alt

মুক্ত আলোচনা

নিজের অর্জনের রেকর্ড নিজেই বারবার ভেঙেছে যে দল

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

: বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটির হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে একথা সবার জানা। তাই এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশত বছর অতিক্রম করার পর বর্তমানেও দেশ ও দেশের জনগণের কাছে যেটির আবেদন একটুও কমেনি; বরং আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা বা উপযোগীতা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ইতিহাসের অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে।

দেশের যত বড় বড় অর্জন তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই অর্জন করেছে। বাংলাদেশের তিনটি বড় অর্জন রয়েছে। এক. এহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান ও স্বাধীনতা অর্জন। দুই. দেশে সংবধিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও দেশকে খাদ্য, বাসস্থান, কৃষি উৎপাদন, যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে পরিচালিত করা। তিন. যে আদর্শ ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তা ধারণ করা এবং বাস্তবায়ন করা। এরমধ্যে রয়েছে শোষণ-বৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সামরিক শাসনকে বিদায় দিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনা নিশ্চিত করা, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে রুখে দাঁড়ানো এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আশ্চর্যজনকভাবে হলেও সত্যি এই তিনটি বা এসব বড় অর্জনসমূহ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে এবং যতটুকু বাকি রয়েছে তাও এই দলটির হাতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাই এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, সাফল্যের বিবেচনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিজের অর্জনের রেকর্ড নিজেই বারংবার ভেঙেছে। সাফল্যের ক্ষেত্রে নিজের অর্জনের রেকর্ড নিজেই বারবার রেকর্ড ভাঙা দলের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন ও বিরাট বিষয় তেমনই সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করাটাও কঠিন। স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা আরো কঠিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই মানুষের চাহিদা যেমন বেড়ে যায় আবার সেখানে অসংখ্য মানুষের অসংখ্য মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটে যা কখনো কখনো স্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য, এমন কি মূল চেতনাকেও ম্লান করে দিতে পারে। কিন্তু এরই মাঝে স্বাধীনতার মূল চেতনা ও প্রধান প্রধান লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচী হাতে নিয়ে হয় এবং বাস্তবায়ন করতে হয়।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একটি সমতা, সাম্য ও ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কর্মকান্ড হবে জনগণের জন্য কল্যাণকর, উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে প্রগতির পথকে ধরে রেখে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে ধারণ করা, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে চর্চার মাধ্যমে বিকশিত করা। কেহ খাবে আর কেহ খাবে না সেই নীতিকে চিরতরে বিদায় করা। সমাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। মৌলিক চাহিদা পূরণসহ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষার আলো প্রতিটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং একটি বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি গঠন করা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সর্বদাই বজায় রাখা। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ-উগ্রবাদ-মৌলবাদকে কঠোর হস্তে দমন করা, ধর্মীয় মূল্যবোধকে সদা জাগ্রত রাখা, মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করা, বিপদে মানুষের পাশে দঁড়ানোসহ সম্প্রীতি ও ঐক্যকে সর্বদাই গুরুত্ব দেওয়া, যুদ্ধের বিপরীতে বিশ^ব্যাপী শান্তি বজায় রাখতে জোরালো ভূমিকা রাখা, বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন, ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহ আদায়ে কর্মসূচী অব্যাহত রাখা, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই হলো একমাত্র, একমাত্র এবং একমাত্র রাজনৈতিক দল। উপরোক্ত বিষয়গুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমানে অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে আওয়ামী লীগের উপযোগীতা বা প্রয়োজনীয়তা সব চাইতে বেশি।

সাফল্যে রেকর্ড অর্জন, নিজের অর্জিত রেকর্ডসমূহ ভাঙা এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম কোনো ক্যান্টনমেন্ট থেকে হয় নি। কোনো সামরিক ছত্রছায়ায় হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। তখন নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটনারোর লক্ষ্যে নাম করা হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ^ব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবিলা। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান এবং যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন যা মুজিবনগর সরকার নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন, এরপর সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন। ১৯৭৫ সালে জানুয়ারিতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে বাকশাল গঠন যা দ্বিতীয় বিপ্লবের শুভ সূচনা নামে পরিচিত।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর সামরিক ও স্বৈরাচার সরকার হটাতে এবং দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল নেতৃত্ব দান। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান অর্জন করা। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে দীর্ঘ ২১ বছর পর পুনরায় সরকার গঠন করা। ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান অর্জন করা এবং এ সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনে মূল নেতৃত্ব দেওয়া। ২০০৯ সাল, ২০১৪ সাল এবং ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে একটনা তিন বার সরকার গঠন। সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করার প্রধান বাধা কালো আইন ইনডেমেনেটি অধ্যাদেশ বাতিল করা। ভারতের সাথে যুক্তথাকা নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে ঐতিহাসিক ফারাক্কা চুক্তি করা। সীমান্তের করিডোর সমস্যা দূর করা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় নিশ্চিত করা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসীর রায় কার্যকর করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বিচার শুরু করা। বাংলাদেশের সম পরিমাণ আয়তনের সমুদ্র বিজয় করা, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ মেগাপ্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন। খাদ্যে স্বয়ংস্বম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, অবকাঠামোর উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য। কত শত অর্জন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের।

[লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

tab

মুক্ত আলোচনা

নিজের অর্জনের রেকর্ড নিজেই বারবার ভেঙেছে যে দল

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটির হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে একথা সবার জানা। তাই এ নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল, দেশ স্বাধীন হওয়ার অর্ধশত বছর অতিক্রম করার পর বর্তমানেও দেশ ও দেশের জনগণের কাছে যেটির আবেদন একটুও কমেনি; বরং আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা বা উপযোগীতা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ইতিহাসের অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে।

দেশের যত বড় বড় অর্জন তা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই অর্জন করেছে। বাংলাদেশের তিনটি বড় অর্জন রয়েছে। এক. এহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান ও স্বাধীনতা অর্জন। দুই. দেশে সংবধিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন ও দেশকে খাদ্য, বাসস্থান, কৃষি উৎপাদন, যোগাযোগসহ প্রয়োজনীয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে পরিচালিত করা। তিন. যে আদর্শ ও চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তা ধারণ করা এবং বাস্তবায়ন করা। এরমধ্যে রয়েছে শোষণ-বৈষম্যহীন সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠা, মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সামরিক শাসনকে বিদায় দিয়ে গণতান্ত্রিক পন্থায় জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার দিয়ে দেশ পরিচালনা নিশ্চিত করা, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে রুখে দাঁড়ানো এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আশ্চর্যজনকভাবে হলেও সত্যি এই তিনটি বা এসব বড় অর্জনসমূহ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে এবং যতটুকু বাকি রয়েছে তাও এই দলটির হাতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাই এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়, সাফল্যের বিবেচনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিজের অর্জনের রেকর্ড নিজেই বারংবার ভেঙেছে। সাফল্যের ক্ষেত্রে নিজের অর্জনের রেকর্ড নিজেই বারবার রেকর্ড ভাঙা দলের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন যেমন কঠিন ও বিরাট বিষয় তেমনই সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করাটাও কঠিন। স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা আরো কঠিন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই মানুষের চাহিদা যেমন বেড়ে যায় আবার সেখানে অসংখ্য মানুষের অসংখ্য মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটে যা কখনো কখনো স্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য, এমন কি মূল চেতনাকেও ম্লান করে দিতে পারে। কিন্তু এরই মাঝে স্বাধীনতার মূল চেতনা ও প্রধান প্রধান লক্ষ্যকে সামনে রেখে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মসূচী হাতে নিয়ে হয় এবং বাস্তবায়ন করতে হয়।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো ধনী-গরীব, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একটি সমতা, সাম্য ও ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রের কর্মকান্ড হবে জনগণের জন্য কল্যাণকর, উন্নত বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে প্রগতির পথকে ধরে রেখে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রকে ধারণ করা, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে চর্চার মাধ্যমে বিকশিত করা। কেহ খাবে আর কেহ খাবে না সেই নীতিকে চিরতরে বিদায় করা। সমাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। মৌলিক চাহিদা পূরণসহ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। শিক্ষার আলো প্রতিটি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং একটি বিজ্ঞানমনষ্ক জাতি গঠন করা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সর্বদাই বজায় রাখা। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ-উগ্রবাদ-মৌলবাদকে কঠোর হস্তে দমন করা, ধর্মীয় মূল্যবোধকে সদা জাগ্রত রাখা, মানুষে মানুষে বন্ধন দৃঢ় করা, বিপদে মানুষের পাশে দঁড়ানোসহ সম্প্রীতি ও ঐক্যকে সর্বদাই গুরুত্ব দেওয়া, যুদ্ধের বিপরীতে বিশ^ব্যাপী শান্তি বজায় রাখতে জোরালো ভূমিকা রাখা, বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণে প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন, ন্যায়সঙ্গত দাবিসমূহ আদায়ে কর্মসূচী অব্যাহত রাখা, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগই হলো একমাত্র, একমাত্র এবং একমাত্র রাজনৈতিক দল। উপরোক্ত বিষয়গুলোর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমানে অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে আওয়ামী লীগের উপযোগীতা বা প্রয়োজনীয়তা সব চাইতে বেশি।

সাফল্যে রেকর্ড অর্জন, নিজের অর্জিত রেকর্ডসমূহ ভাঙা এবং দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম কোনো ক্যান্টনমেন্ট থেকে হয় নি। কোনো সামরিক ছত্রছায়ায় হয়নি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। তখন নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আদর্শের অধিকতর প্রতিফলন ঘটনারোর লক্ষ্যে নাম করা হয় আওয়ামী লীগ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন যা বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ^ব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ে শিক্ষা আন্দোলন। ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা মোকাবিলা। ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন। একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দান এবং যুদ্ধকালীন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন যা মুজিবনগর সরকার নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জন, এরপর সংবিধান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠন। ১৯৭৫ সালে জানুয়ারিতে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে বাকশাল গঠন যা দ্বিতীয় বিপ্লবের শুভ সূচনা নামে পরিচিত।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর সামরিক ও স্বৈরাচার সরকার হটাতে এবং দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনরায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মূল নেতৃত্ব দান। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান অর্জন করা। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে দীর্ঘ ২১ বছর পর পুনরায় সরকার গঠন করা। ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধান বিরোধী দলের অবস্থান অর্জন করা এবং এ সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির আন্দোলনে মূল নেতৃত্ব দেওয়া। ২০০৯ সাল, ২০১৪ সাল এবং ২০১৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে একটনা তিন বার সরকার গঠন। সরকার গঠনের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলার কার্যক্রম শুরু করার প্রধান বাধা কালো আইন ইনডেমেনেটি অধ্যাদেশ বাতিল করা। ভারতের সাথে যুক্তথাকা নদীসমূহের পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে পেতে ঐতিহাসিক ফারাক্কা চুক্তি করা। সীমান্তের করিডোর সমস্যা দূর করা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় নিশ্চিত করা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসীর রায় কার্যকর করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বিচার শুরু করা। বাংলাদেশের সম পরিমাণ আয়তনের সমুদ্র বিজয় করা, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করা, পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ মেগাপ্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন। খাদ্যে স্বয়ংস্বম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ, অবকাঠামোর উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য। কত শত অর্জন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের।

[লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়]

back to top