alt

মতামত » চিঠিপত্র

ডিজিটাল উপনিবেশ : অদৃশ্য শৃঙ্খলের শাসন

: শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

‘আগে মানুষ মাটি হারাতো, এখন হারায় নিজস্বতা। একসময় উপনিবেশ ছিল ভূখ-ে, আজ তা গড়ে উঠছে তথ্যের পাতায়...’Ñমানব ইতিহাসে উপনিবেশের ধারণা নতুন নয়। একসময় ধনসম্পদ, জমি কিংবা মানুষ দখল করাই ছিল শক্তির প্রকাশ; কিন্তু এখন সময় বদলেছে। আজকের বিশ্বে যিনি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাধর। অস্ত্র, রাজনীতি বা অর্থনীতি নয়Ñবর্তমান সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী উপনিবেশ হলো ডিজিটাল কলোনি, যার শাসক বৃহৎ প্রযুক্তি করপোরেশন ও তথ্য নিয়ন্ত্রক শক্তিগুলো।

আমরা যখন ফেসবুকে পোস্ট দিই, গুগলে কিছু খুঁজি, ইউটিউবে ভিডিও দেখি কিংবা টিকটকে স্ক্রল করিÑভাবি সবকিছু করছি নিজের ইচ্ছায়। অথচ বাস্তবে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের আগেভাগে বিশ্লেষণ করে নিয়েছেÑআমাদের পছন্দ, অবস্থান, বয়স, ভাষা, এমনকি মন-মেজাজ পর্যন্ত। প্রতিটি ক্লিক, লাইক, সার্চ ও দেখার সময় অনুযায়ী তারা প্রোফাইল তৈরি করে। আমরা অজান্তেই হয়ে উঠছি নতুন প্রজন্মের ডেটা-দাস।

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ৩.৫ কুয়িন্টিলিয়ন (৩.৫ মিলিয়ন টেরাবাইট) তথ্য তৈরি হয়, যার ৯০% নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানÑগুগল, মেটা (ফেসবুক), অ্যামাজন, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট। তারা শুধু তথ্য জমা রাখে না, বরং প্রভাবিত করেÑআমরা কীভাবে ভাববো, কী কিনবো, এমনকি কাকে ভোট দেবো। ২০১৮ সালের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে দেখা গেছে, প্রায় আট কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, ডিজিটাল দুনিয়া শুধু বিনোদনের নয়Ñএটি এক ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো।

বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটির বেশি হবে। কিন্তু ২০২৪ সালে বিআইআইডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫% ব্যবহারকারী জানেন না তাদের তথ্য কোথায় যাচ্ছে বা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম যখন টিকটক, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন তা শুধু সময়ের অপচয় নয়Ñচিন্তার স্বাধীনতাও সীমিত হয়ে পড়ে, আর সেই সুযোগে তারা অজান্তেই অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

আমরা গর্ব করি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে, কিন্তু খুব কম মানুষই ভাবিÑএই প্রযুক্তির কতটুকু আমাদের নিজস্ব? নীতিনির্ধারণ, নিরাপত্তা, অ্যালগরিদম ও সার্ভারÑসবই যদি বিদেশি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে এই উন্নয়ন কতটা স্বাধীনতা দেয়?

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশীয় প্রযুক্তি উন্নয়ন অপরিহার্যÑযেমন নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন, অ্যাপস ও সামাজিক মাধ্যম। তথ্য সুরক্ষা আইনকে আরও কার্যকর করতে হবে এবং ডিজিটাল শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে, যেন প্রযুক্তি সচেতনভাবে ব্যবহার করা যায়।

ডিজিটাল কলোনি কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়, এটি বাস্তবতা। এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অদৃশ্য শৃঙ্খলের বন্দি হয়ে পড়বে। তথ্যের এই যুগে টিকে থাকতে হলে শুধু ব্যবহারকারী নয়, হতে হবে সচেতন নাগরিক।

ওম্মে হাবিবা তৃষা

দর্শন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

সাইবার বুলিং ও ভার্চুয়াল অপরাধ: তরুণদের অদৃশ্য বিপদ

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে নগরজীবনের চরম ভোগান্তি

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

বাল্যবিয়ে: সমাজের এক নীরব অভিশাপ

মনোস্বাস্থ্যের সংকটে তরুণরা: নীরবতার আড়ালে এক ভয়াবহ বাস্তবতা

ধূমপানের প্রভাব

ইসলামী ব্যাংকগুলোতে সার্ভিস রুল অনুযায়ী নিয়োগ

শিশুর হাতে মোবাইল নয়, চাই জীবনের মাঠে ফেরার ডাক

মতিঝিল-গুলিস্তান রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস : শৃঙ্খল ও স্বস্তির সম্ভাবনা

ভাঙ্গা-খুলনা সড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীত করুন

tab

মতামত » চিঠিপত্র

ডিজিটাল উপনিবেশ : অদৃশ্য শৃঙ্খলের শাসন

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫

‘আগে মানুষ মাটি হারাতো, এখন হারায় নিজস্বতা। একসময় উপনিবেশ ছিল ভূখ-ে, আজ তা গড়ে উঠছে তথ্যের পাতায়...’Ñমানব ইতিহাসে উপনিবেশের ধারণা নতুন নয়। একসময় ধনসম্পদ, জমি কিংবা মানুষ দখল করাই ছিল শক্তির প্রকাশ; কিন্তু এখন সময় বদলেছে। আজকের বিশ্বে যিনি তথ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাধর। অস্ত্র, রাজনীতি বা অর্থনীতি নয়Ñবর্তমান সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী উপনিবেশ হলো ডিজিটাল কলোনি, যার শাসক বৃহৎ প্রযুক্তি করপোরেশন ও তথ্য নিয়ন্ত্রক শক্তিগুলো।

আমরা যখন ফেসবুকে পোস্ট দিই, গুগলে কিছু খুঁজি, ইউটিউবে ভিডিও দেখি কিংবা টিকটকে স্ক্রল করিÑভাবি সবকিছু করছি নিজের ইচ্ছায়। অথচ বাস্তবে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের আগেভাগে বিশ্লেষণ করে নিয়েছেÑআমাদের পছন্দ, অবস্থান, বয়স, ভাষা, এমনকি মন-মেজাজ পর্যন্ত। প্রতিটি ক্লিক, লাইক, সার্চ ও দেখার সময় অনুযায়ী তারা প্রোফাইল তৈরি করে। আমরা অজান্তেই হয়ে উঠছি নতুন প্রজন্মের ডেটা-দাস।

গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন বিশ্বে প্রায় ৩.৫ কুয়িন্টিলিয়ন (৩.৫ মিলিয়ন টেরাবাইট) তথ্য তৈরি হয়, যার ৯০% নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানÑগুগল, মেটা (ফেসবুক), অ্যামাজন, অ্যাপল ও মাইক্রোসফট। তারা শুধু তথ্য জমা রাখে না, বরং প্রভাবিত করেÑআমরা কীভাবে ভাববো, কী কিনবো, এমনকি কাকে ভোট দেবো। ২০১৮ সালের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিতে দেখা গেছে, প্রায় আট কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে, ডিজিটাল দুনিয়া শুধু বিনোদনের নয়Ñএটি এক ভয়াবহ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো।

বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৪ কোটির বেশি হবে। কিন্তু ২০২৪ সালে বিআইআইডির এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৫% ব্যবহারকারী জানেন না তাদের তথ্য কোথায় যাচ্ছে বা কীভাবে ব্যবহার হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম যখন টিকটক, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে আসক্ত হয়ে পড়ে, তখন তা শুধু সময়ের অপচয় নয়Ñচিন্তার স্বাধীনতাও সীমিত হয়ে পড়ে, আর সেই সুযোগে তারা অজান্তেই অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

আমরা গর্ব করি ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নিয়ে, কিন্তু খুব কম মানুষই ভাবিÑএই প্রযুক্তির কতটুকু আমাদের নিজস্ব? নীতিনির্ধারণ, নিরাপত্তা, অ্যালগরিদম ও সার্ভারÑসবই যদি বিদেশি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে এই উন্নয়ন কতটা স্বাধীনতা দেয়?

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশীয় প্রযুক্তি উন্নয়ন অপরিহার্যÑযেমন নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন, অ্যাপস ও সামাজিক মাধ্যম। তথ্য সুরক্ষা আইনকে আরও কার্যকর করতে হবে এবং ডিজিটাল শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে, যেন প্রযুক্তি সচেতনভাবে ব্যবহার করা যায়।

ডিজিটাল কলোনি কোনো কাল্পনিক বিষয় নয়, এটি বাস্তবতা। এখনই সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অদৃশ্য শৃঙ্খলের বন্দি হয়ে পড়বে। তথ্যের এই যুগে টিকে থাকতে হলে শুধু ব্যবহারকারী নয়, হতে হবে সচেতন নাগরিক।

ওম্মে হাবিবা তৃষা

দর্শন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

back to top