জাঁ-নেসার ওসমান
‘ওম্মা কয় কী, চুর নি চান? উয়া কি ঠাকুরের, শ্যামা নৃত্য নাট্য নি, ‘চুরি হয়ে গ্যেছে রাজকোষে/ চোর চাই, যে কোরেই হোক/ হোক না সে, অন্য কোনো লোক...’
‘আরে না, এ-চোর সে চোর নয়।’ ‘কিন্তু ভাইডি দ্যেশে তো কুনো চুর নাই, সবতো ডাকাইত মানে দস্যু...’। ‘ও কিরে তুই বলিস কি, দেশে চোর নেই!’ ‘হ মিয়া ভাই হ¹লটি দস্যু, যেমন ভূমি দস্যু, বালু খেগো দস্যু, পাঁচ হাজার টাকার বালিশ খাওইন্না দস্যু, বত্রিশ হাজার টাকার পর্দা টাঙানো দস্যু...’।
‘থাক থাক ভাই, আমার অতো দস্যু বাহারামের আত্মীয়দের ফিরিস্তির দরকার নেই, আমি চাচ্ছিলাম কিছু নতুন চোরের মুখ দেখতে।’
‘হ, চোর আপনেরে তার মুখ দ্যেখাইবো আর আপনে পুলিশরে চুরের স্ক্রিন শট দিবেন। চুর কখোনোই মুখ দ্যেখাইবো না! পারলে মুখ ঢাইক্কা রাখপে।’
‘আরে সোনা এখানেই তুই ভুল করছিস, আমাদের চোররা সবের সামনে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে ঘুরে বেড়ায়, পুলিশ আমাদের চোরদের স্যার স্যার বলে স্যালুট দেয়!’ ‘হাগোল নি কোনো। চুরেরে প্রহরী দিবো, স্যালুট! কন চাইন দেহি, এ্যমুন চুর আন্নে কোন দেশে পাইবেন?’
‘সাধারণত কি হয় দ্যেখ, চোর ঠিক করে কার বাড়ি বা গাড়ি সে চুরি করবে। কিন্তু এখানে আমরা ঠিক করি কোন চোর আমাদের জায়গা জমি, টাকা-পয়সা লুট করবে!’
‘কন কী, আম জনতা নিজেরাই নিজেগো গোমর নিজেরাই কাঁচি দিয়া ফাড়বো!! ধাৎ এইডা হয়নি? গাঞ্জা খায়াভী এমুন কতা কোনো ব্যাডা চিন্তা করবো না। নিজেগো গোমর নিজেরাই কাঁচি দিয়া ফাড়বো!’। ‘গাঞ্জা সেবনে চিন্তা না করলেও বাস্তবে তো তাই ঘটছে!’ ‘মাইনে কন কি, আপনে!!’ ‘ক্যেনো ভাই, বিগত প্রায় চুয়ান্ন বছর তোমরা নির্বাচনের নামে কতোগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা চোর, স্যাটালাইট উপগ্রহ স্থাপনের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা চোর, ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা চোরদের নির্বাচিত করনি? হলমার্ক, ল্যান্ডমার্ক, বেঞ্চমার্ক, ডেনমার্ক, বিসমার্ক কতো টাকা যে সরিয়েছে তার অনেক হদিসই নেই।’
‘ও রে মোর ভগবান আননে নি, মন্ত্রী-মিনিস্টার, পোরশাষণের ছত্রছায়ায় যারা বস্তা বস্তা ট্যাকা খাটের নিচে থুয়া দ্যেয়!! ট্যাকা খরচ কোরতে পারোস না তো ট্যাকা চুরি করোস ক্যান?’
‘জি মাননীয় মন্ত্রী-মিনিস্টারদের কথা বলছিলাম। আপনারাই যাহাদিগকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করিয়া আপনার দেশের সম্পদ লুঠ করিয়া সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার সুযোগ দেন!! এই সকল নিশিকুটুম্বদের আপনারাই নির্বাচিত করেন ঠিক কি না। ও মা কথা কয়না ক্যেরে? বলেন ঠিক কি না?’ ‘ঠিক ঠিক, তয় কথা আছে, এই যে, মিনিস্টার স্যারেরা ভ্যান ওয়ালার পোলা থ্যেইক্কা, পানি ওয়ালীর পোলা থ্যেইক্কা, মাতারীর বেডি, মন্ত্রী-মিনিস্টার হোইলো, আলিশান ঘর বাড়ী বানাইলো, এইডা দেশের উন্নতি না?’ ‘ভালো কথা ফকিরনির পোলার উন্নতির সাথে সাথে দেশেরও উন্নতি হলো! কিন্তু ভাইডি তুমি যে বুলডোজার দিয়া তিনশ ভ্যানওয়ালার পোলা, পানি ওয়ালীর পোলার ঘর-বাড়ী মাটিতে মিশিয়ে দিলে, তাহলে তোমার উন্নতি থাকলো কোথায়?? উন্নতিতো ধুলোয় মিশে গেলো।’
‘কিন্তু স্যার আমাদের ডক্টর ইউনূস স্যার আসার পর থ্যেইক্কা কোইলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে কুনো চুরি চামারি হোইতাছে না। যেমন পাঁচ হাজার টাকার বালিশ, হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু, শত কোটির মেট্রোরেল, এইগুলা কোইলাম বন্ধ আছে।’
‘মানে কি, ড. ইউনূস আসার পর তোমার সকল জনগোষ্ঠীর ডিএনএ, বদলে গ্যেছে! চুরি চামারি থেমেছে!’
‘দুই-একটা রাস্তাঘাটের টোকাইগো পোলাপানের ডান্ডি খাওয়ার পয়সার লাগী ছিঁচকা চান্দাবাজী চলতাছে কিন্তু ওই উন্নয়নের নামে বস্তা বস্তা ট্যাকা, আইসটির. লক্ষ লক্ষ ট্যাকা কেউ খাইতাছে না।’ ‘কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকলে তো হবে না। বলেছেন বন্যার রিলিফের টাকা এখনো ব্যাংকে, জানি না কার অ্যাকাউন্টে। নারায়ণগঞ্জের মহিলা সম্বনায়িকা, টাকা তছরুপের দায়ে পুলিশ হেফাজতে! ভাই সবাই যদি, টাকা দেখলেই দেশের দশের নিজ আত্মসন্মানের কথা ভুলে খালি চুরির ধান্দা করো তাহলে এই সব বিপ্লব টিপ্লবে কী লাভ, তার চেয়ে ভালো নির্বাচন দাও আমরা দলকানারা নিজেরাই কিছু চোরদের মন্ত্রী মিনিস্টার বানিয়ে আবার বড় বড় প্রজেক্ট শুরু করি আর মাল কামাই। বিগত প্রায় চুয়ান্ন বছরেও যখন জনগনের চোখ খুললনা, তখন আশাকরি আগামী একশ বছরেও স্যারেদের ঘুম ভাঙ্গবে না চুরি যেমন চলছে তেমন চলবেই চলবে।’
‘তয়লে স্যার আমি কোই কী, নির্বাচন দিলেই যদি চুরের হাতে দেশ চইল্লা যায় তাহলে ড.ইউনুসই দ্যেশ চালাক, আমরা পীরথীবির বাইরের ‘চুঙ্গল গ্রহের’ মতুন বিশ্ব ভূমন্ডলে ঘুইরা ব্যেড়ামু।’
‘চুঙ্গল গ্রহ, মানে কী? কিছুই তো বুঝলাম না??’ ‘হ্যেয় মিয়া রসিকতা কোইরেন না। ‘চুঙ্গল গ্রহ’ মানে বুঝেন নাই?’ ‘সত্যি বলছি, তোর এই সিনোনিম ‘চুঙ্গল গ্রহ’ মানে বুঝি নাই?’
‘ভেরি ছিম্পল, ‘চুঙ্গল গ্রহ’ মানে চুরেগো গৃহ, সংক্ষেপে ‘চুঙ্গল গ্রহ’।’
‘ সাধু সাধু, দারুণ বলেছিস ‘চুঙ্গল গ্রহ’। আর শোন তোরা নাকি বাংলাদেশের নাম পাল্টাবি, তাহলে আমি বলি অন্য কোনো নাম চিন্তা না কোরে দেশের নাম ‘চুঙ্গল গ্রহ’ রেখে দে সব ল্যাঠা শেষ, আমরাও নির্বাচনে তোর ভাষায় ‘চুরদের নির্বাচিত করিয়া আরো চুরির সুযোগ করিয়া দেই।’ ‘ওই চুরেদের সাথে আমরাও, জনগণ ‘চুঙ্গল গ্রহে’ নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করি।’
‘সাধু সাধু মাভৈঃ ‘চুঙ্গল গ্রহ।’
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
‘ওম্মা কয় কী, চুর নি চান? উয়া কি ঠাকুরের, শ্যামা নৃত্য নাট্য নি, ‘চুরি হয়ে গ্যেছে রাজকোষে/ চোর চাই, যে কোরেই হোক/ হোক না সে, অন্য কোনো লোক...’
‘আরে না, এ-চোর সে চোর নয়।’ ‘কিন্তু ভাইডি দ্যেশে তো কুনো চুর নাই, সবতো ডাকাইত মানে দস্যু...’। ‘ও কিরে তুই বলিস কি, দেশে চোর নেই!’ ‘হ মিয়া ভাই হ¹লটি দস্যু, যেমন ভূমি দস্যু, বালু খেগো দস্যু, পাঁচ হাজার টাকার বালিশ খাওইন্না দস্যু, বত্রিশ হাজার টাকার পর্দা টাঙানো দস্যু...’।
‘থাক থাক ভাই, আমার অতো দস্যু বাহারামের আত্মীয়দের ফিরিস্তির দরকার নেই, আমি চাচ্ছিলাম কিছু নতুন চোরের মুখ দেখতে।’
‘হ, চোর আপনেরে তার মুখ দ্যেখাইবো আর আপনে পুলিশরে চুরের স্ক্রিন শট দিবেন। চুর কখোনোই মুখ দ্যেখাইবো না! পারলে মুখ ঢাইক্কা রাখপে।’
‘আরে সোনা এখানেই তুই ভুল করছিস, আমাদের চোররা সবের সামনে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে ঘুরে বেড়ায়, পুলিশ আমাদের চোরদের স্যার স্যার বলে স্যালুট দেয়!’ ‘হাগোল নি কোনো। চুরেরে প্রহরী দিবো, স্যালুট! কন চাইন দেহি, এ্যমুন চুর আন্নে কোন দেশে পাইবেন?’
‘সাধারণত কি হয় দ্যেখ, চোর ঠিক করে কার বাড়ি বা গাড়ি সে চুরি করবে। কিন্তু এখানে আমরা ঠিক করি কোন চোর আমাদের জায়গা জমি, টাকা-পয়সা লুট করবে!’
‘কন কী, আম জনতা নিজেরাই নিজেগো গোমর নিজেরাই কাঁচি দিয়া ফাড়বো!! ধাৎ এইডা হয়নি? গাঞ্জা খায়াভী এমুন কতা কোনো ব্যাডা চিন্তা করবো না। নিজেগো গোমর নিজেরাই কাঁচি দিয়া ফাড়বো!’। ‘গাঞ্জা সেবনে চিন্তা না করলেও বাস্তবে তো তাই ঘটছে!’ ‘মাইনে কন কি, আপনে!!’ ‘ক্যেনো ভাই, বিগত প্রায় চুয়ান্ন বছর তোমরা নির্বাচনের নামে কতোগুলো হাজার হাজার কোটি টাকা চোর, স্যাটালাইট উপগ্রহ স্থাপনের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা চোর, ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা চোরদের নির্বাচিত করনি? হলমার্ক, ল্যান্ডমার্ক, বেঞ্চমার্ক, ডেনমার্ক, বিসমার্ক কতো টাকা যে সরিয়েছে তার অনেক হদিসই নেই।’
‘ও রে মোর ভগবান আননে নি, মন্ত্রী-মিনিস্টার, পোরশাষণের ছত্রছায়ায় যারা বস্তা বস্তা ট্যাকা খাটের নিচে থুয়া দ্যেয়!! ট্যাকা খরচ কোরতে পারোস না তো ট্যাকা চুরি করোস ক্যান?’
‘জি মাননীয় মন্ত্রী-মিনিস্টারদের কথা বলছিলাম। আপনারাই যাহাদিগকে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত করিয়া আপনার দেশের সম্পদ লুঠ করিয়া সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখার সুযোগ দেন!! এই সকল নিশিকুটুম্বদের আপনারাই নির্বাচিত করেন ঠিক কি না। ও মা কথা কয়না ক্যেরে? বলেন ঠিক কি না?’ ‘ঠিক ঠিক, তয় কথা আছে, এই যে, মিনিস্টার স্যারেরা ভ্যান ওয়ালার পোলা থ্যেইক্কা, পানি ওয়ালীর পোলা থ্যেইক্কা, মাতারীর বেডি, মন্ত্রী-মিনিস্টার হোইলো, আলিশান ঘর বাড়ী বানাইলো, এইডা দেশের উন্নতি না?’ ‘ভালো কথা ফকিরনির পোলার উন্নতির সাথে সাথে দেশেরও উন্নতি হলো! কিন্তু ভাইডি তুমি যে বুলডোজার দিয়া তিনশ ভ্যানওয়ালার পোলা, পানি ওয়ালীর পোলার ঘর-বাড়ী মাটিতে মিশিয়ে দিলে, তাহলে তোমার উন্নতি থাকলো কোথায়?? উন্নতিতো ধুলোয় মিশে গেলো।’
‘কিন্তু স্যার আমাদের ডক্টর ইউনূস স্যার আসার পর থ্যেইক্কা কোইলাম রাষ্ট্রীয়ভাবে কুনো চুরি চামারি হোইতাছে না। যেমন পাঁচ হাজার টাকার বালিশ, হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু, শত কোটির মেট্রোরেল, এইগুলা কোইলাম বন্ধ আছে।’
‘মানে কি, ড. ইউনূস আসার পর তোমার সকল জনগোষ্ঠীর ডিএনএ, বদলে গ্যেছে! চুরি চামারি থেমেছে!’
‘দুই-একটা রাস্তাঘাটের টোকাইগো পোলাপানের ডান্ডি খাওয়ার পয়সার লাগী ছিঁচকা চান্দাবাজী চলতাছে কিন্তু ওই উন্নয়নের নামে বস্তা বস্তা ট্যাকা, আইসটির. লক্ষ লক্ষ ট্যাকা কেউ খাইতাছে না।’ ‘কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকলে তো হবে না। বলেছেন বন্যার রিলিফের টাকা এখনো ব্যাংকে, জানি না কার অ্যাকাউন্টে। নারায়ণগঞ্জের মহিলা সম্বনায়িকা, টাকা তছরুপের দায়ে পুলিশ হেফাজতে! ভাই সবাই যদি, টাকা দেখলেই দেশের দশের নিজ আত্মসন্মানের কথা ভুলে খালি চুরির ধান্দা করো তাহলে এই সব বিপ্লব টিপ্লবে কী লাভ, তার চেয়ে ভালো নির্বাচন দাও আমরা দলকানারা নিজেরাই কিছু চোরদের মন্ত্রী মিনিস্টার বানিয়ে আবার বড় বড় প্রজেক্ট শুরু করি আর মাল কামাই। বিগত প্রায় চুয়ান্ন বছরেও যখন জনগনের চোখ খুললনা, তখন আশাকরি আগামী একশ বছরেও স্যারেদের ঘুম ভাঙ্গবে না চুরি যেমন চলছে তেমন চলবেই চলবে।’
‘তয়লে স্যার আমি কোই কী, নির্বাচন দিলেই যদি চুরের হাতে দেশ চইল্লা যায় তাহলে ড.ইউনুসই দ্যেশ চালাক, আমরা পীরথীবির বাইরের ‘চুঙ্গল গ্রহের’ মতুন বিশ্ব ভূমন্ডলে ঘুইরা ব্যেড়ামু।’
‘চুঙ্গল গ্রহ, মানে কী? কিছুই তো বুঝলাম না??’ ‘হ্যেয় মিয়া রসিকতা কোইরেন না। ‘চুঙ্গল গ্রহ’ মানে বুঝেন নাই?’ ‘সত্যি বলছি, তোর এই সিনোনিম ‘চুঙ্গল গ্রহ’ মানে বুঝি নাই?’
‘ভেরি ছিম্পল, ‘চুঙ্গল গ্রহ’ মানে চুরেগো গৃহ, সংক্ষেপে ‘চুঙ্গল গ্রহ’।’
‘ সাধু সাধু, দারুণ বলেছিস ‘চুঙ্গল গ্রহ’। আর শোন তোরা নাকি বাংলাদেশের নাম পাল্টাবি, তাহলে আমি বলি অন্য কোনো নাম চিন্তা না কোরে দেশের নাম ‘চুঙ্গল গ্রহ’ রেখে দে সব ল্যাঠা শেষ, আমরাও নির্বাচনে তোর ভাষায় ‘চুরদের নির্বাচিত করিয়া আরো চুরির সুযোগ করিয়া দেই।’ ‘ওই চুরেদের সাথে আমরাও, জনগণ ‘চুঙ্গল গ্রহে’ নিশ্চিন্তে ভ্রমণ করি।’
‘সাধু সাধু মাভৈঃ ‘চুঙ্গল গ্রহ।’
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]