alt

উপ-সম্পাদকীয়

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র একে অন্যের পরিপূরক

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

মানবাধিকার একটি ধারণা যা উপলব্ধির বিষয়। যুগে যুগে মানবাধিকারের অমোঘ বাণী প্রচার ও চর্চার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন চুক্তি, দলিল, সংবিধান, আইন ও বিভিন্ন পারস্পরিক সমঝোতা স্মারকে মানবাধিকারকে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণ মানবিক গুণাবলি সম্বলিত সব ব্যক্তির মর্যাদা সম্পন্ন স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার যে অধিকার তাই মানবাধিকার। এই অধিকার সব ব্যক্তির আচরণ এবং সামাজিক ব্যবস্থার ওপরে নৈতিক দায়িত্ব প্রদান করে। এ অধিকার সার্বজনীন, হস্তান্তর অযোগ্য ও অবিভেদ্য। মানবাধিকার সব মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং স্বাধীন ও মর্যাদা সম্পন্ন জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা মানুষ অন্যের নিকট থেকে, রাষ্ট্রের নিকট থেকে ন্যায্যভাবে দাবি করতে পারে, তাকে অধিকার বলা হয়। অধিকার বিভিন্ন রকমের। যেমন : ব্যক্তিগত অধিকার, নাগরিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার ইত্যাদি। এসব অধিকার আইনের ভাষ্য অনুযায়ী বহুধা বিস্তৃত। কোথাও এই অধিকার এক প্রকার পাওনা। যেমন: চলাফেরা করার অধিকার। কোথাও এটি স্বাধীনতা। যেমন কবিতা লেখা কিংবা গান গাওয়ার অধিকার/স্বাধীনতা। কোথাও এ অধিকার ক্ষমতা; আবার কোথাওবা বিশেষ নিরাপত্তাকেও অধিকার বলা হয়। মানুষের যেমন অধিকার আছে তেমনি তার কর্তব্যও আছে। দেশের সংবিধান ও আইন, এই অধিকার ও কর্তব্যের সীমা দেয় এবং সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। দেওয়ানি আইন মানুষের অধিকার ও দায়িত্বের পরিধির বিধান দেয় এবং পরিধি অতিক্রান্ত হলে তার প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে। মানুষ হবার কারণে বা জন্মসূত্রে প্রতিটি মানুষের মর্যাদা ও অধিকার সমান। মানবাধিকার হলো এসব অধিকার ও মর্যাদার মূর্তিরূপ। তাই সহজে মানব অধিকার হলো মানুষের অধিকার। আর অধিকার হলো প্রতিটি মানুষের ন্যায্য পাওনা এবং তার বৈধ ক্ষমতার উপভোগ। মানুষ হবার কারণে প্রতিটি ব্যক্তির কিছু সহজাত বা স্বভাবজাত অধিকার রয়েছে, যা তার প্রাকৃতিক অধিকার। যেমন : জীবনধারণের অধিকার, কথা বলার অধিকার ইত্যাদি। কিছু কিছু অধিকার মানুষ নিজেই সার্বজনীনভাবে চিহ্নিত করেছে; এ অধিকারগুলো মানুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, যা তার আইনগত অধিকার। যেমন : ভোটদানের অধিকার, সংগঠন করার অধিকার ইত্যাদি। মানুষের এই প্রাকৃতিক অধিকার ও আইনগত অধিকারের সমষ্টিই হচ্ছে মানবাধিকার।

‘মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সঙ্গে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদিও অধিকার বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝানো হয় এখন পর্যন্ত তা একটি দর্শনগত বিতর্কের বিষয়’। বিশ্বের সর্বত্র কমবেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তার মাত্রাভেদ রয়েছে। যেখানে পূর্ণ গণতন্ত্র এবং পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা হয় সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা অনেক কম। কিছু ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক চাপমুক্ত মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয়তার কারণে মানবাধিকার রক্ষা পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান বিরাজমান থাকার পরেও শক্তিমান কর্তৃক দুর্বলের অধিকার খর্বিত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় বেশি। আবার কখনও কখনও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর চাপের মুখে সামগ্রিকভাবে অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলো তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাষ্ট্র যখন কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখন সে চাপ স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের জনগণের ওপর পতিত হয়। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের হিড়িক চলছে। সংখ্যাগুরুদের দ্বারা সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

মানবাধিকার সনদে লিপিবদ্ধ ৩০টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ১ম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘যেহেতু বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সব মানুষ জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত’। বিশেষত ধনবানদের সঙ্গে গরিবদের যোজন যোজন পার্থক্য করা হয়েছে। ক্ষমতাশালীরা দুর্বলদের শুধু পোষণ করেই যাচ্ছে। সম্পদ হরণ থেকে শুরু করে নানা ঝামেলা চলছেই। সর্বত্র শুধু দ্বন্দ আর বিশৃঙ্খলা। ভ্রাতৃসুলভ আচরণের উপস্থিতি খুব সামান্যই। সনদের ২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যে কোন ধরনের পার্থক্য যথা-জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে কোন পার্থক্য করা চলবে না’। অথচ সোনার বাংলাদেশের কিছু মানুষ রাজনৈতিক হানাহানিতে লিপ্ত। গোত্র বা বংশ গৌরব নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি না থাকলেও পরিস্থিতি একেবারে শান্ত নয়। সনদের ৩য় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে’। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কারণে নারীর পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। মানবাধিকার সনদের ৭ম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘আইনের কাছে সবারই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সবারই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে’। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা কী? সর্বত্র আইনের চোখে সবাই সমান-এ কথা বলা হলেও আইনের প্রয়োগ সেভাবে হচ্ছে না। সনদের ৯ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কাউকে খেয়াল-খুশিমতো গ্রেপ্তার, আটক অথবা নির্বাসন দন্ডে দন্ডিত করা যাবে না’। এ ধারাটি কতটা রক্ষা পাচ্ছে তা ভাবার বিষয়। অনভিজ্ঞতার কারণে সন্দেহের বশে মানুষকে গ্রেপ্তার করে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন আটক রাখা হচ্ছে। আবার কখনও কখনও আটক করেও তা স্বীকার করা হয় না। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত মার্ডারের ঘটনায় কে বা কারা জড়িত আছে তা জনগণ জানতে পেরেছে। ঝালকাঠির লিমনকে বিনা অপরাধে গুলি করে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মানুষ মারা হচ্ছে। মানবাধিকার সনদের ১৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে’। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের বহু মানুষ প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় পেয়েছিল। বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চলছে। মানবাধিকার সনদের ১৯তম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতপ্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোনো উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশের মানুষ যে গণতন্ত্রকামী, এ বিষয়ে সংশয় থাকার কোন কারণ নেই। এ দেশের গণতন্ত্রপিয়াসী মানুষের অধিকারের প্রতি পাকিস্তানি শাসকেরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে কমপক্ষে তিনটি সুস্পষ্ট সূচক এই গণতন্ত্র আকাক্সক্ষার প্রমাণ বহন করে। এগুলো হলো অসংখ্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সময়ে গণ-আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ। এই আকাক্সক্ষা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট অব্যাহত রয়েছে বলেই আমরা একমত হতে পারি। গণতন্ত্র-সংক্রান্ত দুই ধরনের ধারণার সমন্বয়সাধনের চেষ্টা একেবারে হয়নি তা নয়, বরং অনেকের ধারণা এই দুই ধারণার সমন্বয়েই আমরা কতগুলো নির্ণায়ক তৈরি করতে পারি, যা একটি দেশের গণতন্ত্রের গুণাগুণ বিচারে সাহায্য করতে পারে। এই সমন্বয়ী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গণতন্ত্রের তিনটি উপাদানকে মৌলিক বা বুনিয়াদি বলে বিবেচনা করা যায়। এগুলো হলো ১. সর্বজনীন ভোটাধিকার; ২. আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের প্রধানের পদের জন্য নিয়মিত, অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক, বহুদলীয় নির্বাচন; ৩. মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতাসহ সব ধরনের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি সম্মান এবং আইনের শাসন, যার আওতায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও নাগরিক আইনিভাবে প্রকৃত অর্থেই সমানভাবে বিবেচ্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি পক্ষপাত সীমিত সংজ্ঞার প্রতি থাকলেও, এটা জোর দিয়ে বলা আবশ্যক যে এই তিনটি উপাদান পরস্পর সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ স্বতন্ত্রভাবে এর একটি উপাদানের সাফল্য গণতন্ত্রের আংশিক সাফল্যের পরিচায়ক নয়। গণতন্ত্রের জন্য এই তিনটি উপাদানকে সমভাবে কার্যকর থাকতে হবে এবং সাফল্য লাভ করতে হবে। তাছাড়া এই উপাদানগুলোকে চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে বিবেচনা করা যাবে না; বিবেচনা করতে হবে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে।

গণতন্ত্রের ‘তৃতীয় ঢেউ’ নিয়ে যে ধরনের উৎসাহ, আগ্রহ ও আশাবাদ দেখা দিয়েছিল এক দশকের মধ্যে তাতে ভাটার টান লাগে। ২০০০ সালের কিছু আগে থেকেই গবেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন যে প্রত্যাশা ও অর্জনের মধ্যে ফারাক তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হতে থাকলে এবং বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ লক্ষ করে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলতে শুরু করেন যে গণতন্ত্র সংহত হওয়ার বদলে অনেক দেশ গণতন্ত্র গুটিয়ে ফেলছে বা পশ্চাদমুখী হয়ে পড়ছে। প্রকৃত গণতন্ত্র, বিপরীতক্রমে, গণতন্ত্রের যে মর্মবস্তু জনগণের ক্ষমতায়ন, যাতে করে তারা সমাজের সুরক্ষিত কাঠামোর স্বার্থ এবং সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তাই অর্জন করতে চায়। প্রকৃত গণতন্ত্র চায় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে, আইনের শাসন পালন করতে এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে।

আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। সংবিধানে নাগরিকদের জন্য গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তাসহ মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র কি সে দায়িত্ব যথাযথাভাবে পালন করছে অথবা সে দায়িত্ব পালনের সহায়ক পরিবেশ কি সৃষ্টি হয়েছে? আগামী দিনের মানবতা ও গণতন্ত্র সুসংহত হবে এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করবে আইনের শাসন সাধারণ জনগণ সেটাই সরকার ও জাতির কাছে প্রত্যাশা করেন।

[লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক]

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

নিয়ন্ত্রণহীন নেটজগৎ ও ফেইসবুক : সমাজে বিভ্রান্তির ডিজিটাল উৎপত্তি

বস্তিবাসী নারী : অদৃশ্য শক্তির আখ্যান

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল : বিতর্ক, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন

সংস্কারের ভবিষ্যত কী?

বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় চায় না তো কেউ, প্রকৃতির নিয়মে আসে কিন্তু তাই!

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

বদলাচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে অর্জনের গল্প

বাজেট কি গণমুখী হবে

টেকসই কৃষিতে মৌমাছি পালন

জনগণের বিশ্বাস ভেঙে নির্মিত নিষ্ক্রিয়তার সাম্রাজ্য

সাইবার ঝুঁকির চক্রে বাংলাদেশ

ছবি

কীভাবে পাকিস্তান ভারতের রাফায়েলকে পরাস্ত করল

ছবি

নজরুলের দ্রোহ চেতনার স্বরূপ সন্ধানে

পিতৃতন্ত্রের মনস্তত্ত্ব ও নারীর গ-িবদ্ধতা

চিরতন ও কালীচরণ : শতবর্ষ আগে যারা আইনের মঞ্চে উঠেছিলেন

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মানবাধিকার ও গণতন্ত্র একে অন্যের পরিপূরক

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০

মানবাধিকার একটি ধারণা যা উপলব্ধির বিষয়। যুগে যুগে মানবাধিকারের অমোঘ বাণী প্রচার ও চর্চার ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন চুক্তি, দলিল, সংবিধান, আইন ও বিভিন্ন পারস্পরিক সমঝোতা স্মারকে মানবাধিকারকে স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সাধারণ মানবিক গুণাবলি সম্বলিত সব ব্যক্তির মর্যাদা সম্পন্ন স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করার যে অধিকার তাই মানবাধিকার। এই অধিকার সব ব্যক্তির আচরণ এবং সামাজিক ব্যবস্থার ওপরে নৈতিক দায়িত্ব প্রদান করে। এ অধিকার সার্বজনীন, হস্তান্তর অযোগ্য ও অবিভেদ্য। মানবাধিকার সব মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা এবং স্বাধীন ও মর্যাদা সম্পন্ন জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়, যা মানুষ অন্যের নিকট থেকে, রাষ্ট্রের নিকট থেকে ন্যায্যভাবে দাবি করতে পারে, তাকে অধিকার বলা হয়। অধিকার বিভিন্ন রকমের। যেমন : ব্যক্তিগত অধিকার, নাগরিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার ইত্যাদি। এসব অধিকার আইনের ভাষ্য অনুযায়ী বহুধা বিস্তৃত। কোথাও এই অধিকার এক প্রকার পাওনা। যেমন: চলাফেরা করার অধিকার। কোথাও এটি স্বাধীনতা। যেমন কবিতা লেখা কিংবা গান গাওয়ার অধিকার/স্বাধীনতা। কোথাও এ অধিকার ক্ষমতা; আবার কোথাওবা বিশেষ নিরাপত্তাকেও অধিকার বলা হয়। মানুষের যেমন অধিকার আছে তেমনি তার কর্তব্যও আছে। দেশের সংবিধান ও আইন, এই অধিকার ও কর্তব্যের সীমা দেয় এবং সংজ্ঞা নির্ধারণ করে। দেওয়ানি আইন মানুষের অধিকার ও দায়িত্বের পরিধির বিধান দেয় এবং পরিধি অতিক্রান্ত হলে তার প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে। মানুষ হবার কারণে বা জন্মসূত্রে প্রতিটি মানুষের মর্যাদা ও অধিকার সমান। মানবাধিকার হলো এসব অধিকার ও মর্যাদার মূর্তিরূপ। তাই সহজে মানব অধিকার হলো মানুষের অধিকার। আর অধিকার হলো প্রতিটি মানুষের ন্যায্য পাওনা এবং তার বৈধ ক্ষমতার উপভোগ। মানুষ হবার কারণে প্রতিটি ব্যক্তির কিছু সহজাত বা স্বভাবজাত অধিকার রয়েছে, যা তার প্রাকৃতিক অধিকার। যেমন : জীবনধারণের অধিকার, কথা বলার অধিকার ইত্যাদি। কিছু কিছু অধিকার মানুষ নিজেই সার্বজনীনভাবে চিহ্নিত করেছে; এ অধিকারগুলো মানুষ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, যা তার আইনগত অধিকার। যেমন : ভোটদানের অধিকার, সংগঠন করার অধিকার ইত্যাদি। মানুষের এই প্রাকৃতিক অধিকার ও আইনগত অধিকারের সমষ্টিই হচ্ছে মানবাধিকার।

‘মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এক ধরনের অধিকার যেটা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। তবে এ চর্চা অন্যের ক্ষতিসাধন ও প্রশান্তি বিনষ্টের কারণ হতে পারবে না। মানবাধিকার সব জায়গায় এবং সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। এ অধিকার একই সঙ্গে সহজাত ও আইনগত অধিকার। স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যতম দায়িত্ব হলো এসব অধিকার রক্ষণাবেক্ষণ করা। যদিও অধিকার বলতে প্রকৃতপক্ষে কি বোঝানো হয় এখন পর্যন্ত তা একটি দর্শনগত বিতর্কের বিষয়’। বিশ্বের সর্বত্র কমবেশি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তার মাত্রাভেদ রয়েছে। যেখানে পূর্ণ গণতন্ত্র এবং পরমতসহিষ্ণুতার চর্চা হয় সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাত্রা অনেক কম। কিছু ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক চাপমুক্ত মানবাধিকার কমিশনের সক্রিয়তার কারণে মানবাধিকার রক্ষা পাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষার স্লোগান বিরাজমান থাকার পরেও শক্তিমান কর্তৃক দুর্বলের অধিকার খর্বিত হচ্ছে। উন্নত দেশগুলোর চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় বেশি। আবার কখনও কখনও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর চাপের মুখে সামগ্রিকভাবে অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলো তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাষ্ট্র যখন কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখন সে চাপ স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রের জনগণের ওপর পতিত হয়। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় মানবাধিকার লঙ্ঘনের হিড়িক চলছে। সংখ্যাগুরুদের দ্বারা সংখ্যালঘুরা প্রতিনিয়ত অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

মানবাধিকার সনদে লিপিবদ্ধ ৩০টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ১ম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘যেহেতু বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সমমর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সব মানুষ জন্মগ্রহণ করে। সুতরাং ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত’। বিশেষত ধনবানদের সঙ্গে গরিবদের যোজন যোজন পার্থক্য করা হয়েছে। ক্ষমতাশালীরা দুর্বলদের শুধু পোষণ করেই যাচ্ছে। সম্পদ হরণ থেকে শুরু করে নানা ঝামেলা চলছেই। সর্বত্র শুধু দ্বন্দ আর বিশৃঙ্খলা। ভ্রাতৃসুলভ আচরণের উপস্থিতি খুব সামান্যই। সনদের ২নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘যে কোন ধরনের পার্থক্য যথা-জাতি, গোত্র, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ, জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি, সম্পত্তি, জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে কোন পার্থক্য করা চলবে না’। অথচ সোনার বাংলাদেশের কিছু মানুষ রাজনৈতিক হানাহানিতে লিপ্ত। গোত্র বা বংশ গৌরব নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি না থাকলেও পরিস্থিতি একেবারে শান্ত নয়। সনদের ৩য় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে’। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কারণে নারীর পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে। মানবাধিকার সনদের ৭ম অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘আইনের কাছে সবারই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সবারই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে’। আইনের শাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা কী? সর্বত্র আইনের চোখে সবাই সমান-এ কথা বলা হলেও আইনের প্রয়োগ সেভাবে হচ্ছে না। সনদের ৯ম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কাউকে খেয়াল-খুশিমতো গ্রেপ্তার, আটক অথবা নির্বাসন দন্ডে দন্ডিত করা যাবে না’। এ ধারাটি কতটা রক্ষা পাচ্ছে তা ভাবার বিষয়। অনভিজ্ঞতার কারণে সন্দেহের বশে মানুষকে গ্রেপ্তার করে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন আটক রাখা হচ্ছে। আবার কখনও কখনও আটক করেও তা স্বীকার করা হয় না। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত মার্ডারের ঘটনায় কে বা কারা জড়িত আছে তা জনগণ জানতে পেরেছে। ঝালকাঠির লিমনকে বিনা অপরাধে গুলি করে পঙ্গু করে ফেলা হয়েছে। বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ারের মাধ্যমে মানুষ মারা হচ্ছে। মানবাধিকার সনদের ১৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্যাতন এড়ানোর জন্য প্রত্যেকেরই আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভ করার অধিকার রয়েছে’। এ ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশের বহু মানুষ প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় পেয়েছিল। বর্তমানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চলছে। মানবাধিকার সনদের ১৯তম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতপ্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোনো উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশের মানুষ যে গণতন্ত্রকামী, এ বিষয়ে সংশয় থাকার কোন কারণ নেই। এ দেশের গণতন্ত্রপিয়াসী মানুষের অধিকারের প্রতি পাকিস্তানি শাসকেরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে কমপক্ষে তিনটি সুস্পষ্ট সূচক এই গণতন্ত্র আকাক্সক্ষার প্রমাণ বহন করে। এগুলো হলো অসংখ্য রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সময়ে গণ-আন্দোলন এবং জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যায় অংশগ্রহণ। এই আকাক্সক্ষা সত্ত্বেও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংকট অব্যাহত রয়েছে বলেই আমরা একমত হতে পারি। গণতন্ত্র-সংক্রান্ত দুই ধরনের ধারণার সমন্বয়সাধনের চেষ্টা একেবারে হয়নি তা নয়, বরং অনেকের ধারণা এই দুই ধারণার সমন্বয়েই আমরা কতগুলো নির্ণায়ক তৈরি করতে পারি, যা একটি দেশের গণতন্ত্রের গুণাগুণ বিচারে সাহায্য করতে পারে। এই সমন্বয়ী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গণতন্ত্রের তিনটি উপাদানকে মৌলিক বা বুনিয়াদি বলে বিবেচনা করা যায়। এগুলো হলো ১. সর্বজনীন ভোটাধিকার; ২. আইনসভা ও নির্বাহী বিভাগের প্রধানের পদের জন্য নিয়মিত, অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক, বহুদলীয় নির্বাচন; ৩. মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতাসহ সব ধরনের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রতি সম্মান এবং আইনের শাসন, যার আওতায় রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ও নাগরিক আইনিভাবে প্রকৃত অর্থেই সমানভাবে বিবেচ্য। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি পক্ষপাত সীমিত সংজ্ঞার প্রতি থাকলেও, এটা জোর দিয়ে বলা আবশ্যক যে এই তিনটি উপাদান পরস্পর সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ স্বতন্ত্রভাবে এর একটি উপাদানের সাফল্য গণতন্ত্রের আংশিক সাফল্যের পরিচায়ক নয়। গণতন্ত্রের জন্য এই তিনটি উপাদানকে সমভাবে কার্যকর থাকতে হবে এবং সাফল্য লাভ করতে হবে। তাছাড়া এই উপাদানগুলোকে চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে বিবেচনা করা যাবে না; বিবেচনা করতে হবে গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে।

গণতন্ত্রের ‘তৃতীয় ঢেউ’ নিয়ে যে ধরনের উৎসাহ, আগ্রহ ও আশাবাদ দেখা দিয়েছিল এক দশকের মধ্যে তাতে ভাটার টান লাগে। ২০০০ সালের কিছু আগে থেকেই গবেষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন যে প্রত্যাশা ও অর্জনের মধ্যে ফারাক তৈরি হচ্ছে। নতুন নতুন গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হতে থাকলে এবং বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ লক্ষ করে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলতে শুরু করেন যে গণতন্ত্র সংহত হওয়ার বদলে অনেক দেশ গণতন্ত্র গুটিয়ে ফেলছে বা পশ্চাদমুখী হয়ে পড়ছে। প্রকৃত গণতন্ত্র, বিপরীতক্রমে, গণতন্ত্রের যে মর্মবস্তু জনগণের ক্ষমতায়ন, যাতে করে তারা সমাজের সুরক্ষিত কাঠামোর স্বার্থ এবং সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে তাদের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তাই অর্জন করতে চায়। প্রকৃত গণতন্ত্র চায় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে, আইনের শাসন পালন করতে এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে।

আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হবে এবং সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। সংবিধানে নাগরিকদের জন্য গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চয়তাসহ মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র কি সে দায়িত্ব যথাযথাভাবে পালন করছে অথবা সে দায়িত্ব পালনের সহায়ক পরিবেশ কি সৃষ্টি হয়েছে? আগামী দিনের মানবতা ও গণতন্ত্র সুসংহত হবে এবং প্রতিষ্ঠা লাভ করবে আইনের শাসন সাধারণ জনগণ সেটাই সরকার ও জাতির কাছে প্রত্যাশা করেন।

[লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক]

back to top