alt

মুক্ত আলোচনা

গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে নারীর ক্ষমতায়ন

জিনাত আরা আহমেদ

: সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১

রাষ্ট্রের আর্থিক কর্মকা- এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলে রয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির সচলতা। এই সচলতার বিকাশে নারীরা বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন। বহুযুগ আগে থেকেই এ দেশের সংস্কৃতিতে গ্রামীণ নারীরা উৎপাদনমূখী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ঘরে রান্নার কাজে মূলত নারীরাই থাকেন। এই সূত্রে পিঠা-পায়েস থেকে শুরু করে খৈ, চিড়া, মুড়ি তৈরি এবং নানা ধরনের খাবারের ঘরোয়া আয়োজনে নারীদের অংশগ্রহণ। কিন্তু ঘরোয়া কাজের আর্থিক মূল্যায়ন না থাকায় এগুলো নারীর ক্ষমতায়নে তেমন প্রভাব ফেলেনি, অথচ নারীর ক্ষমতায়ন না হলে পরিবার পিছিয়ে যায়। পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের অগ্রগতির পিছনে নারীর ক্ষমতায়ন অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বহুমূখী পদক্ষেপ জাতীয় অর্থনীতিকে বেগবান করেছে। এক্ষেত্রে সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকাকে ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে অসংখ্য নারী, বিশেষত গ্রামীণ নারীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাদের অর্জন জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলছে। গ্রাম বাংলায় কৃষি কাজ শুরু করে মাছ ধরা, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, ধান মাড়াই, চাল থেকে আটা বানানো সব কাজে রয়েছে নারীর অংশ গ্রহণ। অনেক ক্ষেত্রে নারী একাই এসব কাজ করে থাকে। তাই একথা বলার অপেক্ষা রাখে না গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত নারীকেন্দ্রিক।

গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সিংহভাগই নারীকেন্দ্রিক। এদেশে হস্ত শিল্পের প্রসারে গ্রামীণ নারীরাই প্রথমত এগিয়ে এসেছেন। এ অঞ্চলে মসলিন শিল্পের বয়ন থেকে শুরু করে তাঁত বস্ত্র তৈরির মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের সূচনালগ্নে নারীরাই ভূমিকা রেখেছেন। গ্রামীণ নারীরা বহু আগে থেকেই সূচীশিল্প ও কারুশিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। কাঁথা সেলাই এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারীরা পরিবারে বাড়তি অর্থের জোগান দিয়েছেন। গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে দুধ ও মাংসের জোগানদাতাও নারী। হাঁস-মুরগী পালনের মাধ্যমে নিজের হাত খরচের টাকা এবং অভাবের দিনে পুঁজি দিয়ে সাহায্য করা গ্রামের নারীদের জন্য সাধারণ বিষয়। গ্রামে অনেক নারী এখন ডালের বড়ি, আমসত্ত্ব তিলের নাড়ু, মোয়া ইত্যাদি বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আয় করছেন। চাহিদা থাকায় মেয়েরা নিয়মিত কাজের সাথে এসব খাবার তৈরিও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। গ্রামীণ নারীরা পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে ঘরের পাশে পতিত জমিতে নানারকম সবজি উৎপাদন করেও গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

গ্রামীণ নারীরা শুধু খাদ্য ও কৃষিতেই নয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়ন্নশীল দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করাসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তর করেছেন আমাদের গ্রামের নারীরা। পোষাক শিল্প বর্তমানে যে পর্যায়ে এসেছে, তার পেছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন গ্রামের প্রান্তিক নারীরা। বর্তমানে তারাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি। পোষাক শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যাংক, বীমা, বন্দর, পরিবহন, পর্যটন, হোটেল সব শিল্পই বিকাশ লাভ করেছে।

নারীরা পরিবারের অন্যতম আর্থিক জোগানদাতা হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতায়নে একেবারেই পিছিয়ে। পারিবারিক উপার্জনে নারীদের অংশ গ্রহণ থাকাসত্ত্বেও ক্ষমতায়নের অভাবে গ্রামের অনেক নারী তাদের আর্থিক অধিকার ভোগ করতে পারছেন না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর মতামতকে কখনো মূল্যায়ন করা হয় না, অথচ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা অর্জন ক্ষমতায়নের প্রধান শর্ত। নারীর কাজের অধিকার এবং নিজের আয়ের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা তার ক্ষমতায়নকে সুসংহত করে। প্রকৃতপক্ষে প্রান্তিক নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই গ্রামীণ অর্থনীতির ক্রমোন্নতি সাধিত হয়।

প্রান্তিক তথা গ্রামীণ নারীদের সক্ষমতা অর্জনে সরকার সব ধরনের সুবিধার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিক্ষায় নারীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ অভাবনীয়। সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং তাদের কাজের প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ে সমান সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে জাতীয় নারী নীতি গ্রহণ করা হয়। নারীর প্রতি সব ধরনের সহিসংতা রোধে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা হয় পারিবারিক সহিংসতা দমন ও নিরাপত্তা আইন ২০১২। বাল্যবিবাহ নিরোধ করে মেয়ে শিশুদের সমাজে অগ্রগামী করার জন্য বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব কিছুর মূল লক্ষ্যই হল নারীর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করা।

পারিবারিক অর্থের জোগান দিতে গ্রামের অনেক নারী এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উদ্দ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দেশের দ্রুত ও সুষম উন্নয়নের জন্য গ্রামের প্রান্তিক নারী যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অতিক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে কাজ করছেন তাদের জাতীয় অর্থনীতির মূলমেস্রোতে নিয়ে আসতে হলে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র্র শিল্পের জন্য খুব বেশি পুঁজি দরকার হয় না, তাছাড়া এতে কর্মসংস্থানও বেশি। কিন্তু পারিবারিক কারণে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গ্রামীণ নারীরা জামানত দিতে না পারায় অনেকেই ঋণ সুবিধা নিতে পারেন না। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদে নারী উদ্দ্যোক্তাদের জামানত বিহীন ঋণ দানের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা গ্রামীণ নারী উদ্দ্যোক্তাদের জন্য অনেক আশাব্যঞ্জক। এক্ষেত্রে তাদের ঋণ দানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা জরুরি। কারণ তারা ঋণের কিস্তি ফেরত দানে বৃহৎ শিল্পের তুলনায় অনেক বেশি তৎপর। এসব ছাড়াও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) নারী উদ্দ্যোক্তাদের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। গ্রামের প্রান্তিক নারীদের অনেকেই এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে দারিদ্র্য জয় করেছেন।

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বিকাশে গ্রামীণ নারীদের আত্মবিশ^াসী হয়ে যোগ্যতার সাথে তাদের অর্জনকে তুলে ধরতে পারাই টেকসই উন্নয়নের মূল কথা। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ নারীরা যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎপর হতে পারেন, সে জন্য তাদের মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া জরুরি। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযুক্ত হয়ে ওঠেন। দেশের প্রতিটি গ্রামের হাজার হাজার নারীদের শ্রম ও উদ্দ্যোগে বিকাশমান অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধি হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করতে নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম বিষয়ক ফিচার)

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ছবি

শতবর্ষ পরেও যার প্রয়োজন ফুরোয় না : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

আদিবাসী মুণ্ডা ভাষার বাঁচার আর্তনাদ

মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

tab

মুক্ত আলোচনা

গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে নারীর ক্ষমতায়ন

জিনাত আরা আহমেদ

সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১

রাষ্ট্রের আর্থিক কর্মকা- এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূলে রয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির সচলতা। এই সচলতার বিকাশে নারীরা বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন। বহুযুগ আগে থেকেই এ দেশের সংস্কৃতিতে গ্রামীণ নারীরা উৎপাদনমূখী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ঘরে রান্নার কাজে মূলত নারীরাই থাকেন। এই সূত্রে পিঠা-পায়েস থেকে শুরু করে খৈ, চিড়া, মুড়ি তৈরি এবং নানা ধরনের খাবারের ঘরোয়া আয়োজনে নারীদের অংশগ্রহণ। কিন্তু ঘরোয়া কাজের আর্থিক মূল্যায়ন না থাকায় এগুলো নারীর ক্ষমতায়নে তেমন প্রভাব ফেলেনি, অথচ নারীর ক্ষমতায়ন না হলে পরিবার পিছিয়ে যায়। পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের অগ্রগতির পিছনে নারীর ক্ষমতায়ন অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বহুমূখী পদক্ষেপ জাতীয় অর্থনীতিকে বেগবান করেছে। এক্ষেত্রে সব উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমিকাকে ব্যাপক পরিসরে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীতে অসংখ্য নারী, বিশেষত গ্রামীণ নারীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তাদের অর্জন জাতীয় প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাব ফেলছে। গ্রাম বাংলায় কৃষি কাজ শুরু করে মাছ ধরা, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, ধান মাড়াই, চাল থেকে আটা বানানো সব কাজে রয়েছে নারীর অংশ গ্রহণ। অনেক ক্ষেত্রে নারী একাই এসব কাজ করে থাকে। তাই একথা বলার অপেক্ষা রাখে না গ্রামীণ অর্থনীতি মূলত নারীকেন্দ্রিক।

গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সিংহভাগই নারীকেন্দ্রিক। এদেশে হস্ত শিল্পের প্রসারে গ্রামীণ নারীরাই প্রথমত এগিয়ে এসেছেন। এ অঞ্চলে মসলিন শিল্পের বয়ন থেকে শুরু করে তাঁত বস্ত্র তৈরির মতো অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পের সূচনালগ্নে নারীরাই ভূমিকা রেখেছেন। গ্রামীণ নারীরা বহু আগে থেকেই সূচীশিল্প ও কারুশিল্পের সাথে যুক্ত ছিলেন। কাঁথা সেলাই এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারীরা পরিবারে বাড়তি অর্থের জোগান দিয়েছেন। গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে দুধ ও মাংসের জোগানদাতাও নারী। হাঁস-মুরগী পালনের মাধ্যমে নিজের হাত খরচের টাকা এবং অভাবের দিনে পুঁজি দিয়ে সাহায্য করা গ্রামের নারীদের জন্য সাধারণ বিষয়। গ্রামে অনেক নারী এখন ডালের বড়ি, আমসত্ত্ব তিলের নাড়ু, মোয়া ইত্যাদি বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে আয় করছেন। চাহিদা থাকায় মেয়েরা নিয়মিত কাজের সাথে এসব খাবার তৈরিও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। গ্রামীণ নারীরা পরিবারে স্বচ্ছলতা আনতে ঘরের পাশে পতিত জমিতে নানারকম সবজি উৎপাদন করেও গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছেন।

গ্রামীণ নারীরা শুধু খাদ্য ও কৃষিতেই নয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়ন্নশীল দেশের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করাসহ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও তাদের ভূমিকা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে শিল্পভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তর করেছেন আমাদের গ্রামের নারীরা। পোষাক শিল্প বর্তমানে যে পর্যায়ে এসেছে, তার পেছনে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন গ্রামের প্রান্তিক নারীরা। বর্তমানে তারাই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি। পোষাক শিল্পকে কেন্দ্র করে ব্যাংক, বীমা, বন্দর, পরিবহন, পর্যটন, হোটেল সব শিল্পই বিকাশ লাভ করেছে।

নারীরা পরিবারের অন্যতম আর্থিক জোগানদাতা হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতায়নে একেবারেই পিছিয়ে। পারিবারিক উপার্জনে নারীদের অংশ গ্রহণ থাকাসত্ত্বেও ক্ষমতায়নের অভাবে গ্রামের অনেক নারী তাদের আর্থিক অধিকার ভোগ করতে পারছেন না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর মতামতকে কখনো মূল্যায়ন করা হয় না, অথচ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা অর্জন ক্ষমতায়নের প্রধান শর্ত। নারীর কাজের অধিকার এবং নিজের আয়ের উপর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা তার ক্ষমতায়নকে সুসংহত করে। প্রকৃতপক্ষে প্রান্তিক নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমেই গ্রামীণ অর্থনীতির ক্রমোন্নতি সাধিত হয়।

প্রান্তিক তথা গ্রামীণ নারীদের সক্ষমতা অর্জনে সরকার সব ধরনের সুবিধার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। শিক্ষায় নারীদের শতভাগ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নারীবান্ধব কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করা, আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নারীদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ অভাবনীয়। সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা এবং তাদের কাজের প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যায়নের সুযোগ করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ে সমান সুযোগ তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে জাতীয় নারী নীতি গ্রহণ করা হয়। নারীর প্রতি সব ধরনের সহিসংতা রোধে ২০১২ সালে প্রণয়ন করা হয় পারিবারিক সহিংসতা দমন ও নিরাপত্তা আইন ২০১২। বাল্যবিবাহ নিরোধ করে মেয়ে শিশুদের সমাজে অগ্রগামী করার জন্য বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব কিছুর মূল লক্ষ্যই হল নারীর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করা।

পারিবারিক অর্থের জোগান দিতে গ্রামের অনেক নারী এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উদ্দ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। দেশের দ্রুত ও সুষম উন্নয়নের জন্য গ্রামের প্রান্তিক নারী যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অতিক্ষুদ্র শিল্প নিয়ে কাজ করছেন তাদের জাতীয় অর্থনীতির মূলমেস্রোতে নিয়ে আসতে হলে সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। কারণ ক্ষুদ্র্র শিল্পের জন্য খুব বেশি পুঁজি দরকার হয় না, তাছাড়া এতে কর্মসংস্থানও বেশি। কিন্তু পারিবারিক কারণে এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে গ্রামীণ নারীরা জামানত দিতে না পারায় অনেকেই ঋণ সুবিধা নিতে পারেন না। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদে নারী উদ্দ্যোক্তাদের জামানত বিহীন ঋণ দানের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা গ্রামীণ নারী উদ্দ্যোক্তাদের জন্য অনেক আশাব্যঞ্জক। এক্ষেত্রে তাদের ঋণ দানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা জরুরি। কারণ তারা ঋণের কিস্তি ফেরত দানে বৃহৎ শিল্পের তুলনায় অনেক বেশি তৎপর। এসব ছাড়াও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) নারী উদ্দ্যোক্তাদের একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বিনা জামানতে ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। গ্রামের প্রান্তিক নারীদের অনেকেই এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে দারিদ্র্য জয় করেছেন।

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বিকাশে গ্রামীণ নারীদের আত্মবিশ^াসী হয়ে যোগ্যতার সাথে তাদের অর্জনকে তুলে ধরতে পারাই টেকসই উন্নয়নের মূল কথা। বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ নারীরা যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৎপর হতে পারেন, সে জন্য তাদের মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া জরুরি। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী নারী শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে উপযুক্ত হয়ে ওঠেন। দেশের প্রতিটি গ্রামের হাজার হাজার নারীদের শ্রম ও উদ্দ্যোগে বিকাশমান অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধি হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করতে নারীর ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই।

(পিআইডি-শিশু ও নারী উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম বিষয়ক ফিচার)

back to top