আলাউদ্দিন আহমেদ
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাত দিনের অনশন ভাঙ্গাতে সক্ষম হলেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। তাঁর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সরকারের সংশ্লিষ্টজনরা যা পারলেননা তাই করে দেখালেন জাফর ইকবাল স্যার।
তিনি চারটায় (২৬ জানুয়ারি) তাঁর সহধর্মিণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ ঢাকা থেকে সরাসরি শিক্ষার্থীদের অনশন স্থলে পৌঁছান।
তাঁরা অনেক সময় ধরে তাদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। ড.জাফর ইকবালের আগমনে উজ্জীবিত ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। গভীর রাতে শীতকে উপেক্ষা করে কয়েকশত শিক্ষার্থী অধ্যাপক জাফর ইকবালের কথা শুনেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে শুরু প্রভোস্ট বিরোধী আন্দোলনে ১৬ জানুয়ারি পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ৩০ শিক্ষার্থীকে আহত করলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমি এখানে আসতে চাইছিলাম না। কারণ তোমরা আমার কথা না শুনলে তাই! তবে আমার ছেলে-মেয়েদের উপর বিশ্বাস ছিল, তাই এসেছি। আমি সংকল্প করে এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙিয়ে তারপর আমি সিলেট ছাড়বো। আমি চাই তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও, তবে অনশন ভেঙে আন্দোলন করো। আন্দোলন আর অনশন ভিন্ন জিনিস!
এরপর বুধবার সকাল ১০টা ২১ মিনিটের দিকে পানি খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতির বাঁকা পথের কারনে পরিবেশ নামতে নামতে এখন সমস্যার অনেক গভীরে চলে গেছে। দলীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে যেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগে বর্তমানে অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ নেই। দেশপ্রেমিক সৎ নাগরিক সৃষ্টির বদলে এখন দুর্নীতিবাজ তৈরির কারখানায় পরিনত হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এখন নানান কারনে বিতর্কিত। ভিসি স্যারের দশ টাকার চা-সিঙ্গারার গল্প আমরা জানি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক দীনবন্ধু পালের পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার বিভাগেরই এক শিক্ষক এই সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগ আমলে না নিয়ে ওই শিক্ষকের পদোন্নতির সুপারিশ করেছে। সংগীত বিভাগের সভাপতি দীন বন্ধু পালের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনেন তার বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক অসীত রায়।
তিনি গত বছরের ২৮ নভেম্বর চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য লিখিত আবেদন করেন।
ঢাকার অপর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রকাশ্যে যুবলীগের সভাপতি পদ পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশে সর্বমহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। শাবি’র ভিসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের নাকি কেউ বিয়ে করতে চায়না। অবশ্য তীব্র প্রতিবাদের মুখে কয়েকদিন পর তিনি এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে বিস্তর উদাহরণ ইত:মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে যা হতাশার চিত্রকেই তুলে ধরে। একজন অনৈতিক শিক্ষক একজন অনৈতিক নাগরিকই তৈরি করতে পারেন। শ্রদ্ধায় মাথানত করার মত শিক্ষকদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
শিক্ষার মানের বদলে নানান মুখরোচক কথার ফুলঝুরিতে যে বয়ান দেয়া হয় তা বাস্তবতা বিবর্জিত। উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে যারা মানুষের কল্যাণ কাজের বদলে ব্যক্তিস্বার্থে লাগামহীন দুর্নীতি, নীতি-নৈতিকতার কবর দেন তারা আর যাইহোক দেশপ্রেমিক নন। কার্যত: সমাজের এই মূল্যবোধহীন গোষ্ঠিটিই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। যারফলে এ ধরনের শিক্ষকদের গ্রহনযোগ্যতাও এখন শূন্যের কোঠায়। তাদের কথায় শিক্ষার্থীরা অনুপ্রানীত হয়না, বিশ্বাস রাখতে পারেনা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যাবার মত সৎ সাহস ওই শিক্ষকদের নেই।
কিন্তু ড. জাফর ইকবাল স্যারদের মত কিছু শিক্ষকের সেই সততা. নিষ্ঠা. একাগ্রতা. শিক্ষাপ্রেম আছে। যার প্রমান তিনি দিয়েছেন অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যেয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে অনশন ভাঙ্গাতে পেরে। এ সময় তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়’। তিনি শিক্ষার্থীদের বললেন, তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান।
তিনি বলেছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে আমাদের দেশের ৩৪ জন ভিসি একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন বলেছিলেন, সেটা চোখে দেখার খুবই শখ ছিল। জানিনা দেখে যেতে পারি কিনা!
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন বন্ধে প্রশাসন ক্যাম্পাসে খাবারের দোকান পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার রাতে ‘চাষাভুষার টং’ চালু করেছে শিক্ষার্থীরা।
এ দোকানে চা, রুটি, বিস্কিটসহ হালকা খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে খাবার কিনছেন।
‘চাষাভুষার টং’ দোকানের উদ্যোক্তারা জানান, আন্দোলন বন্ধে ক্যাম্পাসে খাবারের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের খাবার পেতে সমস্যা হচ্ছে। আন্দোলনের খবর সংগ্রহে আসা গণমাধ্যমকর্মীরাও সমস্যায় পড়েছেন। তাই প্রতিবাদ হিসেবে ভ্রাম্যমাণ দোকানটি চালু করা হয়েছে।
এই দোকানের নামের পিছনেও কারন আছে। একজন ভিসি আন্দোলন সম্পর্কে বলেছিলেন, আমরা চাষাভুষার সন্তান নইযে সবকিছু মেনে নিতে হবে। এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে দোকানটির নাম ‘চাষাভুষার টং’ রাখা হয়েছে। ছোট ছোট এসব প্রতিবাদ অনেক বড় কিছুর ঈঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সংগঠন উপাচার্য পরিষদের সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিমউদ্দিন আহমেদ সিলেটের আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়তে রাজি না হলে সরকারের উচিৎ হবে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীল পরিবেশই সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার কথা।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বুধবার শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙ্গানোর ব্যাপারে ড. জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখানকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। হয়ত আপাত: কিছু সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু বিভিন্ন ভিসিসহ বহু শিক্ষকের মন-মানসিকতায় যে নেতিবাচক নীতি-আদর্শহীনতা জন্ম নিয়েছে তা থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করার কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে তা বুঝতে পারা বেশ মুশকিল।
এই কাজটির জন্য সুদুরপ্রসারি কোন পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও আবার ‘ ‘চাষাভুষার টং’ এর প্রয়োজন পড়বে তা সংশ্লিষ্টদের এখনই ভাবা উচিত।
[লেখক: গণমাধ্যমকর্মী]
আলাউদ্দিন আহমেদ
বৃহস্পতিবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২২
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাত দিনের অনশন ভাঙ্গাতে সক্ষম হলেন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল। তাঁর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সরকারের সংশ্লিষ্টজনরা যা পারলেননা তাই করে দেখালেন জাফর ইকবাল স্যার।
তিনি চারটায় (২৬ জানুয়ারি) তাঁর সহধর্মিণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকসহ ঢাকা থেকে সরাসরি শিক্ষার্থীদের অনশন স্থলে পৌঁছান।
তাঁরা অনেক সময় ধরে তাদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনেছেন। ড.জাফর ইকবালের আগমনে উজ্জীবিত ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। গভীর রাতে শীতকে উপেক্ষা করে কয়েকশত শিক্ষার্থী অধ্যাপক জাফর ইকবালের কথা শুনেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে শুরু প্রভোস্ট বিরোধী আন্দোলনে ১৬ জানুয়ারি পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ৩০ শিক্ষার্থীকে আহত করলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি উঠে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনসহ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষার্থীরা।
ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমি এখানে আসতে চাইছিলাম না। কারণ তোমরা আমার কথা না শুনলে তাই! তবে আমার ছেলে-মেয়েদের উপর বিশ্বাস ছিল, তাই এসেছি। আমি সংকল্প করে এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙিয়ে তারপর আমি সিলেট ছাড়বো। আমি চাই তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও, তবে অনশন ভেঙে আন্দোলন করো। আন্দোলন আর অনশন ভিন্ন জিনিস!
এরপর বুধবার সকাল ১০টা ২১ মিনিটের দিকে পানি খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী।
শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষক রাজনীতির বাঁকা পথের কারনে পরিবেশ নামতে নামতে এখন সমস্যার অনেক গভীরে চলে গেছে। দলীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে যেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগে বর্তমানে অধিকাংশ উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আর প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ নেই। দেশপ্রেমিক সৎ নাগরিক সৃষ্টির বদলে এখন দুর্নীতিবাজ তৈরির কারখানায় পরিনত হচ্ছে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এখন নানান কারনে বিতর্কিত। ভিসি স্যারের দশ টাকার চা-সিঙ্গারার গল্প আমরা জানি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষক দীনবন্ধু পালের পিএইচডি থিসিসে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার বিভাগেরই এক শিক্ষক এই সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণসহ প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগ আমলে না নিয়ে ওই শিক্ষকের পদোন্নতির সুপারিশ করেছে। সংগীত বিভাগের সভাপতি দীন বন্ধু পালের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ আনেন তার বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক অসীত রায়।
তিনি গত বছরের ২৮ নভেম্বর চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য লিখিত আবেদন করেন।
ঢাকার অপর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির প্রকাশ্যে যুবলীগের সভাপতি পদ পাওয়ার আগ্রহ প্রকাশে সর্বমহলে নিন্দার ঝড় ওঠে। শাবি’র ভিসি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের নাকি কেউ বিয়ে করতে চায়না। অবশ্য তীব্র প্রতিবাদের মুখে কয়েকদিন পর তিনি এই বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন।
এভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সম্পর্কে বিস্তর উদাহরণ ইত:মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে যা হতাশার চিত্রকেই তুলে ধরে। একজন অনৈতিক শিক্ষক একজন অনৈতিক নাগরিকই তৈরি করতে পারেন। শ্রদ্ধায় মাথানত করার মত শিক্ষকদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে।
শিক্ষার মানের বদলে নানান মুখরোচক কথার ফুলঝুরিতে যে বয়ান দেয়া হয় তা বাস্তবতা বিবর্জিত। উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করে যারা মানুষের কল্যাণ কাজের বদলে ব্যক্তিস্বার্থে লাগামহীন দুর্নীতি, নীতি-নৈতিকতার কবর দেন তারা আর যাইহোক দেশপ্রেমিক নন। কার্যত: সমাজের এই মূল্যবোধহীন গোষ্ঠিটিই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। যারফলে এ ধরনের শিক্ষকদের গ্রহনযোগ্যতাও এখন শূন্যের কোঠায়। তাদের কথায় শিক্ষার্থীরা অনুপ্রানীত হয়না, বিশ্বাস রাখতে পারেনা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যাবার মত সৎ সাহস ওই শিক্ষকদের নেই।
কিন্তু ড. জাফর ইকবাল স্যারদের মত কিছু শিক্ষকের সেই সততা. নিষ্ঠা. একাগ্রতা. শিক্ষাপ্রেম আছে। যার প্রমান তিনি দিয়েছেন অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে যেয়ে তাদেরকে বুঝিয়ে অনশন ভাঙ্গাতে পেরে। এ সময় তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয়’। তিনি শিক্ষার্থীদের বললেন, তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান।
তিনি বলেছেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে আমাদের দেশের ৩৪ জন ভিসি একসঙ্গে পদত্যাগ করবেন বলেছিলেন, সেটা চোখে দেখার খুবই শখ ছিল। জানিনা দেখে যেতে পারি কিনা!
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন বন্ধে প্রশাসন ক্যাম্পাসে খাবারের দোকান পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্যাম্পাসে মঙ্গলবার রাতে ‘চাষাভুষার টং’ চালু করেছে শিক্ষার্থীরা।
এ দোকানে চা, রুটি, বিস্কিটসহ হালকা খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে খাবার কিনছেন।
‘চাষাভুষার টং’ দোকানের উদ্যোক্তারা জানান, আন্দোলন বন্ধে ক্যাম্পাসে খাবারের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের খাবার পেতে সমস্যা হচ্ছে। আন্দোলনের খবর সংগ্রহে আসা গণমাধ্যমকর্মীরাও সমস্যায় পড়েছেন। তাই প্রতিবাদ হিসেবে ভ্রাম্যমাণ দোকানটি চালু করা হয়েছে।
এই দোকানের নামের পিছনেও কারন আছে। একজন ভিসি আন্দোলন সম্পর্কে বলেছিলেন, আমরা চাষাভুষার সন্তান নইযে সবকিছু মেনে নিতে হবে। এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে দোকানটির নাম ‘চাষাভুষার টং’ রাখা হয়েছে। ছোট ছোট এসব প্রতিবাদ অনেক বড় কিছুর ঈঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের সংগঠন উপাচার্য পরিষদের সাবেক সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জসিমউদ্দিন আহমেদ সিলেটের আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব ছাড়তে রাজি না হলে সরকারের উচিৎ হবে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া। তিনি বলেন, একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীল পরিবেশই সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়ার কথা।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বুধবার শাহজালাল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙ্গানোর ব্যাপারে ড. জাফর ইকবালকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখানকার বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। হয়ত আপাত: কিছু সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু বিভিন্ন ভিসিসহ বহু শিক্ষকের মন-মানসিকতায় যে নেতিবাচক নীতি-আদর্শহীনতা জন্ম নিয়েছে তা থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করার কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে তা বুঝতে পারা বেশ মুশকিল।
এই কাজটির জন্য সুদুরপ্রসারি কোন পরিকল্পনা গ্রহন করা হবে নাকি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও আবার ‘ ‘চাষাভুষার টং’ এর প্রয়োজন পড়বে তা সংশ্লিষ্টদের এখনই ভাবা উচিত।
[লেখক: গণমাধ্যমকর্মী]