রেজাউল করিম সবুজ
জাতীয় কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ কবিকে সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়ে কবির বাল্য স্মৃতি চিরঞ্জীব রাখার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ শহর হতে ২০ কিলোমিটার দক্ষিনে ত্রিশাল পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের নামাপাড়ায় ৫৭ একর ভূমির উপর কবির স্মৃতি বিজড়িত বটতলা সংলগ্ন অনাবিল নির্মল, সুজলা, সুফলা ,শস্য শ্যামলা, ছায়াঘেরা, পাখিডাকা, শান্ত ও মনোরম পরিবেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়” আইন ২০০৬ পাস হওয়ার মাধ্যমে দেশের ২৭ তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ ৯ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম জন্মদিন। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের আদর্শ ও দর্শনকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পথচলার ১৬ বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেছনে ফেলে শিক্ষা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে এগিয়ে চলছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। অদুর ভবিষ্যতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৪ বিভাগে ৮৩৪০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্মের উপর গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ নামে একটি ইন্সটিটিউট। বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য কলা ও বিজ্ঞান নামে ০২টি পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে, তাছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন এর জন্য ০২টি দশতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, অগ্নি-বীণা ও দোলন-চাঁপা নামে চারটি আবাসিক হল চালু রয়েছে। রয়েছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ সেন্ট্রাল লাইব্রেরী যাতে রয়েছে চল্লিশ হাজার বই, রয়েছে নজরুলের বইয়ের জন্য আলাদা কর্নার, রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার। থিয়েটার ও সংগীত বিভাগের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। কবির ব্যাথার দান নামক কাব্য গ্রন্থের নামে রয়েছে একটি একতলা বিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার। বিশ^বিদ্যালয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-চির উন্নত মম শির। রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দুটি ভাস্কর্য, তাছাড়া রয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ, জয়বাংলা ভাস্কর্য, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে সুবিশাল কেন্দ্রীয় শেখ রাসেল খেলার মাঠ। পুকুরের মাঝে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রমোদতরি সিন্ধু সারস। বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের জন্য রয়েছে গাহি সাম্যের গাণ মুক্ত মঞ্চ, চুরুলিয়া মঞ্চ, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছাতা দিয়ে তৈরী গোল চত্বর, তাছাড়া রয়েছে ভার্সুয়াল কনফারেন্স রুম, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ^বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি আকর্ষনীয় ক্যাফেটরিয়া। রয়েছে কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মন্দির, একটি প্রাইমারী স্কুল। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও ভাড়া করা বাস। জরুরী রোগী আনা নেয়ার জন্য রয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ (অনার্স), বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি (অনার্স), বিবিএ (অনার্স), এলএলবি (অনার্স), এমএ, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি, এম বিএ, ইএমবিএ,এমডিএস, এলএলএম, এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রী চালু আছে। ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইরানের কবি ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা বিনিময় চুক্তি রয়েছে।
প্রতি বছর ১১, ১২ ও ১৩ই জ্যৈষ্ঠ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকজমক ভাবে আয়োজন করা হয় তিনদিন ব্যাপী জাতীয় কবির জম্মোৎসব। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় আয়োজন। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এই দিনের জন্য প্রতীক্ষায় থাকে। এতে নজরুল প্রেমী, নজরুল বিশেষজ্ঞ, নজরুল গবেষক, নজরুল সংগীত শিল্পি, নজরুল ভক্তদের পদচারনায় ক্যাম্পাস থাকে দারুন রঙিন। অনুষ্ঠানে কবি নজরুলের জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা এবং নজরুলের গান ও নাটক নিয়ে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই তিনটা দিন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়বাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও শিক্ষনীয়। এই সময় নজরুল গবেষণা কর্মে অবদান রাখার জন্য দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বিদ্রোহী কবি নজরুলের আদর্শ ও দর্শন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বির্নিমান এবং আগামীকে আরও সুন্দর করার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি নজরুলের আদর্শের চর্চা, আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তিময় জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যুগোপযোগী দক্ষ ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরী করে যেন এর শিক্ষার্থীরা সৃষ্টি ও সেবার প্রদীপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে।
[লেখক: সহকারী রেজিস্টার (সংস্থাপন), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়]
রেজাউল করিম সবুজ
রোববার, ০৮ মে ২০২২
জাতীয় কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার নিদর্শন স্বরুপ কবিকে সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়ে কবির বাল্য স্মৃতি চিরঞ্জীব রাখার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ শহর হতে ২০ কিলোমিটার দক্ষিনে ত্রিশাল পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের নামাপাড়ায় ৫৭ একর ভূমির উপর কবির স্মৃতি বিজড়িত বটতলা সংলগ্ন অনাবিল নির্মল, সুজলা, সুফলা ,শস্য শ্যামলা, ছায়াঘেরা, পাখিডাকা, শান্ত ও মনোরম পরিবেশে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়টি জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনে “জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়” আইন ২০০৬ পাস হওয়ার মাধ্যমে দেশের ২৭ তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। আজ ৯ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম জন্মদিন। জাতীয় কবি কাজী নজরুলের আদর্শ ও দর্শনকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পথচলার ১৬ বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেছনে ফেলে শিক্ষা ও গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে এগিয়ে চলছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। অদুর ভবিষ্যতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের অন্যতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৪ বিভাগে ৮৩৪০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও কর্মের উপর গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় ইন্সটিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ নামে একটি ইন্সটিটিউট। বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য কলা ও বিজ্ঞান নামে ০২টি পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে, তাছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন এর জন্য ০২টি দশতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে।
বিশ^বিদ্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, অগ্নি-বীণা ও দোলন-চাঁপা নামে চারটি আবাসিক হল চালু রয়েছে। রয়েছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সমৃদ্ধ সেন্ট্রাল লাইব্রেরী যাতে রয়েছে চল্লিশ হাজার বই, রয়েছে নজরুলের বইয়ের জন্য আলাদা কর্নার, রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব ও বিজ্ঞানাগার। থিয়েটার ও সংগীত বিভাগের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। কবির ব্যাথার দান নামক কাব্য গ্রন্থের নামে রয়েছে একটি একতলা বিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার। বিশ^বিদ্যালয়ে রয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-চির উন্নত মম শির। রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের দুটি ভাস্কর্য, তাছাড়া রয়েছে স্বাধীনতা স্তম্ভ, জয়বাংলা ভাস্কর্য, শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে সুবিশাল কেন্দ্রীয় শেখ রাসেল খেলার মাঠ। পুকুরের মাঝে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রমোদতরি সিন্ধু সারস। বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালনের জন্য রয়েছে গাহি সাম্যের গাণ মুক্ত মঞ্চ, চুরুলিয়া মঞ্চ, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ছাতা দিয়ে তৈরী গোল চত্বর, তাছাড়া রয়েছে ভার্সুয়াল কনফারেন্স রুম, যেখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ^বিদ্যালয়ে রয়েছে একটি আকর্ষনীয় ক্যাফেটরিয়া। রয়েছে কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মন্দির, একটি প্রাইমারী স্কুল। বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও ভাড়া করা বাস। জরুরী রোগী আনা নেয়ার জন্য রয়েছে একটি এ্যাম্বুলেন্স। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ (অনার্স), বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি (অনার্স), বিবিএ (অনার্স), এলএলবি (অনার্স), এমএ, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি, এম বিএ, ইএমবিএ,এমডিএস, এলএলএম, এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রী চালু আছে। ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইরানের কবি ফেরদৌসি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা বিনিময় চুক্তি রয়েছে।
প্রতি বছর ১১, ১২ ও ১৩ই জ্যৈষ্ঠ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকজমক ভাবে আয়োজন করা হয় তিনদিন ব্যাপী জাতীয় কবির জম্মোৎসব। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় আয়োজন। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এই দিনের জন্য প্রতীক্ষায় থাকে। এতে নজরুল প্রেমী, নজরুল বিশেষজ্ঞ, নজরুল গবেষক, নজরুল সংগীত শিল্পি, নজরুল ভক্তদের পদচারনায় ক্যাম্পাস থাকে দারুন রঙিন। অনুষ্ঠানে কবি নজরুলের জীবন, কর্ম ও আদর্শ নিয়ে আলোচনা এবং নজরুলের গান ও নাটক নিয়ে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই তিনটা দিন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়বাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও শিক্ষনীয়। এই সময় নজরুল গবেষণা কর্মে অবদান রাখার জন্য দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বিদ্রোহী কবি নজরুলের আদর্শ ও দর্শন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বির্নিমান এবং আগামীকে আরও সুন্দর করার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। আজকের দিনে আমাদের প্রত্যাশা, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কবি নজরুলের আদর্শের চর্চা, আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তিময় জ্ঞানে সমৃদ্ধ, যুগোপযোগী দক্ষ ও মানবিকতাবোধ সম্পন্ন মানবসম্পদ তৈরী করে যেন এর শিক্ষার্থীরা সৃষ্টি ও সেবার প্রদীপ নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে দেশ থেকে দেশান্তরে।
[লেখক: সহকারী রেজিস্টার (সংস্থাপন), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়]