alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

তরিকুল ইসলাম

: শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ পালন করা হয়। সেই হিসেবে এবছর আজ ১৬ নভেম্বর (রবিবার) দিবসটি পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নানা কর্মসূচি থাকলেও রোধ করা যাচ্ছেনা সড়ক দুর্ঘটনা। যার অন্যতম কারণ হলো নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা না থাকা। বর্তমানে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নির্বিবাদে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। তারপরও নেই সঠিক ব্যবস্থাপনা বা জনসচেতনতা। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা আজও আন্তর্জাতিক মানের হয়ে না ওঠার কারণে দুর্ঘটনার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণকে। প্রতিটি ক্ষণই তাদের থাকতে হয় আতঙ্কে- এই বুঝি গাড়ি উঠে গেলো গায়ের ওপর! গাড়ি নেমে গেল রাস্তার পাশে! এই বুঝি আর বাড়ি ফেরা হলো না! তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে বিআরটিএর হিসাব মতে, প্রতিবছর দেশে গড়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ মারা যায় ও ১০ হাজারের বেশি বিভিন্ন মাত্রায় আহত এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে। বিআরটিএর তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩ হাজার ৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২ হাজার ৯৪৩ জন নিহত হয়েছেন। গত বছর দেশে ৫ হাজার ৮৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিআরটিএর তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন সড়কে নিহত হচ্ছেন। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

ওয়ার্ল্ড হেলথ র‌্যাঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ ব্যতীত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো বা রোধ করা সম্ভব নয়।

আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এ আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্টের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। এ জন্য সড়কে প্রাণহানি কমাতে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত গতি রোডক্রাশের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটছে এর বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এর অন্যতম কারণ যানটির বেপরোয়া গতি। অর্থাৎ চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতির কারণে অধিকাংশ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে।

গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এর আওতায় ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার, রোডক্র?্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ৫টি আচরণগত ঝুঁকি যেমন, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনাহীনভাবে দেশে অনেক সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চালকদের গাড়ি চালানোর প্রবণতা, রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক বিদ্যমান থাকা, সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ ব্যাটারীচালিত রিক্সা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চালানো, মাদকসেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুলপথে গাড়ি চালানো, রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী বা পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে পথচারীদের চলাচল, রাস্তা পারাপারে ওভার ব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার না করা, রাস্তার ওপর বা ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্থ ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাস্তায় চলাচলে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন প্রতিপালনে যাত্রীদের অনীহা। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তা যদি দ্রুত রোধ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় বা যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়, তাহলে আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ও হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে। সড়কে অকালমৃত্যু শুধু ব্যক্তি নয়, বরং একটি পরিবার, সমাজ ও বৃহৎ পরিসরে রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্তরায়। তাই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

বর্তমানে দেশে যে আইন ও বিধিমালা আছে সেটা যদি পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা যায় তবে এর থেকে একটি আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। এরজন্য সরকারকে একটি বাস্তবায়ন গাইডলাইন বা নির্দেশিকা দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে উল্লেখ থাকবে মানসম্মত হেলমেট সংক্রান্ত নীতিমালাসমূহকে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে। পাশাপাশি বাজারে যেসকল মানহীন হেলমেট বিক্রি হচ্ছে সেগুলো অপসারণসহ বাজারে যাতে মানহীন হেলমেট বিক্রি না হয় সেটা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে।

এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মরোক্কতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল মিনিস্টিরিয়াল কনফারেন্সে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দেশের সড়কে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নসহ ২০২৬ সালের মধ্যে গতিসীমা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। সেজন্যে সরকারকে সাধুবাদ জানাই এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে বলে আমি আশা করছি। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে। সর্বপরি, সড়ক ব্যবহারকারীদের জীবন ও দেশের সম্পদ সুরিক্ষিত থাকবে।

[লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন]

অপরিকল্পিত বাঁধ-শিল্পায়নে বিপর্যস্ত বরেন্দ্র কৃষি

ছবি

মামদানি দেখালেন নেতৃত্বের মূল পরিচয় কী

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

নিরাপদ সড়ক ভাবনা

তরিকুল ইসলাম

শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ পালন করা হয়। সেই হিসেবে এবছর আজ ১৬ নভেম্বর (রবিবার) দিবসটি পালিত হচ্ছে। এই দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার নানা কর্মসূচি থাকলেও রোধ করা যাচ্ছেনা সড়ক দুর্ঘটনা। যার অন্যতম কারণ হলো নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা না থাকা। বর্তমানে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে নির্বিবাদে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। তারপরও নেই সঠিক ব্যবস্থাপনা বা জনসচেতনতা। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থা আজও আন্তর্জাতিক মানের হয়ে না ওঠার কারণে দুর্ঘটনার মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। যার মাশুল দিতে হচ্ছে রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণকে। প্রতিটি ক্ষণই তাদের থাকতে হয় আতঙ্কে- এই বুঝি গাড়ি উঠে গেলো গায়ের ওপর! গাড়ি নেমে গেল রাস্তার পাশে! এই বুঝি আর বাড়ি ফেরা হলো না! তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজন ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে বিআরটিএর হিসাব মতে, প্রতিবছর দেশে গড়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ মারা যায় ও ১০ হাজারের বেশি বিভিন্ন মাত্রায় আহত এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে। বিআরটিএর তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩ হাজার ৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২ হাজার ৯৪৩ জন নিহত হয়েছেন। গত বছর দেশে ৫ হাজার ৮৫৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিআরটিএর তথ্যমতে, দেশে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন সড়কে নিহত হচ্ছেন। তবে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।

ওয়ার্ল্ড হেলথ র‌্যাঙ্কিং অনুসারে, সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনাকবলিত ১৮৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ ব্যতীত দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো বা রোধ করা সম্ভব নয়।

আমাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত সড়কে পরিবহনের জন্য আইন এবং সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধিমালা। তাই পরিবহন ব্যবস্থাপনার জন্য তৈরি এ আইনে সাম্প্রতিক সংশোধনীর সময়ে গতি নিয়ন্ত্রণ, হেলমেট ও সিটবেল্টের মতো কিছু বিষয় সংযোজন করা হলেও তা সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষার করার জন্য পর্যাপ্ত নয়। সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অনেকটা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। এ জন্য সড়কে প্রাণহানি কমাতে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন জরুরি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত গতি রোডক্রাশের অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সড়কে যত দুর্ঘটনা ঘটছে এর বেশিরভাগই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। এর অন্যতম কারণ যানটির বেপরোয়া গতি। অর্থাৎ চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতির কারণে অধিকাংশ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে।

গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এর আওতায় ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার, রোডক্র?্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়াও সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ৫টি আচরণগত ঝুঁকি যেমন, গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনাহীনভাবে দেশে অনেক সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চালকদের গাড়ি চালানোর প্রবণতা, রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক বিদ্যমান থাকা, সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ ব্যাটারীচালিত রিক্সা অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চালানো, মাদকসেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুলপথে গাড়ি চালানো, রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী বা পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে পথচারীদের চলাচল, রাস্তা পারাপারে ওভার ব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার না করা, রাস্তার ওপর বা ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্থ ট্রাফিক ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাস্তায় চলাচলে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন প্রতিপালনে যাত্রীদের অনীহা। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তা যদি দ্রুত রোধ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী ও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় বা যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করা না হয়, তাহলে আগামীতে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ ও হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে। সড়কে অকালমৃত্যু শুধু ব্যক্তি নয়, বরং একটি পরিবার, সমাজ ও বৃহৎ পরিসরে রাষ্ট্রের উন্নয়নের অন্তরায়। তাই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

বর্তমানে দেশে যে আইন ও বিধিমালা আছে সেটা যদি পরিপূর্ণভাবে প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা যায় তবে এর থেকে একটি আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যাবে। এরজন্য সরকারকে একটি বাস্তবায়ন গাইডলাইন বা নির্দেশিকা দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে উল্লেখ থাকবে মানসম্মত হেলমেট সংক্রান্ত নীতিমালাসমূহকে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে। পাশাপাশি বাজারে যেসকল মানহীন হেলমেট বিক্রি হচ্ছে সেগুলো অপসারণসহ বাজারে যাতে মানহীন হেলমেট বিক্রি না হয় সেটা কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা থাকতে হবে।

এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মরোক্কতে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল মিনিস্টিরিয়াল কনফারেন্সে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দেশের সড়কে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০২৭ সালের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নসহ ২০২৬ সালের মধ্যে গতিসীমা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। সেজন্যে সরকারকে সাধুবাদ জানাই এবং প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে বলে আমি আশা করছি। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে, এসডিজির লক্ষ্য অর্জন সহজতর হবে। সর্বপরি, সড়ক ব্যবহারকারীদের জীবন ও দেশের সম্পদ সুরিক্ষিত থাকবে।

[লেখক: অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন]

back to top