alt

মতামত » চিঠিপত্র

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

: সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে চিংড়ি চাষ এখন একটি বড় শিল্প। দেশের রপ্তানি আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে এই খাত থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ‘বাঙালি গলদা’ ও ‘কালো টাইগার’ চিংড়ির সুনাম দীর্ঘদিনের।রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও এই শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ পরিকল্পনা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা না হলে উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবিকা উভয়ই ক্ষতির মুখে পড়বে।

চিংড়ি ঘের সম্প্রসারণের জন্য ম্যানগ্রোভ বন উজাড় বহু বছর ধরে একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাট অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি ঘেরের জন্য রূপান্তর হয়েছে। ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে পরিচিত এই বনের সুরক্ষা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষ আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

শুধু বননাশই নয়, চিংড়ি ঘেরে ব্যবহৃত অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি আশপাশের কৃষিজমিতেও প্রভাব ফেলছে। লবণাক্ততার কারণে বহু এলাকায় ধান, শাকসবজি ও ফলচাষ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষিজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে নিজেদের পেশা পরিবর্তন করছে বা অন্য অঞ্চলে চলে যাচ্ছে।

চিংড়ি রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিক নদী ও খাল-বিলের পানিতে মিশে জলজ পরিবেশকে দূষিত করছে। এতে মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। অনেক জলাশয়ে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘের তৈরি করতে বাঁধ ও কৃত্রিম খাল-নালা নির্মাণের কারণে নদী-খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক খালের তলদেশ শুকিয়ে গিয়ে নৌ-চলাচল ও মাছধরা ব্যাহত হচ্ছে।

চিংড়ি শিল্পের সম্প্রসারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ, মাছ ও গাছপালা। মিঠাপানির প্রজাতিগুলো লবণাক্ত পরিবেশে বাঁচতে না পারায় অনেক স্থানেই বিলুপ্তির মুখে পড়ছে। জলজ পোকামাকড় কমে যাওয়ায় মাছের খাদ্যশৃঙ্খলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

লবণাক্ততা, বন কমে যাওয়া ও পানিদূষণের কারণে অনেক পাখি, মাছ ও গাছপালা ক্ষতির মুখে পড়ছে। কিছু প্রজাতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়ন্ত্রিত ঘের ব্যবস্থাপনা, ম্যানগ্রোভ রোপণ, রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ প্রণালির প্রচলন জরুরি। অর্থাৎ,

চিংড়ি চাষে নিয়ম-কানুন মানতে হবে। যেখানে বন নষ্ট হয়েছে সেখানে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। রাসায়নিক ব্যবহারে কঠোর নজরদারি দরকার। কৃষক ও স্থানীয় মানুষকে বিকল্প জীবিকার সুযোগ দিতে হবে। পানি চলাচলের পথ বন্ধ করা যাবে না।

চিংড়ি শিল্প নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত।

জান্নাতুল ফেরদাউস অহনা

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

রাবি মেডিকেল সেন্টারের সংস্কার চাই

কক্সবাজার: উন্নয়নের পথে, বিপন্ন প্রকৃতি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে নতুন সম্ভাবনার ভোর

প্রাথমিক শিক্ষকদের বঞ্চনা দূর না হলে মানোন্নয়ন অসম্ভব

রাবির আবাসন সংকট

সব হাসপাতালে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেবা চালু করা হোক

ডেঙ্গু মোকাবিলায় সচেতনতা

পানি সংকট: জীবন ও সভ্যতার জন্য বিরাট হুমকি

ই-লার্নিং: সীমান্তহীন শিক্ষার নতুন দিগন্ত

আজিমপুর কলোনির অব্যবস্থাপনা

জনস্বাস্থ্যের নীরব ঘাতক : তামাকজাত পণ্য

বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়: অবস্থান, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ইন্দো-প্যাসিফিক রাজনীতি ও বাংলাদেশের সমুদ্রকৌশল

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট: দীর্ঘসূত্রতা ও ভোগান্তির শেষ কোথায়?

পুরান ঢাকার রাস্তাগুলোর বেহাল অবস্থা

নিরাপদ শিশু খাদ্য: জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন

ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়: প্রতিদিনের দুঃস্বপ্ন

পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা

হেমন্ত আসে হিম কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে

জীবনের অভিধানে প্রবীণদের স্থান কোথায়?

নীরবতা নয়, বলতে শেখ

সুন্দরবনে টেকসই পর্যটন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও করণীয়

প্রথার নামে প্রথাগত শোষণ: উচ্চ কাবিনের ফাঁদ

শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

মধ্যবিত্তের সঞ্চয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক জায়ান্টদের মাস্টার প্ল্যান

গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যু কেন কেবলই সংখ্যা?

বাল্যবিয়ে: সমাজের এক নীরব অভিশাপ

মনোস্বাস্থ্যের সংকটে তরুণরা: নীরবতার আড়ালে এক ভয়াবহ বাস্তবতা

ধূমপানের প্রভাব

ইসলামী ব্যাংকগুলোতে সার্ভিস রুল অনুযায়ী নিয়োগ

শিশুর হাতে মোবাইল নয়, চাই জীবনের মাঠে ফেরার ডাক

মতিঝিল-গুলিস্তান রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস : শৃঙ্খল ও স্বস্তির সম্ভাবনা

ভাঙ্গা-খুলনা সড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীত করুন

ডিজিটাল উপনিবেশ : অদৃশ্য শৃঙ্খলের শাসন

বাউফল থেকে লোহালিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা

পরিবেশ বিপর্যয়ের অজানা মুখ

tab

মতামত » চিঠিপত্র

চিংড়ি শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

সোমবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে চিংড়ি চাষ এখন একটি বড় শিল্প। দেশের রপ্তানি আয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আসে এই খাত থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে ‘বাঙালি গলদা’ ও ‘কালো টাইগার’ চিংড়ির সুনাম দীর্ঘদিনের।রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও এই শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে গবেষক ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ পরিকল্পনা ও টেকসই ব্যবস্থাপনা না হলে উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবিকা উভয়ই ক্ষতির মুখে পড়বে।

চিংড়ি ঘের সম্প্রসারণের জন্য ম্যানগ্রোভ বন উজাড় বহু বছর ধরে একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাট অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি ঘেরের জন্য রূপান্তর হয়েছে। ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের ফলে প্রাকৃতিক ঢাল হিসেবে পরিচিত এই বনের সুরক্ষা ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো দুর্যোগে উপকূলীয় মানুষ আরও বেশি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।

শুধু বননাশই নয়, চিংড়ি ঘেরে ব্যবহৃত অতিরিক্ত লবণাক্ত পানি আশপাশের কৃষিজমিতেও প্রভাব ফেলছে। লবণাক্ততার কারণে বহু এলাকায় ধান, শাকসবজি ও ফলচাষ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে কৃষিজীবী মানুষ বাধ্য হয়ে নিজেদের পেশা পরিবর্তন করছে বা অন্য অঞ্চলে চলে যাচ্ছে।

চিংড়ি রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত রাসায়নিক ও অ্যান্টিবায়োটিক নদী ও খাল-বিলের পানিতে মিশে জলজ পরিবেশকে দূষিত করছে। এতে মাছসহ অন্যান্য জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। অনেক জলাশয়ে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘের তৈরি করতে বাঁধ ও কৃত্রিম খাল-নালা নির্মাণের কারণে নদী-খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আবার শুষ্ক মৌসুমে অনেক খালের তলদেশ শুকিয়ে গিয়ে নৌ-চলাচল ও মাছধরা ব্যাহত হচ্ছে।

চিংড়ি শিল্পের সম্প্রসারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ, মাছ ও গাছপালা। মিঠাপানির প্রজাতিগুলো লবণাক্ত পরিবেশে বাঁচতে না পারায় অনেক স্থানেই বিলুপ্তির মুখে পড়ছে। জলজ পোকামাকড় কমে যাওয়ায় মাছের খাদ্যশৃঙ্খলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

লবণাক্ততা, বন কমে যাওয়া ও পানিদূষণের কারণে অনেক পাখি, মাছ ও গাছপালা ক্ষতির মুখে পড়ছে। কিছু প্রজাতি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়ন্ত্রিত ঘের ব্যবস্থাপনা, ম্যানগ্রোভ রোপণ, রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ প্রণালির প্রচলন জরুরি। অর্থাৎ,

চিংড়ি চাষে নিয়ম-কানুন মানতে হবে। যেখানে বন নষ্ট হয়েছে সেখানে নতুন করে গাছ লাগাতে হবে। রাসায়নিক ব্যবহারে কঠোর নজরদারি দরকার। কৃষক ও স্থানীয় মানুষকে বিকল্প জীবিকার সুযোগ দিতে হবে। পানি চলাচলের পথ বন্ধ করা যাবে না।

চিংড়ি শিল্প নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক খাত।

জান্নাতুল ফেরদাউস অহনা

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

back to top