হেফাজতের সাবেক নেতা মামুনুল হকের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা মামলায় ছয় মাস কারাভোগের পর শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জামিন পেয়েছেন সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা ঝুমন দাস। তার জামিনে পুরো পরিবার খুশি হলেও মুক্তির পর ঝুমন দাসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা। এদিকে বৃহস্পতিবার জামিন আদেশ হলেও ঝুমনের মুক্তি পেতে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ও শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুদিন ছুটির দিন থাকায় জামিন আদেশ সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে দেরি হবে বলে আইনজীবী সূত্রে জানা যায়।
ঝুমনের মা নিবা রানী দাস সংবাদকে বলেন, মিথ্যা মামলায় আমার ছেলে প্রায় ৭ মাস ধরে জেলে রয়েছে। তার জামিন হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। কিন্তু মুক্তির পর তার নিরাপত্তা নিয়ে মনে ভয় কাজ করছে। তবুও আমার ছেলে ঘরে ফিরে আসবে, এই প্রত্যাশায় আছি।
তিনি বলেন, ঝুমনের যখন ১১ বছর বয়স তখনই তার বাবা গোপেন্দ্র দাসের দেহাবসান হয়। এরপর নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ছেলেকে বড় করি। আমার ছেলে সুনামগঞ্জে হরেক রকমের পণ্য বিক্রয় করত। বোনের বিয়েতে বাড়িতে এসে বিনা অপরাধে এখন জেলে। আমি ঝুমনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি।
ঝুমনের স্ত্রী সুইটি রানী দাস সংবাদকে বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে আমাদের বিয়ে হয়। সুখের সংসারে গত সেপ্টেম্বরে আমাদের একমাত্র ছেলে ইশান দাস সোম্যের জন্ম হয়। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে আমাদের সাজানো সংসার এলোমেলো করে দিয়েছে। বিনা অপরাধে আমার স্বামী জেলে রয়েছে।
তিনি বলেন, জামিনে আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু মুক্তির পর আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, যারা আমাদের পাড়ায় হামলা করেছিল, তারা আমার স্বামীর আগেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তারা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘোরাঘুরি করে। তাই, ঝুমনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস ফেসবুক স্ট্যাটাসে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে ১৭ মার্চ সকালে সেখানকার হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। হেফাজত সমর্থকরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে অন্তত ৮৯টি পরিবারের বসতঘর ও সাতটি পারিবারিক মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর গত ২২ মার্চ ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গত ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দী এ যুবক।
সুনামগঞ্জের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন না হওয়ায় ঝুমনের আইনজীবীরা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেলে গত ২২ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ঝুমন দাসের জামিন আদেশ দেন।
এর আগে গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, এটা কোন মামলাই হতে পারে না। মামলা যাদের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা তাদের বিরুদ্ধে না হয়ে মামলা করা হয়েছে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে। ঝুমন দাসের মা যাও একটা মামলা করেছে, সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে।
জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, একটা মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মামুনুল হকের কর্মকান্ড, বক্তব্য নিয়ে সরকারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অনেক মন্ত্রী এমপি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মামুনুল হকদের কর্মকান্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। ঝুমন দাস বলেছিলেন, মামুনুল হকরা যা করছে তা পাকিস্তানি অ্যাক্টিভিটি। এ কথা সরকারও বলেছে। তাহলে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে মামলা কেন?
ঝুমন দাসের গ্রেপ্তার এবং আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও হাই কোর্টের শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী। তিনি বলেন, ঘটনার তারিখ হচ্ছে ১৬ মার্চ। জব্দ তালিকা অনুযায়ী ঝুমন দাসের মোবাইল জব্দ করার তারিখ বলা হয়েছে ১৬ মার্চ, অর্থাৎ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই দিনই। কিন্তু পুলিশ মামলা করেছে ২২ মার্চ। আর আদালতে হাজির করা হয়েছে ২৩ মার্চ। আসামিকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার কথা। প্রশ্ন হলো এতদিন তাহলে ঝুমন দাস কোথায় ছিলেন?
মার্চের ঘটনার পর থেকেই ঝুমন দাসের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ঝুমন দাসের মুক্তির জন্য সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এ ছাড়া ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক।
শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
হেফাজতের সাবেক নেতা মামুনুল হকের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা মামলায় ছয় মাস কারাভোগের পর শর্তসাপেক্ষে এক বছরের জামিন পেয়েছেন সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাও গ্রামের বাসিন্দা ঝুমন দাস। তার জামিনে পুরো পরিবার খুশি হলেও মুক্তির পর ঝুমন দাসের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা। এদিকে বৃহস্পতিবার জামিন আদেশ হলেও ঝুমনের মুক্তি পেতে আরও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। শুক্রবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ও শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুদিন ছুটির দিন থাকায় জামিন আদেশ সুনামগঞ্জে পৌঁছাতে দেরি হবে বলে আইনজীবী সূত্রে জানা যায়।
ঝুমনের মা নিবা রানী দাস সংবাদকে বলেন, মিথ্যা মামলায় আমার ছেলে প্রায় ৭ মাস ধরে জেলে রয়েছে। তার জামিন হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি। কিন্তু মুক্তির পর তার নিরাপত্তা নিয়ে মনে ভয় কাজ করছে। তবুও আমার ছেলে ঘরে ফিরে আসবে, এই প্রত্যাশায় আছি।
তিনি বলেন, ঝুমনের যখন ১১ বছর বয়স তখনই তার বাবা গোপেন্দ্র দাসের দেহাবসান হয়। এরপর নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ছেলেকে বড় করি। আমার ছেলে সুনামগঞ্জে হরেক রকমের পণ্য বিক্রয় করত। বোনের বিয়েতে বাড়িতে এসে বিনা অপরাধে এখন জেলে। আমি ঝুমনের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি।
ঝুমনের স্ত্রী সুইটি রানী দাস সংবাদকে বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে আমাদের বিয়ে হয়। সুখের সংসারে গত সেপ্টেম্বরে আমাদের একমাত্র ছেলে ইশান দাস সোম্যের জন্ম হয়। কিন্তু হঠাৎ ঝড়ে আমাদের সাজানো সংসার এলোমেলো করে দিয়েছে। বিনা অপরাধে আমার স্বামী জেলে রয়েছে।
তিনি বলেন, জামিনে আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু মুক্তির পর আমি আমার স্বামীর নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ, যারা আমাদের পাড়ায় হামলা করেছিল, তারা আমার স্বামীর আগেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে। তারা এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘোরাঘুরি করে। তাই, ঝুমনের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে শানে রিসালাত সম্মেলন নামে একটি সমাবেশের আয়োজন করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে হেফাজতের তৎকালীন আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বক্তব্য দেন। নোয়াগাঁও গ্রামের যুবক ঝুমন দাস ফেসবুক স্ট্যাটাসে মামুনুলের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের অভিযোগ আনেন। এতে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়ায় নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা ১৬ মার্চ রাতে ঝুমনকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে ১৭ মার্চ সকালে সেখানকার হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। হেফাজত সমর্থকরা এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। এতে অন্তত ৮৯টি পরিবারের বসতঘর ও সাতটি পারিবারিক মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর গত ২২ মার্চ ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সেই মামলায় গত ছয় মাস ধরে কারাগারে বন্দী এ যুবক।
সুনামগঞ্জের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিন না হওয়ায় ঝুমনের আইনজীবীরা জজ আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও জামিন আবেদন নাকচ হয়ে গেলে গত ২২ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ ঝুমন দাসের জামিন আদেশ দেন।
এর আগে গত সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, এটা কোন মামলাই হতে পারে না। মামলা যাদের বিরুদ্ধে হওয়ার কথা তাদের বিরুদ্ধে না হয়ে মামলা করা হয়েছে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে। ঝুমন দাসের মা যাও একটা মামলা করেছে, সেই মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করার পর জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে।
জেড আই খান পান্না বলেছিলেন, একটা মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। মামুনুল হকের কর্মকান্ড, বক্তব্য নিয়ে সরকারও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অনেক মন্ত্রী এমপি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মামুনুল হকদের কর্মকান্ড কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। ঝুমন দাস বলেছিলেন, মামুনুল হকরা যা করছে তা পাকিস্তানি অ্যাক্টিভিটি। এ কথা সরকারও বলেছে। তাহলে ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে মামলা কেন?
ঝুমন দাসের গ্রেপ্তার এবং আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও হাই কোর্টের শুনানিতে প্রশ্ন তোলেন সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী। তিনি বলেন, ঘটনার তারিখ হচ্ছে ১৬ মার্চ। জব্দ তালিকা অনুযায়ী ঝুমন দাসের মোবাইল জব্দ করার তারিখ বলা হয়েছে ১৬ মার্চ, অর্থাৎ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ওই দিনই। কিন্তু পুলিশ মামলা করেছে ২২ মার্চ। আর আদালতে হাজির করা হয়েছে ২৩ মার্চ। আসামিকে গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার কথা। প্রশ্ন হলো এতদিন তাহলে ঝুমন দাস কোথায় ছিলেন?
মার্চের ঘটনার পর থেকেই ঝুমন দাসের মুক্তির দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। গত ৮ সেপ্টেম্বর ঝুমন দাসের মুক্তির জন্য সারাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালন করে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এ ছাড়া ঝুমন দাসের মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক।