alt

মুক্ত আলোচনা

বৌদ্ধ সমাজে বৈশাখী পূর্নিমার গুরুত্ব

উজ্জ্বলেন্দু চাকমা : শনিবার, ১৪ মে ২০২২

রোবাবর, ১৫ মে ২০২২ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা, ২৫৬৬ বুদ্ধাব্দ। মহাকারণিক ভগবান তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ তার এই ধর্মের সর্বোত্তম বাণী হলো:

“সব্ব পাপস্সা অকরণং কুসালস্স উপসম্পদা
সচিত্তা পরিয়োদপনং এতং বুদ্ধানসাসনং”

ধম্মপদ- ১৮৩

অর্থাৎ, সকল প্রকার পাপকর্ম না করা, কুশল বা পূণ্য কর্ম সম্পাদন করা এবং নিজ নিজ চিত্ত সুন্দর বা পরিশুদ্ধ করা-এ সবই হল বুদ্ধগণের অনুশাসন। এটাই হলো মহকারণিক ভগবারন বুদ্ধের সর্বজীবের প্রতি অহিংসার মৈত্রীভাব।

এ মহান পবিত্র “বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা” বৌদ্ধ বিশ্বেও একটি অন্যান্য ধর্মোসৎসবের দিন। বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা বিশ্বের বৌদ্ধ সমাজে এক মহান পবিত্রতম দিন। ভগবান তথগত বুদ্ধ তার জীবন ইতিহাসের এক অভিস্বরণীয় তিনটি ঘটনাবলি তথা ত্রি-স্মৃতি বিজরিত জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ, এবং মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত এই তিনটি ঘটনাকেই নিয়ে বৈশাখী পূর্ণিমা। বৌদ্ধ সমাজে ততা বিশ্বের প্রধান দেমে এই দিনটি-কে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সহকারে উদযাপন করে আসছে।

শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় তৎকালীন ভারতবর্ষেও কপিলাবস্তুর লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষের তলায় রাজ কুমার সিদ্ধার্থের জন্ম। তখনি সিদ্ধার্থ ভুমিষ্ট হওয়ার পরপরই সপ্তপদ হেঁটে উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন “জেট্ ঠোহস্মিং সেট্ ঠোহস্মিং অয়মন্তিমা জাতিং” অর্থাৎ আমিই জোষ্ট, আমিই শ্রেষ্ট, এবং এতাই আমার অন্তিম জন্ম। এছাড়াও এ ঐতিহাসিক বর্ষে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে রাজ কুমার সিদ্ধার্থের জন্মসহ একই সাথে তথগত বুদ্ধের প্রধান সেবক আনন্দ, সাস্ত্রী কালুদায়ী, সহধর্মীনি যশোধরা, সারথী চন্দক, বেগবান অশ্ব কন্ঠক, চারিনিধিকুম্ভ, বৌধিজ্ঞান লাভের মহাবোধি বৃক্ষ, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহপরিনির্বাণ প্রাপ্ত। তাই বিশ্বের বৌদ্ধ সমাজে বৈশাখী পূর্ণিমার গুরুত্ব ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। ঋতুর মধ্যে প্রধান হলো বসন্ত, তাই বসন্তকে ঋতুরাজ বলে থাকে। তিথির মধ্যে ও পূর্ণিমা শ্রেষ্ট। মহাকারণিক তথাগত বুদ্ধ এই বৈশাখী পূর্ণিমার তিথিইে তাঁর জন্ম-বুদ্ধত্বলাভ-মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সেই বৈশাখী পূর্ণিমায় ভগবান তথাগত বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজরিত ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজির নেই যে কোন মহাপুরুষের এক তিথিতে তিনটি ঘটনার কথা।

এখানে ‘বুদ্ধ’ ও ‘বৌদ্ধ’ শব্দে দ্বারা অনেকেই মনে করে থাকেন। বুদ্ধ বলতে জ্ঞান চক্ষু, জ্ঞানলোকে, প্রাজ্ঞ, প্রবুদ্ধ,, সম্বুদ্ধ, পরমাজ্ঞান, জ্ঞানী অর্থে বুঝায়। বৌদ্ধ অর্থে সাধারণত বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরকে বলা হয় বৌদ্ধ। বুদ্ধ নির্দেশিত বিনয়নীতির উপর ধর্ম অনুসরণ করে তার জ্ঞান সাধনায় রত থেকে অণুকরণ, অনুশীলন এবং অনুধাবন করে যাঁরা আচরণ করেন তারাই হলেন বৌদ্ধ। জন্ম সূত্রে বৌদ্ধ হয় না, কর্ম সূত্রেই বৌদ্ধ। বৌদ্ধ একটি সমষ্টি বাচক শব্দ্ এই শব্দ দ্বারা একটি পরিবার, সমাজ, সম্প্রদ্য়া, জাতি বুঝায়। কিন্তু বৌদ্ধ জাতিগত অর্থে নয় জ্ঞান আহরণ অর্থে বুঝায়। বৈশাখী পূর্নিমার বৌদ্ধ সমাজে কত বড় তাৎপর্যময় তা বোঝাবার নয়।

ভগবান তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ তার অন্তিম কালে বলেছিলেন “হন্দদানি ভিখকবে আমন্তযামি বো, বয়ধম্ম সঙ্খারা অপ্পমাদেনা সম্পাদেথা” অর্থাৎ “হে ভিক্ষুগণ, তোমাদের পুনঃ বলছি, সংস্কার ধর্ম সমূহ একান্ত ক্ষয়শীল, তোমরা অপ্রমত্ত হয়ে স্বীয় কর্তব্য সম্পাদন কর”। এতাই বুদ্ধের অন্তিম বাণী। এই মহান পবিত্র দিন ব্যাপি দান, ধর্মালোচনা, শীল আচরণ ও ধ্যান সাধনায় রত থেকে বৌদ্ধ নরনারীর একাগ্রচিত্তে সম্পাদন করে থাকেন।

[লেখক: বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

বৌদ্ধ সমাজে বৈশাখী পূর্নিমার গুরুত্ব

উজ্জ্বলেন্দু চাকমা

শনিবার, ১৪ মে ২০২২

রোবাবর, ১৫ মে ২০২২ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা, ২৫৬৬ বুদ্ধাব্দ। মহাকারণিক ভগবান তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ তার এই ধর্মের সর্বোত্তম বাণী হলো:

“সব্ব পাপস্সা অকরণং কুসালস্স উপসম্পদা
সচিত্তা পরিয়োদপনং এতং বুদ্ধানসাসনং”

ধম্মপদ- ১৮৩

অর্থাৎ, সকল প্রকার পাপকর্ম না করা, কুশল বা পূণ্য কর্ম সম্পাদন করা এবং নিজ নিজ চিত্ত সুন্দর বা পরিশুদ্ধ করা-এ সবই হল বুদ্ধগণের অনুশাসন। এটাই হলো মহকারণিক ভগবারন বুদ্ধের সর্বজীবের প্রতি অহিংসার মৈত্রীভাব।

এ মহান পবিত্র “বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা” বৌদ্ধ বিশ্বেও একটি অন্যান্য ধর্মোসৎসবের দিন। বৈশাখী পূর্ণিমা বা বুদ্ধ পূর্ণিমা বিশ্বের বৌদ্ধ সমাজে এক মহান পবিত্রতম দিন। ভগবান তথগত বুদ্ধ তার জীবন ইতিহাসের এক অভিস্বরণীয় তিনটি ঘটনাবলি তথা ত্রি-স্মৃতি বিজরিত জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ, এবং মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্ত এই তিনটি ঘটনাকেই নিয়ে বৈশাখী পূর্ণিমা। বৌদ্ধ সমাজে ততা বিশ্বের প্রধান দেমে এই দিনটি-কে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সহকারে উদযাপন করে আসছে।

শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় তৎকালীন ভারতবর্ষেও কপিলাবস্তুর লুম্বিনী কাননে শালবৃক্ষের তলায় রাজ কুমার সিদ্ধার্থের জন্ম। তখনি সিদ্ধার্থ ভুমিষ্ট হওয়ার পরপরই সপ্তপদ হেঁটে উদাত্ত কন্ঠে ঘোষণা করেছিলেন “জেট্ ঠোহস্মিং সেট্ ঠোহস্মিং অয়মন্তিমা জাতিং” অর্থাৎ আমিই জোষ্ট, আমিই শ্রেষ্ট, এবং এতাই আমার অন্তিম জন্ম। এছাড়াও এ ঐতিহাসিক বর্ষে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে রাজ কুমার সিদ্ধার্থের জন্মসহ একই সাথে তথগত বুদ্ধের প্রধান সেবক আনন্দ, সাস্ত্রী কালুদায়ী, সহধর্মীনি যশোধরা, সারথী চন্দক, বেগবান অশ্ব কন্ঠক, চারিনিধিকুম্ভ, বৌধিজ্ঞান লাভের মহাবোধি বৃক্ষ, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহপরিনির্বাণ প্রাপ্ত। তাই বিশ্বের বৌদ্ধ সমাজে বৈশাখী পূর্ণিমার গুরুত্ব ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ। ঋতুর মধ্যে প্রধান হলো বসন্ত, তাই বসন্তকে ঋতুরাজ বলে থাকে। তিথির মধ্যে ও পূর্ণিমা শ্রেষ্ট। মহাকারণিক তথাগত বুদ্ধ এই বৈশাখী পূর্ণিমার তিথিইে তাঁর জন্ম-বুদ্ধত্বলাভ-মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সেই বৈশাখী পূর্ণিমায় ভগবান তথাগত বুদ্ধের ত্রি-স্মৃতি বিজরিত ঘটনা পরিলক্ষিত হয়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজির নেই যে কোন মহাপুরুষের এক তিথিতে তিনটি ঘটনার কথা।

এখানে ‘বুদ্ধ’ ও ‘বৌদ্ধ’ শব্দে দ্বারা অনেকেই মনে করে থাকেন। বুদ্ধ বলতে জ্ঞান চক্ষু, জ্ঞানলোকে, প্রাজ্ঞ, প্রবুদ্ধ,, সম্বুদ্ধ, পরমাজ্ঞান, জ্ঞানী অর্থে বুঝায়। বৌদ্ধ অর্থে সাধারণত বুদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরকে বলা হয় বৌদ্ধ। বুদ্ধ নির্দেশিত বিনয়নীতির উপর ধর্ম অনুসরণ করে তার জ্ঞান সাধনায় রত থেকে অণুকরণ, অনুশীলন এবং অনুধাবন করে যাঁরা আচরণ করেন তারাই হলেন বৌদ্ধ। জন্ম সূত্রে বৌদ্ধ হয় না, কর্ম সূত্রেই বৌদ্ধ। বৌদ্ধ একটি সমষ্টি বাচক শব্দ্ এই শব্দ দ্বারা একটি পরিবার, সমাজ, সম্প্রদ্য়া, জাতি বুঝায়। কিন্তু বৌদ্ধ জাতিগত অর্থে নয় জ্ঞান আহরণ অর্থে বুঝায়। বৈশাখী পূর্নিমার বৌদ্ধ সমাজে কত বড় তাৎপর্যময় তা বোঝাবার নয়।

ভগবান তথাগত সম্যক সম্বুদ্ধ তার অন্তিম কালে বলেছিলেন “হন্দদানি ভিখকবে আমন্তযামি বো, বয়ধম্ম সঙ্খারা অপ্পমাদেনা সম্পাদেথা” অর্থাৎ “হে ভিক্ষুগণ, তোমাদের পুনঃ বলছি, সংস্কার ধর্ম সমূহ একান্ত ক্ষয়শীল, তোমরা অপ্রমত্ত হয়ে স্বীয় কর্তব্য সম্পাদন কর”। এতাই বুদ্ধের অন্তিম বাণী। এই মহান পবিত্র দিন ব্যাপি দান, ধর্মালোচনা, শীল আচরণ ও ধ্যান সাধনায় রত থেকে বৌদ্ধ নরনারীর একাগ্রচিত্তে সম্পাদন করে থাকেন।

[লেখক: বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত]

back to top