alt

উপ-সম্পাদকীয়

বর্ষার আগেই নদীভাঙনের আতঙ্কে উপকূলবাসী

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

নদীভাঙন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় নদীর পানি তীব্র গতি লাভ করে, যার তোড়ে তীরবর্তী মাটি ভেঙে যায়। এ প্রক্রিয়াই নদীভাঙন নামে পরিচিত। প্রতি বছর এর কারণে মাইলের পর মাইল জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়, হাজার হাজার পরিবার বসতভিটা, জমি ও জীবিকা হারায়। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও ধ্বংস হয়ে যায়। একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৬,০০০ হেক্টর জমি নদীভাঙনে হারিয়ে যায়, যার ফলে দেশ বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

নদীভাঙনের প্রাকৃতিক কারণ

ব-দ্বিপীয় ভূমি : বাংলাদেশ একটি পলিমাটির ব-দ্বীপ। এখানকার মাটির গঠন দুর্বল, যা নদীর তীব্র স্রোত সহ্য করতে পারে না। ফলে সামান্য শক্তিশালী স্রোতেই তীর ভেঙে যায়।

বন্যা : বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপ বাড়ে। এ সময় নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়, যা তীরের মাটি ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে।

অতিবৃষ্টি : অতিবৃষ্টির কারণে নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং উত্তাল ঢেউ তীরে আঘাত হানে। এতে দুর্বল মাটি ভেঙে পড়ে।

নদীর তলদেশে পলি জমা : পলি জমার কারণে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যায়, যা পানির উচ্চতা বাড়ায় এবং তীরে চাপ সৃষ্টি করে।

প্রবল স্রোত : পাহাড়ি ঢল বা তীব্র প্রবাহের কারণে কিছু নদী প্রবল স্রোতস্বিণী হয়, যা ভাঙন ত্বরান্বিত করে।

নদীর প্রশস্ততা ও চর : প্রশস্ত নদীতে ভাঙনের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া নদীর মাঝে নতুন চর তৈরি হলে পানির গতিপথ পরিবর্তিত হয়, যা একপাশে ভাঙন সৃষ্টি করে।

নদীভাঙনের মানবসৃষ্ট কারণ

বন উজাড় : গাছের শিকড় মাটিকে শক্তিশালী করে। বন কাটার ফলে তীরের মাটি দুর্বল হয়ে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ে।

তীরে স্থাপনা নির্মাণ : নদীর তীরে বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণ মাটির স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।

বালি উত্তোলন : নদী থেকে অতিরিক্ত বালি উত্তোলন নদীর ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ভাঙন ত্বরান্বিত করে।

নদীতে বাঁধ : সেচ বা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, যা ভাঙনের কারণ হয়।

শহর রক্ষা বাঁধ : এক তীরে শহর রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করলে অন্য তীরে ভাঙন বাড়ে।

অপরিকল্পিত ড্রেজিং : অপরিকল্পিত ড্রেজিং নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততার ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ভাঙন ডেকে আনে।

বর্তমান পরিস্থিতি

বাংলাদেশের প্রায় ৪১০টি নদ-নদীর তটরেখার দৈর্ঘ্য ২৪,০১৪ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১২,০০০ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ। প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাবে ভাঙন তীব্র হয়। এ বছরও বর্ষার আগেই বিভিন্ন জেলায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রাম, জনপদ, ফসলের জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন ও নিঃস্ব হয়েছে। ভাঙনের শিকার মানুষের একটাই আকুতিÑ ‘আমরা ত্রাণ চাই না, নদীভাঙন ঠেকান।’

চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের অভাব

নদীভাঙন প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব রয়েছে। জেলা ও উপজেলার ডিজাস্টার ফান্ড অপ্রতুল, যা কার্যকর সহায়তা প্রদানে ব্যর্থ। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বিত তহবিলের অভাবও ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাধা। বন্যা ও নদীভাঙন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এখনও কাক্সিক্ষত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

চরবাসী ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

চরাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তবে নদীভাঙন তাদের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আবাদি জমি কমছে, জনসংখ্যা বাড়ছে এবং নদীভাঙনের উদ্বাস্তুরা শহরে ভিড় করছে। এ প্রবণতা ভবিষ্যতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। প্রকৃতির এ বিপর্যয় পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না হলেও ক্ষতি কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

করণীয়

নদীভাঙন প্রতিরোধ : তীর সংরক্ষণে টেকসই বাঁধ, গাছপালা রোপণ এবং পরিকল্পিত ড্রেজিং জরুরি।

পুনর্বাসন তহবিল : জেলা ও উপজেলায় নদীভাঙন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠন করতে হবে।

উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয় : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংস্থাগুলোর জন্য সমন্বিত তহবিল ও দ্রুত পদক্ষেপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সহায়তা : নদীভাঙন রোধে আন্তর্জাতিক পরামর্শ, প্রযুক্তি ও সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।

জনসচেতনতা : চরবাসীদের মধ্যে নদীভাঙনের ঝুঁকি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

নদীভাঙন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রাচীন কিন্তু জটিল সমস্যা। শুধু জাতীয় পরিকল্পনা নয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ দুর্যোগের ক্ষতি কমানো সম্ভব। চরবাসীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

[লেখক : চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

ছবি

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ : মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

‘রিসেটের’ পরাকৌশল কী হওয়া প্রয়োজন

প্রসঙ্গ : জাতীয় বাজেট

ব্রুনোর শ্মশান মঞ্চ

দুর্নীতির অবিশ্বাস্য খতিয়ান

সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, বহুত্ববাদ : সবকা সাথ্ সবকা বিকাশ!

পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ সংকটে ধর্মনিরপেক্ষতা

পেশাগত দায় ও নৈতিকতা

বিনোদনের রূপান্তর : সংস্কৃতির সংকোচন ও নতুন পথ

রম্যগদ্য : ‘চোর চাই, চোর...’

শুভ-অশুভ বলে কিছু কি আছে

পহেলা বৈশাখের সঙ্গে মিশে আছে কৃষি ও কৃষক

বাংলাদেশে ঘটনা অঘটন: প্রায় সবক্ষেত্রেই ইস্যু নির্বাচন

ছবি

নববর্ষ বাঙালি সংস্কৃতির বৈচিত্র্য ও বহুত্ববাদ

বৈসাবি : সম্মিলনের জাতীয় উৎসব

সংকট ও সংক্রান্তির শক্তি

ছবি

গাজার অশ্রু : ইসরায়েলের বর্বরতা ও বিশ্বের নীরবতা

দেশের কৃষি অর্থনীতির নীরব নায়িকারা

বহুমাত্রিক দ্বন্দ্বের ফেরে বিএনপি ও এনসিপি

ফৌজদারি মামলায় অপরাধের আলামত উদ্ধারে আইন মানতে বাধা কোথায়?

জলবায়ুর নতুন ছকে বদলে যাচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে বিতর্ক

কীটনাশকের বিষচক্র : উন্নয়নের নামে শোষণ ও বিপর্যয়

বোরো ধান উৎপাদনে প্রধান অন্তরায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট

ঢাকার বাসিন্দাদের নিঃশ্বাসে এক বিপন্নতা

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ হলে ‘ওয়াশিং মেশিন পার্টি’ বেকার হয়ে পড়বে না তো!

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশে সংক্ষুব্ধ ‘আমরা’ কারা?

বাসন্তী পূজা

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস : বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র

মার্কিন নীতির পরিবর্তনে ইউক্রেনের পরিণতি

গাজা : ক্রমবর্ধমান মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ পলিথিনে বিপন্ন প্রকৃতি

রাজনৈতিক রূপান্তরের এক সতর্কবার্তা

ধর্ষণের বিরুদ্ধে লড়াই : আইনের শক্তি ও সমাজের দুর্বলতা

বৈষম্যমুক্ত সমাজ বিনির্মাণে গণমুখী শিক্ষা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বর্ষার আগেই নদীভাঙনের আতঙ্কে উপকূলবাসী

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

নদীভাঙন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় নদীর পানি তীব্র গতি লাভ করে, যার তোড়ে তীরবর্তী মাটি ভেঙে যায়। এ প্রক্রিয়াই নদীভাঙন নামে পরিচিত। প্রতি বছর এর কারণে মাইলের পর মাইল জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়, হাজার হাজার পরিবার বসতভিটা, জমি ও জীবিকা হারায়। রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানও ধ্বংস হয়ে যায়। একটি জরিপ অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৬,০০০ হেক্টর জমি নদীভাঙনে হারিয়ে যায়, যার ফলে দেশ বছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

নদীভাঙনের প্রাকৃতিক কারণ

ব-দ্বিপীয় ভূমি : বাংলাদেশ একটি পলিমাটির ব-দ্বীপ। এখানকার মাটির গঠন দুর্বল, যা নদীর তীব্র স্রোত সহ্য করতে পারে না। ফলে সামান্য শক্তিশালী স্রোতেই তীর ভেঙে যায়।

বন্যা : বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপ বাড়ে। এ সময় নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে যায়, যা তীরের মাটি ভেঙে ফেলার জন্য যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে।

অতিবৃষ্টি : অতিবৃষ্টির কারণে নদীতে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং উত্তাল ঢেউ তীরে আঘাত হানে। এতে দুর্বল মাটি ভেঙে পড়ে।

নদীর তলদেশে পলি জমা : পলি জমার কারণে নদীর পানি ধারণক্ষমতা কমে যায়, যা পানির উচ্চতা বাড়ায় এবং তীরে চাপ সৃষ্টি করে।

প্রবল স্রোত : পাহাড়ি ঢল বা তীব্র প্রবাহের কারণে কিছু নদী প্রবল স্রোতস্বিণী হয়, যা ভাঙন ত্বরান্বিত করে।

নদীর প্রশস্ততা ও চর : প্রশস্ত নদীতে ভাঙনের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া নদীর মাঝে নতুন চর তৈরি হলে পানির গতিপথ পরিবর্তিত হয়, যা একপাশে ভাঙন সৃষ্টি করে।

নদীভাঙনের মানবসৃষ্ট কারণ

বন উজাড় : গাছের শিকড় মাটিকে শক্তিশালী করে। বন কাটার ফলে তীরের মাটি দুর্বল হয়ে ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ে।

তীরে স্থাপনা নির্মাণ : নদীর তীরে বাড়িঘর ও স্থাপনা নির্মাণ মাটির স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।

বালি উত্তোলন : নদী থেকে অতিরিক্ত বালি উত্তোলন নদীর ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ভাঙন ত্বরান্বিত করে।

নদীতে বাঁধ : সেচ বা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বাঁধ নির্মাণ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, যা ভাঙনের কারণ হয়।

শহর রক্ষা বাঁধ : এক তীরে শহর রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণ করলে অন্য তীরে ভাঙন বাড়ে।

অপরিকল্পিত ড্রেজিং : অপরিকল্পিত ড্রেজিং নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততার ভারসাম্য নষ্ট করে, যা ভাঙন ডেকে আনে।

বর্তমান পরিস্থিতি

বাংলাদেশের প্রায় ৪১০টি নদ-নদীর তটরেখার দৈর্ঘ্য ২৪,০১৪ কিলোমিটার, যার মধ্যে ১২,০০০ কিলোমিটার ভাঙনপ্রবণ। প্রতি বছর প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাবে ভাঙন তীব্র হয়। এ বছরও বর্ষার আগেই বিভিন্ন জেলায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গ্রাম, জনপদ, ফসলের জমি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন ও নিঃস্ব হয়েছে। ভাঙনের শিকার মানুষের একটাই আকুতিÑ ‘আমরা ত্রাণ চাই না, নদীভাঙন ঠেকান।’

চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের অভাব

নদীভাঙন প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত তহবিলের অভাব রয়েছে। জেলা ও উপজেলার ডিজাস্টার ফান্ড অপ্রতুল, যা কার্যকর সহায়তা প্রদানে ব্যর্থ। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বিত তহবিলের অভাবও ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে বাধা। বন্যা ও নদীভাঙন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ এখনও কাক্সিক্ষত সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

চরবাসী ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

চরাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তবে নদীভাঙন তাদের জীবন-জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আবাদি জমি কমছে, জনসংখ্যা বাড়ছে এবং নদীভাঙনের উদ্বাস্তুরা শহরে ভিড় করছে। এ প্রবণতা ভবিষ্যতে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। প্রকৃতির এ বিপর্যয় পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না হলেও ক্ষতি কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

করণীয়

নদীভাঙন প্রতিরোধ : তীর সংরক্ষণে টেকসই বাঁধ, গাছপালা রোপণ এবং পরিকল্পিত ড্রেজিং জরুরি।

পুনর্বাসন তহবিল : জেলা ও উপজেলায় নদীভাঙন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠন করতে হবে।

উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয় : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সংস্থাগুলোর জন্য সমন্বিত তহবিল ও দ্রুত পদক্ষেপের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক সহায়তা : নদীভাঙন রোধে আন্তর্জাতিক পরামর্শ, প্রযুক্তি ও সহায়তা গ্রহণ করতে হবে।

জনসচেতনতা : চরবাসীদের মধ্যে নদীভাঙনের ঝুঁকি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

নদীভাঙন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রাচীন কিন্তু জটিল সমস্যা। শুধু জাতীয় পরিকল্পনা নয়, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ দুর্যোগের ক্ষতি কমানো সম্ভব। চরবাসীসহ ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

[লেখক : চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

back to top