alt

উপ-সম্পাদকীয়

ফ্রিল্যান্সিং পেশার উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রেজাউল করিম খোকন

: রোববার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
image

দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে

বয়স বড়জোর ২৩-২৪। এই বয়সে যার লেখাপড়া শেষদিকে থাকার কথা বা চাকরি খোঁজার কথা, তিনি কিভাবে এমন স্বাবলম্বী জীবনযাপন করছেন? এই তরুণ হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। এখন তার মতো অনেক তরুণ দেশে বসে ডলারে ডলার আয় করেন। অনেকের মাসিক আয় হাজার ডলার বা তার বেশি। ফ্রিল্যান্সারের বাংলা করা যায় মুক্ত পেশাজীবী। নয়টা-পাঁচটা চাকরির ঘেরাটোপে আবদ্ধ নন তারা। বাসা কিংবা যেকোনো স্থানে বসেই কাজ করতে পারেন। লাগবে নিজের দক্ষতা, বিদ্যুৎ আর গতিশীল ইন্টারনেট-সংযোগ।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান স্থানীয় কর্মী নিলে খরচ বেশি হয়। অনেক সময় চাহিদামতো এত কর্মী পাওয়া যায় না। তারা তখন বাইরে থেকে (আউটসোর্সিং) নির্দিষ্ট কাজটি করিয়ে নেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি যেকোনো স্থান থেকে কাজটি করে ওই ব্যক্তিও আয় করেন। বেশির ভাগ কাজ মেলে নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে। তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় এগুলো ‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’ (অনলাইন কাজের বাজার)। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। ২০০৫-০৬ সাল থেকে মূলত দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ আসা শুরু হয়। তরুণরাই এ কাজে অগ্রণী। দেশে এখন সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের সব মিলিয়ে বার্ষিক আয় প্রায় ১০০ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (ডলার ১০৬ টাকা ধরে)।

২০১৪ সাল থেকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার তরুণকে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সাড়ে ছয় লাখের হিসাবটা আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস ধরে। বাংলাদেশ থেকে ১৫৩টি মার্কেটপ্লেসে কাজ করা হয়। সেগুলো হিসাব করলে এই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর ৫৫ শতাংশেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো কম। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে ভারত। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে। এসব কার্ডধারী ব্যাংকঋণ সুবিধা পাবেন। ব্যাংকের মাধ্যমে বাইরে থেকে আয়ের অর্থ আনলে ৪ শতাংশ প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে।

সবার আগে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা বুঝতে হবে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। ভালো হয় প্রথমে কোথাও চাকরি করা কিংবা সফল কোনো ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে থেকে কাজ করা। এসব কাজের উল্লেখ করে মার্কেটপ্লেসে ভালো একটা পোর্টফোলিও তৈরি করে কাজ নিতে হবে। সময়মতো কাজটি করে দিতে হবে। করোনা মহামারির কারণে চাকরির বাজার ছোট হলেও ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। এখন ডিজিটাল বিপণন, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন), গ্রাফিক ডিজাইন ও লোগো তৈরি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজের চাহিদা বেশি। এছাড়া কনটেন্ট রাইটিং (মূলত পণ্য বা সেবার বর্ণনা বা প্রচারণামূলক লেখা), মর্ডান ফটোগ্রাফি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও হিসাবরক্ষণ বিষয়ের চাহিদা রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে দুভাবে আয় হয়। একটি অ্যাকটিভ আর্নিং। এটি হচ্ছে সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করে আয় করা। আরেকটি প্যাসিভ বা পরোক্ষ আয়। এটি হচ্ছে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করে আয় করা।বাংলাদেশে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, ফাইভআর, গুরু ডটকম, টপটাল, পিপলপারআওয়ার ইত্যাদি। মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে পারিশ্রমিক ও সময় জানাতে হয় (বিড করা)। কাজদাতা পারিশ্রমিক ও পোর্টফোলিও দেখে যোগ্য ব্যক্তিদের কাজ দেন। এখন অবস্থার উন্নতি হলেও দু-তিন বছর আগেও ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে দেশের মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। ‘রাত জাগে, সারা দিন কম্পিউটার নিয়ে থাকে, কী যে করে, এটা তো কোনো চাকরি বা স্থায়ী কিছু নয়, এর কাছে মেয়েকে বিয়ে দেয়া যাবে না’- এমন কথা শুনতে হয়েছে অনেক ফ্রিল্যান্সারকে। তবে এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সারদের কাজের সামাজিক স্বীকৃতি বাড়লেও পথ এখনো অনেক দূর। ফ্রিল্যান্সিংয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বেশি, কিন্তু ১০ শতাংশ ভালো আয় করেন। আসলে তথ্যপ্রযুক্তির নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। ফ্রিল্যান্সার হতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতার পাশাপাশি যোগাযোগেও দক্ষ হতে হবে। ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোগ, ব্যক্তিগত আয় বাড়লেও ভালোমানের প্রশিক্ষণের সুবিধা নেই। আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। দেশের আইসিটি শিল্প খাত থেকে কোনো দিক-নির্দেশনা ফ্রিল্যান্সাররা পান না। কোন বিষয়ের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে কিংবা কিসে দক্ষ হতে হবে- সেই পথনির্দেশনা নেই। ভারতে অনেক বড় বাজার। এমনকি পাকিস্তানেও একজন ফ্রিল্যান্সার বছরে ১ লাখ ডলার আয় করেন। সেখানে আমাদের কারও বার্ষিক ১০ হাজার ডলার আয় হলেই খুশি। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আইসিটি শিল্প খাত থেকে বিশেষজ্ঞ মতামত ও দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।

ফ্রিল্যান্সারদের কাজকর্মে একটা বিষয় চোখে পড়ে। একা একা শুরু করে যখন সফল হন, তিনি আশপাশের তরুণদের সম্পৃক্ত করেন এ কাজে। তাদের আয়ের পথ তৈরি করে দেন।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই) অনুসারে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। দেশে ৬ লাখের বেশি আইটি সেবা রপ্তানিকারক বা ফ্রিল্যান্সার রয়েছে এবং দলভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০টির কাছাকাছি। একই সঙ্গে তারা বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। আইসিটি-সক্ষম কর্মসংস্থানের সুযোগের জন্য দেশের তরুণদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে পারলে বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিং বাজারে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেশে মোট সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স যোগ করছে অর্থনীতিতে। এ আয়ের অবদান সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনেক কাজ করছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ফ্রিল্যান্সাররা বেশি আয় করছে। ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জিত অর্থে আমাদের রেমিট্যান্স দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এটা এক বড় অর্জন।

সময়টা এখন তথ্যপ্রযুক্তির। বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। এখন ঘরে বসে যেমনি সারা বিশ্বের খোঁজ-খবর রাখা যায়, ঠিক তেমনি ঘরটাও হতে পারে কর্মস্থল। সেটা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সেক্টরে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। তারপরও রয়ে গেছে কিছু সমস্যা। এগুলোর সমাধান করা গেলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্স আয়ের খাত। সৃষ্টি হতে পারে লাখ লাখ নতুন কর্মসংস্থান, যা দেশের বেকারত্বে সমস্যা সমাধানে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য ব্যক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি উদ্যোগে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, এমনটাই মনে করছেন এ সেক্টরের ফ্রিল্যান্সার ও বিশিষ্টজনরা।

বাংলাদেশের এ আন্তর্জাতিক অনলাইন প্লাটফর্মে কর্মরত এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দিতে পারবে না। তবে ঘরে ঘরে ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে পারবে। ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় খাত। আমরা যদি এটাকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে দেশের অর্থনীতিকে খুব ভালো অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব। এক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তিগত উপার্জন দিয়ে খুব বড় কোনো কিছু করা যাবে না, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। তবে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে তেমন কিছু জানার দরকার নেই। ২ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কম্পিউটারে ইন্টারনেট নিয়ে বসলেই ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে, ঝরঝর করে টাকা আসতে শুরু করবে। এটা আমাদের একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বেশ বড় একটি জব মার্কেট ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণে এটা একটি ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে, এমনকি যেখানে ইন্টারনেট আছে, সেরকম উপজেলা পর্যায়েও অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিং করছে; কিন্তু সেটা পুরোপুরি কাঠামোগতভাবে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সারদের আরো প্রশিক্ষণ ও যথার্থ তত্ত্বাবধায়ন করা দরকার; যাতে ফ্রিল্যান্সাররা মার্কেটপ্লেসসহ বিভিন্ন জায়গায় ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

সবাই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একটা স্বপ্ন নিয়ে আসে। তাদের স্বপ্নটা তখনই সত্যি হবে, যখন তারা সঠিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা উৎস থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করবে। ভুল জায়গায় গেলে, তাদের স্বপ্নটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। তাই যাদের কাছ থেকে অথবা যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নেবে, তাদের সম্পর্কে ভালো মতো খোঁজখবর নিতে হবে। এক্ষেত্রে তারা যদি এ সেক্টরের মানুষ হয় বা এ সেক্টর নিয়ে কাজ করে, তাহলে গুগলে সার্চ করলে তাদের সম্পর্কে কিছু না কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন এ সেক্টরে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে তাদের পরামর্শ নিতে পারে। আমরা শুধু ফ্রিল্যান্সারদের সফলতাই দেখি, কিন্তু এর পেছনে ব্যয়কৃত অক্লান্ত পরিশ্রম, সময় ও মেধা দেখি না।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। ঢাকাতে ইন্টারনেট আগের চেয়ে কিছুটা সহজলভ্য ও গতিসম্পন্ন হলেও ঢাকার বাইরে ইন্টারনেট সেবার মান আরো বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে এখনো ইন্টারনেটের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া বিভাগীয় বা জেলা শহরে খুব বেশি আইএসপি প্রোভাইডার না থাকায়, দামের ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়। কোনো কোনো জায়গায় এক এমবিপিএস গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা করেও রাখা হয়। ফলে কারো যদি বেশি গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তাদের অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। এছাড়া যেসব এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেসব জায়াগায় টেলিকম অপারেটরের ইন্টারনেট ব্যবহার করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকে না, যেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কম গতিসম্পন্ন, যা দিয়ে প্রফেশনাল কাজ করা খুবই কষ্টকর। সরকারের উচিত টেলিটকের থ্রিজি নেটওয়ার্ক সর্বত্র বিস্তৃত এবং সহজলভ্য করা এবং লোকাল পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

বিয়ের কিছু লোকাচার ও অপব্যয় প্রসঙ্গে

ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে রক্ষা করুন

তরুণদের দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব

শিশুমৃত্যু রোধে করণীয় কী

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ও বাস্তবতা

স্বামী কিংবা স্ত্রীর পরবর্তী বিয়ের আইনি প্রতিকার ও বাস্তবতা

তথ্য-উপাত্তের গরমিলে বাজারে অস্থিরতা, অর্থনীতিতে বিভ্রান্তি

দেশে অফশোর ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব

ইরানে কট্টরপন্থার সাময়িক পরাজয়

পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থার ভবিষ্যৎ কী

ক্ষমতার সাতকাহন

জলবায়ু সংকট : আমাদের উপলব্ধি

নারী-পুরুষ চুড়ি পরি, দেশের অন্যায় দূর করি!

ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবার

ছবি

সাধারণ মানুষেরা বড় অসাধারণ

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও কারিগরি শিক্ষা

মাদক রুখতে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ

পারিবারিক অপরাধপ্রবণতা ও কয়েকটি প্রশ্ন

ডারউইনকে খুঁজে পেয়েছি

চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফসল উৎপাদন করা জরুরি

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

এত উন্নয়নের পরও বাসযোগ্যতায় কেন পিছিয়েই থাকছে ঢাকা

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য কি কেউ নেই?

জলবায়ু রক্ষায় কাজের কাজ কি কিছু হচ্ছে

অধরার হাতে সমর্পিত ক্ষমতা

প্রসঙ্গ : কোটাবিরোধী আন্দোলন

রম্যগদ্য : যে করিবে চালাকি, বুঝিবে তার জ্বালা কী

একটি মিথ্যা ধর্ষণ মামলার পরিণতি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা কেন শ্রেণীকক্ষের বাইরে

মেধা নিয়ে কম মেধাবীর ভাবনা

প্রজাতন্ত্রের সেবক কেন ফ্রাঙ্কেনস্টাইন বনে যান

ছবি

বাইডেন কি দলে বোঝা হয়ে যাচ্ছেন?

ছবি

দুই যুগের পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

সাপ উপকারী প্রাণীও বটে!

ছবি

বাস্তববাদী রাজনীতিক জ্যোতি বসু

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ফ্রিল্যান্সিং পেশার উজ্জ্বল সম্ভাবনা

রেজাউল করিম খোকন

image

দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে

রোববার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

বয়স বড়জোর ২৩-২৪। এই বয়সে যার লেখাপড়া শেষদিকে থাকার কথা বা চাকরি খোঁজার কথা, তিনি কিভাবে এমন স্বাবলম্বী জীবনযাপন করছেন? এই তরুণ হচ্ছেন ফ্রিল্যান্সার। এখন তার মতো অনেক তরুণ দেশে বসে ডলারে ডলার আয় করেন। অনেকের মাসিক আয় হাজার ডলার বা তার বেশি। ফ্রিল্যান্সারের বাংলা করা যায় মুক্ত পেশাজীবী। নয়টা-পাঁচটা চাকরির ঘেরাটোপে আবদ্ধ নন তারা। বাসা কিংবা যেকোনো স্থানে বসেই কাজ করতে পারেন। লাগবে নিজের দক্ষতা, বিদ্যুৎ আর গতিশীল ইন্টারনেট-সংযোগ।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান স্থানীয় কর্মী নিলে খরচ বেশি হয়। অনেক সময় চাহিদামতো এত কর্মী পাওয়া যায় না। তারা তখন বাইরে থেকে (আউটসোর্সিং) নির্দিষ্ট কাজটি করিয়ে নেন। এতে ওই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যেমন অর্থ সাশ্রয় হয়, তেমনি যেকোনো স্থান থেকে কাজটি করে ওই ব্যক্তিও আয় করেন। বেশির ভাগ কাজ মেলে নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটে। তথ্যপ্রযুক্তির ভাষায় এগুলো ‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’ (অনলাইন কাজের বাজার)। দেশে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিংয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে। ২০০৫-০৬ সাল থেকে মূলত দেশে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ আসা শুরু হয়। তরুণরাই এ কাজে অগ্রণী। দেশে এখন সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের সব মিলিয়ে বার্ষিক আয় প্রায় ১০০ কোটি ডলার বা ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা (ডলার ১০৬ টাকা ধরে)।

২০১৪ সাল থেকে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার তরুণকে তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সাড়ে ছয় লাখের হিসাবটা আপওয়ার্ক মার্কেটপ্লেস ধরে। বাংলাদেশ থেকে ১৫৩টি মার্কেটপ্লেসে কাজ করা হয়। সেগুলো হিসাব করলে এই সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। এর ৫৫ শতাংশেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর। তবে ফ্রিল্যান্সিংয়ে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো কম। ফ্রিল্যান্সিংয়ে সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে ভারত। এরপরই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে আয়ের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার ফ্রিল্যান্সারকে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়েছে। এসব কার্ডধারী ব্যাংকঋণ সুবিধা পাবেন। ব্যাংকের মাধ্যমে বাইরে থেকে আয়ের অর্থ আনলে ৪ শতাংশ প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে।

সবার আগে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা বুঝতে হবে। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির একটি বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। ভালো হয় প্রথমে কোথাও চাকরি করা কিংবা সফল কোনো ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে থেকে কাজ করা। এসব কাজের উল্লেখ করে মার্কেটপ্লেসে ভালো একটা পোর্টফোলিও তৈরি করে কাজ নিতে হবে। সময়মতো কাজটি করে দিতে হবে। করোনা মহামারির কারণে চাকরির বাজার ছোট হলেও ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। এখন ডিজিটাল বিপণন, এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন), গ্রাফিক ডিজাইন ও লোগো তৈরি, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কাজের চাহিদা বেশি। এছাড়া কনটেন্ট রাইটিং (মূলত পণ্য বা সেবার বর্ণনা বা প্রচারণামূলক লেখা), মর্ডান ফটোগ্রাফি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও হিসাবরক্ষণ বিষয়ের চাহিদা রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে দুভাবে আয় হয়। একটি অ্যাকটিভ আর্নিং। এটি হচ্ছে সরাসরি গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করে আয় করা। আরেকটি প্যাসিভ বা পরোক্ষ আয়। এটি হচ্ছে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস থেকে কাজ করে আয় করা।বাংলাদেশে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হচ্ছে আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, ফাইভআর, গুরু ডটকম, টপটাল, পিপলপারআওয়ার ইত্যাদি। মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে পারিশ্রমিক ও সময় জানাতে হয় (বিড করা)। কাজদাতা পারিশ্রমিক ও পোর্টফোলিও দেখে যোগ্য ব্যক্তিদের কাজ দেন। এখন অবস্থার উন্নতি হলেও দু-তিন বছর আগেও ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে দেশের মানুষের তেমন ধারণা ছিল না। ‘রাত জাগে, সারা দিন কম্পিউটার নিয়ে থাকে, কী যে করে, এটা তো কোনো চাকরি বা স্থায়ী কিছু নয়, এর কাছে মেয়েকে বিয়ে দেয়া যাবে না’- এমন কথা শুনতে হয়েছে অনেক ফ্রিল্যান্সারকে। তবে এখন অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

ফ্রিল্যান্সারদের কাজের সামাজিক স্বীকৃতি বাড়লেও পথ এখনো অনেক দূর। ফ্রিল্যান্সিংয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এখন ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা বেশি, কিন্তু ১০ শতাংশ ভালো আয় করেন। আসলে তথ্যপ্রযুক্তির নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হতে হবে। ফ্রিল্যান্সার হতে হলে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতার পাশাপাশি যোগাযোগেও দক্ষ হতে হবে। ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোগ, ব্যক্তিগত আয় বাড়লেও ভালোমানের প্রশিক্ষণের সুবিধা নেই। আমাদের আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। দেশের আইসিটি শিল্প খাত থেকে কোনো দিক-নির্দেশনা ফ্রিল্যান্সাররা পান না। কোন বিষয়ের চাহিদা ভবিষ্যতে বাড়বে কিংবা কিসে দক্ষ হতে হবে- সেই পথনির্দেশনা নেই। ভারতে অনেক বড় বাজার। এমনকি পাকিস্তানেও একজন ফ্রিল্যান্সার বছরে ১ লাখ ডলার আয় করেন। সেখানে আমাদের কারও বার্ষিক ১০ হাজার ডলার আয় হলেই খুশি। ফ্রিল্যান্সারদের জন্য আইসিটি শিল্প খাত থেকে বিশেষজ্ঞ মতামত ও দিকনির্দেশনা প্রয়োজন।

ফ্রিল্যান্সারদের কাজকর্মে একটা বিষয় চোখে পড়ে। একা একা শুরু করে যখন সফল হন, তিনি আশপাশের তরুণদের সম্পৃক্ত করেন এ কাজে। তাদের আয়ের পথ তৈরি করে দেন।

অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট (ওআইআই) অনুসারে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অনলাইন শ্রমের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে। দেশে ৬ লাখের বেশি আইটি সেবা রপ্তানিকারক বা ফ্রিল্যান্সার রয়েছে এবং দলভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০টির কাছাকাছি। একই সঙ্গে তারা বছরে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করছে। তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক এবং আইটি প্রশিক্ষণ ও ইনকিউবেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। আইসিটি-সক্ষম কর্মসংস্থানের সুযোগের জন্য দেশের তরুণদের সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে পারলে বিশ্বব্যাপী আউটসোর্সিং বাজারে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ হাব হয়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

দেশে মোট সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার ৫০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স যোগ করছে অর্থনীতিতে। এ আয়ের অবদান সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনেক কাজ করছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ফ্রিল্যান্সাররা বেশি আয় করছে। ফ্রিল্যান্সারদের উপার্জিত অর্থে আমাদের রেমিট্যান্স দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এটা এক বড় অর্জন।

সময়টা এখন তথ্যপ্রযুক্তির। বিশ্ব চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। এখন ঘরে বসে যেমনি সারা বিশ্বের খোঁজ-খবর রাখা যায়, ঠিক তেমনি ঘরটাও হতে পারে কর্মস্থল। সেটা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং করে ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সেক্টরে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। তারপরও রয়ে গেছে কিছু সমস্যা। এগুলোর সমাধান করা গেলে ফ্রিল্যান্সিং সেক্টর হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় রেমিট্যান্স আয়ের খাত। সৃষ্টি হতে পারে লাখ লাখ নতুন কর্মসংস্থান, যা দেশের বেকারত্বে সমস্যা সমাধানে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য ব্যক্তি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি উদ্যোগে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন, এমনটাই মনে করছেন এ সেক্টরের ফ্রিল্যান্সার ও বিশিষ্টজনরা।

বাংলাদেশের এ আন্তর্জাতিক অনলাইন প্লাটফর্মে কর্মরত এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দিতে পারবে না। তবে ঘরে ঘরে ফ্রিল্যান্সার তৈরি করতে পারবে। ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় খাত। আমরা যদি এটাকে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে দেশের অর্থনীতিকে খুব ভালো অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব। এক্ষেত্রে শুধু ব্যক্তিগত উপার্জন দিয়ে খুব বড় কোনো কিছু করা যাবে না, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ। তবে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ফ্রিল্যান্সিং কাজ করতে তেমন কিছু জানার দরকার নেই। ২ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কম্পিউটারে ইন্টারনেট নিয়ে বসলেই ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে, ঝরঝর করে টাকা আসতে শুরু করবে। এটা আমাদের একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে বেশ বড় একটি জব মার্কেট ফ্রিল্যান্সিং। বাংলাদেশের বেকারত্ব দূরীকরণে এটা একটি ভালো ভূমিকা পালন করতে পারে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে, এমনকি যেখানে ইন্টারনেট আছে, সেরকম উপজেলা পর্যায়েও অনেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিং করছে; কিন্তু সেটা পুরোপুরি কাঠামোগতভাবে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সারদের আরো প্রশিক্ষণ ও যথার্থ তত্ত্বাবধায়ন করা দরকার; যাতে ফ্রিল্যান্সাররা মার্কেটপ্লেসসহ বিভিন্ন জায়গায় ভালোভাবে কাজ করতে পারে।

সবাই ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে একটা স্বপ্ন নিয়ে আসে। তাদের স্বপ্নটা তখনই সত্যি হবে, যখন তারা সঠিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা উৎস থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করবে। ভুল জায়গায় গেলে, তাদের স্বপ্নটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। তাই যাদের কাছ থেকে অথবা যেখান থেকে প্রশিক্ষণ নেবে, তাদের সম্পর্কে ভালো মতো খোঁজখবর নিতে হবে। এক্ষেত্রে তারা যদি এ সেক্টরের মানুষ হয় বা এ সেক্টর নিয়ে কাজ করে, তাহলে গুগলে সার্চ করলে তাদের সম্পর্কে কিছু না কিছু তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়াও যারা দীর্ঘদিন এ সেক্টরে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে তাদের পরামর্শ নিতে পারে। আমরা শুধু ফ্রিল্যান্সারদের সফলতাই দেখি, কিন্তু এর পেছনে ব্যয়কৃত অক্লান্ত পরিশ্রম, সময় ও মেধা দেখি না।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। ঢাকাতে ইন্টারনেট আগের চেয়ে কিছুটা সহজলভ্য ও গতিসম্পন্ন হলেও ঢাকার বাইরে ইন্টারনেট সেবার মান আরো বাড়ানো প্রয়োজন। অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে এখনো ইন্টারনেটের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া বিভাগীয় বা জেলা শহরে খুব বেশি আইএসপি প্রোভাইডার না থাকায়, দামের ব্যাপক তারতম্য দেখা যায়। কোনো কোনো জায়গায় এক এমবিপিএস গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগের জন্য মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা করেও রাখা হয়। ফলে কারো যদি বেশি গতির ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে তাদের অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। এছাড়া যেসব এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ নেই, সেসব জায়াগায় টেলিকম অপারেটরের ইন্টারনেট ব্যবহার করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকে না, যেটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং কম গতিসম্পন্ন, যা দিয়ে প্রফেশনাল কাজ করা খুবই কষ্টকর। সরকারের উচিত টেলিটকের থ্রিজি নেটওয়ার্ক সর্বত্র বিস্তৃত এবং সহজলভ্য করা এবং লোকাল পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা।

[লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার]

back to top