আসফাক বীন রহমান
“আমরার আবু কান্দেরে ,
ধনু গাঙ্গের পারে
আবু কইয়া ডাক দিলে,
উইড়া আইয়া পড়ে।।
বুজছুইন,” মাঝিভাই । “ আর কয়ডা গাঙ্গ নিয়া শোলক আছে ? আমরার ধনু গাঙ্গের পাড়ের মা আরো কতো শোলক কইয়া আবুইদ্দারে ঘুম পাতায় !” মাঝিভাই । আমি আর অপু ভাই চামড়া বন্দরে ট্রলারে উঠেছি ইটনা যাবো বলে । রিক্সা থেকে নেমে একটা হোটেলে ঢুকেছিলাম ডিম-পরোটা খাবার ইচ্ছায়। কিন্ত অপু ভাইকে ঠেলেও এই গ্রামীন রেস্টুরেন্টে ঢুকানো যাচ্ছিল না । শেষ পর্যন্ত অনেক পীড়াপীড়িতে উনি কিছু খাবেন না এই শর্তে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছি ।
অপু ভাই আমার নতুন কলিগ ; গত পরশু দিনের আগের দিনই পরিচয় ঢাকা ডিভিশনাল অফিসে । যখন শুনলাম , চাকুরির প্রথম পোস্টিং ‘ইটনা’ তখনই ইতিউতি করে তাকাচ্ছিলাম আর কোন সঙ্গী-সাথী পাই কি না । এরমধ্যেই হঠাৎ লম্বামতো সুবেশধারী এক ভদ্রলোক আমাকে বললেন ,‘আপনিও ইটনা ’ ? দু’জনে মনের দুঃখে কিভাবে ‘ইটনা’ যাবো মতবিনিময়ের ফাঁকে আরেক ভদ্রলোক সরাসরি এসে জিজ্ঞেস করলেন , “কোন মেডিকেল - কতোতম ব্যাচ ?” শুনলাম সেও ইটনাগামী এবং আমার ব্যাচমেট । অপু ভাই আমাদের এক ইয়ার সিনিয়ার । ডাক্তার পাহাড়ীর কাছে হাওড়- ট্রলার ইত্যাদির বর্ণনা শুনে আজীবন ঢাকাবাসী অপু ভাইয়ের আক্কেল গুড়ুম ! পাহাড়ীর বাড়ী কিশোরগঞ্জ। আমি সরাসরি ট্রেন আর অপু ভাই সরাসরি বাসের ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে আমাদের কাতর দৃষ্টিতে পাহাড়ী খুব মজা পায় । সে আশ্বাস দিলো , আমার জন্য কিছুটা রাস্তা ট্রেনের ব্যবস্থা , অপু ভাইয়ের জন্য কিছুটা রাস্তা বাসের ব্যবস্থা আর শেষ অংশটা রিকশা-ট্রলারের ব্যবস্থা - মানে ফোর ইন ওয়ান প্যাকেজে ইটনা যাওয়া যাবে ।
গতকাল ভোরে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ রওনা হই । আব্বা এই কাকডাকা ভোরে মেজো মামার গাড়িতে করে কমলাপুর স্টেশনে নামিয়ে দিতে এসেছেন । এতো ভোরে মেজোমামা- মামীকে বিব্রত করতে না চাইলেও মামী অন্যান্য অনেক দিনের মতো আন্তরিকতার সাথে ছোট একটা ধমক দিয়ে আমাকে ফোনে বললেন ,“ তাজুল সময়মতো তোমাদের বাসায় চলে যাবে , ভালোভাবে নতুন চাকুরি শুরু করো।” ট্রেনের ফাঁকা বগি দেখে কিছুটা ভয়ে ভয়ে সিটে বসলাম । কিছু সময় পরে অপু ভাইও এসে পড়ায় একটু সাহস নিয়ে বললাম , “এতো ভোরে কে ঢাকার বাইরে যায়?” এক চাচা আমাদের কথায় সায় দিয়ে বলেন , “এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস” এর এই একটা ট্রেন দুইবার করে মোট চারবার আপ -ডাউন করে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত। বাস মালিকদের চাপে ট্রেনের সময় পাল্টে দেওয়াতে যাত্রী এখন কম । নাহলে ভোরে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী প্রচুর যাত্রী ছিলো । ভৈরবে এসে রেলের ইঞ্জিন দিক বদলাতে আধা ঘন্টার স্টপেজে অপু ভাই খুব বিরক্ত । উনার বিরক্তির পারদ আস্তে আস্তে আরো বাড়তে থাকে ট্রেনের ঢিমে তেতালা গতিতে । ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত কুলিয়ারচর , বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী, গচিহাটা স্টেশন । একটু গতি বাড়ার সাথে সাথেই স্লো হয়ে স্টেশনে থামে । সহযাত্রীদের কাছে টিভিতে দেখা পঁচা মার্কা বল সাবান , বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, মুনায়েম খানের বাড়ি ইত্যাদি গল্প শুনতে শুনতে শেষ পর্যন্ত গচিহাটায় আসলাম । ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো কি দিলো না - কিশোরগঞ্জ পৌঁছে যাওয়াতে অপু ভাই খুবই রেগে “ দেখছো কারবার ! এই মাঝখানের পথটা তো হেঁটেই আসা যেতো! স্টপেজ দিলো কেন ?”
স্টেশন থেকে বেশ দূরে গাইটাল এলাকার হর্টিকালচার গেস্ট হাউজে উঠেছি । সন্ধ্যায় রিকশা করে কিশোরগঞ্জ ঘুরতে বেড়ালে রিকশাওয়ালা আমাদের পাগলা মসজিদের দিকে নিয়ে আসে । আমাদের উপদেশ দেয়,“কোন কিছু মানত করে এই মসজিদের দান বাক্সে দান করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়”। প্রতি চার থেকে পাঁচ মাস সময় পর পর দান বাক্স খুললে দুই কোটি- তিন কোটি টাকা পাওয়া যায় ;এর সাথে থাকে দিরহাম, ডলার ,সোনার বালা ,রুপার গয়না ইত্যাদি । সাথে থাকে মানত করা হাঁস- মুরগি ,ছাগল ,পায়রা প্রভৃতি । অপু ভাই,“ ওয়াও ! এতো টাকা কি করে ?” রিক্সাওয়ালা বেশ গর্বের সাথে বলেন,“আমরা কিশুরগঞ্জের বেডাইত , দিলডা বড়ো। ”এই দানবাক্সের টাকা আশেপাশের মসজিদ , মাদ্রাসা, এতিমখানা, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রী , ক্যান্সার -কিডনী রোগী , অসহায় মানুষ, কন্যাদায়গ্রস্হ পিতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আড়াইশো বছরের পুরানো এই মসজিদটি হয়বতনগর জমিদার বাড়ীর ঈশা খাঁনের বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা সাহেবের নামানুসারে হয়েছে । আবার অনেকে বলেন , একজন বুজুর্গ নরসুন্দা নদীতে মাদুরের উপর ভেসে ভেসে এসে এখানে অবস্থান নেন, নামাজ পড়তে থাকেন । আস্তে আস্তে উনাকে ঘিরে লোকসমাগম হলে হয়বতনগর জমিদার বাড়ী থেকে চালার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং জমি দান করা হয় । আবার কেউ কেউ বলেন, জমিদার বাড়ীর নিঃসন্তান বধু পাগলা বিবির নামানুসারে এই মসজিদের নাম হয়েছে ।
হর্টিকালচারের স্টাফ এর কাছে ইটনা যাবার তথ্য- তালাশ করলে উনি রেলস্টেশনের কাছাকাছি একরামপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে করিমগঞ্জের নিয়ামতপুরগামী বাসে ওঠার পরামর্শ দেন । বাসে এই পথের দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিমি । আরো জানান , নিয়ামতপুর নেমে রিকশায় চামড়া বন্দর যেতে হবে আরো আট কিমি । সেখান থেকে ইটনার ট্রলার ধরলে এই মে মাসে আরো সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে । চামড়া বন্দর থেকে প্রতি ঘন্টায় ইটনাগামী একটি ট্রলার ছাড়ে । ভুল করে মিঠামইন ,নিকলী ,খালিয়াজুড়ি, মদন ,আজমিরীগন্জ, অষ্টগ্রামের ট্রলারে উঠলেই সর্বনাশ !
একরামপুরে মুড়ির টিন মার্কা একটি বাসে বসে সহযাত্রীদের দিকে তাকালাম । হঠাৎ হুড়মুড় করে এক দঙ্গল মানুষ উঠে বাসটিকে হাউজফুল করে দিল । এর মাঝখানে হঠাৎ করে আমার পায়ে কোন একটা কিছু তীক্ষ্ণ আঘাত করলে লাফ দিয়ে উঠতে গেলেই সামনের সিটের নীচ থেকে একটা মুরগি ভয় পেয়ে ডানা ঝাপটে চিৎকার শুরু করলো । অপু ভাইয়ে”র হাসি আর থামে না । গত দিনটা ছিল উনার বিরক্তির দিন;আজকে এই পর্যন্ত বেশ আনন্দেই সময় কাটছে । ‘নাকভাঙ্গা বাজার , নাকভাঙ্গা বাজার ,আছেনি কেউ ?’ কন্ডাক্টরের তারচিৎকার শুনে অপু ভাই মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন । হঠাৎ পিছনে বাসের কন্ডাক্টরের সাথে এক যাত্রীর দুটি বকরীর ভাড়া নিয়ে ঝগড়ায় আমিও না হেসে পারলাম না । বাসের ভিতর বকরী !
নিয়ামতপুর থেকে রিকশায় প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চামড়া বন্দর পৌঁছেছি । পরপর দুই রিকশাওয়ালা ‘চামটা বন্দর’ বলায় আমরা অকূল পাথারে পড়ি । তৃতীয় রিকশাওয়ালা আমাদেরকে বলেন,‘ আপনেরা কই যাইবাইন?’ ইটনার কথা শুনে বললেন , “ হ , চামটা বন্দর যাইতে হইবো । চামটারেই কয় চামড়া বন্দর । ” মুড়ির টিনে আঁকাবাঁকা সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে অপু ভাইয়ের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়েছিলাম,“ এই সড়ক এতো জিগজ্যাগ কেনো ?“ উত্তরে মাথা চুলকে চুপ থাকি । ” আরে মিয়া ,সোজা রাস্তা হইলে অ্যাক্সিডেন্ট হবার চান্স বেশি । দেখোনা খালি রিকশা চলে “ ,অপু ভাইয়ের এই ব্যাখ্যায় মনে মনে বলি, আসলে কি তাই ? মাঝখানে নরসুন্দার একটি শাখা নদীর উপর লড়ঝড়ে ব্রিজের একপাশে আমাদের বাস বেশ কিছুক্ষণ থামায় । রেশনিং পদ্ধতিতে অপরদিকের একটি বাস এই দিকে আসার পর আমাদের পালা । ব্রীজের কাঁপুনি আমাদের মনেও কাঁপুনি সৃষ্টি করে । মাঝখানে জঙ্গলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের নামটা শুনে মনের মধ্যে কি যেন উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে !
ইটনা বন্দরে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কার্ড ফাইনাল- আইটেমের মতো আবার কোশ্চেন শুরু করেন অপু ভাই । বুঝতে পারলাম ,নদীর আশেপাশের ইটভাটা এবং শ্রমিকদের হল্লা আর তৈলাক্ত কালো পানি দেখে উনি যতই বিরক্ত হন , ভালোমতো হোম ওয়ার্ক করেই ইটনা রওনা দিয়েছেন ।” জানো , এই নদীর নাম্বার কতো?“ অপু ভাইয়ের কথা শুনে আবার আকাশ থেকে পড়ি । বলি , ”ভাই ,নদীর আবার নাম্বার আছে নাকি ? আর এই নদীটির নাম কি ?“ ” এটা ধনু নদী । পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচিতি নাম্বার উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদী নাম্বার ৩৮ ” মুচকি হেসে উত্তর জানালেন ।
ট্রলারে উঠেই অপু ভাই সাথের লম্বা পাতলা ব্যাগটা থেকে লাইফ জ্যাকেট বের করে পড়তে পড়তে আমাকেও ইশারা করলেন , আমারটা পড়ার জন্য । ইটনার হাওড় পাড়ি দিতে হবে , এজন্য লাইফ জ্যাকেট মাস্ট ! এটা হাওড়ে চাকুরি করে যাওয়া অভিজ্ঞদের ভাষ্য ! অপু ভাই এপয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার পর বসে থাকেন নি । উনি ইটনা -মিঠামইনে চাকুরি করেছেন, এমন কয়জন সিনিয়রকে খুঁজে বের করে তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন । আমাকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন , অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট কিনতে । আমরা নিয়মিত আমাদের গ্রামে নৌকা চড়ায় অভ্যস্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে গা করিনি । কিন্তু, কিশোরগঞ্জ রওনা হবার আগের দিন ‘আজিমপুর লেডিস ক্লাব শিশু বিদ্যালয়’এর প্রধান শিক্ষিকা সাবিহা বেগম গুলিস্তান থেকে কমলা রঙের লাইফ জ্যাকেট নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির । সাবিহা খালা আম্মার কলিগ এবং আমার ও ইমনের ছোটবেলার প্রথম শিক্ষাগুরু । বাংলা ও ইংরেজিতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ডাবল এম,এ করা সাবিহা খালা আমাদের জন্য অন্তঃপ্রাণ । আমরা এম,বি,বি,এস, আর এম,এ পাশ করার পরও প্রায়ই আম্মার ব্যাগে চকলেট , বিস্কিট ,আইসক্রিম দিয়ে দেন । ঈদ -পরবে আমাদের শার্ট, পাঞ্জাবি উপহার দেন ।
ট্রলারে উঠে অপু ভাইয়ের টেপ রেকর্ডার একেবারে বন্ধ! এই গরমে এতো ভারী একটা বস্তু পড়ে থাকায় খুব সহজেই ট্রলারের অন্য যাত্রীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু অপু ভাই । এক মুরুব্বী আঙ্গুল দিয়ে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে উনার লাইফ জ্যাকেট পরীক্ষা করতে করতে জানতে চাইলেন, “এইডা কিতা ?” আমি মজা করে জানালাম উনার হাঁপানির টান আছে , নদীর বাতাস থেকে বাঁচার জন্য এটা একটা ড্রেস ! অপু ভাইয়ের দুর্গতি দেখে আমার লাইফ জ্যাকেটের প্যাকেট পিঠের নীচে রেখে আমি এক কোনায় বসে রইলাম।
ট্রলারে জয়সিদ্ধি হাই স্কুলের এক শিক্ষক একদৃষ্টিতে আমাদের অবজার্ভ করছেন । কথায় কথায় উনি জানালেন , কীর্তিনাশা পদ্মা আর কুলবিনাশী যমুনা নদীর মতো ধনু নদীর কোন বদনাম নাই । এটাই বাংলাদেশের একমাত্র নদী যেটা উৎসস্থল থেকে সারা বছর নাব্য থাকে । নব্বই কিলোমিটার ধনু নদীর উৎস বাউলাই নদী আর মোহনা ঘোড়াউত্রা নদী । ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ান মদিনার লীলাভূমি এই ধনু নদী । ঘোড়াউত্রা নদীটি কুলিয়ারচরে মেঘনায় পড়েছে । জয়সিদ্ধি স্কুলের মাস্টারসাহেবকে জঙ্গলবাড়ি নামটা কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল জানানোয় তিনি জানান ,“আপনারা যেটা অনুমান করেছেন ,এটা সেই ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়িই ”। তিনি আরো জানান , কিশোরগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জে আসার পথে কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের নরসুন্দা নদীর পাড়ে জঙ্গলবাড়ি গ্রামের দুর্গটি ছিলো মসনদ-ঈ-আলী বীর ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানীর একটি স্থাপনা। সুলতানি বাংলার ভাটি অঞ্চলের সরাইলের জমিদার (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ) বারো ভুঁইয়ার অন্যতম- ঈশা খাঁ , কোচরাজা লক্ষণহাজরাকে পরাজিত করে এই দুর্গ দখল করেন । এখান থেকে একে একে সোনারগাঁওসহ বাইশটি পরগনা দখল করেন । ১৫৯৭ সালে পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুরে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহকে পরাজিত করেন ।
একটানা পৌঁনে চার ঘন্টা ট্রলারের ভটভট শব্দ , ভেতরের ইঞ্জিনের ধোঁয়া আর বাইরের জৈষ্ঠ্য মাসের কঢ়া রোদ্দুরে আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে । একটানা প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা নৌপথের দুলুনীতে বাকরুদ্ধ অপু ভাই মাঝিভাইয়ের ‘ ওই যে হইলদা দালানগুলা ইটনা হাসপাতাল ’ শুনে নড়েচড়ে ওঠেন ।
[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ,গাজীপুর]
আসফাক বীন রহমান
বুধবার, ৩০ আগস্ট ২০২৩
“আমরার আবু কান্দেরে ,
ধনু গাঙ্গের পারে
আবু কইয়া ডাক দিলে,
উইড়া আইয়া পড়ে।।
বুজছুইন,” মাঝিভাই । “ আর কয়ডা গাঙ্গ নিয়া শোলক আছে ? আমরার ধনু গাঙ্গের পাড়ের মা আরো কতো শোলক কইয়া আবুইদ্দারে ঘুম পাতায় !” মাঝিভাই । আমি আর অপু ভাই চামড়া বন্দরে ট্রলারে উঠেছি ইটনা যাবো বলে । রিক্সা থেকে নেমে একটা হোটেলে ঢুকেছিলাম ডিম-পরোটা খাবার ইচ্ছায়। কিন্ত অপু ভাইকে ঠেলেও এই গ্রামীন রেস্টুরেন্টে ঢুকানো যাচ্ছিল না । শেষ পর্যন্ত অনেক পীড়াপীড়িতে উনি কিছু খাবেন না এই শর্তে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছি ।
অপু ভাই আমার নতুন কলিগ ; গত পরশু দিনের আগের দিনই পরিচয় ঢাকা ডিভিশনাল অফিসে । যখন শুনলাম , চাকুরির প্রথম পোস্টিং ‘ইটনা’ তখনই ইতিউতি করে তাকাচ্ছিলাম আর কোন সঙ্গী-সাথী পাই কি না । এরমধ্যেই হঠাৎ লম্বামতো সুবেশধারী এক ভদ্রলোক আমাকে বললেন ,‘আপনিও ইটনা ’ ? দু’জনে মনের দুঃখে কিভাবে ‘ইটনা’ যাবো মতবিনিময়ের ফাঁকে আরেক ভদ্রলোক সরাসরি এসে জিজ্ঞেস করলেন , “কোন মেডিকেল - কতোতম ব্যাচ ?” শুনলাম সেও ইটনাগামী এবং আমার ব্যাচমেট । অপু ভাই আমাদের এক ইয়ার সিনিয়ার । ডাক্তার পাহাড়ীর কাছে হাওড়- ট্রলার ইত্যাদির বর্ণনা শুনে আজীবন ঢাকাবাসী অপু ভাইয়ের আক্কেল গুড়ুম ! পাহাড়ীর বাড়ী কিশোরগঞ্জ। আমি সরাসরি ট্রেন আর অপু ভাই সরাসরি বাসের ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে চাইলে আমাদের কাতর দৃষ্টিতে পাহাড়ী খুব মজা পায় । সে আশ্বাস দিলো , আমার জন্য কিছুটা রাস্তা ট্রেনের ব্যবস্থা , অপু ভাইয়ের জন্য কিছুটা রাস্তা বাসের ব্যবস্থা আর শেষ অংশটা রিকশা-ট্রলারের ব্যবস্থা - মানে ফোর ইন ওয়ান প্যাকেজে ইটনা যাওয়া যাবে ।
গতকাল ভোরে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ রওনা হই । আব্বা এই কাকডাকা ভোরে মেজো মামার গাড়িতে করে কমলাপুর স্টেশনে নামিয়ে দিতে এসেছেন । এতো ভোরে মেজোমামা- মামীকে বিব্রত করতে না চাইলেও মামী অন্যান্য অনেক দিনের মতো আন্তরিকতার সাথে ছোট একটা ধমক দিয়ে আমাকে ফোনে বললেন ,“ তাজুল সময়মতো তোমাদের বাসায় চলে যাবে , ভালোভাবে নতুন চাকুরি শুরু করো।” ট্রেনের ফাঁকা বগি দেখে কিছুটা ভয়ে ভয়ে সিটে বসলাম । কিছু সময় পরে অপু ভাইও এসে পড়ায় একটু সাহস নিয়ে বললাম , “এতো ভোরে কে ঢাকার বাইরে যায়?” এক চাচা আমাদের কথায় সায় দিয়ে বলেন , “এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস” এর এই একটা ট্রেন দুইবার করে মোট চারবার আপ -ডাউন করে ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত। বাস মালিকদের চাপে ট্রেনের সময় পাল্টে দেওয়াতে যাত্রী এখন কম । নাহলে ভোরে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী প্রচুর যাত্রী ছিলো । ভৈরবে এসে রেলের ইঞ্জিন দিক বদলাতে আধা ঘন্টার স্টপেজে অপু ভাই খুব বিরক্ত । উনার বিরক্তির পারদ আস্তে আস্তে আরো বাড়তে থাকে ট্রেনের ঢিমে তেতালা গতিতে । ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত কুলিয়ারচর , বাজিতপুর, সরারচর, মানিকখালী, গচিহাটা স্টেশন । একটু গতি বাড়ার সাথে সাথেই স্লো হয়ে স্টেশনে থামে । সহযাত্রীদের কাছে টিভিতে দেখা পঁচা মার্কা বল সাবান , বাজিতপুরের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, মুনায়েম খানের বাড়ি ইত্যাদি গল্প শুনতে শুনতে শেষ পর্যন্ত গচিহাটায় আসলাম । ইঞ্জিন স্টার্ট দিলো কি দিলো না - কিশোরগঞ্জ পৌঁছে যাওয়াতে অপু ভাই খুবই রেগে “ দেখছো কারবার ! এই মাঝখানের পথটা তো হেঁটেই আসা যেতো! স্টপেজ দিলো কেন ?”
স্টেশন থেকে বেশ দূরে গাইটাল এলাকার হর্টিকালচার গেস্ট হাউজে উঠেছি । সন্ধ্যায় রিকশা করে কিশোরগঞ্জ ঘুরতে বেড়ালে রিকশাওয়ালা আমাদের পাগলা মসজিদের দিকে নিয়ে আসে । আমাদের উপদেশ দেয়,“কোন কিছু মানত করে এই মসজিদের দান বাক্সে দান করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়”। প্রতি চার থেকে পাঁচ মাস সময় পর পর দান বাক্স খুললে দুই কোটি- তিন কোটি টাকা পাওয়া যায় ;এর সাথে থাকে দিরহাম, ডলার ,সোনার বালা ,রুপার গয়না ইত্যাদি । সাথে থাকে মানত করা হাঁস- মুরগি ,ছাগল ,পায়রা প্রভৃতি । অপু ভাই,“ ওয়াও ! এতো টাকা কি করে ?” রিক্সাওয়ালা বেশ গর্বের সাথে বলেন,“আমরা কিশুরগঞ্জের বেডাইত , দিলডা বড়ো। ”এই দানবাক্সের টাকা আশেপাশের মসজিদ , মাদ্রাসা, এতিমখানা, দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রী , ক্যান্সার -কিডনী রোগী , অসহায় মানুষ, কন্যাদায়গ্রস্হ পিতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আড়াইশো বছরের পুরানো এই মসজিদটি হয়বতনগর জমিদার বাড়ীর ঈশা খাঁনের বংশধর দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিলকদর পাগলা সাহেবের নামানুসারে হয়েছে । আবার অনেকে বলেন , একজন বুজুর্গ নরসুন্দা নদীতে মাদুরের উপর ভেসে ভেসে এসে এখানে অবস্থান নেন, নামাজ পড়তে থাকেন । আস্তে আস্তে উনাকে ঘিরে লোকসমাগম হলে হয়বতনগর জমিদার বাড়ী থেকে চালার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং জমি দান করা হয় । আবার কেউ কেউ বলেন, জমিদার বাড়ীর নিঃসন্তান বধু পাগলা বিবির নামানুসারে এই মসজিদের নাম হয়েছে ।
হর্টিকালচারের স্টাফ এর কাছে ইটনা যাবার তথ্য- তালাশ করলে উনি রেলস্টেশনের কাছাকাছি একরামপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে করিমগঞ্জের নিয়ামতপুরগামী বাসে ওঠার পরামর্শ দেন । বাসে এই পথের দূরত্ব প্রায় চল্লিশ কিমি । আরো জানান , নিয়ামতপুর নেমে রিকশায় চামড়া বন্দর যেতে হবে আরো আট কিমি । সেখান থেকে ইটনার ট্রলার ধরলে এই মে মাসে আরো সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে । চামড়া বন্দর থেকে প্রতি ঘন্টায় ইটনাগামী একটি ট্রলার ছাড়ে । ভুল করে মিঠামইন ,নিকলী ,খালিয়াজুড়ি, মদন ,আজমিরীগন্জ, অষ্টগ্রামের ট্রলারে উঠলেই সর্বনাশ !
একরামপুরে মুড়ির টিন মার্কা একটি বাসে বসে সহযাত্রীদের দিকে তাকালাম । হঠাৎ হুড়মুড় করে এক দঙ্গল মানুষ উঠে বাসটিকে হাউজফুল করে দিল । এর মাঝখানে হঠাৎ করে আমার পায়ে কোন একটা কিছু তীক্ষ্ণ আঘাত করলে লাফ দিয়ে উঠতে গেলেই সামনের সিটের নীচ থেকে একটা মুরগি ভয় পেয়ে ডানা ঝাপটে চিৎকার শুরু করলো । অপু ভাইয়ে”র হাসি আর থামে না । গত দিনটা ছিল উনার বিরক্তির দিন;আজকে এই পর্যন্ত বেশ আনন্দেই সময় কাটছে । ‘নাকভাঙ্গা বাজার , নাকভাঙ্গা বাজার ,আছেনি কেউ ?’ কন্ডাক্টরের তারচিৎকার শুনে অপু ভাই মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে জানালা দিয়ে মাথা বের করে দেখার চেষ্টা করতে থাকেন । হঠাৎ পিছনে বাসের কন্ডাক্টরের সাথে এক যাত্রীর দুটি বকরীর ভাড়া নিয়ে ঝগড়ায় আমিও না হেসে পারলাম না । বাসের ভিতর বকরী !
নিয়ামতপুর থেকে রিকশায় প্রায় আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চামড়া বন্দর পৌঁছেছি । পরপর দুই রিকশাওয়ালা ‘চামটা বন্দর’ বলায় আমরা অকূল পাথারে পড়ি । তৃতীয় রিকশাওয়ালা আমাদেরকে বলেন,‘ আপনেরা কই যাইবাইন?’ ইটনার কথা শুনে বললেন , “ হ , চামটা বন্দর যাইতে হইবো । চামটারেই কয় চামড়া বন্দর । ” মুড়ির টিনে আঁকাবাঁকা সড়ক পাড়ি দিতে গিয়ে অপু ভাইয়ের প্রশ্নবানে জর্জরিত হয়েছিলাম,“ এই সড়ক এতো জিগজ্যাগ কেনো ?“ উত্তরে মাথা চুলকে চুপ থাকি । ” আরে মিয়া ,সোজা রাস্তা হইলে অ্যাক্সিডেন্ট হবার চান্স বেশি । দেখোনা খালি রিকশা চলে “ ,অপু ভাইয়ের এই ব্যাখ্যায় মনে মনে বলি, আসলে কি তাই ? মাঝখানে নরসুন্দার একটি শাখা নদীর উপর লড়ঝড়ে ব্রিজের একপাশে আমাদের বাস বেশ কিছুক্ষণ থামায় । রেশনিং পদ্ধতিতে অপরদিকের একটি বাস এই দিকে আসার পর আমাদের পালা । ব্রীজের কাঁপুনি আমাদের মনেও কাঁপুনি সৃষ্টি করে । মাঝখানে জঙ্গলবাড়ি বাসস্ট্যান্ডের নামটা শুনে মনের মধ্যে কি যেন উঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেছে !
ইটনা বন্দরে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কার্ড ফাইনাল- আইটেমের মতো আবার কোশ্চেন শুরু করেন অপু ভাই । বুঝতে পারলাম ,নদীর আশেপাশের ইটভাটা এবং শ্রমিকদের হল্লা আর তৈলাক্ত কালো পানি দেখে উনি যতই বিরক্ত হন , ভালোমতো হোম ওয়ার্ক করেই ইটনা রওনা দিয়েছেন ।” জানো , এই নদীর নাম্বার কতো?“ অপু ভাইয়ের কথা শুনে আবার আকাশ থেকে পড়ি । বলি , ”ভাই ,নদীর আবার নাম্বার আছে নাকি ? আর এই নদীটির নাম কি ?“ ” এটা ধনু নদী । পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচিতি নাম্বার উত্তর পূর্বাঞ্চলের নদী নাম্বার ৩৮ ” মুচকি হেসে উত্তর জানালেন ।
ট্রলারে উঠেই অপু ভাই সাথের লম্বা পাতলা ব্যাগটা থেকে লাইফ জ্যাকেট বের করে পড়তে পড়তে আমাকেও ইশারা করলেন , আমারটা পড়ার জন্য । ইটনার হাওড় পাড়ি দিতে হবে , এজন্য লাইফ জ্যাকেট মাস্ট ! এটা হাওড়ে চাকুরি করে যাওয়া অভিজ্ঞদের ভাষ্য ! অপু ভাই এপয়েন্টমেন্ট লেটার পাওয়ার পর বসে থাকেন নি । উনি ইটনা -মিঠামইনে চাকুরি করেছেন, এমন কয়জন সিনিয়রকে খুঁজে বের করে তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন । আমাকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছেন , অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট কিনতে । আমরা নিয়মিত আমাদের গ্রামে নৌকা চড়ায় অভ্যস্ত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে গা করিনি । কিন্তু, কিশোরগঞ্জ রওনা হবার আগের দিন ‘আজিমপুর লেডিস ক্লাব শিশু বিদ্যালয়’এর প্রধান শিক্ষিকা সাবিহা বেগম গুলিস্তান থেকে কমলা রঙের লাইফ জ্যাকেট নিয়ে আমাদের বাসায় হাজির । সাবিহা খালা আম্মার কলিগ এবং আমার ও ইমনের ছোটবেলার প্রথম শিক্ষাগুরু । বাংলা ও ইংরেজিতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ডাবল এম,এ করা সাবিহা খালা আমাদের জন্য অন্তঃপ্রাণ । আমরা এম,বি,বি,এস, আর এম,এ পাশ করার পরও প্রায়ই আম্মার ব্যাগে চকলেট , বিস্কিট ,আইসক্রিম দিয়ে দেন । ঈদ -পরবে আমাদের শার্ট, পাঞ্জাবি উপহার দেন ।
ট্রলারে উঠে অপু ভাইয়ের টেপ রেকর্ডার একেবারে বন্ধ! এই গরমে এতো ভারী একটা বস্তু পড়ে থাকায় খুব সহজেই ট্রলারের অন্য যাত্রীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু অপু ভাই । এক মুরুব্বী আঙ্গুল দিয়ে গুঁতিয়ে গুঁতিয়ে উনার লাইফ জ্যাকেট পরীক্ষা করতে করতে জানতে চাইলেন, “এইডা কিতা ?” আমি মজা করে জানালাম উনার হাঁপানির টান আছে , নদীর বাতাস থেকে বাঁচার জন্য এটা একটা ড্রেস ! অপু ভাইয়ের দুর্গতি দেখে আমার লাইফ জ্যাকেটের প্যাকেট পিঠের নীচে রেখে আমি এক কোনায় বসে রইলাম।
ট্রলারে জয়সিদ্ধি হাই স্কুলের এক শিক্ষক একদৃষ্টিতে আমাদের অবজার্ভ করছেন । কথায় কথায় উনি জানালেন , কীর্তিনাশা পদ্মা আর কুলবিনাশী যমুনা নদীর মতো ধনু নদীর কোন বদনাম নাই । এটাই বাংলাদেশের একমাত্র নদী যেটা উৎসস্থল থেকে সারা বছর নাব্য থাকে । নব্বই কিলোমিটার ধনু নদীর উৎস বাউলাই নদী আর মোহনা ঘোড়াউত্রা নদী । ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ান মদিনার লীলাভূমি এই ধনু নদী । ঘোড়াউত্রা নদীটি কুলিয়ারচরে মেঘনায় পড়েছে । জয়সিদ্ধি স্কুলের মাস্টারসাহেবকে জঙ্গলবাড়ি নামটা কেমন চেনা চেনা মনে হচ্ছিল জানানোয় তিনি জানান ,“আপনারা যেটা অনুমান করেছেন ,এটা সেই ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়িই ”। তিনি আরো জানান , কিশোরগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জে আসার পথে কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের নরসুন্দা নদীর পাড়ে জঙ্গলবাড়ি গ্রামের দুর্গটি ছিলো মসনদ-ঈ-আলী বীর ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানীর একটি স্থাপনা। সুলতানি বাংলার ভাটি অঞ্চলের সরাইলের জমিদার (ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ) বারো ভুঁইয়ার অন্যতম- ঈশা খাঁ , কোচরাজা লক্ষণহাজরাকে পরাজিত করে এই দুর্গ দখল করেন । এখান থেকে একে একে সোনারগাঁওসহ বাইশটি পরগনা দখল করেন । ১৫৯৭ সালে পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুরে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংহকে পরাজিত করেন ।
একটানা পৌঁনে চার ঘন্টা ট্রলারের ভটভট শব্দ , ভেতরের ইঞ্জিনের ধোঁয়া আর বাইরের জৈষ্ঠ্য মাসের কঢ়া রোদ্দুরে আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে । একটানা প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা নৌপথের দুলুনীতে বাকরুদ্ধ অপু ভাই মাঝিভাইয়ের ‘ ওই যে হইলদা দালানগুলা ইটনা হাসপাতাল ’ শুনে নড়েচড়ে ওঠেন ।
[লেখক: সহকারী অধ্যাপক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ,গাজীপুর]