alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাবারা এমনই হয়

মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন সুমন

: সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

বাবা ছোট একটি শব্দ হলেও এর ব্যাপকতা বিশাল। বাবা ডাকের মাঝেই লুকিয়ে আছে কি গভীর ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও নির্ভরতা। জন্ম নেয়া সন্তান বুকে নিয়ে বাবার যে সুখ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে সবচেয়ে সুন্দরতম উপহারগুলো পাওয়া যায় বাবার কাছ থেকেই।

হাজারো কষ্ট সয়ে তিলেতিলে সন্তানকে বড় করে তোলেন একজন বাবা। ছোট-বড়, অখ্যাত-বিখ্যাত সবার কাছে বাবা অসাধারণ। একজন আদর্শ বাবা তার সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল না হয়ে পারেন না। বাবা নামের মানুষটি সারা জীবন চরম কষ্ট হাসিমুখে স্বীকার করে যান সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু আজকাল দেখা যায় অনেকেই বাবাকে অবজ্ঞা, অবহেলা করছেন, যা মোটেই ঠিক নয়। বাবা শুধু একজন মানুষ নন, বাবার মাঝে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবি প্রকাশ। বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়।

বাবাকে নিয়ে সব সন্তানের অনুভূতিটা সমান হয় না। আবার সব বাবাও পারেন না সন্তানের প্রতি তার আবেগকে একইভাবে প্রকাশ করতে। বাবারা সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করে যান তার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত। প্রকাশভঙ্গি যাই হোক সন্তানের জন্য পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলতে চেষ্টার কোন কমতি থাকে না তার। তাই বাবা মাদের বন্ধু তারাই জানে কি করে নিজের সব ভাবনাকে বাবার হাতে সঁপে দিয়ে হালকা হতে হয়।

বাবার সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। আমরা যেন বাবার স্নেহের মাঝে বেড়ে ওঠা আমাদের শৈশব আর কৈশরের দিনগুলো ভুলে না যাই। বাবাকে সম্মান করলে জীবন পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর অবহেলা করলে জীবনে নেমে আসবে অন্ধকার। পৃথিবীর সব থেকে বড় ক্রেডিট কার্ড যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো আমাদের বাবা। যে কার্ড দিয়ে আমরা পৃথিবীর সব সুখ কিনতে পারি। আমরা যত বড়ই হই না কেন বাবা ছাড়া যে আমরা প্রত্যেকেই অচল।

মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ছোটবেলা হতেই আমরা পড়ে এসেছি। কিন্তু বিশ্বায়নের এ যুগে বড় হয়ে আমরা এ কর্তব্য ভুলে যাই। কয়েক দশক ধরেই এ উপমহাদেশের ঐতিহ্য যৌথ পরিবার ভেঙে পশ্চিমা অনুকরণে একক পরিবারের দিকে ধাবিত হচ্ছি, সঙ্গে পারিবারিক দায়িত্ববোধ ভুলে গিয়ে বাবা-মাকে ভরণপোষণ করতে ভুলে যাচ্ছি। অথচ জীবজগতে একমাত্র মানবসন্তানকে জন্ম দেয়া থেকে শুরু করে তাকে সাবালক করা পর্যন্ত মা-বাবাকে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বাবা-মাকে ভরণপোষণ করতে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ-সংক্রান্ত ‘বাবা-মায়ের ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মা-বাবারা সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভের আইনি অধিকার লাভ করেছেন, যা ক্ষুদ্র হলে যে কোন মা-বাবা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

এ আইনে ভরণপোষণ বলতে খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদানকে বোঝানো হয়েছে। এ আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ আইনে সন্তান বলতে সক্ষম ও সামর্থ্যবান ছেলে ও কন্যা উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। একাধিক সন্তান থাকলে সন্তানদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এ আইন অনুসারে পৃথকভাবে বসবাস করলেও মা-বাবার সঙ্গে সন্তানরা নিয়মিতভাবে দেখা সাক্ষাৎ করবে এবং যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ নিয়মিতভাবে প্রদান করবে। আবার যাদের মা-বাবা নেই কিন্তু দাদা-দাদি বা নানা-নানি আছে যাদের ভরণপোষণ করা সেই বাবা বা মায়ের দায়িত্ব ছিল তাদেরই বাবা-মায়ের সে দায়িত্ব পালন করতে হবে অর্থাৎ ভরণপোষণ করতে হবে।

বাবারা সারা জীবন সন্তানের জন্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন বুনে গেছেন। নিজের সুখের দিকে না তাকিয়ে তারা সন্তানকে সুখী করতে চেয়েছেন। নিজে কম খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছেন। নিজে আরাম আয়েশ ভোগ না করে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেছেন। আসলে বাবারা এমনই হয়, হয়তো আমরাও বাবা হয়ে এমনই হবো।

[লেখক : সহকারী তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ সচিবালয়]

ব্যাকবেঞ্চারদের পৃথিবী : ব্যর্থতার গায়ে সাফল্যের ছাপ

আমের অ্যানথ্রাকনোজ ও বোঁটা পঁচা রোগ

শিশুদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি : স্কুল ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা ও সংকট

প্রশিক্ষণ থেকে কেন বাদ নারী কৃষকরা?

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লই গো বুক পেতে অনল-বাণ!

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাবারা এমনই হয়

মুহাম্মদ জসীম উদ্দিন সুমন

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২০

বাবা ছোট একটি শব্দ হলেও এর ব্যাপকতা বিশাল। বাবা ডাকের মাঝেই লুকিয়ে আছে কি গভীর ভালোবাসা, নিরাপত্তা ও নির্ভরতা। জন্ম নেয়া সন্তান বুকে নিয়ে বাবার যে সুখ তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে সবচেয়ে সুন্দরতম উপহারগুলো পাওয়া যায় বাবার কাছ থেকেই।

হাজারো কষ্ট সয়ে তিলেতিলে সন্তানকে বড় করে তোলেন একজন বাবা। ছোট-বড়, অখ্যাত-বিখ্যাত সবার কাছে বাবা অসাধারণ। একজন আদর্শ বাবা তার সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল না হয়ে পারেন না। বাবা নামের মানুষটি সারা জীবন চরম কষ্ট হাসিমুখে স্বীকার করে যান সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। কিন্তু আজকাল দেখা যায় অনেকেই বাবাকে অবজ্ঞা, অবহেলা করছেন, যা মোটেই ঠিক নয়। বাবা শুধু একজন মানুষ নন, বাবার মাঝে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবি প্রকাশ। বাবার ছায়া শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চেয়েও বড়।

বাবাকে নিয়ে সব সন্তানের অনুভূতিটা সমান হয় না। আবার সব বাবাও পারেন না সন্তানের প্রতি তার আবেগকে একইভাবে প্রকাশ করতে। বাবারা সন্তানের জন্য মঙ্গল কামনা করে যান তার জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত। প্রকাশভঙ্গি যাই হোক সন্তানের জন্য পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে তুলতে চেষ্টার কোন কমতি থাকে না তার। তাই বাবা মাদের বন্ধু তারাই জানে কি করে নিজের সব ভাবনাকে বাবার হাতে সঁপে দিয়ে হালকা হতে হয়।

বাবার সেবা করা প্রত্যেক সন্তানের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। আমরা যেন বাবার স্নেহের মাঝে বেড়ে ওঠা আমাদের শৈশব আর কৈশরের দিনগুলো ভুলে না যাই। বাবাকে সম্মান করলে জীবন পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর অবহেলা করলে জীবনে নেমে আসবে অন্ধকার। পৃথিবীর সব থেকে বড় ক্রেডিট কার্ড যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো আমাদের বাবা। যে কার্ড দিয়ে আমরা পৃথিবীর সব সুখ কিনতে পারি। আমরা যত বড়ই হই না কেন বাবা ছাড়া যে আমরা প্রত্যেকেই অচল।

মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ছোটবেলা হতেই আমরা পড়ে এসেছি। কিন্তু বিশ্বায়নের এ যুগে বড় হয়ে আমরা এ কর্তব্য ভুলে যাই। কয়েক দশক ধরেই এ উপমহাদেশের ঐতিহ্য যৌথ পরিবার ভেঙে পশ্চিমা অনুকরণে একক পরিবারের দিকে ধাবিত হচ্ছি, সঙ্গে পারিবারিক দায়িত্ববোধ ভুলে গিয়ে বাবা-মাকে ভরণপোষণ করতে ভুলে যাচ্ছি। অথচ জীবজগতে একমাত্র মানবসন্তানকে জন্ম দেয়া থেকে শুরু করে তাকে সাবালক করা পর্যন্ত মা-বাবাকে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। তাই আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বাবা-মাকে ভরণপোষণ করতে নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হয়।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বাবা-মায়ের ভরণপোষণ-সংক্রান্ত ‘বাবা-মায়ের ভরণপোষণ আইন, ২০১৩’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মা-বাবারা সন্তানের কাছ থেকে ভরণপোষণ লাভের আইনি অধিকার লাভ করেছেন, যা ক্ষুদ্র হলে যে কোন মা-বাবা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।

এ আইনে ভরণপোষণ বলতে খাওয়া-দাওয়া, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বসবাসের সুবিধা এবং সঙ্গ প্রদানকে বোঝানো হয়েছে। এ আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তার বাবা-মায়ের ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ আইনে সন্তান বলতে সক্ষম ও সামর্থ্যবান ছেলে ও কন্যা উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। একাধিক সন্তান থাকলে সন্তানদের নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

এ আইন অনুসারে পৃথকভাবে বসবাস করলেও মা-বাবার সঙ্গে সন্তানরা নিয়মিতভাবে দেখা সাক্ষাৎ করবে এবং যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ নিয়মিতভাবে প্রদান করবে। আবার যাদের মা-বাবা নেই কিন্তু দাদা-দাদি বা নানা-নানি আছে যাদের ভরণপোষণ করা সেই বাবা বা মায়ের দায়িত্ব ছিল তাদেরই বাবা-মায়ের সে দায়িত্ব পালন করতে হবে অর্থাৎ ভরণপোষণ করতে হবে।

বাবারা সারা জীবন সন্তানের জন্য সুন্দর জীবনের স্বপ্ন বুনে গেছেন। নিজের সুখের দিকে না তাকিয়ে তারা সন্তানকে সুখী করতে চেয়েছেন। নিজে কম খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছেন। নিজে আরাম আয়েশ ভোগ না করে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করেছেন। আসলে বাবারা এমনই হয়, হয়তো আমরাও বাবা হয়ে এমনই হবো।

[লেখক : সহকারী তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর, বাংলাদেশ সচিবালয়]

back to top