মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
মতিঝিলকে ঢাকার অফিসপাড়া বলা হয়। এখানে রয়েছে বড় বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, কর্পোরেট অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গুলিস্তান ও পল্টনের সঙ্গে মিলে এটি দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও পুরান ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের একটি প্রধান পথও এটি। এখান থেকে দূরপাল্লার বাসও ছাড়ে, ফলে পরিবহন খাতে এর গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তবে খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী ও বাসাবো এলাকা থেকে প্রতিদিন মতিঝিল-গুলিস্তান অভিমুখে যাতায়াতকারীদের ভোগান্তি অসহনীয়। ফুটপাতে অবৈধ দখল, রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোর আধিপত্য জনজীবন বিপর্যস্ত করছে। মালিবাগ থেকে খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যেকোনো পথে ফুটপাত দখল এবং চলাচলের অযোগ্য অবস্থা পথচারীদের হাঁটার সুযোগও নষ্ট করেছে। এ পরিস্থিতিতে হাতিরঝিলের মতো চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করলে যাতায়াতে আধুনিকতা, স্বস্তি ও পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব।
হাতিরঝিল প্রকল্পের সাফল্য আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে আছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মাত্র চারটি বাস দিয়ে শুরু হওয়া হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস এখন ঢাকার অন্যতম সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা। খিলগাঁও-মালিবাগ থেকে মতিঝিল-গুলিস্তান পর্যন্ত অনুরূপ সার্ভিস চালু করতে হলে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। এতে শুধু পরিবহন নয়, এলাকার জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পরিবর্তন বিবেচনায় নিতে হবে।
বাসিন্দাদের মতামত ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা দরকার, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে নেবেন বলেই ধারণা। প্রকল্প বাস্তবায়নে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ব্যাটারিচালিত যান ও টেম্পু অপসারণ, এবং বাস সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে কার্যকর বিধিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য। এতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
রুট হতে পারে খিলগাঁও (মালিবাগ) কমিউনিটি সেন্টার থেকে শহীদ বাকি সড়ক হয়ে খিলগাঁও রেলক্রসিং, শাহজাহানপুর, তারপর একটি রুট ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলা-রাজউক অভিমুখে, আরেকটি রুট নটর ডেম কলেজ হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত। এতে অফিসগামীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকও উপকৃত হবেন, যানজট ও জনদুর্ভোগ কমবে, সময় বাঁচবে এবং পরিবেশ হবে স্বাস্থ্যকর।
অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক সংস্কার, ফুটপাত উপযোগীকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ, রিকশা ও টেম্পো চলাচল বন্ধ, যাত্রীছাউনি, টিকিট কাউন্টার, ওয়ার্কশপ ও প্রশাসনিক কার্যালয় স্থাপন জরুরি। পাশাপাশি টেম্পু মালিক-চালকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ রাখা উচিতÑতাদের বাস সার্ভিসে নিয়োগ বা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
গণপরিবহন আধুনিকায়নের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় শ্রমজীবী শ্রেণিকে সম্পৃক্ত করলে প্রকল্পটি হবে আরও জনবান্ধব। পরিকল্পিত তদারকিÑযেমন ফুটপাত হেঁটে চলার উপযোগী রাখা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য বর্ধন ও নিরাপত্তাÑবাস সার্ভিসের মান ধরে রাখতে সহায়ক হবে।
সব দিক বিবেচনায়, মালিবাগ-খিলগাঁও থেকে মতিঝিল-গুলিস্তান পর্যন্ত চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা গেলে এটি রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর আরেকটি কার্যকর পদক্ষেপ হবে। কঠোর তদারকি ও সব পক্ষের সহযোগিতা পেলে এ রুটকে দেশের অন্যতম সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থায় রূপ দেওয়া সম্ভব।
সাজ্জাদ হোসেন রিজু
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫
মতিঝিলকে ঢাকার অফিসপাড়া বলা হয়। এখানে রয়েছে বড় বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, কর্পোরেট অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। গুলিস্তান ও পল্টনের সঙ্গে মিলে এটি দেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। পাশাপাশি ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতাল ও পুরান ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগের একটি প্রধান পথও এটি। এখান থেকে দূরপাল্লার বাসও ছাড়ে, ফলে পরিবহন খাতে এর গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তবে খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রী ও বাসাবো এলাকা থেকে প্রতিদিন মতিঝিল-গুলিস্তান অভিমুখে যাতায়াতকারীদের ভোগান্তি অসহনীয়। ফুটপাতে অবৈধ দখল, রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টেম্পোর আধিপত্য জনজীবন বিপর্যস্ত করছে। মালিবাগ থেকে খিলগাঁও ও শাহজাহানপুর হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত যেকোনো পথে ফুটপাত দখল এবং চলাচলের অযোগ্য অবস্থা পথচারীদের হাঁটার সুযোগও নষ্ট করেছে। এ পরিস্থিতিতে হাতিরঝিলের মতো চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করলে যাতায়াতে আধুনিকতা, স্বস্তি ও পরিবেশ রক্ষায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা সম্ভব।
হাতিরঝিল প্রকল্পের সাফল্য আমাদের সামনে উদাহরণ হয়ে আছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মাত্র চারটি বাস দিয়ে শুরু হওয়া হাতিরঝিল চক্রাকার বাস সার্ভিস এখন ঢাকার অন্যতম সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা। খিলগাঁও-মালিবাগ থেকে মতিঝিল-গুলিস্তান পর্যন্ত অনুরূপ সার্ভিস চালু করতে হলে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। এতে শুধু পরিবহন নয়, এলাকার জীবনযাত্রার মান, পরিবেশ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের পরিবর্তন বিবেচনায় নিতে হবে।
বাসিন্দাদের মতামত ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা দরকার, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা এ উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে নেবেন বলেই ধারণা। প্রকল্প বাস্তবায়নে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ব্যাটারিচালিত যান ও টেম্পু অপসারণ, এবং বাস সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে কার্যকর বিধিমালা প্রণয়ন অপরিহার্য। এতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
রুট হতে পারে খিলগাঁও (মালিবাগ) কমিউনিটি সেন্টার থেকে শহীদ বাকি সড়ক হয়ে খিলগাঁও রেলক্রসিং, শাহজাহানপুর, তারপর একটি রুট ফকিরাপুল-দৈনিক বাংলা-রাজউক অভিমুখে, আরেকটি রুট নটর ডেম কলেজ হয়ে মতিঝিল শাপলা চত্বর পর্যন্ত। এতে অফিসগামীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকও উপকৃত হবেন, যানজট ও জনদুর্ভোগ কমবে, সময় বাঁচবে এবং পরিবেশ হবে স্বাস্থ্যকর।
অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক সংস্কার, ফুটপাত উপযোগীকরণ, অবৈধ দখলমুক্তকরণ, রিকশা ও টেম্পো চলাচল বন্ধ, যাত্রীছাউনি, টিকিট কাউন্টার, ওয়ার্কশপ ও প্রশাসনিক কার্যালয় স্থাপন জরুরি। পাশাপাশি টেম্পু মালিক-চালকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ রাখা উচিতÑতাদের বাস সার্ভিসে নিয়োগ বা বিনিয়োগের সুযোগ দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
গণপরিবহন আধুনিকায়নের পাশাপাশি প্রকল্প এলাকার শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থানীয় শ্রমজীবী শ্রেণিকে সম্পৃক্ত করলে প্রকল্পটি হবে আরও জনবান্ধব। পরিকল্পিত তদারকিÑযেমন ফুটপাত হেঁটে চলার উপযোগী রাখা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য বর্ধন ও নিরাপত্তাÑবাস সার্ভিসের মান ধরে রাখতে সহায়ক হবে।
সব দিক বিবেচনায়, মালিবাগ-খিলগাঁও থেকে মতিঝিল-গুলিস্তান পর্যন্ত চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা গেলে এটি রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর আরেকটি কার্যকর পদক্ষেপ হবে। কঠোর তদারকি ও সব পক্ষের সহযোগিতা পেলে এ রুটকে দেশের অন্যতম সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থায় রূপ দেওয়া সম্ভব।
সাজ্জাদ হোসেন রিজু