চলছে। যদিও মানুষেরই প্রয়োজনে এই মূল্যবান সম্পদ উজাড় করা হচ্ছে তবে আমাদের চাহিদা পূরণ যেন আমাদের অস্তিত্বের বিলুপ্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেই বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টিপাত করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন: কাঠের বিকল্প হিসেবে যথাসম্ভব রডের ব্যবহার করা, রাস্তা ও রেললাইনের দুই পাশে, বাসা বাড়ির ছাদে এবং বারান্দায় গাছ লাগানো, চাহিদা পূরণে কাঠের বিকল্প হিসেবে গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ আরও বেশ কিছু কাজ করতে পারি। তবেই আশা করা যায় বন সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে আমরা সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব।

আয়শা আক্তার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

back to top