alt

মুক্ত আলোচনা

আওয়ামী লীগের ইতিহাস
সংগ্রাম ও উন্নয়নের ইতিহাস

তোফায়েল আহমেদ

: বুধবার, ২২ জুন ২০২২

মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ১৯৪৯ সনের ২৩ জুন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩ জুন তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ ১৭৫৭ সনের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন, ‘এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। এক দিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে।’ গণবিচ্ছিন্ন নেতৃত্বের স্থলে জনসম্পৃক্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ’৪৭-এর শেষে বঙ্গবন্ধু সতীর্থ-সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১৫০ নং মোগলটুলিতে ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ সংগঠিত করেন ও ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ‘ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের উদ্যোগে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সফল ধর্মঘটের মাধ্যমে সূচিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের। ’৪৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নœ বেতনভোগী কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রাম সংগঠিত করার কারণে ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে কারারুদ্ধ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে শর্ত দেয়া হয়, যদি তিনি মুচলেকা দিতে সম্মত থাকেন তবে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের জন্মকালে বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ ছিলেন এবং পরে এ সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ।’ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি। খবরের কাগজে দেখলাম, আমার নামের পাশে লেখা আছে ‘নিরাপত্তা বন্দী’।” (পৃষ্ঠা-১২০-১২১)। ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মহান ভাষা আন্দোলন ও মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মতান্ত্রিক পথে সংগ্রাম করে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘বাংলাদেশ’ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে নামগুলো পরস্পর সমার্থক হয়ে উঠেছে।

’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজ কর্তৃক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কর্মসূচির সঙ্গে কারাগারেই তিনি একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ’৫৩-এর ১৪ নভেম্বর ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে ২১ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ’৫৪-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘যুক্তফ্রন্ট’ ভূমি ধস বিজয় অর্জন করে এবং যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৫ মে সমবায়, ঋণ ও গ্রামীন পুনর্গঠনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী অন্যায়ভাবে ৯২-ক ধারা জারী করে যুক্তফ্রন্ট সরকার বরখাস্ত ও বঙ্গবন্ধুকে কারারুদ্ধ করে। ’৫৫-এর ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ সর্বধর্মের মানুষের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ’৫৬তে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ’৫৭-এর ৮ আগস্ট মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তাঁর কাছে দলের দায়িত্ব মন্ত্রিত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

’৫৮-এর ৭ অক্টোবর মধ্য রাতে জেনারেল আইয়ুব খান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিকদের কারাগারে নিক্ষেপ করেন। একই বছরের ১২ অক্টোবর একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ’৬২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। রাজনীতিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে জেল-জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ৫ জুলাই আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু আইয়ুবের শাসনের কঠোর সমালোচনা করেন। ’৬২তে আমাদের সেøাগান ছিল ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’; ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। ’৬৪-এর ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এই সভায় ‘প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে সংসদীয় সরকার’ ও ‘রাজনৈতিক অধিকার’ আদায়ের প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ সময় দেশজুড়ে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠিত হয়। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ’পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও।’ ’৬৬তে ছয় দফা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু আমাদের বলতেন ‘সাঁকো দিলাম, এই সাঁকো দিয়েই একদিন আমরা স্বাধীনতায় পৌঁছাব।’ ৮ মে নারায়ণগঞ্জে এক বিশাল সমাবেশে ভাষণদান শেষে রাত ১টায় বাসায় ফিরলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। গ্রেপ্তার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘সাতই জুন’ হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুনের হরতালে সমগ্র পূর্ব বাংলা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সফল হরতালের পর বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন, ‘১২টার পরে খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে হরতাল হয়েছে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। তারা ছয় দফা সমর্থন করে আর মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তি স্বাধীনতা চায়। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি, কৃষকের বাঁচবার দাবি তারা চায়-এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যে হয়েই গেল।’ (পৃষ্ঠা-৬৯)। ছয় দফা দেওয়ায় সামরিক শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলার আসামি করে তাঁকে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করে। জাগ্রত ছাত্র সমাজ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ৬ দফাকে হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে আসাদ, মকবুল, রুস্তম, মতিউর, আনোয়ারা, আলমগীর, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ নাম না জানা অগণিত শহীদের রক্তের বিনিময়ে ’৬৯-এ প্রবল গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির জনককে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে মুক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসমুদ্রে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। এর কিছুদিন পরে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য হন।

তখন আমাদের স্লোগান ছিল ‘পাঞ্জাব না বাংলা, পিন্ডি না ঢাকা’। ’৭০-এর ২ জুন বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ভোলা-দৌলতখাঁ-তজুমুদ্দী-মনপুরা আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেন এবং এ আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর ১ মাস ১৫ দিন বয়সে আমি জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হই। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুই ভোলা যাবি। সব এরিয়া সফর করবি। আমি তোকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেব।’ এই কথাটা ভীষণভাবে আমার হৃদয়কে আলোড়িত করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমত ভোলা সফরে যাই এবং ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে-তখন ভোলায় রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট কিছুই ছিল না-ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাই। বঙ্গবন্ধু ১৭০০ টাকা দিয়ে আমাকে একটা মোটরবাইক কিনে দিয়েছিলেন। এই মোটরবাইক ছিল আমার বাহন। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে জানালাম বাবা, বঙ্গবন্ধু আমাকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এমএনএ পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি বাবার দোয়া নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম। মনে পড়ে, ১২ নভেম্বর, ’৭০-এর কথা। যখন জলোচ্ছ্বাস হয় তখন কত মানুষ সেই প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যুবরণ করেছে। বঙ্গবন্ধু সেদিন বিধ্বস্ত ভোলায় গিয়েছেন। ভোলার পথে-ঘাটে মৃতদেহের স্তূপ দেখে তিনি তা সহ্য করতে না পেরে আমাদের অসহায় আর্তমানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই নির্বাচন ৬ দফার পক্ষে গণভোট।’ ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ৬ দফা সমুন্নত রাখার শপথ গ্রহণ করান বঙ্গবন্ধু। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়; দাবানলের মতো আগুন জ্বলে ওঠে। লাখ লাখ লোক রাজপথে নেমে আসে। শুরু হয় ১ দফা তথা স্বাধীনতার সংগ্রাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ’৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেন এবং বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বর্তমানে ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ^ ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃত অতুলনীয় এই বক্তৃতাই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হাতিয়ার তুলে নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির বীর সন্তানেরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষাধিক শহীদ আর ২ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বাধীন করে। সেদিন দেশ শত্রুমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন আমরা জানতাম না। ’৭২-এর ৮ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধুর মুক্তি সংবাদ পেলাম, সেদিন সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি তিনি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন মনে হয়েছে আজ আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। এরপর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

দেশ স্বাধীনের পর শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেন। গোলাঘরে চাল নেই, ব্যাংকে টাকা নেই, বৈদেশিক মুদ্রা নেই। রাস্তা-ঘাট-পুল-কালভার্ট, রেল, প্লেন, স্টিমার কিছুই নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত। কিন্তু অতি তাড়াতাড়ি তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করেন। ভৈরব ব্রিজ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যেগুলো ধ্বংস করেছিল সেগুলো পুননির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুর একক প্রচেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ’৭২-এর ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ’৭২-এর ৭-৮ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু পুনরায় সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৭২-এর ৪ নভেম্বর মাত্র ১০ মাসে বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রণয়ন ও ৭ মার্চ জাতীয় সংসদের সফল নির্বাচন করে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বাংলাদেশ বিশে^র অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি ও ‘কমনওয়েলথ অব নেশনস্’, ‘জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন’, ‘ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা’ ও ‘জাতিসংঘ’সহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। বিশেষভাবে মনে পড়ে, বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশ সফরের দিনগুলির কথা। প্রতিটি সম্মেলন ও অধিবেশনে তিনিই ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ’৭২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রথম বিদেশ সফর। মুক্তিযুদ্ধের পরমমিত্র প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা মহানগরীর ব্রিগেড ময়দানে ২০ লক্ষাধিক মানুষের জনসমুদ্রে অসাধারণ বক্তৃতা করেন। তারপর ১ মার্চ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর। মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সার্বিক সমর্থন যুগিয়েছিল। ’৭৩-এর ৩ আগস্ট কানাডার রাজধানী অটোয়াতে ৩২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের অংশগ্রহণে কমনওয়েলথ সম্মেলনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ’৭৩-এর ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ৬ জন নেতার নামে তোরণ নির্মিত হয়। তন্মধ্যে জীবিত ২ জন নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও মার্শাল টিটো। প্রয়াত ৪ জন নেতা ছিলেন মিশরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ত, ঘানার নক্রুমা এবং ভারতের জওহরলাল নেহরু।

আলজেরিয়ার মঞ্চেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ ’৭৩-এর ৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু জাপান সফরে যান। জাপান সফরের মধ্য দিয়ে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়, তা আজও অটুট রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে জাপান। ’৭৪-এর ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ থেকে সরে যান, তদস্থলে নির্বাচিত হন জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামান। ’৭৪-এর ২২ ফেব্রুয়ারি যেদিন তিনি ইসলামিক সম্মেলনে যান সেদিন লাহোর বিমানবন্দরে দেখেছি মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে সেøাগান তুলেছে, ‘জিয়ে মুজিব জিয়ে মুজিব’, অর্থাৎ মুজিব জিন্দাবাদ মুজিব জিন্দাবাদ। এই সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যতক্ষণ তিনি লাহোরে না পৌঁছেছেন, ততক্ষণ সম্মেলন শুরুই হয়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্য সম্মেলন এক দিন স্থগিত ছিল। বিশেষভাবে মনে পড়ে ’৭৪-এর ২৫ সেপ্টেম্বরের কথা। যেদিন জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করা হয়, ‘আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’ এরপর জাতিসংঘের মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইমের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১ অক্টোবর ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে ৬ দিনের সফরে ’৭৪-এর ৩ অক্টোবর ইরাকের রাজধানী বাগদাদ পৌঁছান। সেখানে রাষ্ট্রপ্রধানসহ সবাই বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হন। ’৭৫-এর ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ মে জ্যামাইকার কিংস্টনে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর সরব উপস্থিতি সবাইকে মুগ্ধ করে।

আজ যে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ’৭৫-এ বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে। সেদিন আমি বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলাম। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেছেন দুই ভাগে। প্রথম ভাগে পুনবার্সন ও পুনর্গঠন এবং দ্বিতীয় ভাগে আর্থসামাজিক উন্নয়ন। ’৭৪-’৭৫-এ বোরো মৌসুমে ২২ লাখ ৪৯ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়, যা ’৭৩-৭৪-এর চেয়ে ২৯ হাজার টন বেশি। বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডিসেম্বরে ঘোষণা দেবেন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বঙ্গবন্ধু যে মুহূর্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বাভাবিক করেন, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন, ঠিক তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, বাংলার মীরজাফর বেঈমানরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ওই সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।

ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। আজ বিনম্র্র শ্রদ্ধায় জাতির জনককে স্মরণ করে একথাই মনে করি যে, সারাটি জীবন তিনি জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সবই সহ্য করেছেন আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলে দেশ স্বাধীন করার জন্য। দলের কর্মীদের তিনি পরিবারের সদস্য মনে করতেন। আওয়ামী লীগের জন্মকালে বঙ্গবন্ধু দলের দপ্তরেই থেকেছেন। সেখানেই তার কর্মব্যস্ততা, আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম। যখন তিনি কারাগারে বন্দী তখন বই পড়েছেন, বাগান করেছেন, অন্যান্য কয়েদিদের জীবনের করুণ কাহিনী অসীম ধৈর্য নিয়ে মনোযোগ সহকারে শুনেছেন, আবার উত্তরপ্রজন্মের জন্য জীবনের কথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু রচিত গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল। অমূল্য এই গ্রন্থসমূহ প্রকাশ করায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমরা কৃতজ্ঞ। ইতিহাসের অনেক অজানা কথা এই বই ৩টি থেকে আমরা জানতে পেরেছি। দেশের মানুষকে তিনি হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসেছেন। তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। বাঙালীর অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কোনো রক্তচক্ষুকেই তিনি পরোয়া করেননি। তাঁর দক্ষতা, সাহস, সীমাহীন ত্যাগ, অসীম ধৈর্য আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। জীবনের ৪ হাজার ৬৮২টি মূল্যবান দিন তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিচক্র মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ’৮১-এর ১৭ মে স্বদেশের মাটি স্পর্শ করে শহীদের রক্তে ভেজা আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তথা অর্থনৈতিক মুক্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করে বাংলাদেশকে আজ অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে এদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। দুই যুগের অধিককাল স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। জাতির জনকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে, আমরা স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এগুলো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। তিনি যা বিশ্বাস করেন, জাতির জনকের মতো তাই তিনি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ তার অদম্য প্রমাণ। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ’৬৬তে ৬ দফা ও বঙ্গবন্ধুকে দমন করতে চেয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা ও বাঙালির মুক্তির জন্য তার আপোষহীন মনোভাবের ফলে তা ১১ দফা গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১ দফা তথা স্বাধীনতায় উন্নীত হয়। তদ্রুপ বিশ্বব্যাংক রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে কায়েমীস্বার্থবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের দিয়ে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাধাগ্রস্ত চেয়েছিল; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও অদম্য ইচ্ছার ফলে সে বাধা অপসারিত হয়েছে এবং পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। আমি মনে করি শুধু দক্ষিণাঞ্চলের না, সমগ্র বাংলাদেশের অথনৈতিক উন্নয়নে পদ্মা সেতু গতি আনবে। জাতির জনক দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন সব ধরনের প্রতিকূলতা জয় করে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

[লেখক : সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি]

পলিথিনের পাপ, প্রকৃতির প্রতিশোধ

হারিয়ে যাওয়া অভিযোগকৃত চেকের মামলা

জার্মানীতে এসবি ৬২ সম্মেলন : বাংলাদেশের নজর অর্থায়নের ন্যায্যতায়

ছবি

শতবর্ষ পরেও যার প্রয়োজন ফুরোয় না : দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ

আদিবাসী মুণ্ডা ভাষার বাঁচার আর্তনাদ

মাসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতা : এক হারানো সম্ভাবনার খোঁজে

বিশ্ব রেড ক্রস দিবস

আত্মরক্ষার খালি-হাতের ইতিহাস ও আধুনিক বিস্তার

বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর : সমাজ সংস্কারের পথিকৃৎ

ছবি

বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস “বিজয় বসন্ত“গ্রন্থের লেখক

পয়লা বৈশাখ : বাঙালির সংহতি চেতনার সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কমরেড রূপনারায়ণ রায়

সাংবাদিক-সাহিত্যিক কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে কিছু কথা

রেসলিং

কোটা সমাচার

বাজেট ২০২৪-২৫: তথ্যপ্রযুক্তি খাতের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের যাত্রা শুরু হোক এবার

সীমান্ত সড়ক পশ্চাদপদ পার্বত্য অঞ্চলকে উন্নয়নের স্রোতধারায় একীভূত করেছে

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১: উন্নত ও সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্ন পূরণে বাংলাদেশের মহাকাশ জয়

ছবি

নাটোরের সম্ভাব্য জিআই পণ্য

রিলিফ

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

tab

মুক্ত আলোচনা

আওয়ামী লীগের ইতিহাস
সংগ্রাম ও উন্নয়নের ইতিহাস

তোফায়েল আহমেদ

বুধবার, ২২ জুন ২০২২

মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী, শামসুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ১৯৪৯ সনের ২৩ জুন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা দলের আত্মপ্রকাশের দিন হিসেবে ইতিহাস থেকে ২৩ জুন তারিখটি বেছে নিয়েছিলেন। কারণ ১৭৫৭ সনের ২৩ জুন পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন, ‘এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। এক দিন বাংলার ভাগ্যনিয়ন্তা বাঙালিদেরই হতে হবে।’ গণবিচ্ছিন্ন নেতৃত্বের স্থলে জনসম্পৃক্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ’৪৭-এর শেষে বঙ্গবন্ধু সতীর্থ-সহযোদ্ধাদের নিয়ে ১৫০ নং মোগলটুলিতে ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প’ সংগঠিত করেন ও ’৪৮-এর ৪ জানুয়ারি ‘ছাত্রলীগ’ প্রতিষ্ঠা করেন। একই বছরের ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের উদ্যোগে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সফল ধর্মঘটের মাধ্যমে সূচিত হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের। ’৪৯-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নœ বেতনভোগী কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া আদায়ের সংগ্রাম সংগঠিত করার কারণে ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে কারারুদ্ধ ও পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে শর্ত দেয়া হয়, যদি তিনি মুচলেকা দিতে সম্মত থাকেন তবে ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। ঢাকার রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের জন্মকালে বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ ছিলেন এবং পরে এ সম্পর্কে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হলো ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ।’ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, জনাব শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং আমাকে করা হলো জয়েন্ট সেক্রেটারি। খবরের কাগজে দেখলাম, আমার নামের পাশে লেখা আছে ‘নিরাপত্তা বন্দী’।” (পৃষ্ঠা-১২০-১২১)। ‘ছাত্রলীগ’ ও ‘আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মহান ভাষা আন্দোলন ও মহত্তর মুক্তিযুদ্ধের বীজ রোপিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মতান্ত্রিক পথে সংগ্রাম করে মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে ‘আওয়ামী লীগ’, ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধ’ ও ‘বাংলাদেশ’ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে নামগুলো পরস্পর সমার্থক হয়ে উঠেছে।

’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু তখন কারারুদ্ধ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসমাজ কর্তৃক ১৪৪ ধারা ভঙ্গের কর্মসূচির সঙ্গে কারাগারেই তিনি একাত্মতা প্রকাশ করে অনশন করেন। ’৫৩-এর ১৪ নভেম্বর ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিলে ২১ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। ’৫৪-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ‘যুক্তফ্রন্ট’ ভূমি ধস বিজয় অর্জন করে এবং যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে বঙ্গবন্ধু ১৫ মে সমবায়, ঋণ ও গ্রামীন পুনর্গঠনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী অন্যায়ভাবে ৯২-ক ধারা জারী করে যুক্তফ্রন্ট সরকার বরখাস্ত ও বঙ্গবন্ধুকে কারারুদ্ধ করে। ’৫৫-এর ২১, ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ সর্বধর্মের মানুষের অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ’৫৬তে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে বঙ্গবন্ধু বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ’৫৭-এর ৮ আগস্ট মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধু ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তাঁর কাছে দলের দায়িত্ব মন্ত্রিত্বের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

’৫৮-এর ৭ অক্টোবর মধ্য রাতে জেনারেল আইয়ুব খান রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং রাজনীতিকদের কারাগারে নিক্ষেপ করেন। একই বছরের ১২ অক্টোবর একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ’৬২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে পুনরায় গ্রেপ্তার করা হয়। রাজনীতিকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করতে জেল-জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ৫ জুলাই আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু আইয়ুবের শাসনের কঠোর সমালোচনা করেন। ’৬২তে আমাদের সেøাগান ছিল ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’; ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’। ’৬৪-এর ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এই সভায় ‘প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে সংসদীয় সরকার’ ও ‘রাজনৈতিক অধিকার’ আদায়ের প্রস্তাব গৃহীত হয়। সভায় বঙ্গবন্ধু পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। এ সময় দেশজুড়ে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি’ গঠিত হয়। দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ’পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও।’ ’৬৬তে ছয় দফা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু আমাদের বলতেন ‘সাঁকো দিলাম, এই সাঁকো দিয়েই একদিন আমরা স্বাধীনতায় পৌঁছাব।’ ৮ মে নারায়ণগঞ্জে এক বিশাল সমাবেশে ভাষণদান শেষে রাত ১টায় বাসায় ফিরলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের আহ্বানে ১৩ মে ‘প্রতিবাদ দিবস’ পালিত হয়। গ্রেপ্তার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ২০ মে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে ‘সাতই জুন’ হরতাল আহ্বান করা হয়। ৭ জুনের হরতালে সমগ্র পূর্ব বাংলা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। সফল হরতালের পর বঙ্গবন্ধু ‘কারাগারের রোজনামচা’য় লিখেছেন, ‘১২টার পরে খবর পাকাপাকি পাওয়া গেল যে হরতাল হয়েছে, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছে। তারা ছয় দফা সমর্থন করে আর মুক্তি চায়, বাঁচতে চায়, খেতে চায়, ব্যক্তি স্বাধীনতা চায়। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি, কৃষকের বাঁচবার দাবি তারা চায়-এর প্রমাণ এই হরতালের মধ্যে হয়েই গেল।’ (পৃষ্ঠা-৬৯)। ছয় দফা দেওয়ায় সামরিক শাসক গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলার আসামি করে তাঁকে ফাঁসি দেয়ার চেষ্টা করে। জাগ্রত ছাত্র সমাজ সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ৬ দফাকে হুবহু ১১ দফায় অন্তর্ভুক্ত করে আসাদ, মকবুল, রুস্তম, মতিউর, আনোয়ারা, আলমগীর, সার্জেন্ট জহুরুল হক, ড. শামসুজ্জোহাসহ নাম না জানা অগণিত শহীদের রক্তের বিনিময়ে ’৬৯-এ প্রবল গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির জনককে ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে মুক্ত করে ২৩ ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসমুদ্রে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে। এর কিছুদিন পরে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে পদত্যাগে বাধ্য হন।

তখন আমাদের স্লোগান ছিল ‘পাঞ্জাব না বাংলা, পিন্ডি না ঢাকা’। ’৭০-এর ২ জুন বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করি। ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে ভোলা-দৌলতখাঁ-তজুমুদ্দী-মনপুরা আসন থেকে আমাকে মনোনয়ন দেন এবং এ আসন থেকে মাত্র ২৭ বছর ১ মাস ১৫ দিন বয়সে আমি জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হই। বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুই ভোলা যাবি। সব এরিয়া সফর করবি। আমি তোকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেব।’ এই কথাটা ভীষণভাবে আমার হৃদয়কে আলোড়িত করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমত ভোলা সফরে যাই এবং ভোলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে-তখন ভোলায় রাস্তা-ঘাট, পুল-কালভার্ট কিছুই ছিল না-ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাই। বঙ্গবন্ধু ১৭০০ টাকা দিয়ে আমাকে একটা মোটরবাইক কিনে দিয়েছিলেন। এই মোটরবাইক ছিল আমার বাহন। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবাকে জানালাম বাবা, বঙ্গবন্ধু আমাকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে এমএনএ পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি বাবার দোয়া নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম। মনে পড়ে, ১২ নভেম্বর, ’৭০-এর কথা। যখন জলোচ্ছ্বাস হয় তখন কত মানুষ সেই প্রলয়ঙ্করি ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে মৃত্যুবরণ করেছে। বঙ্গবন্ধু সেদিন বিধ্বস্ত ভোলায় গিয়েছেন। ভোলার পথে-ঘাটে মৃতদেহের স্তূপ দেখে তিনি তা সহ্য করতে না পেরে আমাদের অসহায় আর্তমানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘এই নির্বাচন ৬ দফার পক্ষে গণভোট।’ ’৭১-এর ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ৬ দফা সমুন্নত রাখার শপথ গ্রহণ করান বঙ্গবন্ধু। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে জেনারেল ইয়াহিয়া খান তখন নানামুখী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের পূর্বঘোষিত ৩ মার্চের অধিবেশন একতরফাভাবে স্থগিত ঘোষণা করা হয়; দাবানলের মতো আগুন জ্বলে ওঠে। লাখ লাখ লোক রাজপথে নেমে আসে। শুরু হয় ১ দফা তথা স্বাধীনতার সংগ্রাম। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ’৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র জাতিতে রূপান্তরিত করেন এবং বজ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদান করে বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বর্তমানে ইউনেস্কো ঘোষিত ‘বিশ^ ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃত অতুলনীয় এই বক্তৃতাই ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হাতিয়ার তুলে নিয়ে প্রিয় মাতৃভূমির বীর সন্তানেরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষাধিক শহীদ আর ২ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগে বাংলাদেশ স্বাধীন করে। সেদিন দেশ শত্রুমুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু কোথায় আছেন, কেমন আছেন আমরা জানতাম না। ’৭২-এর ৮ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধুর মুক্তি সংবাদ পেলাম, সেদিন সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। ১০ জানুয়ারি তিনি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। সেদিন মনে হয়েছে আজ আমরা প্রকৃতই স্বাধীন। এরপর ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করে দেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।

দেশ স্বাধীনের পর শূন্য হাতে যাত্রা শুরু করেন। গোলাঘরে চাল নেই, ব্যাংকে টাকা নেই, বৈদেশিক মুদ্রা নেই। রাস্তা-ঘাট-পুল-কালভার্ট, রেল, প্লেন, স্টিমার কিছুই নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত। কিন্তু অতি তাড়াতাড়ি তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন করেন। ভৈরব ব্রিজ, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ যেগুলো ধ্বংস করেছিল সেগুলো পুননির্মাণ করেন। বঙ্গবন্ধুর একক প্রচেষ্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনী ’৭২-এর ১২ মার্চ বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ’৭২-এর ৭-৮ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বর্ণাঢ্য কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু পুনরায় সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ’৭২-এর ৪ নভেম্বর মাত্র ১০ মাসে বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রণয়ন ও ৭ মার্চ জাতীয় সংসদের সফল নির্বাচন করে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে বাংলাদেশ বিশে^র অধিকাংশ দেশের স্বীকৃতি ও ‘কমনওয়েলথ অব নেশনস্’, ‘জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন’, ‘ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা’ ও ‘জাতিসংঘ’সহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। বিশেষভাবে মনে পড়ে, বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়ে বিদেশ সফরের দিনগুলির কথা। প্রতিটি সম্মেলন ও অধিবেশনে তিনিই ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ’৭২-এর ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর প্রথম বিদেশ সফর। মুক্তিযুদ্ধের পরমমিত্র প্রতিবেশী ভারতের কলকাতা মহানগরীর ব্রিগেড ময়দানে ২০ লক্ষাধিক মানুষের জনসমুদ্রে অসাধারণ বক্তৃতা করেন। তারপর ১ মার্চ ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর। মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের সার্বিক সমর্থন যুগিয়েছিল। ’৭৩-এর ৩ আগস্ট কানাডার রাজধানী অটোয়াতে ৩২টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের অংশগ্রহণে কমনওয়েলথ সম্মেলনে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ’৭৩-এর ৯ সেপ্টেম্বর আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে ৬ জন নেতার নামে তোরণ নির্মিত হয়। তন্মধ্যে জীবিত ২ জন নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও মার্শাল টিটো। প্রয়াত ৪ জন নেতা ছিলেন মিশরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ত, ঘানার নক্রুমা এবং ভারতের জওহরলাল নেহরু।

আলজেরিয়ার মঞ্চেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত। শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’ ’৭৩-এর ৯ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু জাপান সফরে যান। জাপান সফরের মধ্য দিয়ে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হয়, তা আজও অটুট রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে জাপান। ’৭৪-এর ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলীয় গঠনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সভাপতির পদ থেকে সরে যান, তদস্থলে নির্বাচিত হন জাতীয় নেতা এএইচএম কামারুজ্জামান। ’৭৪-এর ২২ ফেব্রুয়ারি যেদিন তিনি ইসলামিক সম্মেলনে যান সেদিন লাহোর বিমানবন্দরে দেখেছি মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে সেøাগান তুলেছে, ‘জিয়ে মুজিব জিয়ে মুজিব’, অর্থাৎ মুজিব জিন্দাবাদ মুজিব জিন্দাবাদ। এই সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন বঙ্গবন্ধু। যতক্ষণ তিনি লাহোরে না পৌঁছেছেন, ততক্ষণ সম্মেলন শুরুই হয়নি। বঙ্গবন্ধুর জন্য সম্মেলন এক দিন স্থগিত ছিল। বিশেষভাবে মনে পড়ে ’৭৪-এর ২৫ সেপ্টেম্বরের কথা। যেদিন জাতিসংঘে মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করা হয়, ‘আপনি ইংরেজিতে বক্তৃতা করবেন।’ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চাই।’ এরপর জাতিসংঘের মহাসচিব কুর্ট ওয়াল্ডহেইমের সঙ্গে বৈঠক করেন। ১ অক্টোবর ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পথে ৬ দিনের সফরে ’৭৪-এর ৩ অক্টোবর ইরাকের রাজধানী বাগদাদ পৌঁছান। সেখানে রাষ্ট্রপ্রধানসহ সবাই বঙ্গবন্ধুর বিশাল ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হন। ’৭৫-এর ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ মে জ্যামাইকার কিংস্টনে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর সরব উপস্থিতি সবাইকে মুগ্ধ করে।

আজ যে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপিত হয়েছে, তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ’৭৫-এ বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে। সেদিন আমি বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলাম। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে ৩ বছর সময় পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করেছেন দুই ভাগে। প্রথম ভাগে পুনবার্সন ও পুনর্গঠন এবং দ্বিতীয় ভাগে আর্থসামাজিক উন্নয়ন। ’৭৪-’৭৫-এ বোরো মৌসুমে ২২ লাখ ৪৯ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়, যা ’৭৩-৭৪-এর চেয়ে ২৯ হাজার টন বেশি। বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ডিসেম্বরে ঘোষণা দেবেন দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বঙ্গবন্ধু যে মুহূর্তে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বাভাবিক করেন, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন, ঠিক তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটে একাত্তরের পরাজিত শক্তি, বাংলার মীরজাফর বেঈমানরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ওই সময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।

ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। আজ বিনম্র্র শ্রদ্ধায় জাতির জনককে স্মরণ করে একথাই মনে করি যে, সারাটি জীবন তিনি জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন সবই সহ্য করেছেন আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলে দেশ স্বাধীন করার জন্য। দলের কর্মীদের তিনি পরিবারের সদস্য মনে করতেন। আওয়ামী লীগের জন্মকালে বঙ্গবন্ধু দলের দপ্তরেই থেকেছেন। সেখানেই তার কর্মব্যস্ততা, আহার-নিদ্রা-বিশ্রাম। যখন তিনি কারাগারে বন্দী তখন বই পড়েছেন, বাগান করেছেন, অন্যান্য কয়েদিদের জীবনের করুণ কাহিনী অসীম ধৈর্য নিয়ে মনোযোগ সহকারে শুনেছেন, আবার উত্তরপ্রজন্মের জন্য জীবনের কথা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু রচিত গ্রন্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দলিল। অমূল্য এই গ্রন্থসমূহ প্রকাশ করায় বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আমরা কৃতজ্ঞ। ইতিহাসের অনেক অজানা কথা এই বই ৩টি থেকে আমরা জানতে পেরেছি। দেশের মানুষকে তিনি হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসেছেন। তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ে নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছেন। বাঙালীর অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কোনো রক্তচক্ষুকেই তিনি পরোয়া করেননি। তাঁর দক্ষতা, সাহস, সীমাহীন ত্যাগ, অসীম ধৈর্য আর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। জীবনের ৪ হাজার ৬৮২টি মূল্যবান দিন তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনিচক্র মনে করেছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ’৮১-এর ১৭ মে স্বদেশের মাটি স্পর্শ করে শহীদের রক্তে ভেজা আওয়ামী লীগের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ তথা অর্থনৈতিক মুক্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করে বাংলাদেশকে আজ অনন্য উচ্চতায় উন্নীত করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগকে এদেশের রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। দুই যুগের অধিককাল স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। জাতির জনকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছেন। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোলমডেল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে, আমরা স্বল্পন্নোত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। এগুলো সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। তিনি যা বিশ্বাস করেন, জাতির জনকের মতো তাই তিনি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ তার অদম্য প্রমাণ। স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ’৬৬তে ৬ দফা ও বঙ্গবন্ধুকে দমন করতে চেয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসীম সাহসিকতা ও বাঙালির মুক্তির জন্য তার আপোষহীন মনোভাবের ফলে তা ১১ দফা গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১ দফা তথা স্বাধীনতায় উন্নীত হয়। তদ্রুপ বিশ্বব্যাংক রক্তচক্ষু প্রদর্শন করে কায়েমীস্বার্থবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের দিয়ে তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাধাগ্রস্ত চেয়েছিল; কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও অদম্য ইচ্ছার ফলে সে বাধা অপসারিত হয়েছে এবং পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। আমি মনে করি শুধু দক্ষিণাঞ্চলের না, সমগ্র বাংলাদেশের অথনৈতিক উন্নয়নে পদ্মা সেতু গতি আনবে। জাতির জনক দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি নিষ্ঠা, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন সব ধরনের প্রতিকূলতা জয় করে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা।

[লেখক : সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি]

back to top