সাদেকুর রহমান
(শেষাংশ)
পত্নীতলা বধ্যভূমিতে ৩৬ জন নিরীহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাদের মধ্যে এলাকার পরিচিত ছিলেন ১৮ জন। তারা হলেন- বুধু হেম্ব্রম, সুকল হেম্ব্রম, সরকার মুরমু, বর্নাট সরেন, বুধু রায টুডু, চরকা টুডু, টুডু মুরমু, মাথলা মুরমু, শুক্কুল মুরমুম, মুশাই মুরমু, রবিদাশ বর্মন, যাদু মুরমু, ভুতু সরেন, মুন্সি টুডু, জোনা টুডু, মাঝি সরেন, বয়লা হাসদাা ও কারা সরেন। অপর ১৮ জন শহীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এসব অজ্ঞাতনামাদের মধ্যে ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বাদের বাড়িতে আশ্রিত কয়জন মুক্তিযোদ্ধা ও দূর গ্রাম থেকে ধান কাটতে আসা কয়েকজন হতভাগ্য ক্ষেত মজুরও ছিলেন।
বক্তাবলী গণহত্যা : স্বাধীনতার লাভের মাত্র ১৭ দিন আগে ঘটে বক্তাবলীর হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ড। ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা নারকীয় হত্যাতান্ডব চালায় ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চল বক্তাবলী পরগণার ২২টি গ্রামে। বর্বরোচিত ওই হামলায় হানাদার বাহিনীর হাতে ১৩৯ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী কিংবা শিশু। রাজাকার, আল-বদররা জ্বালিয়ে দিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। স্বাধীনতাযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে এত মানুষ হত্যার ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। শুধু গণহত্যা নয়, তারা গানপাউডার দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয় গ্রামের বাড়িঘর, জ্বালিয়ে দেয় ফসলি জমি, গোলার ফসল, গবাদিপশু।
এখানকার গণহত্যায় যারা শহিদ হয়েছেন তাদের অনেকেই বক্তাবলীর স্থানীয় ছিলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন বক্তাবলীর বাইরের এলাকার। এ ছাড়া গণহত্যার শিকার অনেক শহীদের লাশ নদীতে ভেসেও গেছে। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন- ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, জেলেসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এ শহীদের তালিকায় আছেন- ফজিলাতুন্নেছা নামে স্থানীয় একজন নারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদুল্লাহ, মুনীরুজ্জামান ও তার স্কুলপড়ুয়া ভাই শাহ আলমসহ আরও অনেকে।
বক্তাবলীর লক্ষ্মীনগর গ্রামের পূর্বপাড়ার গণকরবটি এখনো একাত্তরের সেই গণহত্যার সাক্ষী বহন করছে। ২০২১ সালে এখানে শহীদদের একটি নামফলক বসানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ গণকবরে ৮০ জন শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছে। এছাড়া এ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে আছে আরও অনেক শহীদের কবর।
আলীরটেক, বক্তাবলী ও বালুচর- এ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে বক্তাবলী পরগণা, যা ‘বাইশময়াল’ নামে পরিচিত। এর পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা, পশ্চিমে ধলেশ্বরী আর দক্ষিণে মেঘনা নদী। অন্যদিকে আছে এ সবের শাখা নদী। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ এলাকা ছিল মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধারা বক্তাবলীর লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীরটেকের মুক্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। এখানে ঘাঁটি বানিয়ে চলে প্রশিক্ষণের কাজ। এখান থেকেই বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় অভিযান। গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রাজাকাররা এ খবর পৌঁছে দেয় হানাদার বাহিনীর কাছে।
১৯৭১ সালের এই দিনে ভোরের দিকে হঠাৎ হানাদার বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। চার ঘন্টা চলে সম্মুখযুদ্ধ। উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ চলাকালে মুন্সীগঞ্জ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বাড়ে। পরে তারা একত্রে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা একটানা যুদ্ধ চালান। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পাঁচজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা তখন নিহত ও আহতদের নিয়ে ফিরে যায় সাময়িক সময়ের জন্য।
কিছু সময় পর পাকিস্তানি সেনারা আবারও আসে বেশি সেনা ও ভারী অস্ত্র নিয়ে। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সামনে দাঁড়াতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হাঁটেন। গ্রামের মানুষও ছুটে পালাতে শুরু করেন যে যেদিক পেরেছেন। কিন্তু এর পরও বাঁচতে পারেননি ১৩৯ শহীদ। পাকিস্তানি সেনারা তাদের ধরে এনে জড়ো করে বক্তাবলীর লক্ষ্মীনগর গ্রামের পূর্বপাড়া সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার তীরে সবাইকে হাত-পা বেঁধে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করে। ডিক্রিরচর নামক স্থানেও একসঙ্গে ৪০ জনকে হাত-পা বেঁধে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গ্রামের অনেক স্থানে যারা বাঁচার জন্য লুকিয়ে ছিলেন, তাদেরও মারা হয় আগুনে পুড়িয়ে। পুরো এলাকাটি যেন পরিণত হয় একটি মৃত্যু নগরীতে।
এ হত্যাযজ্ঞ শেষে বিকেলে ফিরে যায় পাকিস্তানি সেনারা। সন্ধ্যায় গ্রামে ফিরতে শুরু করেন গ্রামবাসী। এরপর সবাই খুঁজতে থাকেন সবার মা-বাবা, ভাই-বোন বা আত্মীয়স্বজনকে। নদীর তীর থেকে শহীদদের লাশ তুলে এনে বা আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশের অংশবিশেষ এনে গ্রামবাসী লক্ষ্মীনগরে গণকবর দেন। এ ছাড়া অনেকেই তার আত্মীয়স্বজনের লাশ নিজেরাই নিজেদের আঙিনায় কবর দিয়েছেন।
শহীদদের স্মরণে ২০০৫ সালে বক্তাবলীর কানাইনগরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। যদিও এ স্তম্ভে শহীদদের নামের তালিকা বা গণহত্যার কোনো বর্ণনা নেই।
নওগাঁর হালিমনগর গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের হালিমনগর গ্রামে যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল তাতে ২০ জন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষসহ অন্তত ৫০ জন শহীদ হন। ২০ জন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মহান আত্মত্যাগীর পরিচয় উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। কারণ তারা ছিল ভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটতে আসা মানুষ এবং সাঁওতাল পল্লীতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিকামী বাঙালি।
সাঁওতাল পল্লীবাসীদের সম্পৃক্ত করে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যারা প্রতি বছর দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন।
[লেখক : সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন
সাদেকুর রহমান
রোববার, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
(শেষাংশ)
পত্নীতলা বধ্যভূমিতে ৩৬ জন নিরীহ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। তাদের মধ্যে এলাকার পরিচিত ছিলেন ১৮ জন। তারা হলেন- বুধু হেম্ব্রম, সুকল হেম্ব্রম, সরকার মুরমু, বর্নাট সরেন, বুধু রায টুডু, চরকা টুডু, টুডু মুরমু, মাথলা মুরমু, শুক্কুল মুরমুম, মুশাই মুরমু, রবিদাশ বর্মন, যাদু মুরমু, ভুতু সরেন, মুন্সি টুডু, জোনা টুডু, মাঝি সরেন, বয়লা হাসদাা ও কারা সরেন। অপর ১৮ জন শহীদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এসব অজ্ঞাতনামাদের মধ্যে ক্ষুদ্র জাতিস্বত্ত্বাদের বাড়িতে আশ্রিত কয়জন মুক্তিযোদ্ধা ও দূর গ্রাম থেকে ধান কাটতে আসা কয়েকজন হতভাগ্য ক্ষেত মজুরও ছিলেন।
বক্তাবলী গণহত্যা : স্বাধীনতার লাভের মাত্র ১৭ দিন আগে ঘটে বক্তাবলীর হৃদয়বিদারক হত্যাকান্ড। ১৯৭১ সালের ২৯ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা নারকীয় হত্যাতান্ডব চালায় ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চল বক্তাবলী পরগণার ২২টি গ্রামে। বর্বরোচিত ওই হামলায় হানাদার বাহিনীর হাতে ১৩৯ নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী কিংবা শিশু। রাজাকার, আল-বদররা জ্বালিয়ে দিয়েছিল গ্রামের পর গ্রাম। স্বাধীনতাযুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে এত মানুষ হত্যার ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। শুধু গণহত্যা নয়, তারা গানপাউডার দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয় গ্রামের বাড়িঘর, জ্বালিয়ে দেয় ফসলি জমি, গোলার ফসল, গবাদিপশু।
এখানকার গণহত্যায় যারা শহিদ হয়েছেন তাদের অনেকেই বক্তাবলীর স্থানীয় ছিলেন। আবার কেউ কেউ ছিলেন বক্তাবলীর বাইরের এলাকার। এ ছাড়া গণহত্যার শিকার অনেক শহীদের লাশ নদীতে ভেসেও গেছে। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন- ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, জেলেসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এ শহীদের তালিকায় আছেন- ফজিলাতুন্নেছা নামে স্থানীয় একজন নারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদুল্লাহ, মুনীরুজ্জামান ও তার স্কুলপড়ুয়া ভাই শাহ আলমসহ আরও অনেকে।
বক্তাবলীর লক্ষ্মীনগর গ্রামের পূর্বপাড়ার গণকরবটি এখনো একাত্তরের সেই গণহত্যার সাক্ষী বহন করছে। ২০২১ সালে এখানে শহীদদের একটি নামফলক বসানো হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এ গণকবরে ৮০ জন শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছে। এছাড়া এ এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে আছে আরও অনেক শহীদের কবর।
আলীরটেক, বক্তাবলী ও বালুচর- এ তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে বক্তাবলী পরগণা, যা ‘বাইশময়াল’ নামে পরিচিত। এর পূর্বদিকে বুড়িগঙ্গা, পশ্চিমে ধলেশ্বরী আর দক্ষিণে মেঘনা নদী। অন্যদিকে আছে এ সবের শাখা নদী। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ এলাকা ছিল মুক্তাঞ্চল হিসেবে পরিচিত। মুক্তিযোদ্ধারা বক্তাবলীর লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীরটেকের মুক্তারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। এখানে ঘাঁটি বানিয়ে চলে প্রশিক্ষণের কাজ। এখান থেকেই বিভিন্ন স্থানে চালানো হয় অভিযান। গ্রামবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। রাজাকাররা এ খবর পৌঁছে দেয় হানাদার বাহিনীর কাছে।
১৯৭১ সালের এই দিনে ভোরের দিকে হঠাৎ হানাদার বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। চার ঘন্টা চলে সম্মুখযুদ্ধ। উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখযুদ্ধ চলাকালে মুন্সীগঞ্জ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে সেখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বাড়ে। পরে তারা একত্রে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা একটানা যুদ্ধ চালান। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম ও মুক্তিযোদ্ধা মাহফুজুর রহমান এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের পাঁচজন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা তখন নিহত ও আহতদের নিয়ে ফিরে যায় সাময়িক সময়ের জন্য।
কিছু সময় পর পাকিস্তানি সেনারা আবারও আসে বেশি সেনা ও ভারী অস্ত্র নিয়ে। তখন পাকিস্তানি সেনাদের সামনে দাঁড়াতে না পেরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হাঁটেন। গ্রামের মানুষও ছুটে পালাতে শুরু করেন যে যেদিক পেরেছেন। কিন্তু এর পরও বাঁচতে পারেননি ১৩৯ শহীদ। পাকিস্তানি সেনারা তাদের ধরে এনে জড়ো করে বক্তাবলীর লক্ষ্মীনগর গ্রামের পূর্বপাড়া সংলগ্ন বুড়িগঙ্গার তীরে সবাইকে হাত-পা বেঁধে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করে। ডিক্রিরচর নামক স্থানেও একসঙ্গে ৪০ জনকে হাত-পা বেঁধে এক লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া গ্রামের অনেক স্থানে যারা বাঁচার জন্য লুকিয়ে ছিলেন, তাদেরও মারা হয় আগুনে পুড়িয়ে। পুরো এলাকাটি যেন পরিণত হয় একটি মৃত্যু নগরীতে।
এ হত্যাযজ্ঞ শেষে বিকেলে ফিরে যায় পাকিস্তানি সেনারা। সন্ধ্যায় গ্রামে ফিরতে শুরু করেন গ্রামবাসী। এরপর সবাই খুঁজতে থাকেন সবার মা-বাবা, ভাই-বোন বা আত্মীয়স্বজনকে। নদীর তীর থেকে শহীদদের লাশ তুলে এনে বা আগুনে পুড়ে যাওয়া লাশের অংশবিশেষ এনে গ্রামবাসী লক্ষ্মীনগরে গণকবর দেন। এ ছাড়া অনেকেই তার আত্মীয়স্বজনের লাশ নিজেরাই নিজেদের আঙিনায় কবর দিয়েছেন।
শহীদদের স্মরণে ২০০৫ সালে বক্তাবলীর কানাইনগরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়েছে। যদিও এ স্তম্ভে শহীদদের নামের তালিকা বা গণহত্যার কোনো বর্ণনা নেই।
নওগাঁর হালিমনগর গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার নির্মইল ইউনিয়নের হালিমনগর গ্রামে যে গণহত্যা চালানো হয়েছিল তাতে ২০ জন ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষসহ অন্তত ৫০ জন শহীদ হন। ২০ জন ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মহান আত্মত্যাগীর পরিচয় উদ্ধার করা গেলেও বাকিদের পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি। কারণ তারা ছিল ভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটতে আসা মানুষ এবং সাঁওতাল পল্লীতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিকামী বাঙালি।
সাঁওতাল পল্লীবাসীদের সম্পৃক্ত করে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে, যারা প্রতি বছর দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করেন।
[লেখক : সমন্বয়ক ও গবেষক, ‘প্রবাসে প্রিয়জন’ অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ টেলিভিশন