alt

opinion » open-discussion

এ অবহেলার শেষ কোথায়?

দুলাল চন্দ্র মজুমদার

: সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠপরিকল্পনা, পাঠদান, পাঠসঞ্চালন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা মূল্যায়নসহ শিক্ষা সংক্রান্ত মোট কাজের ৯৭ (সাতানব্বই) ভাগ সম্পন্ন করে থাকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। এই গোষ্ঠীতে এখন প্রায় ৫ (পাঁচ) লক্ষ মানুষ নিয়োজিত আছে। এই বিরাট জনগোষ্ঠীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করে থাকে বাংলাদেশ সরকার।

এই প্রক্রিয়ার নাম এমপিও অর্থাৎ মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার। এই প্রক্রিয়ায় বেতনের শতভাগ পেলেও অন্যান্য সুবিধা নগন্য। যেমন বাড়িভাড়া ১,০০০ (এক হাজার) টাকা মাত্র। সমস্ত বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকলেও বেতন বা পারিশ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া এমপিওর মধ্যে নেই। এর সংখ্যা সারা বাংলাদেশে গোটা বারো। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মজীবন শুরু করেন তাদের শুধু একটি মাত্র পদোন্নতি আছে। সেই কারণে অনেকাংশেই বনসাই সাইজের পেশাগত জীবন অতিবাহিত করেন। কোন কোন সময় উচ্চপদস্থ লোকজন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আসলে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ছবক দেন।

কিন্তু আপনার যাপিত জীবন কীভাবে চলছে তা নিয়ে কোন প্রশ্ন করেনও না এবং জানতেও চান না। আবার যদি মন্ত্রীগোছের বা এই লেভেলের কোন লোক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়েন তখন বলেন, ‘আপনি তো এই অবস্থা জেনেই এই পেশায় এসেছেন।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কাম্য মেধা নেই মানে বিলো কেলিভার বা এরা পিছিয়ে পড়া।’

এভাবেই বলে থাকেন এবং আমরা সবসময় শুনে থাকি। এরকম বলাবলির আর শোনাশুনির মধ্যেই এল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। অনেক কথা, অনেক উপদেশ, অনেক আশা এখন আর কোন অসুবিধা হবে না। এখন থেকে ইএফটি অর্থাৎ ইলেক্টিক ফান্ড ট্রান্সফার এর মাধ্যমে টাকা ছাড়া হবে এখন আর দেরি হবে না। আগে ইলেক্ট্রিক না থাকার জন্য গতি ছিল না আগে ছিল পরবর্তী মাসের ৫-৬ তারিখ। এখন ইলেক্ট্রিক থাকায় গতি এসেছে তাই পনেরো তারিখ পেরিয়ে গেলেও আসে না।

আমরা মানুষকে কত না ছবক দেই এটা করো বা এটা করো না। মিথ্যা আশ^াস বা চালাকি না করলেও তো হয়। একজন মানুষ যিনি এই পেশার ওপর নির্ভরশীল তিনি কীভাবে পরবর্তী মাসের পনেরো তারিখ পেরিয়ে গেলেও যদি তার বেতন না পান তাহলে তিনি সংসার চালান কীভাবে? এই বুঝ টুকু আত্মস্থ করতে তো তেমন কোন বড় মানুষ হওয়ার প্রয়োজন হয় কী? যে কোন সুস্থ মানুষই তো সহজভাবে অনুধাবণ করতে সক্ষম হন।

গত ১৬ জুলাই আমাদের বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা জুন-২৫ এর বেতন পাননি। এটা কী শুধু অমানবিক? না এটা এটা নির্যাতন? এই সচেতন নির্যাতন চালু রেখে কোন ভাল কাজ করা সম্ভব না। অনেকেই বলে থাকেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদ- আর শিক্ষক সমাজ হলো মানুষ গড়ার কারিগর।’ এই কথাগুলো বলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনমান বিচার না করে বড় বড় কথা বলা বড্ড বেমানান। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের যেকোন আর্থিক প্রাপ্তিতে মাঠে নামতে হয় তাও বেশ লজ্জাজনক। সেজন্য দেশ ও দেশের মানুষের শুভ আগামীর জন্য অনতিবিলম্বে প্রতি মাসের ২-৩ তারিখের মধ্যে মাসিক বেতন স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং বারবার এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মেধাস্তর নিয়ে প্রশ্ন না করাই যৌক্তিকÑ কারণ বুদ্ধিমাত্রা উন্নত হলে তো এই বৃহৎ পেশাজীবী গোষ্ঠী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতো।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, বরিশাল]

ছবি

বিভুরঞ্জন সরকারের ‘খোলা চিঠি’: সততার এক মর্মান্তিক দলিল

নারীর নিরাপত্তা : সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব

নারীর নিরাপত্তা : সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব

প্রাথমিক শিক্ষা : এবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে

ছবি

বদরুদ্দীন উমর : কণ্ঠহীন সময়ের অনিরুদ্ধ কণ্ঠস্বর

চীনের তিব্বত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প : আচরণগত অর্থনীতির আলোকে ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ

বর্ষায় সাপের উপদ্রব ও আমাদের করণীয়

মুল্যস্ফীতি: বাংলাদেশের বাজারে কি একে বশে আনা সম্ভব?

মানসিক স্বাস্থ্য : একটি মানবিক ন্যায়বিচারের প্রশ্ন

কালো জাদুর কুসংস্কার : এক অন্ধকার হত্যাযজ্ঞের মুখোশ

ভোক্তা সচেতনতাই নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি

ছবি

মোগল আমলের স্থাপত্য মির্জাপুর শাহী মসজিদ

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ছবি

শতবর্ষ পরেও যার প্রয়োজন ফুরোয় না : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

আদিবাসী মুণ্ডা ভাষার বাঁচার আর্তনাদ

মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

tab

opinion » open-discussion

এ অবহেলার শেষ কোথায়?

দুলাল চন্দ্র মজুমদার

সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

বর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পাঠপরিকল্পনা, পাঠদান, পাঠসঞ্চালন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা মূল্যায়নসহ শিক্ষা সংক্রান্ত মোট কাজের ৯৭ (সাতানব্বই) ভাগ সম্পন্ন করে থাকে বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা। এই গোষ্ঠীতে এখন প্রায় ৫ (পাঁচ) লক্ষ মানুষ নিয়োজিত আছে। এই বিরাট জনগোষ্ঠীর পারিশ্রমিক পরিশোধ করে থাকে বাংলাদেশ সরকার।

এই প্রক্রিয়ার নাম এমপিও অর্থাৎ মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার। এই প্রক্রিয়ায় বেতনের শতভাগ পেলেও অন্যান্য সুবিধা নগন্য। যেমন বাড়িভাড়া ১,০০০ (এক হাজার) টাকা মাত্র। সমস্ত বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকলেও বেতন বা পারিশ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া এমপিওর মধ্যে নেই। এর সংখ্যা সারা বাংলাদেশে গোটা বারো। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মজীবন শুরু করেন তাদের শুধু একটি মাত্র পদোন্নতি আছে। সেই কারণে অনেকাংশেই বনসাই সাইজের পেশাগত জীবন অতিবাহিত করেন। কোন কোন সময় উচ্চপদস্থ লোকজন এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে আসলে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ছবক দেন।

কিন্তু আপনার যাপিত জীবন কীভাবে চলছে তা নিয়ে কোন প্রশ্ন করেনও না এবং জানতেও চান না। আবার যদি মন্ত্রীগোছের বা এই লেভেলের কোন লোক প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়েন তখন বলেন, ‘আপনি তো এই অবস্থা জেনেই এই পেশায় এসেছেন।’ আবার কেউ কেউ বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের কাম্য মেধা নেই মানে বিলো কেলিভার বা এরা পিছিয়ে পড়া।’

এভাবেই বলে থাকেন এবং আমরা সবসময় শুনে থাকি। এরকম বলাবলির আর শোনাশুনির মধ্যেই এল বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। অনেক কথা, অনেক উপদেশ, অনেক আশা এখন আর কোন অসুবিধা হবে না। এখন থেকে ইএফটি অর্থাৎ ইলেক্টিক ফান্ড ট্রান্সফার এর মাধ্যমে টাকা ছাড়া হবে এখন আর দেরি হবে না। আগে ইলেক্ট্রিক না থাকার জন্য গতি ছিল না আগে ছিল পরবর্তী মাসের ৫-৬ তারিখ। এখন ইলেক্ট্রিক থাকায় গতি এসেছে তাই পনেরো তারিখ পেরিয়ে গেলেও আসে না।

আমরা মানুষকে কত না ছবক দেই এটা করো বা এটা করো না। মিথ্যা আশ^াস বা চালাকি না করলেও তো হয়। একজন মানুষ যিনি এই পেশার ওপর নির্ভরশীল তিনি কীভাবে পরবর্তী মাসের পনেরো তারিখ পেরিয়ে গেলেও যদি তার বেতন না পান তাহলে তিনি সংসার চালান কীভাবে? এই বুঝ টুকু আত্মস্থ করতে তো তেমন কোন বড় মানুষ হওয়ার প্রয়োজন হয় কী? যে কোন সুস্থ মানুষই তো সহজভাবে অনুধাবণ করতে সক্ষম হন।

গত ১৬ জুলাই আমাদের বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারীরা জুন-২৫ এর বেতন পাননি। এটা কী শুধু অমানবিক? না এটা এটা নির্যাতন? এই সচেতন নির্যাতন চালু রেখে কোন ভাল কাজ করা সম্ভব না। অনেকেই বলে থাকেন, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদ- আর শিক্ষক সমাজ হলো মানুষ গড়ার কারিগর।’ এই কথাগুলো বলার আগে শিক্ষক-কর্মচারীদের জীবনমান বিচার না করে বড় বড় কথা বলা বড্ড বেমানান। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের যেকোন আর্থিক প্রাপ্তিতে মাঠে নামতে হয় তাও বেশ লজ্জাজনক। সেজন্য দেশ ও দেশের মানুষের শুভ আগামীর জন্য অনতিবিলম্বে প্রতি মাসের ২-৩ তারিখের মধ্যে মাসিক বেতন স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং বারবার এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মেধাস্তর নিয়ে প্রশ্ন না করাই যৌক্তিকÑ কারণ বুদ্ধিমাত্রা উন্নত হলে তো এই বৃহৎ পেশাজীবী গোষ্ঠী ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতো।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয়, বরিশাল]

back to top