আনোয়ারুল হক
বিরোধী দলবিহীন দুটি ভোট ও একটি নৈশ ভোটের ‘বিশাল জয়ে’ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে শেখ হাসিনা দিব্যি কর্তৃত্ববাদী পন্থায় ও এক ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে সরকার পরিচালনা করে আসছিলেন। আর পারিষদবর্গ ছিলেন স্তুতিতে মুখর।
একদিকে তাদের ছিলো জেদ ও দম্ভ, অন্যদিকে বিত্তশালী হয়ে ওঠার আলাদিনের চেরাগ। মানুষের মাঝেও ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছিল ‘উন্নয়নের’ চরম শিখরে পৌঁছার স্বার্থে এটাই বোধহয় ভবিতব্য। বিরোধী রাজনৈতিক দল ডান, বাম বা মধ্য পন্থার অনুসারী কেউই মাঝে-মধ্যে মাঠ গরম করা ছাড়া উন্মত্ত ক্ষমতাকে জুতসই পন্থায় চ্যালেঞ্জ করতে পারছিলো না। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং লুটেরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীন সংকট রাষ্ট্র ক্ষমতার কাঠামোকে ভেতরে ভেতরে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। তাই তো ৫ জুন তারিখে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন আপাত নিরীহ সভা-সমাবেশের মধ্যে সীমিত থাকলেও ১৪ জুলাই পতিত প্রধানমন্ত্রীর ‘রাজাকারের নাতি’ উক্তিতে বারুদে বিস্ফোরণ ঘটে এবং দেশ কাঁপানো ২২ দিনে ছাত্র-জনতার লড়াইয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে। পতিত প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পলায়ন করেন এবং গত ১৫ বছর যাবত কারণে অকারণে ঈর্ষা-বিদ্বেষ প্রকাশ করে যাকে কাল্পনিক প্রতিপক্ষ বানিয়েছিলেন তিনিই বাস্তবের প্রতিপক্ষ হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলেন এক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের আগে-পরে ছাত্র নেতাদের কথায় এবং ড. ইউনূসের কথায় মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। আর স্বপ্ন তো সিনেমার মতো নয় যে, সামনের পর্দাটা সরে গেলেই সিনেমা শুরু হয়ে গেল। আসলে মনোজগতে সৃষ্ট আবেগ থেকেই স্বপ্নের সৃষ্টি হয়। এবারের আন্দোলনে তারুন্যের জাগরন মানুষের মাঝে স্বপ্ন দেখার সেই আবেগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল আন্দোলন বিজয়ী হলে সমাজ থেকে বৈষম্য দুর্বল হবে আর সমতা শক্তিশালী হবে, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা যাবে, দেশে আবার ভোট হবে এবং পছন্দমতো ভোট দেয়া যাবে।
বহুত্ববাদের ওপর ভিত্তি করে নতুন পথ যাত্রায় দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ হবে। মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। নারী-পুরুষ, ভিন্ন-ভিন্ন ধর্মের মানুষ, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী সবাই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে সমঅধিকার ভোগ করবেন। বিরোধীদের, ভিন্নমতের মানুষদের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। আশা জেগেছিল দেশ ইনসাফের পথে অগ্রসর হবে।
গণঅভ্যুত্থানের ১০০ দিন পার হয়ে গেলেও স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ধীরগতির কাজে মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। মানুষের মাঝে হতাশা দানা বাঁধছে। যে রিকশাওয়ালা রিকশার উপর দাঁড়িয়ে সেদিন ছাত্রদের মিছিলকে স্যালুট দিয়েছিলেন বা যে দিনমজুর তার দৈনিক রোজ বাদ দিয়ে ছাত্রদের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে আজ তাদের মুখের সুরটা কিছুটা ভিন্ন। গার্মেন্টস শিল্পে ন্যায্য পারিশ্রমিক আর বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তো লেগেই আছে। ব্যাটারি চালিত রিক্সা শ্রমিকদের সমস্যার কারিগরী ও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনিক পন্থায় সমাধানের পথে না গিয়ে আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দেওয়ার অমানবিক পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো পতিত সরকার যেমন বিক্ষোভ দেখলেই বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র খুঁজে পেত, ঠিক তেমনি অন্তর্বর্তী সরকার ও নতুন ছাত্র নেতারা সবকিছুর মাঝেই আওয়ামী ষড়যন্ত্র খোঁজার চেষ্টা করেন। অবশ্য জুলাই অভ্যুথানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ছাত্ররাও তাদের প্রতি চিকিৎসা অবহেলা এবং সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কতৃক কোন খোঁজখবর না রাখার প্রতিবাদে এবং সুচিকিৎসার দাবিতে হাসপাতালের বিছানা থেকে রাস্তায় নেমে এলেন- তখন নিশ্চয়ই ছাত্র নেতারা ও উপদেষ্টারা বুঝেছেন সব কিছুই পতিত শক্তির ষড়যন্ত্র নয়। সরকারে থাকলে ‘গরমে উলের টুপি পরা বুদ্ধিজীবীর’ মতো সারাক্ষণ ‘ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিবাদ’ জপ করে পার পাওয়া যায় না। গণঅভ্যুত্থান যে স্বপ্ন দেখিয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার কি করছে এবং কতটা দ্রুততার সঙ্গে করছে- দেশবাসী আগ্রহভরে তার প্রতি লক্ষ্য রাখছে।
দেশবাসী সবচেয়ে বেশি হতাশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। হাটবাজার, দোকানপাট, হকারদের কেন্দ্র, ডিশ ও ইন্টারনেট লাইন সরবরাহ, গণপরিবহন ব্যবসা বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রেই আগের মতোই নতুন মুখের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি চলছে। ইদানীং চুরি ডাকাতিও বেড়েছে। ঢালাও খুনের মামলা নিয়ে বেপরোয়া বাণিজ্য তো সর্বজনবিদিত। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে সরকারের উপদেষ্টা বা সচিব পদে নিয়োগের জন্য খুনের মামলাবিহীন লোক পাওয়া যাচ্ছে না! অথচ দেশবাসী চায় শিশু, কিশোর, ছাত্র গণহত্যার কুশীলবদের বিচার হোক। কিন্তু পাইকারি হারে ৩০০-৪০০ জনের নামে একেকটি খুনের মামলা হচ্ছে, বাদী বলছে আসামি কাদের করা হয়েছে না জেনেই তিনি অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর দিয়েছেন। যতই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হোক না কেন, এসব করে গণহত্যার মতো অপরাধকে হালকা করে ফেলা হচ্ছে। অথচ এ বেপরোয়া মামলা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরকারের কোন কঠোর ব্যবস্থা নেই।
অন্যদিকে গণতন্ত্রে উত্তরণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় এবং এ বিষয়ে কোন কোন উপদেষ্টার এবং সরকার সমর্থিত ছাত্র নেতাদের বক্তব্য রাজনীতিতে ধীরে ধীরে সংশয় ও উত্তাপ সৃষ্টি করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার ভাষণে শুধু বলেছেন- নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে; কিন্তু কবে তা স্টেশনে পৌঁছবে তা তিনি বলতে পারছেন না। এটা সুস্পষ্ট যে, বিজয়ী ছাত্র তরুণ নেতৃবৃন্দ সবখানেই প্রতিনিধিত্ব চায়। ড. ইউনূসের সরকার সম্ভবত কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা নিশ্চিতই করেছেন। ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রিত্ব করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সেটাও তারা জানেন।
আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি পরাজিত হলেও এবং হত্যাযজ্ঞের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে তাদের রাজনীতির মাঠে নামার নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়লেও আওয়ামী রাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তবে ব্যতিক্রম ছাডা সাধারণভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকদের মধ্যে কোন আত্মসমালোচনা ও অনুশোচনা নেই। নিজেরা বিশ্বাস না করলেও বাইরে সবার মুখে এক কথা- সেই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’! অথচ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েপডুয়া সন্তানেরা পরিবারের সম্মতিতেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শামিল ছিল। তারপরও এ হত্যাকা-ের কুশীলবদের বিচারের দাবি আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই না ওঠায় দলের জনবিচ্ছিন্নতা আরো বেড়েছে। তারপরও সারাদেশে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংগঠন এবং অসংখ্য কর্মী-সমর্থকেরা রয়েছেন।
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত আন্দোলনে বিএনপি সারাদেশে সুসংগঠিত হয়। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যসহ নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পডায় তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হলেও অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় সারাদেশে বিএনপির জনসমর্থন ও নেটওয়ার্ক শক্তিশালী অবস্থায় আছে।
এক মাসের ছাত্র গণআন্দোলনের প্রভাবে বা ছয় মাস থেকে এক বছর ক্ষমতায় থেকেও দ্বিদলীয় রাজনীতির যে ধারা আমাদের সমাজে শিকড় গেড়ে বসেছিল তা থেকে সমাজকে মুক্ত করা সহজ হবে না। এটা নতুন ছাত্র বা তরুণ নেতারা বুঝেন। তাই তারা চান তরুণ নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক শক্তি বা দল নির্বাচনে অংশ নেয়া ও বিজয়ের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত সময় নিতে। কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আনুকূল্যে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্যতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা ছাডা সব দলই সরকারকে সমর্থন করছে এবং একই সঙ্গে প্রায় সব দলই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছে; যা উপেক্ষা করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুরও দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। কিন্তু ছাত্র নেতারা এটা মানতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে না। তাই তারাই এখন নানা ইস্যু সামনে আনছেন; যা মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সব থেকে বড় ও রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এবারের সংগ্রামের মূল কথাই তো ছিলো বৈষম্য বিরোধিতা এবং এমন ব্যবস্থা যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, প্রত্যেকেই মৌলিক মানবাধিকার আর নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। মুক্তিযুদ্ধের যে আকাক্সক্ষা থেকে বিচ্যুতি হয়েছে তা পুনঃস্থাপিত হবে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং সংবিধানে। গড়ে তোলা হবে সম্ভবমতো এক অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা নির্মাণে সব থেকে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হতে পারে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে গঠিত জাতীয় সংসদ। তা হলে এবারের আন্দোলনে বিজয়ী তারুণ্যের শক্তিসহ কম-বেশি সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। যারাই সরকার গঠন করুক না কেন, ‘রিহহবৎং ঃধশব ধষষ’ ব্যবস্থা কিছটা দুর্বল হয়ে পড়বে। তারুণ্যের শক্তিসহ রাজনৈতিক সামাজিক শক্তিসমূহের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত হবে; যা শুধু নির্বাচনে নয়, সবখানেই তরুণদের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করবে।
এবারের অভ্যুত্থানে যে দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, হাজারে হাজারে আহত হয়েছেন,পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন- তাতে ছাত্র, শ্রমিক, পথচারী, নারী, শিশু-কোন শ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব নেই? সমন্বয়করা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাম প্রগতিশীল সংগঠনের বা চিন্তাধারার ছাত্র কর্মীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অভ্যুত্থান সফল হতো না- যদি না নারী সমাজ বিশেষত ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে না আসতেন। সমান তালে লড়লেও আজ তাদের আড়াল করে ফেলা হচ্ছে। আন্দোলন বেগবান করতে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তাই আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে সবার প্রতিনিধিত্বশীল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় এবং পরে দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি আঁকা হয়, সেখানে বৈষম্যহীন এক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন আঁকে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এ স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই! অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ স্বপ্ন পূরণের পথে কী ভূমিকা রেখে গণতন্ত্রে উত্তরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেÑ তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে স্বপ্ন দেখার সার্থকতা।
[লেখক : সাবেক সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন]
আনোয়ারুল হক
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪
বিরোধী দলবিহীন দুটি ভোট ও একটি নৈশ ভোটের ‘বিশাল জয়ে’ তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে শেখ হাসিনা দিব্যি কর্তৃত্ববাদী পন্থায় ও এক ভয়ের রাজত্ব কায়েম করে সরকার পরিচালনা করে আসছিলেন। আর পারিষদবর্গ ছিলেন স্তুতিতে মুখর।
একদিকে তাদের ছিলো জেদ ও দম্ভ, অন্যদিকে বিত্তশালী হয়ে ওঠার আলাদিনের চেরাগ। মানুষের মাঝেও ধারণা সৃষ্টি করা হয়েছিল ‘উন্নয়নের’ চরম শিখরে পৌঁছার স্বার্থে এটাই বোধহয় ভবিতব্য। বিরোধী রাজনৈতিক দল ডান, বাম বা মধ্য পন্থার অনুসারী কেউই মাঝে-মধ্যে মাঠ গরম করা ছাড়া উন্মত্ত ক্ষমতাকে জুতসই পন্থায় চ্যালেঞ্জ করতে পারছিলো না। কিন্তু কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং লুটেরা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীন সংকট রাষ্ট্র ক্ষমতার কাঠামোকে ভেতরে ভেতরে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল। তাই তো ৫ জুন তারিখে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারের জারি করা পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন আপাত নিরীহ সভা-সমাবেশের মধ্যে সীমিত থাকলেও ১৪ জুলাই পতিত প্রধানমন্ত্রীর ‘রাজাকারের নাতি’ উক্তিতে বারুদে বিস্ফোরণ ঘটে এবং দেশ কাঁপানো ২২ দিনে ছাত্র-জনতার লড়াইয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ে। পতিত প্রধানমন্ত্রী দেশ ছেড়ে পলায়ন করেন এবং গত ১৫ বছর যাবত কারণে অকারণে ঈর্ষা-বিদ্বেষ প্রকাশ করে যাকে কাল্পনিক প্রতিপক্ষ বানিয়েছিলেন তিনিই বাস্তবের প্রতিপক্ষ হয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হলেন এক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে।
ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের আগে-পরে ছাত্র নেতাদের কথায় এবং ড. ইউনূসের কথায় মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। আর স্বপ্ন তো সিনেমার মতো নয় যে, সামনের পর্দাটা সরে গেলেই সিনেমা শুরু হয়ে গেল। আসলে মনোজগতে সৃষ্ট আবেগ থেকেই স্বপ্নের সৃষ্টি হয়। এবারের আন্দোলনে তারুন্যের জাগরন মানুষের মাঝে স্বপ্ন দেখার সেই আবেগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলো। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে সমর্থন করে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল আন্দোলন বিজয়ী হলে সমাজ থেকে বৈষম্য দুর্বল হবে আর সমতা শক্তিশালী হবে, স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করা যাবে, দেশে আবার ভোট হবে এবং পছন্দমতো ভোট দেয়া যাবে।
বহুত্ববাদের ওপর ভিত্তি করে নতুন পথ যাত্রায় দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ হবে। মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুবিচার নিশ্চিত হবে। নারী-পুরুষ, ভিন্ন-ভিন্ন ধর্মের মানুষ, বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী সবাই পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে সমঅধিকার ভোগ করবেন। বিরোধীদের, ভিন্নমতের মানুষদের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। আশা জেগেছিল দেশ ইনসাফের পথে অগ্রসর হবে।
গণঅভ্যুত্থানের ১০০ দিন পার হয়ে গেলেও স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে আসছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ধীরগতির কাজে মানুষ সন্তুষ্ট হতে পারছে না। মানুষের মাঝে হতাশা দানা বাঁধছে। যে রিকশাওয়ালা রিকশার উপর দাঁড়িয়ে সেদিন ছাত্রদের মিছিলকে স্যালুট দিয়েছিলেন বা যে দিনমজুর তার দৈনিক রোজ বাদ দিয়ে ছাত্রদের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন, দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে আজ তাদের মুখের সুরটা কিছুটা ভিন্ন। গার্মেন্টস শিল্পে ন্যায্য পারিশ্রমিক আর বকেয়া পারিশ্রমিকের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তো লেগেই আছে। ব্যাটারি চালিত রিক্সা শ্রমিকদের সমস্যার কারিগরী ও মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনিক পন্থায় সমাধানের পথে না গিয়ে আদালতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের রুটি-রুজির পথ বন্ধ করে দেওয়ার অমানবিক পন্থা বেছে নেওয়া হয়েছে।
দুঃখজনক বিষয় হলো পতিত সরকার যেমন বিক্ষোভ দেখলেই বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র খুঁজে পেত, ঠিক তেমনি অন্তর্বর্তী সরকার ও নতুন ছাত্র নেতারা সবকিছুর মাঝেই আওয়ামী ষড়যন্ত্র খোঁজার চেষ্টা করেন। অবশ্য জুলাই অভ্যুথানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ছাত্ররাও তাদের প্রতি চিকিৎসা অবহেলা এবং সরকার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ কতৃক কোন খোঁজখবর না রাখার প্রতিবাদে এবং সুচিকিৎসার দাবিতে হাসপাতালের বিছানা থেকে রাস্তায় নেমে এলেন- তখন নিশ্চয়ই ছাত্র নেতারা ও উপদেষ্টারা বুঝেছেন সব কিছুই পতিত শক্তির ষড়যন্ত্র নয়। সরকারে থাকলে ‘গরমে উলের টুপি পরা বুদ্ধিজীবীর’ মতো সারাক্ষণ ‘ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিবাদ’ জপ করে পার পাওয়া যায় না। গণঅভ্যুত্থান যে স্বপ্ন দেখিয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার কি করছে এবং কতটা দ্রুততার সঙ্গে করছে- দেশবাসী আগ্রহভরে তার প্রতি লক্ষ্য রাখছে।
দেশবাসী সবচেয়ে বেশি হতাশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। হাটবাজার, দোকানপাট, হকারদের কেন্দ্র, ডিশ ও ইন্টারনেট লাইন সরবরাহ, গণপরিবহন ব্যবসা বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রেই আগের মতোই নতুন মুখের দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি চলছে। ইদানীং চুরি ডাকাতিও বেড়েছে। ঢালাও খুনের মামলা নিয়ে বেপরোয়া বাণিজ্য তো সর্বজনবিদিত। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে সরকারের উপদেষ্টা বা সচিব পদে নিয়োগের জন্য খুনের মামলাবিহীন লোক পাওয়া যাচ্ছে না! অথচ দেশবাসী চায় শিশু, কিশোর, ছাত্র গণহত্যার কুশীলবদের বিচার হোক। কিন্তু পাইকারি হারে ৩০০-৪০০ জনের নামে একেকটি খুনের মামলা হচ্ছে, বাদী বলছে আসামি কাদের করা হয়েছে না জেনেই তিনি অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর দিয়েছেন। যতই আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল হোক না কেন, এসব করে গণহত্যার মতো অপরাধকে হালকা করে ফেলা হচ্ছে। অথচ এ বেপরোয়া মামলা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে সরকারের কোন কঠোর ব্যবস্থা নেই।
অন্যদিকে গণতন্ত্রে উত্তরণে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের কোন সুনির্দিষ্ট পথরেখা না থাকায় এবং এ বিষয়ে কোন কোন উপদেষ্টার এবং সরকার সমর্থিত ছাত্র নেতাদের বক্তব্য রাজনীতিতে ধীরে ধীরে সংশয় ও উত্তাপ সৃষ্টি করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার ভাষণে শুধু বলেছেন- নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে; কিন্তু কবে তা স্টেশনে পৌঁছবে তা তিনি বলতে পারছেন না। এটা সুস্পষ্ট যে, বিজয়ী ছাত্র তরুণ নেতৃবৃন্দ সবখানেই প্রতিনিধিত্ব চায়। ড. ইউনূসের সরকার সম্ভবত কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা নিশ্চিতই করেছেন। ভবিষ্যতে জনপ্রতিনিধি বা মন্ত্রিত্ব করতে হলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সেটাও তারা জানেন।
আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি পরাজিত হলেও এবং হত্যাযজ্ঞের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে তাদের রাজনীতির মাঠে নামার নৈতিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়লেও আওয়ামী রাজনীতি বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। তবে ব্যতিক্রম ছাডা সাধারণভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকদের মধ্যে কোন আত্মসমালোচনা ও অনুশোচনা নেই। নিজেরা বিশ্বাস না করলেও বাইরে সবার মুখে এক কথা- সেই ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’! অথচ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েপডুয়া সন্তানেরা পরিবারের সম্মতিতেই কোটা সংস্কারের আন্দোলনে শামিল ছিল। তারপরও এ হত্যাকা-ের কুশীলবদের বিচারের দাবি আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই না ওঠায় দলের জনবিচ্ছিন্নতা আরো বেড়েছে। তারপরও সারাদেশে গ্রামপর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সংগঠন এবং অসংখ্য কর্মী-সমর্থকেরা রয়েছেন।
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত আন্দোলনে বিএনপি সারাদেশে সুসংগঠিত হয়। ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পরে বিএনপি নেতাকর্মীরা দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্যসহ নেতিবাচক কার্যক্রমে জড়িত হয়ে পডায় তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হলেও অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় সারাদেশে বিএনপির জনসমর্থন ও নেটওয়ার্ক শক্তিশালী অবস্থায় আছে।
এক মাসের ছাত্র গণআন্দোলনের প্রভাবে বা ছয় মাস থেকে এক বছর ক্ষমতায় থেকেও দ্বিদলীয় রাজনীতির যে ধারা আমাদের সমাজে শিকড় গেড়ে বসেছিল তা থেকে সমাজকে মুক্ত করা সহজ হবে না। এটা নতুন ছাত্র বা তরুণ নেতারা বুঝেন। তাই তারা চান তরুণ নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক শক্তি বা দল নির্বাচনে অংশ নেয়া ও বিজয়ের জন্য প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত সময় নিতে। কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বা আনুকূল্যে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্যতাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরা ছাডা সব দলই সরকারকে সমর্থন করছে এবং একই সঙ্গে প্রায় সব দলই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানাচ্ছে; যা উপেক্ষা করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুরও দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। কিন্তু ছাত্র নেতারা এটা মানতে চাইছেন বলে মনে হচ্ছে না। তাই তারাই এখন নানা ইস্যু সামনে আনছেন; যা মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে সব থেকে বড় ও রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এবারের সংগ্রামের মূল কথাই তো ছিলো বৈষম্য বিরোধিতা এবং এমন ব্যবস্থা যেখানে সবাই সবার কথা বলতে পারবে, প্রত্যেকের কণ্ঠস্বর শোনা যাবে, প্রত্যেকেই মৌলিক মানবাধিকার আর নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। মুক্তিযুদ্ধের যে আকাক্সক্ষা থেকে বিচ্যুতি হয়েছে তা পুনঃস্থাপিত হবে সমাজে, রাষ্ট্রে এবং সংবিধানে। গড়ে তোলা হবে সম্ভবমতো এক অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা নির্মাণে সব থেকে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হতে পারে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে গঠিত জাতীয় সংসদ। তা হলে এবারের আন্দোলনে বিজয়ী তারুণ্যের শক্তিসহ কম-বেশি সবার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হবে। যারাই সরকার গঠন করুক না কেন, ‘রিহহবৎং ঃধশব ধষষ’ ব্যবস্থা কিছটা দুর্বল হয়ে পড়বে। তারুণ্যের শক্তিসহ রাজনৈতিক সামাজিক শক্তিসমূহের অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত হবে; যা শুধু নির্বাচনে নয়, সবখানেই তরুণদের প্রতিনিধিত্বও নিশ্চিত করবে।
এবারের অভ্যুত্থানে যে দেড় হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, হাজারে হাজারে আহত হয়েছেন,পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন- তাতে ছাত্র, শ্রমিক, পথচারী, নারী, শিশু-কোন শ্রেণীর মানুষের প্রতিনিধিত্ব নেই? সমন্বয়করা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাম প্রগতিশীল সংগঠনের বা চিন্তাধারার ছাত্র কর্মীরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অভ্যুত্থান সফল হতো না- যদি না নারী সমাজ বিশেষত ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে না আসতেন। সমান তালে লড়লেও আজ তাদের আড়াল করে ফেলা হচ্ছে। আন্দোলন বেগবান করতে রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তাই আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে সবার প্রতিনিধিত্বশীল।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় এবং পরে দেয়ালে দেয়ালে যে গ্রাফিতি আঁকা হয়, সেখানে বৈষম্যহীন এক গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্ন আঁকে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এ স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই! অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ স্বপ্ন পূরণের পথে কী ভূমিকা রেখে গণতন্ত্রে উত্তরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেÑ তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে স্বপ্ন দেখার সার্থকতা।
[লেখক : সাবেক সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন]