alt

মুক্ত আলোচনা

ভোক্তা সচেতনতাই নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি

মিনারা খাতুন

: বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন শুধু কৃষক, উৎপাদক বা সরকারের কাজ নয় ভোক্তা বা গ্রাহক হিসেবে আমাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমরা যদি সচেতন হই, ভালো পণ্য বাছাই করি এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে পুরো খাদ্য ব্যবস্থাই নিরাপদ হতে পারে। নিরাপদ খাদ্য পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হয়-উৎপাদক, সরকার, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এই লেখায় বলা হয়েছে, কীভাবে সচেতনতা, সঠিক পণ্য নির্বাচন, ভালোভাবে খাবার সংরক্ষণ ও প্রস্তুত করা এবং সমস্যার প্রতিবেদন করে একজন ভোক্তা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কিভাবে সহায়তা করতে পারে। ভোক্তারা যেভাবে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারেন-

১. সচেতনতা ও শিক্ষা

ভোক্তাদের জানতে হবে কোন কোন খাদ্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেমন খাবারে ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক বা রাসায়নিক থাকলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। এসব বিষয়ে জানা থাকলে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

২. নিরাপদ পণ্য নির্বাচন

খাবার কেনার সময় ভোক্তাদের উচিত পণ্যের গায়ে থাকা লেবেল দেখা যেমন জৈব, ভেজালমুক্ত, মেয়াদ আছে কি না ইত্যাদি। ক্ষতিগ্রস্ত বা খোলা প্যাকেটও এড়িয়ে চলা ভালো।

৩. স্থানীয় খাদ্যকে প্রাধান্য দেয়া

স্থানীয় কৃষক বা উৎপাদকের কাছ থেকে খাবার কিনলে তার উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে সহজে জানা যায়। এতে স্বচ্ছতা ও আস্থা বাড়ে।

৪. উৎপাদকের সাথে যোগাযোগ

ভোক্তারা চাইলে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন-খাবার কীভাবে তৈরি হলো, কী ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি। এতে উৎপাদনকারীরাও সচেতন হয়।

৫. সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণ ও প্রস্তুতি

খাবার ফ্রিজে রাখা, রান্নার আগে ও পরে হাত ধোয়া, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা-এসব সহজ নিয়ম মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

৬. খাদ্য অপচয় রোধ

যতটুকু খাদ্য দরকার ততটুকু খাদ্য ক্রয় করলে খাদ্য নষ্ট হয় না। এর ফলে পরিবেশেরও উপকার হয়, আবার উৎপাদন প্রক্রিয়াও টেকসই হয়।

৭. সমস্যা হলে রিপোর্ট করা

যদি কোনো খাবারে দুর্গন্ধ, অস্বাভাবিক রং বা স্বাদ থাকে, তবে তা স্থানীয় প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জানানো উচিত।

৮. সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া

ভোক্তারা চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা স্থানীয় সভা-সেমিনারে অংশ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা ছড়াতে পারেন। এতে আরও মানুষ সচেতন হবে।

৯. খাদ্যবর্জ্য ঠিকভাবে ফেলা

পচা বা নষ্ট খাবার ভুলভাবে ফেললে পরিবেশ দূষণ হতে পারে। তাই বর্জ্য ঠিকভাবে ফেলা এবং প্রয়োজনে পুনর্ব্যবহার করা জরুরি।

১০. খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত নিয়ম কানুনের পক্ষে থাকা

ভোক্তারা সরকারের খাদ্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত আইন ও উদ্যোগকে সমর্থন করতে পারেন এবং অন্যদেরকেও সচেতন করতে পারেন।

প্রতিটি মানুষ আশা করে সে যে খাবার খাচ্ছে তা নিরাপদ ও মানসম্মত। খাদ্য নিরাপত্তা শুধু উৎপাদনকারীদের নয়, আমাদের সবার দায়িত্ব। ভোক্তারা সচেতনভাবে পছন্দ করলে উৎপাদকরাও ভালো মানের ও নিরাপদ খাদ্য তৈরিতে উৎসাহ পায়। ভোক্তারা কেবল খাবার কিনে খায় না, তারা খাদ্য ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়ে, নিরাপদ খাবার বেছে নিয়ে এবং সমস্যা হলে প্রতিবেদন করে একজন সাধারণ মানুষও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পথে বড় অবদান রাখতে পারে। আমাদের সবার সচেতন আচরণই গড়ে তুলতে পারে একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ।

[ লেখক : অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ]

ছবি

মোগল আমলের স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ছবি

শতবর্ষ পরেও যার প্রয়োজন ফুরোয় না : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

আদিবাসী মুণ্ডা ভাষার বাঁচার আর্তনাদ

মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

tab

মুক্ত আলোচনা

ভোক্তা সচেতনতাই নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি

মিনারা খাতুন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন শুধু কৃষক, উৎপাদক বা সরকারের কাজ নয় ভোক্তা বা গ্রাহক হিসেবে আমাদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমরা যদি সচেতন হই, ভালো পণ্য বাছাই করি এবং সঠিক অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে পুরো খাদ্য ব্যবস্থাই নিরাপদ হতে পারে। নিরাপদ খাদ্য পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হয়-উৎপাদক, সরকার, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। এই লেখায় বলা হয়েছে, কীভাবে সচেতনতা, সঠিক পণ্য নির্বাচন, ভালোভাবে খাবার সংরক্ষণ ও প্রস্তুত করা এবং সমস্যার প্রতিবেদন করে একজন ভোক্তা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে কিভাবে সহায়তা করতে পারে। ভোক্তারা যেভাবে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারেন-

১. সচেতনতা ও শিক্ষা

ভোক্তাদের জানতে হবে কোন কোন খাদ্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। যেমন খাবারে ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক বা রাসায়নিক থাকলে তা ক্ষতিকর হতে পারে। এসব বিষয়ে জানা থাকলে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।

২. নিরাপদ পণ্য নির্বাচন

খাবার কেনার সময় ভোক্তাদের উচিত পণ্যের গায়ে থাকা লেবেল দেখা যেমন জৈব, ভেজালমুক্ত, মেয়াদ আছে কি না ইত্যাদি। ক্ষতিগ্রস্ত বা খোলা প্যাকেটও এড়িয়ে চলা ভালো।

৩. স্থানীয় খাদ্যকে প্রাধান্য দেয়া

স্থানীয় কৃষক বা উৎপাদকের কাছ থেকে খাবার কিনলে তার উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে সহজে জানা যায়। এতে স্বচ্ছতা ও আস্থা বাড়ে।

৪. উৎপাদকের সাথে যোগাযোগ

ভোক্তারা চাইলে সরাসরি প্রশ্ন করতে পারেন-খাবার কীভাবে তৈরি হলো, কী ব্যবহার করা হয়েছে ইত্যাদি। এতে উৎপাদনকারীরাও সচেতন হয়।

৫. সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণ ও প্রস্তুতি

খাবার ফ্রিজে রাখা, রান্নার আগে ও পরে হাত ধোয়া, কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা রাখা-এসব সহজ নিয়ম মেনে চললে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

৬. খাদ্য অপচয় রোধ

যতটুকু খাদ্য দরকার ততটুকু খাদ্য ক্রয় করলে খাদ্য নষ্ট হয় না। এর ফলে পরিবেশেরও উপকার হয়, আবার উৎপাদন প্রক্রিয়াও টেকসই হয়।

৭. সমস্যা হলে রিপোর্ট করা

যদি কোনো খাবারে দুর্গন্ধ, অস্বাভাবিক রং বা স্বাদ থাকে, তবে তা স্থানীয় প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে জানানো উচিত।

৮. সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়া

ভোক্তারা চাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা স্থানীয় সভা-সেমিনারে অংশ নিয়ে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা ছড়াতে পারেন। এতে আরও মানুষ সচেতন হবে।

৯. খাদ্যবর্জ্য ঠিকভাবে ফেলা

পচা বা নষ্ট খাবার ভুলভাবে ফেললে পরিবেশ দূষণ হতে পারে। তাই বর্জ্য ঠিকভাবে ফেলা এবং প্রয়োজনে পুনর্ব্যবহার করা জরুরি।

১০. খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কিত নিয়ম কানুনের পক্ষে থাকা

ভোক্তারা সরকারের খাদ্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত আইন ও উদ্যোগকে সমর্থন করতে পারেন এবং অন্যদেরকেও সচেতন করতে পারেন।

প্রতিটি মানুষ আশা করে সে যে খাবার খাচ্ছে তা নিরাপদ ও মানসম্মত। খাদ্য নিরাপত্তা শুধু উৎপাদনকারীদের নয়, আমাদের সবার দায়িত্ব। ভোক্তারা সচেতনভাবে পছন্দ করলে উৎপাদকরাও ভালো মানের ও নিরাপদ খাদ্য তৈরিতে উৎসাহ পায়। ভোক্তারা কেবল খাবার কিনে খায় না, তারা খাদ্য ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সচেতন সিদ্ধান্ত নিয়ে, নিরাপদ খাবার বেছে নিয়ে এবং সমস্যা হলে প্রতিবেদন করে একজন সাধারণ মানুষও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পথে বড় অবদান রাখতে পারে। আমাদের সবার সচেতন আচরণই গড়ে তুলতে পারে একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ।

[ লেখক : অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ]

back to top