alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

সিরাজ প্রামাণিক

: সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

বয়নামা বা নিলাম ক্রয়ের দলিলাদিকে ইংরেজীতে Sale Certificate বলে। আদালত কর্তৃক কোন সম্পত্তি নিলামে বিক্রির পর উক্ত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রমাণস্বরূপ যে সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে সেটায় হচ্ছে বয়নামা। নিলাম ক্রেতাকে সর্বদা সংশ্লিষ্ট আদালত হতে বয়নামা ও দখলনামা সংগ্রহ করে নিতে হয়। বয়নামা রেজিস্ট্রি করতে হয় না। কেননা সিপিসির আদেশ ২১ বিধি ৯৪ অনুযায়ী তা রেজিস্ট্রি সমতুল্য। এ কারণ ক্রেতাকে উক্ত জমির স্বত্বলাভের প্রমাণস্বরূপ আর আলাদাভাবে রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রি করতে হয় না। তবে উক্ত বয়নামার অনুলিপি বা কপি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করতে হবে যাতে রেজিস্ট্রার তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি বইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখতে পারেন।

দেওয়ানি আদালত বা রাজস্ব আদালত অথবা কালেক্টর কিংবা অন্য কোন রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামে বিক্রীত সম্পত্তি খরিদের প্রমাণস্বরূপ বয়নামা দিয়ে থাকেন। Bengal Land Revenue Sale Act, 1859 এর ২৮ ধারা অনুযায়ী নিলাম খরিদ্দারের বরাবরে বয়নামা বা Sale Certificate সম্পাদন হয়ে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বয়নামা দলিল বা Sale Certificate স্বত্বের বাহক কি-না? যেহেতু বয়নামা দলিল সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে দখল হস্তান্তর বা দখল দেওয়া হয়ে থাকে না তাই বয়নামা দলিল কে স্বত্বের দলিল বলা যায় না। দখল হস্তান্তর নিলাম খরিদ্দারের বরাবরে প্রদান করা হয় তখনই দখল হস্তান্তর দলিল ও বয়নামা দলিল একত্রে একসঙ্গে একটি স্বত্বের দলিলে পরিণত হয়। একটির অভাবে অন্যটিকে স্বত্বের দলিল বলা যাবে না। সুতরাং আমরা বলতে পারি, বয়নামা দলিল ও দখল হস্তান্তর দলিল (দখল দেওয়ানি) একত্রে স্বত্বের দলিলে রূপান্তর হয়। এই বিষয়ে উচ্চ আদালত বলছে বয়নামা বা Sale Certificate স্বত্ব সৃষ্টি করে না, তবে স্বত্বের সাক্ষ্য বহন করে। (৭ ডিএলআর ৮০)। বয়নামা দলিলের সঙ্গে নিলাম খরিদ্দার কবুলিয়ত প্রদান করলে তা স্বত্বের দলিলে পরিণত হয়। (৫ ডিএলআর ২৮৫)।

সাধারণত প্রজাদের ভূমি-রাজস্ব বকেয়া পড়লে মালিকরা আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা ওই ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে ওই খাজনার ডিক্রি জারি দিয়ে ওই ভূমি নিলাম করা হতো। ওই নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্বসাধারণের খরিদ করার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি বেশি টাকায় নিলামের ডাক ওঠাতেন তিনি ওই নিলামের খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন।

খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরও কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে থাকে। যেমন সরকার কর্তৃক ভূমির বকেয়া রাজস্ব উত্তোলনের জন্য কিংবা দেওয়ানি মোকদ্দমার খরচের টাকা আদায়ের জন্য ও রেহানি ঋণের কারণে। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শনপত্র বা সার্টিফিকেট দেয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

এ বয়নামা নিদর্শনপত্রগুলো জেলার কালেক্টরের রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত আছে। বয়নামার অনুলিপি রেজিস্ট্রি অফিসে সরবরাহ করা থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলার রেজিস্ট্রি অফিসেও পাওয়া যেতে পারে।

তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক প্রেরিত মালিকানা সনদ এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা অনুযায়ী বিক্রয় আদেশের কপি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

আলুর প্রাচুর্যে কৃষকের সংকট

তাহলে কী ‘কোটা’ই জয়যুক্ত হবে!

ব্যাংকিং খাতে বিষফোঁড়া: বাংলাদেশের অর্থনীতির ধমনী বিষাক্ত হয়ে উঠছে

ছবি

ঢাকার নদী ও খালের দখল-দূষণ: পুনরুদ্ধার কোন পথে

জমি কী মূলে রেকর্ড হয়েছে, দলিল মূলে না উত্তরাধিকার মূলে?

কার্বন-নিরপেক্ষ শিশুর অনুপ্রেরণায় দেশ

এবার আমরা সভ্য হলাম!

সোনার প্রাসাদের দেয়ালে ঘামের দাগ

নিরাপদ সড়ক চাই কিন্তু কার্যকর উদ্যোগ কোথায়?

অবহেলিত শিক্ষার দুর্দশা বাড়ছে

টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত নিরাপদ সড়ক

বাংলার সংস্কৃতি কি মূলধারা হারিয়ে ফেলবে?

ছবি

সমদৃষ্টি, বহুত্ববাদী সমাজ এবং সহিষ্ণুতা

খাদ্য অপচয় : ক্ষুধার্ত পৃথিবীর এক নিঃশব্দ ট্র্যাজেডি

টেকসই বাংলাদেশ গঠনে পরিবেশ সংস্কার কেন অপরিহার্য

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

সিরাজ প্রামাণিক

সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

বয়নামা বা নিলাম ক্রয়ের দলিলাদিকে ইংরেজীতে Sale Certificate বলে। আদালত কর্তৃক কোন সম্পত্তি নিলামে বিক্রির পর উক্ত নিলাম ক্রেতাকে নিলামকৃত সম্পত্তি হস্তান্তরের প্রমাণস্বরূপ যে সনদ প্রদান করা হয়ে থাকে সেটায় হচ্ছে বয়নামা। নিলাম ক্রেতাকে সর্বদা সংশ্লিষ্ট আদালত হতে বয়নামা ও দখলনামা সংগ্রহ করে নিতে হয়। বয়নামা রেজিস্ট্রি করতে হয় না। কেননা সিপিসির আদেশ ২১ বিধি ৯৪ অনুযায়ী তা রেজিস্ট্রি সমতুল্য। এ কারণ ক্রেতাকে উক্ত জমির স্বত্বলাভের প্রমাণস্বরূপ আর আলাদাভাবে রেজিস্ট্রি অফিসের রেজিস্ট্রি করতে হয় না। তবে উক্ত বয়নামার অনুলিপি বা কপি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরণ করতে হবে যাতে রেজিস্ট্রার তা সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি বইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখতে পারেন।

দেওয়ানি আদালত বা রাজস্ব আদালত অথবা কালেক্টর কিংবা অন্য কোন রাজস্ব কর্মকর্তা কর্তৃক প্রকাশ্য নিলামে বিক্রীত সম্পত্তি খরিদের প্রমাণস্বরূপ বয়নামা দিয়ে থাকেন। Bengal Land Revenue Sale Act, 1859 এর ২৮ ধারা অনুযায়ী নিলাম খরিদ্দারের বরাবরে বয়নামা বা Sale Certificate সম্পাদন হয়ে থাকে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বয়নামা দলিল বা Sale Certificate স্বত্বের বাহক কি-না? যেহেতু বয়নামা দলিল সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে দখল হস্তান্তর বা দখল দেওয়া হয়ে থাকে না তাই বয়নামা দলিল কে স্বত্বের দলিল বলা যায় না। দখল হস্তান্তর নিলাম খরিদ্দারের বরাবরে প্রদান করা হয় তখনই দখল হস্তান্তর দলিল ও বয়নামা দলিল একত্রে একসঙ্গে একটি স্বত্বের দলিলে পরিণত হয়। একটির অভাবে অন্যটিকে স্বত্বের দলিল বলা যাবে না। সুতরাং আমরা বলতে পারি, বয়নামা দলিল ও দখল হস্তান্তর দলিল (দখল দেওয়ানি) একত্রে স্বত্বের দলিলে রূপান্তর হয়। এই বিষয়ে উচ্চ আদালত বলছে বয়নামা বা Sale Certificate স্বত্ব সৃষ্টি করে না, তবে স্বত্বের সাক্ষ্য বহন করে। (৭ ডিএলআর ৮০)। বয়নামা দলিলের সঙ্গে নিলাম খরিদ্দার কবুলিয়ত প্রদান করলে তা স্বত্বের দলিলে পরিণত হয়। (৫ ডিএলআর ২৮৫)।

সাধারণত প্রজাদের ভূমি-রাজস্ব বকেয়া পড়লে মালিকরা আদালতে খাজনার নালিশ করে ডিক্রি করতেন। প্রজা ওই ডিক্রিকৃত টাকা জমিদারকে প্রদান না করলে ওই খাজনার ডিক্রি জারি দিয়ে ওই ভূমি নিলাম করা হতো। ওই নিলাম উপরস্থ মালিকসহ সর্বসাধারণের খরিদ করার অধিকার ছিল। যে ব্যক্তি বেশি টাকায় নিলামের ডাক ওঠাতেন তিনি ওই নিলামের খরিদ্দার বলে গণ্য হতেন।

খাজনার ডিক্রি ছাড়া আরও কয়েক প্রকারের নিলাম হয়ে থাকে। যেমন সরকার কর্তৃক ভূমির বকেয়া রাজস্ব উত্তোলনের জন্য কিংবা দেওয়ানি মোকদ্দমার খরচের টাকা আদায়ের জন্য ও রেহানি ঋণের কারণে। যিনি নিলাম খরিদ করতেন তাকে একটি নিদর্শনপত্র বা সার্টিফিকেট দেয়া হতো, তাকে বয়নামা বলা হয়।

এ বয়নামা নিদর্শনপত্রগুলো জেলার কালেক্টরের রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত আছে। বয়নামার অনুলিপি রেজিস্ট্রি অফিসে সরবরাহ করা থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলার রেজিস্ট্রি অফিসেও পাওয়া যেতে পারে।

তবে অর্থ ঋণ আদালত আইন, ২০০৩ এর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক প্রেরিত মালিকানা সনদ এবং রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা অনুযায়ী বিক্রয় আদেশের কপি রেজিস্ট্রি করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

[লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]

back to top