অরূপরতন চৌধুরী
যারা ধূমপান বা তামাক পাতা জর্দ্দা ব্যবহার করেন তারা এর ক্ষতিকর দিক চিন্তা করে ছেড়ে দেবার কথা সবসময়ই ভাবেন তবে কোন সময়টা তাদের জন্য উপযুক্ত সময়, সেটা খুজে পান না। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলা যায় পবিত্র এই রমজান মাসে ধুমপান বা তামাক পাতা জর্দ্দা ছেড়ে দেয়ার উপযুক্ত সময়। একটা মানুষ যখন সারাদিন কোন কিছু না খেয়ে থাকতে পারে এবং দিনের এই দীর্ঘ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা সময় না খেয়ে থাকতে পারেন এবং সেই সময়ে সিগারেট জর্দ্দা, পান কোন কিছুই না খেয়ে থাকতে পারেন তারা কেন জীবনের বাকি সময়ের জন্য ধুমপান বা তামাক ছাড়তে পারবেন না ? এটাতো সম্পূর্নভাবে একজন মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তাছাড়া রমজান মাসটা হচ্ছে সংযমের মাস , এই সময়ে মানুষ অনেক সংযমী হয় এবং সারাটা দিন একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ধর্মীয় নিয়মনীতির সাথে চলতে হয়।
তামাক বা ধূমপান কোন খাদ্য তালিকার মধ্যে পরে না। এটি এক ধরনের নেশা। বহুকাল থেকে এদেশে এই তামাকের ব্যবহার দুই ভাবেই মানুষ গ্রহণ করে আসছে , একটি হচ্ছে ধোঁয়াহীন তামাক বা জর্দা আর একটি হচ্ছে ধোঁয়া যুক্ত তামাক বা সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি। বিজ্ঞানের গবেষনায় এই দুই ধরনের তামাকই দেহের জন্য ক্ষতিকর। তামাক এবং বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭০০০ এর বেশী ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম। এর মধ্যে নিকোটিন, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া, পোলোনিয়াম ২১০ উল্লেখযোগ্য। সকল মৃত্যুর শতকরা ৬৩% অসংক্রামক রোগ এবং তার মধ্যে একমাত্র দায়ী হচ্ছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য। বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহার মৃত্যুর প্রতিরোধমূলক একমাত্র কারণ হিসেবে বিবেচিত এবং প্রতি দশ জনে একজনের মৃত্যুর কারন হিসেবে সরাসরি দায়ী।
২০০৯ সালের গ্যাটসের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন ২৩ দশমিক ২ শতাংশ ধূমপায়ী এবং ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ ধোঁয়াহীন তামাক (জর্দা ও গুল ) ব্যবহারকারী। ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার বিপরীতে তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারের স্বাস্থ্য খাতে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়।
ধুমপান বা তামাক পাতা যারা ব্যবহার করেন তারা জানেন এর ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে । এক কথায় বলতে গেলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ ও আমাদের দেহের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ তামাকের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেমন মাথার চুল পড়া, চোকের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট, মুখের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, পাকস্থলির ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, যৌনশক্তি নাশ, গর্ভপাত, মৃতশিশু জন্ম, পায়ের পচনশীল রোগ,গ্যাংগ্রীন পা কেটে ফেলা ইত্যাদি। এই ধুমপান যে শুধু ধুমপায়ীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা নয় একজন পাশে থাকা অধূমপায়ীকে সমান ভাবে রোগাক্রান্ত করছে।
সুতারং এই পবিত্র মাসেই যদি সিগারেট বা জর্দ্দা না খেয়ে তারা থাকতে পারেন তবে বছরের বাকিটা সময় থাকতে পারবেন না কেন? অতএব এই সময়ে যদি রোজা রাখার আগেই বা রোজা রাখার সময় থেকেই একজন ধুমপায়ী প্রতিজ্ঞা করেন যে আমি এই পবিত্র এই রমজান মাসে যেহেতু রোজা রাখব,নামাজ পড়ব,সংযমী হবো সেহেতু আমি এই সময় থেকেই আমার এই বদ অভ্যাসটিকে বা নেশাকেও পরিত্যাগ করব। এবং এই দৃড় সিদ্ধান্ত থেকেই একজন ধর্মপ্রান ব্যক্তি এই ধরনের বদ অভ্যাস বা নেশা থেকে মুক্ত হতে পারেন। সুতরাং পবিত্র এই রমজান মাস থেকেই শুরু হোক তামাক বর্জন।
আপনি যদি ধূমপান ছাড়তে পারেন তবে আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরাও অনেক উপকার পাবেন, যেমন-
১। তারা মুক্ত বায়ু সেবনের আস্বাদ পাবেন,
২। আপনি তাদের সাথে মিশে আরও আকর্ষণীয় ও মধুর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন- কারণ একটি বিদেশী প্রবাদ আছে- একজন অধূমপায়ীকে চুমু দাও এবং তার স্বাদ অনুভব কর, দেখবে কত সুখকর সেই মুহূর্তটি।
৩। আপনি যদি ধূমপান না করেন তবে আপনার সন্তানও ধূমপান করবে না, কারণ শিশুরা যা দেখে তা-ই শেখে,
৪। যারা ধূমপান করেন, তাদেরই কেবল বিপদের সম্ভাবনা থাকে তা-ই নয়, তাদের আশেপাশে থাকেন তাদেরও বক্ষব্যাধি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছা শক্তির প্রয়োজন। কাজটি চার পর্যায়ে করা যায়।
১। প্রথমে আপনি চিন্তা করে নিন কেন আপনি ধূমপান ছাড়বেন। মনে মনে আপনি শক্ত যুক্তি খুঁজে নিতে চেষ্টা করুন।
২। আপনি নিজের মনকে ঐ যুক্তিগুলোর আলোকে ধূমপান ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করতে থাকুন।
৩। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি এক বিশেষ দিনে কাজটি সম্পন্ন করুন। সেই দিন অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিন।
৪। আপনার ধূমপানের নেশার তাগিদ উঠলে অন্য কোন কাজে বা চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
[লেখক: অনারারী সিনিয়র কনসালটেন্ট, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল]
অরূপরতন চৌধুরী
বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০২২
যারা ধূমপান বা তামাক পাতা জর্দ্দা ব্যবহার করেন তারা এর ক্ষতিকর দিক চিন্তা করে ছেড়ে দেবার কথা সবসময়ই ভাবেন তবে কোন সময়টা তাদের জন্য উপযুক্ত সময়, সেটা খুজে পান না। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে বলা যায় পবিত্র এই রমজান মাসে ধুমপান বা তামাক পাতা জর্দ্দা ছেড়ে দেয়ার উপযুক্ত সময়। একটা মানুষ যখন সারাদিন কোন কিছু না খেয়ে থাকতে পারে এবং দিনের এই দীর্ঘ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ ঘন্টা সময় না খেয়ে থাকতে পারেন এবং সেই সময়ে সিগারেট জর্দ্দা, পান কোন কিছুই না খেয়ে থাকতে পারেন তারা কেন জীবনের বাকি সময়ের জন্য ধুমপান বা তামাক ছাড়তে পারবেন না ? এটাতো সম্পূর্নভাবে একজন মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তাছাড়া রমজান মাসটা হচ্ছে সংযমের মাস , এই সময়ে মানুষ অনেক সংযমী হয় এবং সারাটা দিন একটি নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে ধর্মীয় নিয়মনীতির সাথে চলতে হয়।
তামাক বা ধূমপান কোন খাদ্য তালিকার মধ্যে পরে না। এটি এক ধরনের নেশা। বহুকাল থেকে এদেশে এই তামাকের ব্যবহার দুই ভাবেই মানুষ গ্রহণ করে আসছে , একটি হচ্ছে ধোঁয়াহীন তামাক বা জর্দা আর একটি হচ্ছে ধোঁয়া যুক্ত তামাক বা সিগারেট, চুরুট ইত্যাদি। বিজ্ঞানের গবেষনায় এই দুই ধরনের তামাকই দেহের জন্য ক্ষতিকর। তামাক এবং বিড়ি সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭০০০ এর বেশী ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। যার মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সক্ষম। এর মধ্যে নিকোটিন, কার্বন মনোক্সাইড, হাইড্রোজেন সায়ানাইড, বেনজোপাইরিন, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া, পোলোনিয়াম ২১০ উল্লেখযোগ্য। সকল মৃত্যুর শতকরা ৬৩% অসংক্রামক রোগ এবং তার মধ্যে একমাত্র দায়ী হচ্ছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য। বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহার মৃত্যুর প্রতিরোধমূলক একমাত্র কারণ হিসেবে বিবেচিত এবং প্রতি দশ জনে একজনের মৃত্যুর কারন হিসেবে সরাসরি দায়ী।
২০০৯ সালের গ্যাটসের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন ২৩ দশমিক ২ শতাংশ ধূমপায়ী এবং ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ ধোঁয়াহীন তামাক (জর্দা ও গুল ) ব্যবহারকারী। ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, তামাক খাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায়, তার বিপরীতে তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারের স্বাস্থ্য খাতে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়।
ধুমপান বা তামাক পাতা যারা ব্যবহার করেন তারা জানেন এর ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে । এক কথায় বলতে গেলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ ও আমাদের দেহের সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ তামাকের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেমন মাথার চুল পড়া, চোকের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট, মুখের ক্যান্সার, গলার ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগ, পাকস্থলির ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, যৌনশক্তি নাশ, গর্ভপাত, মৃতশিশু জন্ম, পায়ের পচনশীল রোগ,গ্যাংগ্রীন পা কেটে ফেলা ইত্যাদি। এই ধুমপান যে শুধু ধুমপায়ীকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা নয় একজন পাশে থাকা অধূমপায়ীকে সমান ভাবে রোগাক্রান্ত করছে।
সুতারং এই পবিত্র মাসেই যদি সিগারেট বা জর্দ্দা না খেয়ে তারা থাকতে পারেন তবে বছরের বাকিটা সময় থাকতে পারবেন না কেন? অতএব এই সময়ে যদি রোজা রাখার আগেই বা রোজা রাখার সময় থেকেই একজন ধুমপায়ী প্রতিজ্ঞা করেন যে আমি এই পবিত্র এই রমজান মাসে যেহেতু রোজা রাখব,নামাজ পড়ব,সংযমী হবো সেহেতু আমি এই সময় থেকেই আমার এই বদ অভ্যাসটিকে বা নেশাকেও পরিত্যাগ করব। এবং এই দৃড় সিদ্ধান্ত থেকেই একজন ধর্মপ্রান ব্যক্তি এই ধরনের বদ অভ্যাস বা নেশা থেকে মুক্ত হতে পারেন। সুতরাং পবিত্র এই রমজান মাস থেকেই শুরু হোক তামাক বর্জন।
আপনি যদি ধূমপান ছাড়তে পারেন তবে আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবরাও অনেক উপকার পাবেন, যেমন-
১। তারা মুক্ত বায়ু সেবনের আস্বাদ পাবেন,
২। আপনি তাদের সাথে মিশে আরও আকর্ষণীয় ও মধুর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবেন- কারণ একটি বিদেশী প্রবাদ আছে- একজন অধূমপায়ীকে চুমু দাও এবং তার স্বাদ অনুভব কর, দেখবে কত সুখকর সেই মুহূর্তটি।
৩। আপনি যদি ধূমপান না করেন তবে আপনার সন্তানও ধূমপান করবে না, কারণ শিশুরা যা দেখে তা-ই শেখে,
৪। যারা ধূমপান করেন, তাদেরই কেবল বিপদের সম্ভাবনা থাকে তা-ই নয়, তাদের আশেপাশে থাকেন তাদেরও বক্ষব্যাধি ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
ধূমপান ছাড়তে ইচ্ছা শক্তির প্রয়োজন। কাজটি চার পর্যায়ে করা যায়।
১। প্রথমে আপনি চিন্তা করে নিন কেন আপনি ধূমপান ছাড়বেন। মনে মনে আপনি শক্ত যুক্তি খুঁজে নিতে চেষ্টা করুন।
২। আপনি নিজের মনকে ঐ যুক্তিগুলোর আলোকে ধূমপান ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করতে থাকুন।
৩। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনি এক বিশেষ দিনে কাজটি সম্পন্ন করুন। সেই দিন অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিন।
৪। আপনার ধূমপানের নেশার তাগিদ উঠলে অন্য কোন কাজে বা চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
[লেখক: অনারারী সিনিয়র কনসালটেন্ট, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল]