আরাফাত হোসেন
রহমান (ছদ্দনাম ) সাহেব প্রতিদিন রাতে ইন্সুলিন নেন। ইন্সুলিন নেয়ার আগে ডায়াবেটিস টেস্ট করেছেন রেজাল্ট আসলো ১৩ মিলিমোল। ইন্সুলিন নিলেন সময়মতো। কিন্তু কিছু সময় যেতেই উনি ঘামাতে শুরু করলেন সাথে প্রচন্ড মাথা ঘুরানো, ক্লান্তি, এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন। উনার সন্তানেরা কিছু না বুজে উঠতে পেরে উনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। একটু দেরি হয়ে গেলো, ততক্ষনে রহমান সাহেব বেহুশ প্রায়। ডাক্তার দ্রুত উনার গ্লোকোজ লেভেল মেপে দেখলেন, উনার গ্লুকোজ ২.৯ মিলিমোল। এই গ্লুকোজ কমে যাওয়া কে (৩.৯ মিলিমোলের নিচে) মেডিকেল এর ভাষায় হাইপোগ্লাইসিমিয়া বলে। যার ফলে একজন ডায়াবেটিস রোগী চলে যেতে পারেন কোমায়, হতে পারে ব্রেন ড্যামেজ , এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, হতে পারে মৃত্যু। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হতে পারে মাত্রা অতিরিক্ত ইনসুলিন অথবা ওষুধের ব্যবহারের ফলে। এ ছাড়া ও মাত্রা অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম অথবা অনিয়মিত ও প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণের কারণে।
কিন্তু কেন এমন হলো রহমান সাহেবের ক্ষেত্রে? রহমান সাহেব তো খাবার খেয়ে, গ্লুকোজ লেভেল দেখেই ইনসুলিন নিয়ে ছিলেন। এমন ঘটনা শুধু রহমান সাহেবের ক্ষেত্রেই ঘটেনা এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে এখন নিয়মিত। এখানেই রয়েছে গ্লোকোমিটার এর ভূমিকা। গ্লোকোমিটারের ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই একজন ডায়াবেটিস রোগী বুজতে পারেন যে তার ডায়াবেটিস চিকিৎসা এবং লাইফস্টাইল যেটা তিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেনে চলছেন তা ঠিক আছে কিনা অথবা তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কিনা। এখানে রহমান সাহেব গ্লোকোজ লেভেল টা যেই গ্লোকোমিটার দিয়ে মেপে ছিলেন তা সঠিক রেজাল্ট দেয়নি।
ডায়াবেটিস মাপার মেশিন বা গ্লোকোমিটার সঠিক রেজাল্ট না দেয়ার পিছনে কয়েকটা টা কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভালো ব্রান্ডের ও কোয়ালিটির গ্লোকোমিটার ব্যবহার না করা এবং নকল ও নিম্ম মানের স্ট্রিপস ব্যবহার করা।
গ্লোকোমিটার যেহেতু একটি মেডিকেল পণ্য সেহেতু শুধু প্রচার প্রচারণা দিয়ে এটাকে ভালো গ্লোকোমিটার ব্র্যান্ড বলা যাবেনা। দেখতে হবে এর ইন্টারন্যাশনাল এবং দেশীয় স্বীকৃতি আছে কিনা যেমন USFDA , ISO , CE , DGDA রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। এ ছাড়াও দেখতে হবে গ্লোকোমিটার ব্র্যান্ড টির বিশ্বব্যাপি পরিচিতি, কত সময় ধরে মার্কেট এ কাজ করছে, গ্লোকোমিটারটির স্ট্রিপস দেশব্যাপী বড় ফার্মেসী অথবা মেডিকেল শপ এ পাওয়া যায় কি না, এবং এটার দেশে এবং বিদেশে কাস্টমার সার্ভিস অফিস আছে কিনা । সাধারণতো ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড গুলোর ক্ষেত্রে এদের বিশ্বের প্রায় দেশে কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার থাকে। আপনি যে দেশ থেকেই পণ্যটি কিনুন না কেন আপনাকে এদের সকল দেশেই সেবা প্রদান করবে। একটি ভালো মানের গ্লোকোমিটার সহজে ব্যবহার করা যায় এবং ফলাফল সহজে বোঝা যায়।
গ্লোকোমিটার এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ব্রান্ডের গ্লোকোমিটার এ শুধু ওই ব্রান্ডের এর জন্য নির্ধারিত স্ট্রিপস ই ব্যবহার করতে হবে, অন্য কোনো ব্র্যান্ড এর স্ট্রিপস প্রযোজ্য নয়। এই গ্লোকোমিটার স্ট্রিপস গুলো সাধরণত খুবই উন্নত মানের ধাতব ইলেক্ট্রোড যেমন গোল্ড ও প্যালাডিয়াম এবং কেমিকাল দ্বারা তৈরী যেমন ফ্লাভিন এডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড গ্লোকোজ ডিহাইড্রোজিনেজ ( FAD-GDH ) যা বাতাসের সংস্পর্শে সহজে নষ্ট হয়না। এই ইলেক্ট্রোড এবং কেমিকাল এর গুণগত মানের উপর নির্ভর করে গ্লোকোমিটার এর সঠিক রেজাল্ট এর নিশ্চয়তা। যত মানসম্পন্ন কেমিকাল তত ভালো ফলাফল। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী নিম্ম মানের কেমিকাল ও ইলেক্ট্রড সমৃদ্ধ নকল স্ট্রিপ্স বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। যা সম্পুর্ণ অবৈধ পথে খোলা অবস্থায় এবং কোনো সঠিক সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আনা হয়। এই স্ট্রিপস গুলোকে এভাবে এনে স্থানীয় ভাবে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়। যেগুলো দেখতে অনেকটা আসল স্ট্রিপস এর মতো হলেও এর ফলাফল কখনোই সঠিক হতে পারেনা। নকল স্ট্রিপস গুলো বাতাসের সংস্পর্শে সহজে এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। নিম্ম মানের কেমিকাল ও ইলেক্ট্রড সমৃদ্ধ হওয়ায় কেমিকাল রিঅ্যাকশন এর ফলে ফলাফল দেখালেও তা সঠিক ফলাফল নয়। অনেক নামি দামি ফার্মেসী ও সার্জিক্যাল দোকান অধিক মুনাফার লোভে এই নকল স্ট্রিপস গুলো বিক্রি করে থাকেন কিন্তু তারা হয়তো জানেন ও না কত প্রাণ জরে গেছে তাদের এই মুনাফার লোভে।
আসল স্ট্রিপস কিনবেন ও চিনবেন কিভাবে?
ব্র্যান্ড ভেদে আসল ও নকল স্ট্রিপস চেনার উপায় কম বেশি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু নিম্মোক্ত উপায় গুলো হতে পারে সহায়ক:
দোকানদারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন আপনি কোনো নকল স্ট্রিপস কিনতে চান না। জাতীয় ওষুধ অধিদপ্তর এবং ভোক্তা অধিকার আইন কঠোর হওয়ায় তারা সাধারণত আপনার সচেতনতা কে ভয় পায়। কারণ নকল স্ট্রিপস রাখার দায়ে তাদের হতে পারে বড় মাপের জেল জরিমানা। এমনকি বাতিল হতে পারে তাদের ব্যাবসায়িক লাইসেন্স।
গ্লোকোমিটার এর ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান রক্ষার্থে এর ভিতরের এবং বাহিরের প্যাকেজিং সম্পর্ণ সিলড অবস্থায় আমদানি করা হয় যার ফিনিশিং অনেক সুন্দর এবং স্টিকার যুক্ত। নকল স্ট্রিপস এর প্যাকেজিং থাকে নড়বড়ে এবং প্যাকেট এর গায়ে লিখা ও স্টিকার অনেকটাই অস্পষ্ট যা স্থানীয় ভাবে করা হয় তা কখনোই আসলের মতো নয়।
আসল পণ্যের দাম সাধারণত প্যাকেটের গাঁয়ে উল্লেখিত দাম হতে ৩-৫% কম হতে পারে যা দোকানদারেরা তাদের কাস্টমার ধরে রাখার স্বার্থে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে কিন্তু তা কখনই অনেক কম মূল্য হতে পারেনা। আপনি হয়তো কম দাম পেয়ে খুশি হতে পারেন কিন্তু জেনে রাখবেন কম মূল্য নয়, আপনার দরকার সঠিক ফলাফল যা দেখে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কেনার পরে যদি আপনি সঠিক ফলাফলে না পেয়ে থাকেন অথবা স্ট্রিপস কাজ না করে তাহলে আপনি যে দোকান থেকে কিনেছেন সেখানে অভিযোগ দিন। যদি তারা নকল স্ট্রিপস বিক্রয় করে থাকে তাহলে তারা আপনাকে প্রকৃত কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে বলবেনা। অন্যদিকে প্রকৃত কোম্পানি কখনোই আপনার সাথে যোগাযোগ এবং আপনার স্ট্রিপস ফেরত না নিয়ে আপনাকে নতুন স্ট্রিপস দিবেনা।
কেনার সময় সন্দেহ হলে প্যাকেট এ উল্লেখিত কাস্টমার কেয়ার নাম্বার এ যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
নকলে সয়লাব আমাদের এ দেশ, কিন্তু আপনার (ক্রেতা ও বিক্রেতা) একটুখানি সচেতনতা ও সহযোগিতায় আমরা পেতে পারি একটি আসল মানের পণ্য। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ও ভালো মানের আসল গ্লোকোমিটার ও স্ট্রিপস ব্যবহার করুন। আমরা রহমান সাহেবের মতো কাহিনীর পুনরাবৃত্তি চায়না।
[লেখক: ফার্মাসিস্ট, বিজনেস ম্যানেজার, বাংলাদেশ লাইফস্ক্যান]
আরাফাত হোসেন
সোমবার, ১৫ নভেম্বর ২০২১
রহমান (ছদ্দনাম ) সাহেব প্রতিদিন রাতে ইন্সুলিন নেন। ইন্সুলিন নেয়ার আগে ডায়াবেটিস টেস্ট করেছেন রেজাল্ট আসলো ১৩ মিলিমোল। ইন্সুলিন নিলেন সময়মতো। কিন্তু কিছু সময় যেতেই উনি ঘামাতে শুরু করলেন সাথে প্রচন্ড মাথা ঘুরানো, ক্লান্তি, এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন। উনার সন্তানেরা কিছু না বুজে উঠতে পেরে উনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। একটু দেরি হয়ে গেলো, ততক্ষনে রহমান সাহেব বেহুশ প্রায়। ডাক্তার দ্রুত উনার গ্লোকোজ লেভেল মেপে দেখলেন, উনার গ্লুকোজ ২.৯ মিলিমোল। এই গ্লুকোজ কমে যাওয়া কে (৩.৯ মিলিমোলের নিচে) মেডিকেল এর ভাষায় হাইপোগ্লাইসিমিয়া বলে। যার ফলে একজন ডায়াবেটিস রোগী চলে যেতে পারেন কোমায়, হতে পারে ব্রেন ড্যামেজ , এমনকি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, হতে পারে মৃত্যু। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে হাইপোগ্লাইসিমিয়া হতে পারে মাত্রা অতিরিক্ত ইনসুলিন অথবা ওষুধের ব্যবহারের ফলে। এ ছাড়া ও মাত্রা অতিরিক্ত শারীরিক ব্যায়াম অথবা অনিয়মিত ও প্রয়োজনের তুলনায় কম খাদ্য গ্রহণের কারণে।
কিন্তু কেন এমন হলো রহমান সাহেবের ক্ষেত্রে? রহমান সাহেব তো খাবার খেয়ে, গ্লুকোজ লেভেল দেখেই ইনসুলিন নিয়ে ছিলেন। এমন ঘটনা শুধু রহমান সাহেবের ক্ষেত্রেই ঘটেনা এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে এখন নিয়মিত। এখানেই রয়েছে গ্লোকোমিটার এর ভূমিকা। গ্লোকোমিটারের ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই একজন ডায়াবেটিস রোগী বুজতে পারেন যে তার ডায়াবেটিস চিকিৎসা এবং লাইফস্টাইল যেটা তিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মেনে চলছেন তা ঠিক আছে কিনা অথবা তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কিনা। এখানে রহমান সাহেব গ্লোকোজ লেভেল টা যেই গ্লোকোমিটার দিয়ে মেপে ছিলেন তা সঠিক রেজাল্ট দেয়নি।
ডায়াবেটিস মাপার মেশিন বা গ্লোকোমিটার সঠিক রেজাল্ট না দেয়ার পিছনে কয়েকটা টা কারণ থাকতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভালো ব্রান্ডের ও কোয়ালিটির গ্লোকোমিটার ব্যবহার না করা এবং নকল ও নিম্ম মানের স্ট্রিপস ব্যবহার করা।
গ্লোকোমিটার যেহেতু একটি মেডিকেল পণ্য সেহেতু শুধু প্রচার প্রচারণা দিয়ে এটাকে ভালো গ্লোকোমিটার ব্র্যান্ড বলা যাবেনা। দেখতে হবে এর ইন্টারন্যাশনাল এবং দেশীয় স্বীকৃতি আছে কিনা যেমন USFDA , ISO , CE , DGDA রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। এ ছাড়াও দেখতে হবে গ্লোকোমিটার ব্র্যান্ড টির বিশ্বব্যাপি পরিচিতি, কত সময় ধরে মার্কেট এ কাজ করছে, গ্লোকোমিটারটির স্ট্রিপস দেশব্যাপী বড় ফার্মেসী অথবা মেডিকেল শপ এ পাওয়া যায় কি না, এবং এটার দেশে এবং বিদেশে কাস্টমার সার্ভিস অফিস আছে কিনা । সাধারণতো ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড গুলোর ক্ষেত্রে এদের বিশ্বের প্রায় দেশে কাস্টমার সার্ভিস সেন্টার থাকে। আপনি যে দেশ থেকেই পণ্যটি কিনুন না কেন আপনাকে এদের সকল দেশেই সেবা প্রদান করবে। একটি ভালো মানের গ্লোকোমিটার সহজে ব্যবহার করা যায় এবং ফলাফল সহজে বোঝা যায়।
গ্লোকোমিটার এর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ব্রান্ডের গ্লোকোমিটার এ শুধু ওই ব্রান্ডের এর জন্য নির্ধারিত স্ট্রিপস ই ব্যবহার করতে হবে, অন্য কোনো ব্র্যান্ড এর স্ট্রিপস প্রযোজ্য নয়। এই গ্লোকোমিটার স্ট্রিপস গুলো সাধরণত খুবই উন্নত মানের ধাতব ইলেক্ট্রোড যেমন গোল্ড ও প্যালাডিয়াম এবং কেমিকাল দ্বারা তৈরী যেমন ফ্লাভিন এডেনিন ডাইনিউক্লিওটাইড গ্লোকোজ ডিহাইড্রোজিনেজ ( FAD-GDH ) যা বাতাসের সংস্পর্শে সহজে নষ্ট হয়না। এই ইলেক্ট্রোড এবং কেমিকাল এর গুণগত মানের উপর নির্ভর করে গ্লোকোমিটার এর সঠিক রেজাল্ট এর নিশ্চয়তা। যত মানসম্পন্ন কেমিকাল তত ভালো ফলাফল। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী নিম্ম মানের কেমিকাল ও ইলেক্ট্রড সমৃদ্ধ নকল স্ট্রিপ্স বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। যা সম্পুর্ণ অবৈধ পথে খোলা অবস্থায় এবং কোনো সঠিক সংরক্ষণ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া আনা হয়। এই স্ট্রিপস গুলোকে এভাবে এনে স্থানীয় ভাবে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়। যেগুলো দেখতে অনেকটা আসল স্ট্রিপস এর মতো হলেও এর ফলাফল কখনোই সঠিক হতে পারেনা। নকল স্ট্রিপস গুলো বাতাসের সংস্পর্শে সহজে এর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। নিম্ম মানের কেমিকাল ও ইলেক্ট্রড সমৃদ্ধ হওয়ায় কেমিকাল রিঅ্যাকশন এর ফলে ফলাফল দেখালেও তা সঠিক ফলাফল নয়। অনেক নামি দামি ফার্মেসী ও সার্জিক্যাল দোকান অধিক মুনাফার লোভে এই নকল স্ট্রিপস গুলো বিক্রি করে থাকেন কিন্তু তারা হয়তো জানেন ও না কত প্রাণ জরে গেছে তাদের এই মুনাফার লোভে।
আসল স্ট্রিপস কিনবেন ও চিনবেন কিভাবে?
ব্র্যান্ড ভেদে আসল ও নকল স্ট্রিপস চেনার উপায় কম বেশি ভিন্ন হতে পারে কিন্তু নিম্মোক্ত উপায় গুলো হতে পারে সহায়ক:
দোকানদারকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন আপনি কোনো নকল স্ট্রিপস কিনতে চান না। জাতীয় ওষুধ অধিদপ্তর এবং ভোক্তা অধিকার আইন কঠোর হওয়ায় তারা সাধারণত আপনার সচেতনতা কে ভয় পায়। কারণ নকল স্ট্রিপস রাখার দায়ে তাদের হতে পারে বড় মাপের জেল জরিমানা। এমনকি বাতিল হতে পারে তাদের ব্যাবসায়িক লাইসেন্স।
গ্লোকোমিটার এর ক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মান রক্ষার্থে এর ভিতরের এবং বাহিরের প্যাকেজিং সম্পর্ণ সিলড অবস্থায় আমদানি করা হয় যার ফিনিশিং অনেক সুন্দর এবং স্টিকার যুক্ত। নকল স্ট্রিপস এর প্যাকেজিং থাকে নড়বড়ে এবং প্যাকেট এর গায়ে লিখা ও স্টিকার অনেকটাই অস্পষ্ট যা স্থানীয় ভাবে করা হয় তা কখনোই আসলের মতো নয়।
আসল পণ্যের দাম সাধারণত প্যাকেটের গাঁয়ে উল্লেখিত দাম হতে ৩-৫% কম হতে পারে যা দোকানদারেরা তাদের কাস্টমার ধরে রাখার স্বার্থে ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে কিন্তু তা কখনই অনেক কম মূল্য হতে পারেনা। আপনি হয়তো কম দাম পেয়ে খুশি হতে পারেন কিন্তু জেনে রাখবেন কম মূল্য নয়, আপনার দরকার সঠিক ফলাফল যা দেখে আপনি আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
কেনার পরে যদি আপনি সঠিক ফলাফলে না পেয়ে থাকেন অথবা স্ট্রিপস কাজ না করে তাহলে আপনি যে দোকান থেকে কিনেছেন সেখানে অভিযোগ দিন। যদি তারা নকল স্ট্রিপস বিক্রয় করে থাকে তাহলে তারা আপনাকে প্রকৃত কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে বলবেনা। অন্যদিকে প্রকৃত কোম্পানি কখনোই আপনার সাথে যোগাযোগ এবং আপনার স্ট্রিপস ফেরত না নিয়ে আপনাকে নতুন স্ট্রিপস দিবেনা।
কেনার সময় সন্দেহ হলে প্যাকেট এ উল্লেখিত কাস্টমার কেয়ার নাম্বার এ যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
নকলে সয়লাব আমাদের এ দেশ, কিন্তু আপনার (ক্রেতা ও বিক্রেতা) একটুখানি সচেতনতা ও সহযোগিতায় আমরা পেতে পারি একটি আসল মানের পণ্য। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ও ভালো মানের আসল গ্লোকোমিটার ও স্ট্রিপস ব্যবহার করুন। আমরা রহমান সাহেবের মতো কাহিনীর পুনরাবৃত্তি চায়না।
[লেখক: ফার্মাসিস্ট, বিজনেস ম্যানেজার, বাংলাদেশ লাইফস্ক্যান]