alt

মুক্ত আলোচনা

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

মারুফা ইয়াসমিন শিমু

: বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০২২

বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার এবং শিল্প কারখানায় পরিবেশ বান্ধব পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা একবিংশ শতাব্দীতে আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর হয়ে উঠেছে। পানির অপর নাম জীবন। পৃথিবীতে যত চিরন্তন সত্য বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি যে এই সম্পূর্ণ পৃথিবীর বিশাল অংশ পানি দিয়ে আবৃত। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানির মধ্যে মাত্র ২.৫% পানি পানযোগ্য। পৃথিবীর সব শিল্প কারখানাতেই পানির প্রয়োজন এবং প্রতিটি শিল্প-কারখানাতেই বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল এই শিল্প কারখানাতে যে পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের সুপেয় পানি। কারণ, কারখানার বড় বড় যন্ত্রপাতিতে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি ব্যবহার করে তা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে শিল্পপতিরা তাদের কারখানায় খাবার পানি ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে ধারনা করা যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরো পৃথিবী খাবার পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছে। শিল্প কারখানায় যে বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার হয় তার উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রিতে যেমন নিচের তথ্যগুলোতে কোন কাপড় তৈরিতে কি পরিমাণ পানির প্রয়োজন (কেজি/ প্রতি কেজি কাপড়) তা দেয়া হলঃ

কটনঃ ২৫০-৩৫০ কেজি

উলঃ ২০০-৩০০ কেজি

নাইলনঃ ১২৫- ১৫০ কেজি

রেয়নঃ ১২৫-১৫০ কেজি

পলিয়েস্টারঃ ১০০-২০০ কেজি

এক্রেলিকঃ ১০০-২০০ কেজি

এত বিপুল পরিমাণ পানির পুরোটাই শিল্প বর্জ্যে পরিণত হবে যদি না পানি গুলোকে পরিশোধন না করা যায়।

বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় ই কিছু শিল্প বর্জ্য পানি বা Waste water উৎপাদন করে। সাম্রতিক প্রবণতা হল এই ধরণের বর্জ্য উৎপাদন কমিয়ে আনা বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে পরিশোধিত ব্যবস্থাপনায় পানির পুনর্ব্যবহার করা। এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং সিস্টেম এর প্রয়োগে পানি ব্যবস্থাপনায় পানিকে শোধন করে এবং এর ব্যবহারকে আরও উপযুক্ত করে তোলে। এরই মধ্যে কিছু সিস্টেম বা পদ্ধতি হলঃ Raw ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম, বয়লার ফিড ট্রিটমেন্ট সিস্টেম, কুলিং টাওয়ার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম ও Wastewater ট্রিটমেন্ট সিস্টেম। এরই পাশাপাশি পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অধিক প্রচলিত ও ইফেক্টিভ পদ্ধতি হলো ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা ইটিপি। শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য পদার্থকে যে প্লান্ট এর মাধ্যমে পরিশোধন করে সাধারণ পানির মত করে পুনঃব্যবহার করার উপযোগী করে বা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত পানি যেন পরিবেশকে দূষিত করতে না পারে সে জন্য যে প্লান্ট ব্যবহার করা হয় তাকেই ইটিপি প্লান্ট বলে।

দূষিত পানি উৎপাদনকারি সকল কারখানাতেই ইটিপি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। বড় বড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানেই ইটিপি প্লান্ট আছে।

সাধারণত কারখানায় বিশেষ করে অধিক পানি উৎপাদনকারী টেক্সটাইল শিল্পে ৩টি উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করা হয়ে থাকে। এই ৩টি প্রসেস হলোঃ

১) Filtration Using Membrane : মেমব্রেন ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধকরণ আবার ৩টি উপায়ে করা সম্ভব। তা হলো Reverse Osmosis, Nanofiltration,Microfiltration।

২) Chemical Treatment

৩) Biological Treatment

তাছাড়া ETP বা ইটিপি তে পানি বিশুদ্ধকরণের ৪টি স্তর রয়েছে। স্তরগুলো হলোঃ

১) Pre- treatment বা Preliminary treatment

২) Primary treatment

৩) Secondary treatment

৪) Tertiary treatment

একটি ইটিপি তে নিন্মোক্ত উপায়ে পানি পরিশোধন হয়ে থাকেঃ

১) প্রাথমিকভাবে পানিকে ফিল্টার করে নেয়া হয়।

২) ঠান্ডা করে মিক্সিং করা হয়।

৩) অ্যাসিড বা অ্যালকালির সাথে নিউট্রালাইজিং করা হয়।

৪) পানিতে কেমিক্যাল ঘনীভূত করা হয়।

৫) তৈলাক্ত অংশ আলাদা করা হয়।

৬) পুনরায় ফিল্টার করে ড্রেনে পরিবহন করা হয়।

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ETP বা ইটিপি এর গুরুত্বঃ

ক. পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।

খ. এটি পানিকে পরিষ্কার এবং নিরাপদ পুনঃব্যবহারযোগ্য পানিতে পরিণত করে।

গ. এটি শিল্পকারখানা থেকে বর্জঢ় উপাদান হৃাস করার সর্বোত্তম উপায়।

ঘ. ইটিপি এর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ দ্বারা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব।

নিচে ডায়িং শিল্পে পানি ব্যবহার এর পর দূষিত পানির বিভিন্ন গুণাগুণ এবং ইটিপি ব্যবহারের পর বিশুদ্ধ পানির গুণাগুণ উল্লেখ করা হলে। এই তথ্যগুলো দ্বারা খুব সহজে ইটিপি এর গুরুত্ব বুঝা সম্ভব।

ডায়িং শিল্পে পানি ব্যবহারের পর পানির গুণাগুণঃ

pH: ৯-১১

BOD:৩০০ মিলিগ্রাম/ লিটার

COD:২০০ মিলিগ্রাম/ লিটার

SS: ২০০ মিলিগ্রাম/ লিটার

Colour:গাঢ় বাদামি

ইটিপি দ্বারা পানি শোধনের পর পানির গুণাগুণঃ

pH:৭-৮

BOD:৩০ মিলিগ্রাম/ লিটার

COD:১৬০ মিলিগ্রাম/ লিটার

SS:৩০ মিলিগ্রাম/ লিটার

Colour:হালকা বাদামি

অর্থাৎ ইটিপি ব্যবহারের পর পানির গুণাগুণ আবার আগের মত করা সম্ভব। ফলে বিশুদ্ধ পানি পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

এছাড়াও গবেষকরা উন্নত ন্যানো ফিল্টার ও আধুনিক মেমব্রেন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছেন৷ শিল্পক্ষেত্রে পানির পুনর্বব্যহার প্রক্রিয়া আরও দক্ষ ও সস্তা করে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ পানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পেটার কাউভেনবার্গ বলেন, “প্রচলিত মেমব্রেন ফিলট্রেশন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে বড়জোর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি পুনর্বব্যহারের যোগ্য করে তোলা যায়৷ এই প্রযুক্তির সাহায্যে তা বাড়িয়ে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশে আনা সম্ভব৷”

এই মেমব্রেন প্রণালী জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে দেয় এবং লবণ ধরে রাখে৷ কিন্তু সেগুলির আয়ু বড় কম৷ তাই সেগুলি আরও কার্যকর করে তোলার উদ্যোগকে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ টেকনিকাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস্টিনা ইয়ুংফার বলেন, ‘‘শিল্পক্ষেত্রের একাধিক সুবিধা রয়েছে৷ প্রথমত, এটি আরও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া৷ কারণ এর মাধ্যমে পানি সাশ্রয় সম্ভব হয়৷ তাছাড়া মিঠা পানির উৎসের উপর নির্ভর করতে হয় না৷ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ও সম্ভব হয়৷ ফলে এমন পরিস্থিতি একইসঙ্গে শিল্পক্ষেত্র ও প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক৷

সারা দেশে প্রায় ২০০০টি শিল্প কল-কারখানা আছে। অর্ধেকের বেশি ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন করেনি বা সব সময় চালু রাখে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। শিল্পবর্জ্যরে বড় শিকার হচ্ছে রাজধানী বা শিল্প এলাকার নদীগুলো। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, হালদা, কর্ণফুলী, সুরমা, রূপসা কিংবা ব্রহ্মপুত্র কোনো নদ-নদীয় রেহাই পাচ্ছে না এ দূষণের হাত থেকে। শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে দূষণের ভয়াবহতাও বাড়ছে। শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত তরল বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং অন্যান্য মানুষের বর্জ্য ইত্যাদির মাধ্যমে নদী-খাল ইত্যাদি দূষণ হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার নদী-খাল, বায়ুদূষণ হচ্ছে। পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ বা শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত করছে। এসব শিল্প কল-কারখানার বেশির ভাগই শব্দদূষণ করছে। কল-কারখানার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সংগত কারণে শিল্পবর্জ্যরে পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কারো বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকের তেমন মাথাব্যথা নেই। পানির ঢলে শিল্পবর্জ্য হালদায় পড়ে নদীদূষণ হচ্ছে। ফলে এলাকার অন্যতম বৃহত্তম প্রাকৃতিক মাছের অভয়ারণ্য হুমকির মুখে। চট্টগ্রামের বায়েজিদ থেকে কুলগাঁও-নন্দীরহাট পর্যন্ত শিল্প-কারখানাগুলোর বর্জ্য হালদা সংযুক্ত খাল ও সংযুক্ত পরিত্যক্ত জমিতে পড়ছে। এর ফলে বর্ষাকালে বা বন্যার সময় খাল বেয়ে হালদার পানিতে পড়ছে এসব বর্জ্য। এতে ফসল নষ্ট হচ্ছে, মাছ মরছে। দূষণ হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। শিল্পবর্জ্য ও দখলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নরসিংদীর ব্রহ্মপুত্র নদ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বিষাক্ত বর্জ্য এ এলাকার পানির রং পাল্টিয়ে দিচ্ছে। ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে। কোথাও পানির রং লাল হয়ে গেছে আবার কোথাও কালচে হয়ে যাচ্ছে পানির রং। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্পকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখান থেকে শিল্পবর্জ্য ধলেশ্বরীতে পড়ছে। এর ফলে এ নদীসহ আশপাশের পরিবেশদূষণ হচ্ছে। হবিগঞ্জে শিল্প-কারখানা স্থাপন হচ্ছে। এখানকার অনেক শিল্পবর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। মরতে বসেছে এ নদী। জমিতে দূষণ হচ্ছে। খুলনার খালিশপুর বা রূপসার আশপাশের কারখানার বর্জ্য রূপসা নদীকে দূষণ করছে। চট্টগ্রামের কল-কারখানার বর্জ্য কর্ণফুলী নদীর দূষণের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত হচ্ছে বস্ত্র ও পোশাক খাত। পোশাক কারখানা বা এর সংশ্লিষ্ট কারখানাতেই দূষণ বেশি। সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে চামড়াশিল্প খাত। এখানেও দূষণের মাত্রা বেশি। কারণ এখানেও পরিকল্পনার অভাব। ২০১৬ সালে ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার এবং পরের বছর ২৩ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য নিঃসরণ হয়েছে বস্ত্র ও পোশাকশিল্প থেকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছর শেষে বস্ত্রশিল্পের বর্জ্য পানির পরিমাণ দাঁড়াবে ২৬ কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটার। ২০২১ সালে এটি ৩৪ কোটি ঘনমিটার ছাড়িয়েছে। ইভ্যালুয়েশন অব প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার ওয়েস্ট ওয়াটার ইমপ্যাক্টস অব টেক্সটাইল ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। বুয়েটের এ গবেষণায় বলা হয়, পরিবেশের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত পানি ও সেখান থেকে নিঃসরিত বর্জ্য। এ শিল্পের কারখানায় উৎপাদিত প্রতি ইউনিট কাপড়ে ভালো মাত্রায় পানির ব্যবহার হয়। এর প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ব্যাপক হারে কমছে। আবার বস্ত্র শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত পানি কোনো পরিশোধন ছাড়াই নদী ও শুকনো জমিতে গিয়ে মিশছে। এ অপরিশোধিত বর্জ্য পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে জলজপ্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বস্ত্রশিল্প অধ্যুষিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর অঞ্চলগুলোর নদী ও পানি সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হচ্ছে। গবেষণায় ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বস্ত্রশিল্পের দূষণপ্রবণতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এক দশকের দূষণের পরিমাণ ও মাত্রা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের কারখানায় ১৮ কোটি টন কাপড় উৎপাদন হয়েছে, যার মাধ্যমে উৎপাদিত বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার। ২০২১ সালে এ বর্জ্য পানির পরিমাণ ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়ে হবে ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ঘনমিটার। যদিও যথাযথ প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বর্জ্য পানির পরিমাণ ২৩ শতাংশ কমানো সম্ভব বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীদূষণের কারণে ওই অঞ্চলে দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালে নিট শিল্প থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ ঘনমিটার। ওই বছর ওভেন শিল্পের উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ঘনমিটার। ২০১৭ সালে নিট শিল্পের উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ১১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার, ওভেন পণ্য থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার। ২০২১ সালে নিট ও ওভেন পোশাক থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ও ১৮ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। বাস্তবতা হলো, পানি শোধন ব্যবস্থা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ব্যবস্থা অকার্যকর থাকে। ফলে দেশে পানি দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি।

চামড়াশিল্পে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কিছু ট্যানারি মালিকপক্ষের পিছু পিছু করার কারণে এ শিল্পের সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সম্ভাবনাময় এ শিল্পে অপরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় ঘটছে ভয়াবহ পরিবেশদূষণ। এ শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী না হওয়ায় বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর আশপাশের নদী ও জলাশয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে মাটি ও বায়ু। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক ক্ষুদ্রশিল্পের কারখানাতে ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হয়ে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জনজীবনকে বিষিয়ে তুলছে। পৃথিবীর বিশ কোটি মানুষ প্রতিদিন সরাসরি পরিবেশদূষণের ক্ষতি মোকাবিলা করছে। ভারী ধাতুর কারণে দূষিত হচ্ছে মাটি, রাসায়নিক বর্জ্য উড়ে বেড়াচ্ছে বাতাসে আর ইলেকট্রনিক আবর্জনা জমছে নদীতে।

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশের ট্যানারিগুলো। সংখ্যার বিচারে কম করে হলেও ২২০টি ট্যানারি তো হবেই। আর এসব ট্যানারিতে কাজ করেন অন্তপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক। ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহার করা হয় ক্রোমিয়াম, খার এবং অ্যাসিড। শ্রমিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খালি পায়ে এবং খালি হাতে এই প্রক্রিয়াজাতের কাজ করেন। ফলে ক্যানসার ও চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন তারা, যা তাদের অকালমৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। শুধু তাই নয়, এখানকার বর্জ্য আশপাশের পরিবেশও দূষিত করে। ট্যানারিগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কিউবিক লিটার বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা দূষিত করছে বুড়িগঙ্গার পানি, ট্যানারি এলাকার মাটি ও বায়ুকে। শ্রমিক ছাড়াও সে এলাকার বাসিন্দাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

শুধু ট্যানারি নয়, তাদের কেন্দ্র করে ছোট ছোট আরো অনেক অপরিকল্পিত কারখানা গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে। সেসব কারখানায় ট্যানারির কঠিন বর্জ্য, যেমন টুকরো চামড়া, গরুর হাড়, চর্বি, দাঁত – এগুলো পুড়িয়ে পোলট্রি ফিডসহ আরো নানা জিনিস তৈরি করা হয়। এসব কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ট্যানারি এবং ওইসব ছোট ছোট কারখানার কারণে পুরো সে এলাকার মানুষ, মাটি, পানি এবং বাতাস এখন বিষে আক্রান্ত। আর এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ ও বুড়িগঙ্গাও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। অথচ জীবন ও পরিবেশের ক্ষতি করে। জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা গেছে, হাজারীবাগ ট্যানারি থেকে দৈনিক ৭৭ লাখ লিটার তরল বর্জ্য ও ৮৮ টন কঠিন বর্জ্য উদগত হয়। ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। শিল্প-কারখানা স্থাপনের সময় বা এখন শিল্পের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে কঠোর হতে হবে।

বর্জ্যগুলির অন্যতম ধ্বংসাত্মক প্রভাব হ’ল জল দূষণ। বেশিরভাগ শিল্প প্রক্রিয়াগুলির জন্য, প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহার করা হয় যা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে। এই রাসায়নিকগুলি সাধারণত ধাতু বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ হয়। এটি পরিবেশকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে কারণ বেশিরভাগ বর্জ্য সমুদ্র, হ্রদ বা নদীতে শেষ হয়। ফলস্বরূপ, জল দূষিত হয়ে উঠেছে সবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কৃষকরা এই পানির উপর নির্ভর করে তবে পানি দূষিত হয়, তবে উত্পাদিত ফসলগুলি দূষিত হয়ে উঠতে পারে। এগুলি সমাজের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে কারণ যদি শিল্প সংস্থাগুলি তাদের বর্জ্য পরিষ্কার করতে না পারে তবে এটি মানুষের নয়, প্রাণীদের জীবনকেও প্রভাবিত করে। এই দূষিত জলের দ্বারা তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠায় সমুদ্রের জীবের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। জলের দূষণ মানুষের দেহে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে যার প্রধান কারণ ব্যাকটিরিয়া, পরজীবী এবং রাসায়নিকগুলি থেকে সংক্রমণ হয়। কলেরা, টাইফয়েড, বা থেকে অনিরাপদ জলের পরিধি পান করে মানুষ যেসব রোগের সংস্পর্শে আসতে পারে ডায়রিয়া। এছাড়াও সকল শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত পানি নদী, খাল, বিল ও কৃষিজমিতে অবাধে ছাড়া হয়ে থাকে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে বলা হয়েছে, কলকারখানার কেমিক্যালযুক্ত ময়লা পানি, তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার করে আবার সেই পানি কাজে লাগাতে হবে। তাই সকল শিল্প কারখানায় ইটিপি এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতসহ অন্যান্য আধুনকি টেকনোলজি প্রয়োগ করে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। তবেই নদী ও পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুকি হতেও জীবন রক্ষা পাবে।

[লেখক: শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়]

মুজিবনগরে স্বাধীনতার সূর্যোদয়

বঙ্গাব্দ প্রচলনের ইতিকথা

পহেলা বৈশাখ বাঙালির প্রাণের উৎসব

কেউতো অপেক্ষায় নেই

ফরগেট মি নট

ছবি

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বীমা শিল্পের গুরুত্ব

একুশে ফেব্রুয়ারি আত্মপরিচয়ের দিন

দিদি, আপা, “বু” খালা

হিজল-করচ-আড়াংবন

ছবি

শেখ হাসিনা, এক উৎসারিত আলোকধারা

মনমাঝি

সেই ইটনা

ছবি

আংকর ওয়াট : উন্নত সভ্যতার স্মৃতিচিহ্ন যেখানে

নিয়ত ও নিয়তি

হারিয়ে যাওয়া ট্রেন

টম সয়ার না রবিনহুড

ছবি

‘ঝড়-বৃষ্টি আঁধার রাতে, আমরা আছি তোমার সাথে’

বাংলাদেশ-জাপান সহযোগিতা স্মারক: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অনন্য মাইলফলক

রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মিশনের পরিবর্তন আশু প্রয়োজন

কুয়েতের জীবনযাত্রার সাতকাহন: পর্ব-১-বিয়ে

বিবেকের লড়াই

ছবি

ছবি যেন শুধু ছবি নয়

বাত ব্যথার কারণ ও আধুনিক চিকিৎসা

ছবি

স্বাধীন স্বদেশে মুক্ত বঙ্গবন্ধু

ছবি

মহান নেতার স্বভূমিতে ফিরে আসা

ছবি

মেট্রোরেল : প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তার ফসল

ছবি

আমার মা

ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রগতিশীল প্রযুক্তি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নতি

ছবি

৩ নভেম্বর: ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা

দেশের ইতিহাসে কলঙ্কজনক দ্বিতীয় অধ্যায়

এইচ এস সি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের অনুশীলন

ছবি

ত্রিশ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়

অসুর: এক পরাজিত বিপ্লবী

অসুর জাতির ইতিহাস

বিশ্ব শিক্ষক দিবস : শিক্ষা পুনরুদ্ধারে শিক্ষকদের চ্যালেঞ্জ

tab

মুক্ত আলোচনা

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং

মারুফা ইয়াসমিন শিমু

বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০২২

বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার এবং শিল্প কারখানায় পরিবেশ বান্ধব পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা একবিংশ শতাব্দীতে আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর হয়ে উঠেছে। পানির অপর নাম জীবন। পৃথিবীতে যত চিরন্তন সত্য বিদ্যমান রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। আমরা জানি যে এই সম্পূর্ণ পৃথিবীর বিশাল অংশ পানি দিয়ে আবৃত। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানির মধ্যে মাত্র ২.৫% পানি পানযোগ্য। পৃথিবীর সব শিল্প কারখানাতেই পানির প্রয়োজন এবং প্রতিটি শিল্প-কারখানাতেই বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু দুশ্চিন্তার বিষয় হল এই শিল্প কারখানাতে যে পানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা হলে আমাদের সুপেয় পানি। কারণ, কারখানার বড় বড় যন্ত্রপাতিতে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি ব্যবহার করে তা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে শিল্পপতিরা তাদের কারখানায় খাবার পানি ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে ধারনা করা যায় অল্প কিছুদিনের মধ্যে পুরো পৃথিবী খাবার পানির সংকটে পড়তে যাচ্ছে। শিল্প কারখানায় যে বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার হয় তার উদাহরণস্বরূপ বলা যায় টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রিতে যেমন নিচের তথ্যগুলোতে কোন কাপড় তৈরিতে কি পরিমাণ পানির প্রয়োজন (কেজি/ প্রতি কেজি কাপড়) তা দেয়া হলঃ

কটনঃ ২৫০-৩৫০ কেজি

উলঃ ২০০-৩০০ কেজি

নাইলনঃ ১২৫- ১৫০ কেজি

রেয়নঃ ১২৫-১৫০ কেজি

পলিয়েস্টারঃ ১০০-২০০ কেজি

এক্রেলিকঃ ১০০-২০০ কেজি

এত বিপুল পরিমাণ পানির পুরোটাই শিল্প বর্জ্যে পরিণত হবে যদি না পানি গুলোকে পরিশোধন না করা যায়।

বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় ই কিছু শিল্প বর্জ্য পানি বা Waste water উৎপাদন করে। সাম্রতিক প্রবণতা হল এই ধরণের বর্জ্য উৎপাদন কমিয়ে আনা বা উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে পরিশোধিত ব্যবস্থাপনায় পানির পুনর্ব্যবহার করা। এনভায়রনমেন্টাল ইন্জিনিয়ারিং সিস্টেম এর প্রয়োগে পানি ব্যবস্থাপনায় পানিকে শোধন করে এবং এর ব্যবহারকে আরও উপযুক্ত করে তোলে। এরই মধ্যে কিছু সিস্টেম বা পদ্ধতি হলঃ Raw ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম, বয়লার ফিড ট্রিটমেন্ট সিস্টেম, কুলিং টাওয়ার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সিস্টেম ও Wastewater ট্রিটমেন্ট সিস্টেম। এরই পাশাপাশি পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অধিক প্রচলিত ও ইফেক্টিভ পদ্ধতি হলো ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা ইটিপি। শিল্প কারখানার তরল বর্জ্য পদার্থকে যে প্লান্ট এর মাধ্যমে পরিশোধন করে সাধারণ পানির মত করে পুনঃব্যবহার করার উপযোগী করে বা শিল্প কারখানা থেকে নির্গত পানি যেন পরিবেশকে দূষিত করতে না পারে সে জন্য যে প্লান্ট ব্যবহার করা হয় তাকেই ইটিপি প্লান্ট বলে।

দূষিত পানি উৎপাদনকারি সকল কারখানাতেই ইটিপি ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। বড় বড় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানেই ইটিপি প্লান্ট আছে।

সাধারণত কারখানায় বিশেষ করে অধিক পানি উৎপাদনকারী টেক্সটাইল শিল্পে ৩টি উপায়ে পানি বিশুদ্ধ করা হয়ে থাকে। এই ৩টি প্রসেস হলোঃ

১) Filtration Using Membrane : মেমব্রেন ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধকরণ আবার ৩টি উপায়ে করা সম্ভব। তা হলো Reverse Osmosis, Nanofiltration,Microfiltration।

২) Chemical Treatment

৩) Biological Treatment

তাছাড়া ETP বা ইটিপি তে পানি বিশুদ্ধকরণের ৪টি স্তর রয়েছে। স্তরগুলো হলোঃ

১) Pre- treatment বা Preliminary treatment

২) Primary treatment

৩) Secondary treatment

৪) Tertiary treatment

একটি ইটিপি তে নিন্মোক্ত উপায়ে পানি পরিশোধন হয়ে থাকেঃ

১) প্রাথমিকভাবে পানিকে ফিল্টার করে নেয়া হয়।

২) ঠান্ডা করে মিক্সিং করা হয়।

৩) অ্যাসিড বা অ্যালকালির সাথে নিউট্রালাইজিং করা হয়।

৪) পানিতে কেমিক্যাল ঘনীভূত করা হয়।

৫) তৈলাক্ত অংশ আলাদা করা হয়।

৬) পুনরায় ফিল্টার করে ড্রেনে পরিবহন করা হয়।

শিল্প কারখানার পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় ETP বা ইটিপি এর গুরুত্বঃ

ক. পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে।

খ. এটি পানিকে পরিষ্কার এবং নিরাপদ পুনঃব্যবহারযোগ্য পানিতে পরিণত করে।

গ. এটি শিল্পকারখানা থেকে বর্জঢ় উপাদান হৃাস করার সর্বোত্তম উপায়।

ঘ. ইটিপি এর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ দ্বারা দীর্ঘ মেয়াদে অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব।

নিচে ডায়িং শিল্পে পানি ব্যবহার এর পর দূষিত পানির বিভিন্ন গুণাগুণ এবং ইটিপি ব্যবহারের পর বিশুদ্ধ পানির গুণাগুণ উল্লেখ করা হলে। এই তথ্যগুলো দ্বারা খুব সহজে ইটিপি এর গুরুত্ব বুঝা সম্ভব।

ডায়িং শিল্পে পানি ব্যবহারের পর পানির গুণাগুণঃ

pH: ৯-১১

BOD:৩০০ মিলিগ্রাম/ লিটার

COD:২০০ মিলিগ্রাম/ লিটার

SS: ২০০ মিলিগ্রাম/ লিটার

Colour:গাঢ় বাদামি

ইটিপি দ্বারা পানি শোধনের পর পানির গুণাগুণঃ

pH:৭-৮

BOD:৩০ মিলিগ্রাম/ লিটার

COD:১৬০ মিলিগ্রাম/ লিটার

SS:৩০ মিলিগ্রাম/ লিটার

Colour:হালকা বাদামি

অর্থাৎ ইটিপি ব্যবহারের পর পানির গুণাগুণ আবার আগের মত করা সম্ভব। ফলে বিশুদ্ধ পানি পুনরায় ব্যবহার করা যায়।

এছাড়াও গবেষকরা উন্নত ন্যানো ফিল্টার ও আধুনিক মেমব্রেন প্রযুক্তি পরীক্ষা করছেন৷ শিল্পক্ষেত্রে পানির পুনর্বব্যহার প্রক্রিয়া আরও দক্ষ ও সস্তা করে তোলাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷ পানি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পেটার কাউভেনবার্গ বলেন, “প্রচলিত মেমব্রেন ফিলট্রেশন ব্যবস্থা কাজে লাগিয়ে বড়জোর ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি পুনর্বব্যহারের যোগ্য করে তোলা যায়৷ এই প্রযুক্তির সাহায্যে তা বাড়িয়ে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশে আনা সম্ভব৷”

এই মেমব্রেন প্রণালী জলীয় বাষ্প প্রবেশ করতে দেয় এবং লবণ ধরে রাখে৷ কিন্তু সেগুলির আয়ু বড় কম৷ তাই সেগুলি আরও কার্যকর করে তোলার উদ্যোগকে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷ টেকনিকাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট ক্রিস্টিনা ইয়ুংফার বলেন, ‘‘শিল্পক্ষেত্রের একাধিক সুবিধা রয়েছে৷ প্রথমত, এটি আরও পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া৷ কারণ এর মাধ্যমে পানি সাশ্রয় সম্ভব হয়৷ তাছাড়া মিঠা পানির উৎসের উপর নির্ভর করতে হয় না৷ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয়ও সম্ভব হয়৷ ফলে এমন পরিস্থিতি একইসঙ্গে শিল্পক্ষেত্র ও প্রকৃতির জন্য ইতিবাচক৷

সারা দেশে প্রায় ২০০০টি শিল্প কল-কারখানা আছে। অর্ধেকের বেশি ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন করেনি বা সব সময় চালু রাখে না বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। শিল্পবর্জ্যরে বড় শিকার হচ্ছে রাজধানী বা শিল্প এলাকার নদীগুলো। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, হালদা, কর্ণফুলী, সুরমা, রূপসা কিংবা ব্রহ্মপুত্র কোনো নদ-নদীয় রেহাই পাচ্ছে না এ দূষণের হাত থেকে। শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে দূষণের ভয়াবহতাও বাড়ছে। শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত তরল বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক এবং অন্যান্য মানুষের বর্জ্য ইত্যাদির মাধ্যমে নদী-খাল ইত্যাদি দূষণ হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার নদী-খাল, বায়ুদূষণ হচ্ছে। পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ বা শীতলক্ষ্যা নদীর পানি দূষিত করছে। এসব শিল্প কল-কারখানার বেশির ভাগই শব্দদূষণ করছে। কল-কারখানার পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সংগত কারণে শিল্পবর্জ্যরে পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে কারো বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট শিল্প মালিকের তেমন মাথাব্যথা নেই। পানির ঢলে শিল্পবর্জ্য হালদায় পড়ে নদীদূষণ হচ্ছে। ফলে এলাকার অন্যতম বৃহত্তম প্রাকৃতিক মাছের অভয়ারণ্য হুমকির মুখে। চট্টগ্রামের বায়েজিদ থেকে কুলগাঁও-নন্দীরহাট পর্যন্ত শিল্প-কারখানাগুলোর বর্জ্য হালদা সংযুক্ত খাল ও সংযুক্ত পরিত্যক্ত জমিতে পড়ছে। এর ফলে বর্ষাকালে বা বন্যার সময় খাল বেয়ে হালদার পানিতে পড়ছে এসব বর্জ্য। এতে ফসল নষ্ট হচ্ছে, মাছ মরছে। দূষণ হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। শিল্পবর্জ্য ও দখলে অস্তিত্ব হারাচ্ছে নরসিংদীর ব্রহ্মপুত্র নদ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও বিষাক্ত বর্জ্য এ এলাকার পানির রং পাল্টিয়ে দিচ্ছে। ভয়াবহ দূষণের শিকার হচ্ছে। কোথাও পানির রং লাল হয়ে গেছে আবার কোথাও কালচে হয়ে যাচ্ছে পানির রং। হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্পকে সাভারে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখান থেকে শিল্পবর্জ্য ধলেশ্বরীতে পড়ছে। এর ফলে এ নদীসহ আশপাশের পরিবেশদূষণ হচ্ছে। হবিগঞ্জে শিল্প-কারখানা স্থাপন হচ্ছে। এখানকার অনেক শিল্পবর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। মরতে বসেছে এ নদী। জমিতে দূষণ হচ্ছে। খুলনার খালিশপুর বা রূপসার আশপাশের কারখানার বর্জ্য রূপসা নদীকে দূষণ করছে। চট্টগ্রামের কল-কারখানার বর্জ্য কর্ণফুলী নদীর দূষণের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত হচ্ছে বস্ত্র ও পোশাক খাত। পোশাক কারখানা বা এর সংশ্লিষ্ট কারখানাতেই দূষণ বেশি। সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে চামড়াশিল্প খাত। এখানেও দূষণের মাত্রা বেশি। কারণ এখানেও পরিকল্পনার অভাব। ২০১৬ সালে ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার এবং পরের বছর ২৩ কোটি ৮০ লাখ ঘনমিটার বর্জ্য নিঃসরণ হয়েছে বস্ত্র ও পোশাকশিল্প থেকে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চলতি বছর শেষে বস্ত্রশিল্পের বর্জ্য পানির পরিমাণ দাঁড়াবে ২৬ কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটার। ২০২১ সালে এটি ৩৪ কোটি ঘনমিটার ছাড়িয়েছে। ইভ্যালুয়েশন অব প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার ওয়েস্ট ওয়াটার ইমপ্যাক্টস অব টেক্সটাইল ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। বুয়েটের এ গবেষণায় বলা হয়, পরিবেশের ওপর বেশি প্রভাব ফেলছে বস্ত্রশিল্পে ব্যবহৃত পানি ও সেখান থেকে নিঃসরিত বর্জ্য। এ শিল্পের কারখানায় উৎপাদিত প্রতি ইউনিট কাপড়ে ভালো মাত্রায় পানির ব্যবহার হয়। এর প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ ব্যাপক হারে কমছে। আবার বস্ত্র শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত পানি কোনো পরিশোধন ছাড়াই নদী ও শুকনো জমিতে গিয়ে মিশছে। এ অপরিশোধিত বর্জ্য পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে জলজপ্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বস্ত্রশিল্প অধ্যুষিত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং গাজীপুর অঞ্চলগুলোর নদী ও পানি সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হচ্ছে। গবেষণায় ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বস্ত্রশিল্পের দূষণপ্রবণতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এক দশকের দূষণের পরিমাণ ও মাত্রা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের কারখানায় ১৮ কোটি টন কাপড় উৎপাদন হয়েছে, যার মাধ্যমে উৎপাদিত বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ২১ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার। ২০২১ সালে এ বর্জ্য পানির পরিমাণ ৬০ শতাংশ বেড়ে গিয়ে হবে ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ঘনমিটার। যদিও যথাযথ প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বর্জ্য পানির পরিমাণ ২৩ শতাংশ কমানো সম্ভব বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীদূষণের কারণে ওই অঞ্চলে দূষিত পানি ব্যবহার করার ফলে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ সালে নিট শিল্প থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ ঘনমিটার। ওই বছর ওভেন শিল্পের উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ৭ কোটি ঘনমিটার। ২০১৭ সালে নিট শিল্পের উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ১১ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার, ওভেন পণ্য থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ ছিল ১২ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার। ২০২১ সালে নিট ও ওভেন পোশাক থেকে উৎপন্ন বর্জ্য পানির পরিমাণ হবে যথাক্রমে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ও ১৮ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার। বাস্তবতা হলো, পানি শোধন ব্যবস্থা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ব্যবস্থা অকার্যকর থাকে। ফলে দেশে পানি দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো কার্যকর হয়ে উঠতে পারেনি।

চামড়াশিল্পে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও কিছু ট্যানারি মালিকপক্ষের পিছু পিছু করার কারণে এ শিল্পের সদ্ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সম্ভাবনাময় এ শিল্পে অপরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় ঘটছে ভয়াবহ পরিবেশদূষণ। এ শিল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী না হওয়ায় বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর আশপাশের নদী ও জলাশয়ের পানি দূষিত হচ্ছে। দূষিত হচ্ছে মাটি ও বায়ু। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত অনেক ক্ষুদ্রশিল্পের কারখানাতে ক্ষতিকর ধোঁয়া নির্গত হয়ে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জনজীবনকে বিষিয়ে তুলছে। পৃথিবীর বিশ কোটি মানুষ প্রতিদিন সরাসরি পরিবেশদূষণের ক্ষতি মোকাবিলা করছে। ভারী ধাতুর কারণে দূষিত হচ্ছে মাটি, রাসায়নিক বর্জ্য উড়ে বেড়াচ্ছে বাতাসে আর ইলেকট্রনিক আবর্জনা জমছে নদীতে।

ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশের ট্যানারিগুলো। সংখ্যার বিচারে কম করে হলেও ২২০টি ট্যানারি তো হবেই। আর এসব ট্যানারিতে কাজ করেন অন্তপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক। ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যবহার করা হয় ক্রোমিয়াম, খার এবং অ্যাসিড। শ্রমিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া খালি পায়ে এবং খালি হাতে এই প্রক্রিয়াজাতের কাজ করেন। ফলে ক্যানসার ও চর্মরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হন তারা, যা তাদের অকালমৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। শুধু তাই নয়, এখানকার বর্জ্য আশপাশের পরিবেশও দূষিত করে। ট্যানারিগুলো থেকে প্রতিদিন গড়ে ২২ হাজার কিউবিক লিটার বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা দূষিত করছে বুড়িগঙ্গার পানি, ট্যানারি এলাকার মাটি ও বায়ুকে। শ্রমিক ছাড়াও সে এলাকার বাসিন্দাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

শুধু ট্যানারি নয়, তাদের কেন্দ্র করে ছোট ছোট আরো অনেক অপরিকল্পিত কারখানা গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে। সেসব কারখানায় ট্যানারির কঠিন বর্জ্য, যেমন টুকরো চামড়া, গরুর হাড়, চর্বি, দাঁত – এগুলো পুড়িয়ে পোলট্রি ফিডসহ আরো নানা জিনিস তৈরি করা হয়। এসব কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ট্যানারি এবং ওইসব ছোট ছোট কারখানার কারণে পুরো সে এলাকার মানুষ, মাটি, পানি এবং বাতাস এখন বিষে আক্রান্ত। আর এর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ ও বুড়িগঙ্গাও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। অথচ জীবন ও পরিবেশের ক্ষতি করে। জাতিসংঘের এক জরিপে দেখা গেছে, হাজারীবাগ ট্যানারি থেকে দৈনিক ৭৭ লাখ লিটার তরল বর্জ্য ও ৮৮ টন কঠিন বর্জ্য উদগত হয়। ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। শিল্প-কারখানা স্থাপনের সময় বা এখন শিল্পের বর্জ্যব্যবস্থাপনা নিয়ে কঠোর হতে হবে।

বর্জ্যগুলির অন্যতম ধ্বংসাত্মক প্রভাব হ’ল জল দূষণ। বেশিরভাগ শিল্প প্রক্রিয়াগুলির জন্য, প্রচুর পরিমাণে জল ব্যবহার করা হয় যা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসে। এই রাসায়নিকগুলি সাধারণত ধাতু বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ হয়। এটি পরিবেশকে তীব্রভাবে প্রভাবিত করে কারণ বেশিরভাগ বর্জ্য সমুদ্র, হ্রদ বা নদীতে শেষ হয়। ফলস্বরূপ, জল দূষিত হয়ে উঠেছে সবার স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কৃষকরা এই পানির উপর নির্ভর করে তবে পানি দূষিত হয়, তবে উত্পাদিত ফসলগুলি দূষিত হয়ে উঠতে পারে। এগুলি সমাজের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে কারণ যদি শিল্প সংস্থাগুলি তাদের বর্জ্য পরিষ্কার করতে না পারে তবে এটি মানুষের নয়, প্রাণীদের জীবনকেও প্রভাবিত করে। এই দূষিত জলের দ্বারা তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠায় সমুদ্রের জীবের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। জলের দূষণ মানুষের দেহে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে যার প্রধান কারণ ব্যাকটিরিয়া, পরজীবী এবং রাসায়নিকগুলি থেকে সংক্রমণ হয়। কলেরা, টাইফয়েড, বা থেকে অনিরাপদ জলের পরিধি পান করে মানুষ যেসব রোগের সংস্পর্শে আসতে পারে ডায়রিয়া। এছাড়াও সকল শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত কেমিক্যালযুক্ত পানি নদী, খাল, বিল ও কৃষিজমিতে অবাধে ছাড়া হয়ে থাকে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে বলা হয়েছে, কলকারখানার কেমিক্যালযুক্ত ময়লা পানি, তরল বর্জ্য শোধনাগার বা ইটিপি প্লান্ট ব্যবহার করে আবার সেই পানি কাজে লাগাতে হবে। তাই সকল শিল্প কারখানায় ইটিপি এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতসহ অন্যান্য আধুনকি টেকনোলজি প্রয়োগ করে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় জোর দিতে হবে। তবেই নদী ও পরিবেশের পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্য ঝুকি হতেও জীবন রক্ষা পাবে।

[লেখক: শিক্ষার্থী, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top