alt

উপ-সম্পাদকীয়





























  • download

চিকিৎসা বর্জ্যরে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ

জিল্লুর রহমান

: শনিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৩

পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসা বর্জ্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নগরায়নের ফলে অপরিকল্পিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠার কারণে চিকিৎসা বর্জ্যরে দূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থাকে কঠিন করে তুলছে চিকিৎসা বর্জ্যরে দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষেত্র বিশেষে চরম অব্যবস্থাপনা। ফলে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শনার্থী পর্যন্ত নানা ধরনের কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার মাটি, পানি ও বাতাসেও এসব দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।

আসলে যেকোন ধরনের বর্জ্য, যদি তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বা ভয় থাকে, তবে তাকে চিকিৎসা বর্জ্য বলা হয় অর্থাৎ চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোন ধরনের বর্জ্য যেগুলো ডাক্তারের অফিস, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসা গবেষণা ক্ষেত্র, দন্ত চিকিৎসকের চেম্বার, ব্লাডব্যাংক, প্রবীণদের জন্য নার্সিং হোম এবং পশু হাসপাতাল থেকে উৎপন্ন হয় তার সবকিছুই চিকিৎসা বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসা বর্জ্যকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে। প্রথমত সাধারণ চিকিৎসা সেবা সম্পর্কিত বর্জ্য যেগুলো সংক্রমণের সম্ভাবনাহীন বস্তু যেমন- প্রাণীর টিস্যু, অফিস পেপার, ঝাড়ুযোগ্য আবর্জনা, রান্নাঘরের আবর্জনা প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য যেমন- নিডল, ছুরি-কাঁচি, ব্লেড এবং মানব টিস্যু, তরল ও সংক্রমণের সম্ভাবনাসহ যেকোন বস্তু।

১৯৮৮ সালের ‘মেডিকেল ওয়াস্ট ট্রাকিং অ্যাক্ট’ এর সংজ্ঞা অনুযায়ী চিকিৎসা গবেষণা, পরীক্ষণ, রোগ নির্ণয়, প্রতিষেধক প্রদান অথবা মানুষ ও প্রাণীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে উদ্ভূত যেকোন বর্জ্যকে চিকিৎসা বর্জ্য বলে। যেমন- কালচার করা ডিশ, যেকোন কাঁচের পাত্র, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, মাস্ক, গ্লাভস, বাতিল হওয়া ছুরি-কাঁচি, সূচ, স্যালাইন ব্যাগ, রক্তের ব্যাগ, সংগৃহীত লালা, কফের নমুনা, দেহরস, টিস্যু, টিউমার, মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রভৃতি। চিকিৎসা বর্জ্যকে ভিন্ন ভিন্ন অনেক নামে অভিহিত করা হলেও সবগুলোর মৌলিক বিষয়বস্তু এক অর্থাৎ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে উদ্ভূত এসব বস্তু, সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

এসব চিকিৎসা বর্জ্য থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত দ্রব্য, ক্ষতিকর ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থ মাটি, পানি ও বাতাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মিশে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এসব বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় সাধারণ বর্জ্যরে মতোই তার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। চিকিৎসা বর্জ্যকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্যসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিসর অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডিসপোজেবল চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবহার। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্যরে বেশির ভাগই কমবেশি সংক্রামক জীবাণুর বাহক। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে উৎপন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদন্ড বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নাজুক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি হাসপাতালের নকশায় চিকিৎসা বর্জ্যরে নিরাপদ নিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্দিষ্ট করা থাকতে হবে। চিকিৎসায় উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর বেশির ভাগ হাসপাতালে মেডিকেল ইনসিনেরেটর এবং অটোক্লেভ বা দহন যন্ত্র রয়েছে। এছাড়া তরল জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রয়েছে লিকুইড ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু আমাদের দেশের হাসপাতালগুলো এখনও বিশ্বমানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অর্জন করতে সক্ষম নয়। বাংলাদেশের চিকিৎসা বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় যাচ্ছে তাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে হাসপাতাল এলাকার বাতাসে সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক হাসপাতালের আশপাশে ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকায় টনে টনে চিকিৎসা বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বহিঃর্বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগের রোগীসহ ওই এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসা বর্জ্যরে দুর্গন্ধ ও মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্য এতটাই ক্ষতিকারক যে একজন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করতে মাত্র পাঁচ মিনিটই যথেষ্ট। তবে হাসাপাতালের এসব চিকিৎসা বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করণীয় কী তার সঠিক সমাধান অনেক হাসাপাতালেরই নেই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকার হাসাপাতালগুলোর চিকিৎসা বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক ও শোচনীয়। অনেকে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর রোগীর শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাধারণত মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় কিন্তু গজ ব্যান্ডিজসহ সাধারণ বর্জ্যগুলো হাসপাতালের ডাস্টবিনে ফেলা হয়। এসব বর্জ্য জমে মাঝে মাঝে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বর্ষামৌসুমে এসব বর্জ্য পানিতে মিশে খাল বিল, পুকুর ডোবা, নদীতে মিশে পানিকে দূষিত করে তোলে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে এসব বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে আগুনে পোড়ার সময় আশপাশের বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আবার এমন অনেক বর্জ্য আছে যা সাধারণত আগুনে পুড়ে না এবং মাটির সঙ্গে দীর্ঘদিন মিশে থাকার কারণে মাটির ক্ষয় সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চিকিৎসা বর্জ্যের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় হাসপাতালের বর্জ্য জীবাণুমুক্ত না করেই একটি চক্র বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে যা আবার নানা হাত ঘুরে স্থান করে নিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়- হাসপাতালের দুই ধরনের চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি করা হয়, পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও পুনঃচক্রায়নযোগ্য বর্জ্য। হাসপাতালের কর্মীদের একটি সিন্ডিকেট চক্র পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য যেমন, ব্যবহৃত কাঁচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও রাবার বা প্লাস্টিক নল নষ্ট না করে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহকারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিক্রি করে দেয়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করা হয় না। ফলে এসব উপকরণ পুনঃব্যবহারে এইচআইভিসহ মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। একইভাবে ওই সিন্ডিকেট চক্র পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ ইত্যাদি) নষ্ট/ধ্বংস না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙারির দোকানে এবং রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে বিক্রি করে দেয়। সংক্রমিত অবস্থায় এসব বর্জ্য পরিবহন করার ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও রিসাইক্লিং কারখানার কর্মীদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ে। টিআইবি একটি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কেজি প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়- বর্জ্য সংরক্ষণ পাত্রে বর্জ্যরে ধরন অনুযায়ী কালার কোড থাকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে তা পরিপালনের ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৯ শতাংশ হাসপতালের বর্জ্য সংরক্ষণের পাত্রে কালার কোড নেই এবং ৫১ শতাংশ পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন নেই। এছাড়া কোভিড-১৯ ও সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী চিকিৎসা বর্জ্য পুনঃব্যবহার রোধে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিক নল ও বিভিন্ন ব্যাগ টুকরো করে কাটার নির্দেশনা থাকলেও তা পরিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিকের ব্যাগ কাটা হয় না এবং ৩১ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিকের নল কাটা হয় না। গাইডলাইন অনুযায়ী পুনঃব্যবহার রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহারের পরপরই ধ্বংস বা গলিয়ে দিতে হয়। দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ হাসপাতালে সূঁচ ধ্বংসকারী (নিডল ডেস্ট্রয়ার) যন্ত্রটি নেই।

তাছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তারা বর্জ্য নষ্ট না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। টিআইবি একটি সুপরিচিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কালোবাজারে প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ পেয়েছে। টিআইবি বলছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি ছাড়াও সক্ষমতা তৈরির ঘাটতি রয়েছে। বর্জ্য বিনষ্ট না করে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত না করে বিক্রির ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বিগত দুই তিন বছরে করোনা মহামারীর কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া, সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ব্যবহার শেষে যত্রতত্র মাস্কের নিক্ষেপণ এবং ভ্যাকসিন প্রদান ও ব্যবহৃত নিডলের নিক্ষেপ জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

নিয়ন্ত্রণহীন নেটজগৎ ও ফেইসবুক : সমাজে বিভ্রান্তির ডিজিটাল উৎপত্তি

বস্তিবাসী নারী : অদৃশ্য শক্তির আখ্যান

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল : বিতর্ক, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন

সংস্কারের ভবিষ্যত কী?

বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় চায় না তো কেউ, প্রকৃতির নিয়মে আসে কিন্তু তাই!

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

চিকিৎসা বর্জ্যরে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণ

জিল্লুর রহমান

  • download

শনিবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৩

পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য চিকিৎসা বর্জ্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে নগরায়নের ফলে অপরিকল্পিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে ওঠার কারণে চিকিৎসা বর্জ্যরে দূষণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থাকে কঠিন করে তুলছে চিকিৎসা বর্জ্যরে দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষেত্র বিশেষে চরম অব্যবস্থাপনা। ফলে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িত ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, ল্যাব টেকনিশিয়ান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শনার্থী পর্যন্ত নানা ধরনের কঠিন ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার মাটি, পানি ও বাতাসেও এসব দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।

আসলে যেকোন ধরনের বর্জ্য, যদি তা থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা বা ভয় থাকে, তবে তাকে চিকিৎসা বর্জ্য বলা হয় অর্থাৎ চিকিৎসা সেবার সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোন ধরনের বর্জ্য যেগুলো ডাক্তারের অফিস, হাসপাতাল, ল্যাবরেটরিতে চিকিৎসা গবেষণা ক্ষেত্র, দন্ত চিকিৎসকের চেম্বার, ব্লাডব্যাংক, প্রবীণদের জন্য নার্সিং হোম এবং পশু হাসপাতাল থেকে উৎপন্ন হয় তার সবকিছুই চিকিৎসা বর্জ্যরে অন্তর্ভুক্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিকিৎসা বর্জ্যকে প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে। প্রথমত সাধারণ চিকিৎসা সেবা সম্পর্কিত বর্জ্য যেগুলো সংক্রমণের সম্ভাবনাহীন বস্তু যেমন- প্রাণীর টিস্যু, অফিস পেপার, ঝাড়ুযোগ্য আবর্জনা, রান্নাঘরের আবর্জনা প্রভৃতি। দ্বিতীয়ত ঝুঁকিপূর্ণ বা বিপজ্জনক চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য যেমন- নিডল, ছুরি-কাঁচি, ব্লেড এবং মানব টিস্যু, তরল ও সংক্রমণের সম্ভাবনাসহ যেকোন বস্তু।

১৯৮৮ সালের ‘মেডিকেল ওয়াস্ট ট্রাকিং অ্যাক্ট’ এর সংজ্ঞা অনুযায়ী চিকিৎসা গবেষণা, পরীক্ষণ, রোগ নির্ণয়, প্রতিষেধক প্রদান অথবা মানুষ ও প্রাণীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে উদ্ভূত যেকোন বর্জ্যকে চিকিৎসা বর্জ্য বলে। যেমন- কালচার করা ডিশ, যেকোন কাঁচের পাত্র, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা, মাস্ক, গ্লাভস, বাতিল হওয়া ছুরি-কাঁচি, সূচ, স্যালাইন ব্যাগ, রক্তের ব্যাগ, সংগৃহীত লালা, কফের নমুনা, দেহরস, টিস্যু, টিউমার, মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রভৃতি। চিকিৎসা বর্জ্যকে ভিন্ন ভিন্ন অনেক নামে অভিহিত করা হলেও সবগুলোর মৌলিক বিষয়বস্তু এক অর্থাৎ চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে উদ্ভূত এসব বস্তু, সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে।

এসব চিকিৎসা বর্জ্য থেকে প্রতিনিয়ত বিষাক্ত দ্রব্য, ক্ষতিকর ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থ মাটি, পানি ও বাতাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মিশে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে এসব বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত কোনো দিকনির্দেশনা না থাকায় সাধারণ বর্জ্যরে মতোই তার ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। চিকিৎসা বর্জ্যকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্যসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশের সর্বত্র চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিসর অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেই সঙ্গে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডিসপোজেবল চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবহার। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্যরে বেশির ভাগই কমবেশি সংক্রামক জীবাণুর বাহক। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, চিকিৎসা ক্ষেত্রে উৎপন্ন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মানদন্ড বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে নাজুক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি হাসপাতালের নকশায় চিকিৎসা বর্জ্যরে নিরাপদ নিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্দিষ্ট করা থাকতে হবে। চিকিৎসায় উৎপন্ন বর্জ্য পদার্থ ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর বেশির ভাগ হাসপাতালে মেডিকেল ইনসিনেরেটর এবং অটোক্লেভ বা দহন যন্ত্র রয়েছে। এছাড়া তরল জাতীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রয়েছে লিকুইড ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। কিন্তু আমাদের দেশের হাসপাতালগুলো এখনও বিশ্বমানের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অর্জন করতে সক্ষম নয়। বাংলাদেশের চিকিৎসা বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং কোনো সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় যাচ্ছে তাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

আমাদের দেশের অধিকাংশ হাসপাতালের বর্জ্য যত্রতত্র ফেলার কারণে হাসপাতাল এলাকার বাতাসে সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক হাসপাতালের আশপাশে ও তৎসংলগ্ন আবাসিক এলাকায় টনে টনে চিকিৎসা বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বহিঃর্বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ বিভাগের রোগীসহ ওই এলাকার বাসিন্দারা চিকিৎসা বর্জ্যরে দুর্গন্ধ ও মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শিকার হয়ে নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বর্জ্য এতটাই ক্ষতিকারক যে একজন সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করতে মাত্র পাঁচ মিনিটই যথেষ্ট। তবে হাসাপাতালের এসব চিকিৎসা বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের করণীয় কী তার সঠিক সমাধান অনেক হাসাপাতালেরই নেই। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকার হাসাপাতালগুলোর চিকিৎসা বর্জ্যরে ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত নাজুক ও শোচনীয়। অনেকে হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর রোগীর শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাধারণত মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় কিন্তু গজ ব্যান্ডিজসহ সাধারণ বর্জ্যগুলো হাসপাতালের ডাস্টবিনে ফেলা হয়। এসব বর্জ্য জমে মাঝে মাঝে ছড়িয়ে পড়ে দুর্গন্ধ, যা মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। বর্ষামৌসুমে এসব বর্জ্য পানিতে মিশে খাল বিল, পুকুর ডোবা, নদীতে মিশে পানিকে দূষিত করে তোলে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে এসব বর্জ্য অপরিকল্পিতভাবে আগুনে পোড়ার সময় আশপাশের বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আবার এমন অনেক বর্জ্য আছে যা সাধারণত আগুনে পুড়ে না এবং মাটির সঙ্গে দীর্ঘদিন মিশে থাকার কারণে মাটির ক্ষয় সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) চিকিৎসা বর্জ্যের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ‘চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় হাসপাতালের বর্জ্য জীবাণুমুক্ত না করেই একটি চক্র বাইরে বিক্রি করে দিচ্ছে যা আবার নানা হাত ঘুরে স্থান করে নিচ্ছে বিভিন্ন ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। ওই গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়- হাসপাতালের দুই ধরনের চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি করা হয়, পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য ও পুনঃচক্রায়নযোগ্য বর্জ্য। হাসপাতালের কর্মীদের একটি সিন্ডিকেট চক্র পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য যেমন, ব্যবহৃত কাঁচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও রাবার বা প্লাস্টিক নল নষ্ট না করে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহকারীর কাছে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে বিক্রি করে দেয়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবানুমুক্ত করা হয় না। ফলে এসব উপকরণ পুনঃব্যবহারে এইচআইভিসহ মারাত্মক সংক্রামক রোগের ঝুঁকি রয়েছে। একইভাবে ওই সিন্ডিকেট চক্র পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ ইত্যাদি) নষ্ট/ধ্বংস না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙারির দোকানে এবং রিসাইক্লিং কারখানাগুলোতে বিক্রি করে দেয়। সংক্রমিত অবস্থায় এসব বর্জ্য পরিবহন করার ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ও রিসাইক্লিং কারখানার কর্মীদের বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং পরিবেশ দূষণের ঝুঁকি বাড়ে। টিআইবি একটি জেলার বিভিন্ন হাসপাতালের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কেজি প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্য অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়- বর্জ্য সংরক্ষণ পাত্রে বর্জ্যরে ধরন অনুযায়ী কালার কোড থাকা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও হাসপাতালগুলোতে তা পরিপালনের ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৯ শতাংশ হাসপতালের বর্জ্য সংরক্ষণের পাত্রে কালার কোড নেই এবং ৫১ শতাংশ পাত্রে সাংকেতিক চিহ্ন নেই। এছাড়া কোভিড-১৯ ও সাধারণ চিকিৎসা বর্জ্য একত্রে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। চিকিৎসা বর্জ্য বিধিমালা-২০০৮ অনুযায়ী চিকিৎসা বর্জ্য পুনঃব্যবহার রোধে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিক নল ও বিভিন্ন ব্যাগ টুকরো করে কাটার নির্দেশনা থাকলেও তা পরিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সার্বিকভাবে ২৮ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিকের ব্যাগ কাটা হয় না এবং ৩১ শতাংশ হাসপাতালে ব্যবহৃত রাবার/প্লাস্টিকের নল কাটা হয় না। গাইডলাইন অনুযায়ী পুনঃব্যবহার রোধ করার জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহারের পরপরই ধ্বংস বা গলিয়ে দিতে হয়। দেখা যায়, ৪৯ শতাংশ হাসপাতালে সূঁচ ধ্বংসকারী (নিডল ডেস্ট্রয়ার) যন্ত্রটি নেই।

তাছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। তারা বর্জ্য নষ্ট না করে কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। টিআইবি একটি সুপরিচিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কালোবাজারে প্লাস্টিক চিকিৎসা বর্জ্যের অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ পেয়েছে। টিআইবি বলছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও সমন্বয়ের ঘাটতি ছাড়াও সক্ষমতা তৈরির ঘাটতি রয়েছে। বর্জ্য বিনষ্ট না করে অনিয়ম, দুর্নীতি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত না করে বিক্রির ফলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে বিগত দুই তিন বছরে করোনা মহামারীর কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়া, সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার বৃদ্ধি ও ব্যবহার শেষে যত্রতত্র মাস্কের নিক্ষেপণ এবং ভ্যাকসিন প্রদান ও ব্যবহৃত নিডলের নিক্ষেপ জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও পরিবেশ দূষণকে ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]

back to top