দারা মাহমুদ
কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকা হাতে পেয়ে রবীন্দ্রনাথ দু’জন অপরিচিত তরুণ কবির কবিতা সম্পর্কে একটু অন্যরকম মন্তব্য করেছিলেন। তিনি জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে লিখেছিলেন (ফিরতি চিঠিতে বুদ্ধদেব বসুকে) ‘এর কবিতা আলাদা’, আর সমর সেন সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘সমর সেনের কবিতা কয়টিতে গদ্যের রূঢ়তার ভেতর দিয়ে কাব্যের লাবণ্য প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্যে এর লেখা ট্যাকসই হবে বলেই মনে হচ্ছে।’ বাঙালির সব কিছুতেই রবীন্দ্রনাথ আছেন। এমনকি তার জীবদ্দশায় রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে যারা কাব্য চর্চা করেছেন, তারাও রবীন্দ্রনাথের হিসেবের বাইরে থাকতে পারেনি। জীবনানন্দ দাশের কবিতা যে কত আলাদা সেটা বোধয় বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সমর সেন? সমর সেন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য নিশ্চয়ই যথার্থ। কিন্তু জীবনানন্দ যেভাবে প্রমাণিত সমর সেন সেভাবে প্রমাণিত নন। কবি হিসেবে তার নিজেকে প্রমাণ করা হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যারা তার কবিতার পাঠক, তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারিনি, অর্থাৎ জীবনানন্দ দাশকে পাঠক যেভাবে বুঝেছে সমর সেনকে সেভাবে বোঝেনি। হতে পারে বিশ শতক ছিল জীবনানন্দকে আত্মস্থ করার সময়, একুশ শতক হবে সমর সেনকে আত্মস্থ করার শতক।
সমর সেন ছিলেন একজন কমিউনিস্ট। কমিউনিস্ট কবি বলতে আমরা সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বুঝি। যিনি কবিতাকে সমাজ বদলের হাতিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমর সেন? না মোটেই জ্বালাময়ী, সোচ্চার কাব্য বিষয় তার ছিল না। বরং তিনি কবিতাকে কবিতা বদলের হাতিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। তিরিশি কবিদের সময়ে যাদের হাতে উত্তর রৈবিক আধুনিক বাংলা কবিতা পরিচিতি পেয়েছিল জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে ও বুদ্ধদেব বসু, যারা পরবর্তী এক শতাব্দি বাংলা কবিতা শাসন করেছেন, সেই ঘোরতর সময়ে সমর সেন তিরিশি ঘরানার বাইরে প্রাতিস্মিক এক নতুন ঘরানার কবিতা রচনা করেছেন। এ কথা বলার বোধয় সময় এসেছে, তিরিশি কবিরা যদি বিশ শতকের কবিতা লিখে থাকেন, সমর সেন লিখে গেছেন একুশ শতকের কবিতা, যা এখনো আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছে।
সমর সেনের জন্ম কলকাতায় হলেও (১৯১৬-৮৭) তার পূর্বপুরুষের শিকড় তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছিল। তার পিতামহ বিশিষ্ট লোক গবেষক দীনেশ চন্দ্র সেন ছিলেন পূর্ব বাংলার মানুষ। বাবা অরুণ চন্দ্র সেন ছিলেন অধ্যাপক। সমর সেন ছাত্র জীবনে খুবই মেধাবি ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। তার জন্য ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়া কোনো ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু তিনি পূর্ববর্তী তিরিশি কবিদের অনুসরণ করে অধ্যাপনায় যোগ দেন। কিন্তু অধ্যাপনায় স্থিত হননি। রেডিওর ইংরেজি বিভাগের কাজ, রুশ ভাষা থেকে অনুবাদের কাজ, বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ, এসব নানান কিছু করে তিনি সাংবাদিকতায় স্থিত হন। সাংবাদিকতাও করেছেন বেশ কয়েক জায়গায়। শেষ পর্যন্ত ইংরেজি সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ার (Frontier)-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ১৯৬৮ থেকে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। প্রথাসিদ্ধ জীবন বেছে না নেয়াতে অর্থ কষ্ট হয়েছে অনেক কিন্তু কখনোই আপস করেননি।
সমর সেনকে বলা হয় বাংলা ভাষার প্রথম নাগরিক কবি। যদিও ঈশ্বর গুপ্ত অনেক আগেই কলকাতার নাগরিক যন্ত্রণা নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘কিলু গোয়ালর গলি’। কিন্তু শুধু নাগরিক শব্দের সমাবেশই নাগরিক কবিতা নয়। যে নগর মর্মকে স্পর্শ করে সেই নগর চেতনা একটা ভিন্ন বিষয়। সমস্যা হচ্ছে সমর সেনের সৃষ্টি খুব বেশি নয়। তিনি তার বয়সের ১৮ থেকে ৩০ বছর অর্থাৎ ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ মাত্র এক যুগ কবিতা লিখে দুম করে কবিতা লেখা ছেড়ে দেন। এরপরও তিনি বেঁচে ছিলেন চার দশক। কিন্তু আর কবিতা লেখেননি। কবি হিসেবে যখন তিনি পরিচিতি পাচ্ছিলেন, অনুজরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রজরা তার কবিতা-প্রভাবিত হয়ে উঠছিলেন, সেই সময় তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দেন। এরকম ঘটনা বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে তো বটেই, বিশ্ব কবিতায়ও বিরল। কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ সমর সেনকে র্যাবোর সাথে তুলনা করে বলেছেন, ‘১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত যিনি কবিতা লিখেছেন, তার হওয়া উচিত ছিল উত্তাল রোমান্টিক। কিন্তু সমাজ-রাজনীতি চেতনা সমর সেনে এত প্রবল ছিল যে তিনি হলেন দমিত রোমান্টিক।’ (ভূমিকা সমর সেনের নির্বাচিত কবিতা)
সমর সেন কেনো এখনো প্রাসঙ্গিক? কেন তার কবিতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে? কেনো তার কবিতা নতুন করে আবিষ্কৃত হবে? এসব প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর তার কবিতার মধ্যেই আছে। আজ একুশ শতকের শুরুতে আমরা বাংলাদেশে পশ্চিমবাংলায়, ত্রিপুরায়, সব বাংলাভাষি অঞ্চলে এক নতুন নগর সভ্যতার বিকাশ দেখতে পাচ্ছি। যত দিন যাবে নগর, নাগরিকতা নাগরিক সভ্যতা, নাগরিক সঙ্কট, নাগরিক মনোসঙ্কট এগুলো আরো বাড়বে। ‘মহানগরীতে এল বিবর্ণ দিন, তারপর আলকাতরার মত রাত্রি/আর দিন/সমস্ত দিন ভরে শুনি রোলারের শব্দ/দূরে, বহুদূরে কৃষ্ণচূড়ার লাল, চকিত ঝলক/হাওয়ায় ভেসে আসে গলনো পিচের গন্ধ/আর রাত্রি/রাত্রি শুধু পাথরের উপরে রোলারের মুখর দুঃস্বপ্ন।
সমর সেনের ‘নাগরিক’ কবিতায় এরকম অদ্ভুত দৃশ্যকল্প উঠে এসেছে। যেখানে নগর কলকাতার আত্মা ধরা পড়েড়ে কঠিনে কুসুমে। বিশ শতকের প্রথমার্ধে, যখন ফুল পাখি, লতাপাতা, জোৎস্না, নরনারীর প্রেম সবই কবিতার মুখ্য বিষয় ছিল। তখন সমর সেন এরকম রূঢ় নাগরিক বিষয়কে উপজীব্য করেছেন। সমর সেনের কবিতায় যে নগরচিত্র, যে নগরমর্ম, তা যেনো আজকের এই একুশ শতকের। তিনি তার সময়ে বসে অনেক দূর দেখতে পেয়েছিলেন। এ জন্য সমর সেন একুশ শতকের কবি।
ত্রিশ চল্লিশের দশক ছিল ঘোরতর ছন্দোময় কবিতার সময়। সেই সময় সমর সেন লিখেছেন নিরেট গদ্য ছন্দে। ‘তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে/দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো। কিম্বা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে।’ ‘উর্বশী, নির্বাচিত কবিতা) শুরুতে মনে হয় অক্ষরবৃত্তে লেখা কবিতা, কিন্তু একটু এগুলোই অক্ষরবৃত্তের নিরেট চাল আর থাকে না। এটাকেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘গদ্যের রূঢ়তা’। কিন্তু যেভাবে শব্দ সমাবেশ ঘটেছে, তাতে ছন্দের কোনো অভাব বোধ হয় না। এটাকেই হয়ত হাইনরিখ হাইন বলেছেনÑ ‘ছন্দোবদ্ধ কবিতা জরুরি নয়। বাছাইকৃত শব্দাবলী মনি মুক্তার মতো ছড়ানো ছিটানো থাকে। তার ভেতর থেকে প্রকৃতিগতভাবে একটা ছন্দ বের হয়।’ (ওবায়েদ আকাশ, ইন্টারনেট), যত দিন যাচ্ছে মানুষের জীবন আরো গদ্যময় হয়ে যাচ্ছে। বিশ শতকের তুলনায় একুশ শতক বেশি গদ্যময়, সেই বিবেচনায় সমর সেন এখন বেশি প্রাসঙ্গিক। আরো একটা প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে কবিতার আকার। রবীন্দ্রনাথের কাছে পত্রিকা পাঠানোর সময় বুদ্ধদেব বসু যে চিঠি দিয়েছিলেন, সেখানে লিখেছিলেন, ‘একজন কবির রচনা আমরাই প্রথম প্রকাশ করলামÑ সমর সেন। এর ছোট ছোট কবিতাগুলো আমার নিজের কাছে খুব ভালো লেগেছে। এর বয়স অল্প। সাহিত্য ক্ষেত্রে ইনি এখনো অপরিচিত কিন্তু এর রচনার একটা বিশেষ স্বকীয়তা আছে যাতে এর সম্বন্ধে মস্ত আশা পোষণ করতে বাধে না।’ পৃথিবীতে একসময় মহাকাব্য লেখা হতো। এরপর দীর্ঘ কবিতা, তারপর আরো ছোট, এখন আরো ছোট কবিতা লেখা হচ্ছে। এই যে কবিতা ছোট হয়ে এল, এর একটা বড় কারণ হচ্ছে সময়ের পরিবর্তন। প্রাচীণকালে মানুষের ব্যস্ততা কম ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘ দীর্ঘ কবিতা পড়ার সময় তাদের হাতে ছিল। মানুষ দিন দিন ব্যস্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে প্রায় বিশ শতকের শেষ পর্ব পর্যন্ত আধা সামন্ততান্ত্রিক আধা পুঁজিবাদী সমাজ টিকে ছিল। কিন্তু এখন আধা বলা যাবে না, বলা যায় সিকি সামন্ততান্ত্রিক আর বারো আনা পুঁজিবাদী সমাজের মধ্যে আমরা আছি। এই একুশ শতকের প্রথমার্ধেই আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি পুঁজিবাদে উত্তোরিত হবে। মানুষের জীবন হয়ে যাবে রোবটের মতো। সেই জীবনে কবিতা কিন্তু হারিয়ে যাবে না। বরং সঙ্কটাক্রান্ত মন আরো আরো বেশি করে কবিতাকে খুঁজবে। কিন্তু সময় কম। কবিতার পরিসর হবে ছোট, কিন্তু তার ব্যাপ্তি হবে অনেক ব্যাপক। ঠিক যে রকম প্রযুক্তি পণ্যের আকার ছোট হচ্ছে কিন্তু ক্ষমতা বাড়ছে। এই পরিবর্তিত জীবনকে সমর সেন বিশ শতকের প্রথমার্ধে দেখতে পেয়েছিলেন। ‘পড়ন্ত রোদে নগর লাল হল।/বহুদূর দেশে/পাহাড়ের ছায়া প্রান্তরে পড়ে;/সন্ধ্যার অন্ধকারে অন্ধ নদীর/মদির ক্লান্ত টান।/মেমনের স্তব্ধ মূর্তি/রাত্রি হয়ে এল শেষ/এবার ফেরাও মোরে।’ (এবার ফোরাও মোরে) সব মিলিয়ে আটটি চরণ আর আটাশটা শব্দের এই কবিতাটা একটা পূর্ণাঙ্গ কবিতা, যার পরিসর ছোট, কিন্তু ব্যপ্তি অনেক।
সমর সেন বেশি লেখেননি। মাত্র পাঁচটা কবিতার বই, ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭) ‘গ্রহণ’ (১৯৪০), ‘নানা কথা’ (১৯৪২), ‘খোলা চিঠি’ ১৯৪৩ এবং ‘তিনপুরুষ’ (১৯৪৪)। সাকল্যে ঊনআশিটা কবিতাÑ যা নিয়ে ১৯৫৪ সালে ‘সমর সেনের কবিতা’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া তার আত্মজীবনীমূলক লেখা ‘বাবুবৃত্তান্ত’ নামে একটা গদ্য গ্রন্থ আছে। প্রশ্ন আসতে পারে এত অল্প কবিতা লিখে তিনি কীভাবে এত আলোচিত কবি হবেন। নিঃসন্দেহে কবিতার সংখ্যাগত বিচারের চেয়ে গুণগত বিচার পাঠকের কাছে বড় হবে। অনেক কম কবিতা লিখে অনেক বড় কবি হয়েছেন, বিশ্ব সাহিত্যে এমন দৃষ্টান্ত আছে। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন মারা যান, রেখে যান বিশাল এক কাব্য ভা ার। কিন্তু এর তের বছর পরে যখন ১৯৫৪ সালে জীবনানন্দ দাশ মারা যান, তখন তার প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা মাত্র ১৬২টি। অবশ্য তার মৃত্যুর পর কিছু অপ্রকাশিত কবিতা পাওয়া গেছে, যার সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু ওই অল্পসংখ্যক কবিতা নিয়েই জীবনান্দ প্রায় একশ’ বছর বাঙালি পাঠকদের আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। সমর সেনের কবিতার গভীরতা এবং প্রাসঙ্গিকতা শত শত বছর বাঙালি কবিতার পাঠকদের কাব্য খোরাক যোগাতে পারে। ‘তুমি যেখানেই যাও,/কোনো চকিত মুহূর্তের নিঃশব্দতায়/হঠাৎ শুনতে পাবে/মৃত্যুর গম্ভীর অবিরাম পদক্ষেপ।/আর আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?/তুমি যেখানেই যাও/আকাশের মহাশূন্য হতে জুপিটারের তীক্ষè দৃষ্টি/লেডার শুভ্র বুকে পড়বে’ (তুমি যেখানেই যাও)। এই কবিতা কোনো সময়ের জন্য লেখা সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। উত্তর হতে পারে আগামীতে আরো যান্ত্রিক, আরো সংক্ষুব্ধ যে সময় আসছে, সেই সময়ের জন্য লেখা। বলা যেতে পারে জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’ যে রকম কালে কালে যুগে যুগে কবিতার পাঠকের বোধের জগতকে আলোকিত করছে, সমর সেনের ‘তুমি যেখানেই যাও’সহ অনেক কবিতাই সেরকম করতে থাকবে। তবে জীবনানন্দ যে রকম আবিষ্কৃত, সমর সেন ততোটা নয়। কিন্তু হতে হবে, কারণ, প্রকৃত কবিতা সামনে আসবেই।
২০১৬ সালে সমর সেনের জন্ম শতবার্ষিকী হয়ে গেল। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে বড় কোনো উদযাপন অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু পশ্চিম বাংলায় হয়েছে। অনেক অনুষ্ঠান প্রকাশনা হয়েছে। সেটা কি সমর সেন কলকাতার মানুষ ছিলেন বলে? মোটেই তা নয়। সেটা এই কারণে যে, সমর সেন সেখানে নতুন করে পঠিত হচ্ছে, নতুন করে প্রাসঙ্গিক হচ্ছে। সমর সেন নিজে জীবদ্দশায় জন্মদিন উদযাপনে উৎসাহী ছিলেন না। বাংলাদেশে তার জন্মদিন উপলক্ষে অনেক অনুষ্ঠান করতে হবে এমনটা নয়। শুধু এ দেশের কাব্য সংশ্লিষ্টরা সমর সেনের কবিতা আত্মস্থ করার চেষ্টা করলেই হবে। অবশ্যই সমর সেন নতুন করে আবিষ্কৃত হবেন।
দারা মাহমুদ
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
কবি বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত ‘কবিতা’ পত্রিকা হাতে পেয়ে রবীন্দ্রনাথ দু’জন অপরিচিত তরুণ কবির কবিতা সম্পর্কে একটু অন্যরকম মন্তব্য করেছিলেন। তিনি জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে লিখেছিলেন (ফিরতি চিঠিতে বুদ্ধদেব বসুকে) ‘এর কবিতা আলাদা’, আর সমর সেন সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘সমর সেনের কবিতা কয়টিতে গদ্যের রূঢ়তার ভেতর দিয়ে কাব্যের লাবণ্য প্রকাশ পেয়েছে। সাহিত্যে এর লেখা ট্যাকসই হবে বলেই মনে হচ্ছে।’ বাঙালির সব কিছুতেই রবীন্দ্রনাথ আছেন। এমনকি তার জীবদ্দশায় রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে যারা কাব্য চর্চা করেছেন, তারাও রবীন্দ্রনাথের হিসেবের বাইরে থাকতে পারেনি। জীবনানন্দ দাশের কবিতা যে কত আলাদা সেটা বোধয় বলার অপেক্ষা রাখে না। আর সমর সেন? সমর সেন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মন্তব্য নিশ্চয়ই যথার্থ। কিন্তু জীবনানন্দ যেভাবে প্রমাণিত সমর সেন সেভাবে প্রমাণিত নন। কবি হিসেবে তার নিজেকে প্রমাণ করা হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা যারা তার কবিতার পাঠক, তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারিনি, অর্থাৎ জীবনানন্দ দাশকে পাঠক যেভাবে বুঝেছে সমর সেনকে সেভাবে বোঝেনি। হতে পারে বিশ শতক ছিল জীবনানন্দকে আত্মস্থ করার সময়, একুশ শতক হবে সমর সেনকে আত্মস্থ করার শতক।
সমর সেন ছিলেন একজন কমিউনিস্ট। কমিউনিস্ট কবি বলতে আমরা সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বুঝি। যিনি কবিতাকে সমাজ বদলের হাতিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সমর সেন? না মোটেই জ্বালাময়ী, সোচ্চার কাব্য বিষয় তার ছিল না। বরং তিনি কবিতাকে কবিতা বদলের হাতিয়ার বানাতে চেয়েছিলেন। তিরিশি কবিদের সময়ে যাদের হাতে উত্তর রৈবিক আধুনিক বাংলা কবিতা পরিচিতি পেয়েছিল জীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, অমিয় চক্রবর্তী, বিষ্ণু দে ও বুদ্ধদেব বসু, যারা পরবর্তী এক শতাব্দি বাংলা কবিতা শাসন করেছেন, সেই ঘোরতর সময়ে সমর সেন তিরিশি ঘরানার বাইরে প্রাতিস্মিক এক নতুন ঘরানার কবিতা রচনা করেছেন। এ কথা বলার বোধয় সময় এসেছে, তিরিশি কবিরা যদি বিশ শতকের কবিতা লিখে থাকেন, সমর সেন লিখে গেছেন একুশ শতকের কবিতা, যা এখনো আবিষ্কারের অপেক্ষায় আছে।
সমর সেনের জন্ম কলকাতায় হলেও (১৯১৬-৮৭) তার পূর্বপুরুষের শিকড় তৎকালীন পূর্ব বাংলায় ছিল। তার পিতামহ বিশিষ্ট লোক গবেষক দীনেশ চন্দ্র সেন ছিলেন পূর্ব বাংলার মানুষ। বাবা অরুণ চন্দ্র সেন ছিলেন অধ্যাপক। সমর সেন ছাত্র জীবনে খুবই মেধাবি ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন। তার জন্য ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়া কোনো ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু তিনি পূর্ববর্তী তিরিশি কবিদের অনুসরণ করে অধ্যাপনায় যোগ দেন। কিন্তু অধ্যাপনায় স্থিত হননি। রেডিওর ইংরেজি বিভাগের কাজ, রুশ ভাষা থেকে অনুবাদের কাজ, বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ, এসব নানান কিছু করে তিনি সাংবাদিকতায় স্থিত হন। সাংবাদিকতাও করেছেন বেশ কয়েক জায়গায়। শেষ পর্যন্ত ইংরেজি সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ার (Frontier)-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে ১৯৬৮ থেকে মৃত্যুর সময় পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। প্রথাসিদ্ধ জীবন বেছে না নেয়াতে অর্থ কষ্ট হয়েছে অনেক কিন্তু কখনোই আপস করেননি।
সমর সেনকে বলা হয় বাংলা ভাষার প্রথম নাগরিক কবি। যদিও ঈশ্বর গুপ্ত অনেক আগেই কলকাতার নাগরিক যন্ত্রণা নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘কিলু গোয়ালর গলি’। কিন্তু শুধু নাগরিক শব্দের সমাবেশই নাগরিক কবিতা নয়। যে নগর মর্মকে স্পর্শ করে সেই নগর চেতনা একটা ভিন্ন বিষয়। সমস্যা হচ্ছে সমর সেনের সৃষ্টি খুব বেশি নয়। তিনি তার বয়সের ১৮ থেকে ৩০ বছর অর্থাৎ ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৬ মাত্র এক যুগ কবিতা লিখে দুম করে কবিতা লেখা ছেড়ে দেন। এরপরও তিনি বেঁচে ছিলেন চার দশক। কিন্তু আর কবিতা লেখেননি। কবি হিসেবে যখন তিনি পরিচিতি পাচ্ছিলেন, অনুজরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্রজরা তার কবিতা-প্রভাবিত হয়ে উঠছিলেন, সেই সময় তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দেন। এরকম ঘটনা বাংলা কবিতার ক্ষেত্রে তো বটেই, বিশ্ব কবিতায়ও বিরল। কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ সমর সেনকে র্যাবোর সাথে তুলনা করে বলেছেন, ‘১৮ থেকে ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত যিনি কবিতা লিখেছেন, তার হওয়া উচিত ছিল উত্তাল রোমান্টিক। কিন্তু সমাজ-রাজনীতি চেতনা সমর সেনে এত প্রবল ছিল যে তিনি হলেন দমিত রোমান্টিক।’ (ভূমিকা সমর সেনের নির্বাচিত কবিতা)
সমর সেন কেনো এখনো প্রাসঙ্গিক? কেন তার কবিতা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে? কেনো তার কবিতা নতুন করে আবিষ্কৃত হবে? এসব প্রশ্ন আসতেই পারে। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর তার কবিতার মধ্যেই আছে। আজ একুশ শতকের শুরুতে আমরা বাংলাদেশে পশ্চিমবাংলায়, ত্রিপুরায়, সব বাংলাভাষি অঞ্চলে এক নতুন নগর সভ্যতার বিকাশ দেখতে পাচ্ছি। যত দিন যাবে নগর, নাগরিকতা নাগরিক সভ্যতা, নাগরিক সঙ্কট, নাগরিক মনোসঙ্কট এগুলো আরো বাড়বে। ‘মহানগরীতে এল বিবর্ণ দিন, তারপর আলকাতরার মত রাত্রি/আর দিন/সমস্ত দিন ভরে শুনি রোলারের শব্দ/দূরে, বহুদূরে কৃষ্ণচূড়ার লাল, চকিত ঝলক/হাওয়ায় ভেসে আসে গলনো পিচের গন্ধ/আর রাত্রি/রাত্রি শুধু পাথরের উপরে রোলারের মুখর দুঃস্বপ্ন।
সমর সেনের ‘নাগরিক’ কবিতায় এরকম অদ্ভুত দৃশ্যকল্প উঠে এসেছে। যেখানে নগর কলকাতার আত্মা ধরা পড়েড়ে কঠিনে কুসুমে। বিশ শতকের প্রথমার্ধে, যখন ফুল পাখি, লতাপাতা, জোৎস্না, নরনারীর প্রেম সবই কবিতার মুখ্য বিষয় ছিল। তখন সমর সেন এরকম রূঢ় নাগরিক বিষয়কে উপজীব্য করেছেন। সমর সেনের কবিতায় যে নগরচিত্র, যে নগরমর্ম, তা যেনো আজকের এই একুশ শতকের। তিনি তার সময়ে বসে অনেক দূর দেখতে পেয়েছিলেন। এ জন্য সমর সেন একুশ শতকের কবি।
ত্রিশ চল্লিশের দশক ছিল ঘোরতর ছন্দোময় কবিতার সময়। সেই সময় সমর সেন লিখেছেন নিরেট গদ্য ছন্দে। ‘তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে/দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো। কিম্বা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে।’ ‘উর্বশী, নির্বাচিত কবিতা) শুরুতে মনে হয় অক্ষরবৃত্তে লেখা কবিতা, কিন্তু একটু এগুলোই অক্ষরবৃত্তের নিরেট চাল আর থাকে না। এটাকেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘গদ্যের রূঢ়তা’। কিন্তু যেভাবে শব্দ সমাবেশ ঘটেছে, তাতে ছন্দের কোনো অভাব বোধ হয় না। এটাকেই হয়ত হাইনরিখ হাইন বলেছেনÑ ‘ছন্দোবদ্ধ কবিতা জরুরি নয়। বাছাইকৃত শব্দাবলী মনি মুক্তার মতো ছড়ানো ছিটানো থাকে। তার ভেতর থেকে প্রকৃতিগতভাবে একটা ছন্দ বের হয়।’ (ওবায়েদ আকাশ, ইন্টারনেট), যত দিন যাচ্ছে মানুষের জীবন আরো গদ্যময় হয়ে যাচ্ছে। বিশ শতকের তুলনায় একুশ শতক বেশি গদ্যময়, সেই বিবেচনায় সমর সেন এখন বেশি প্রাসঙ্গিক। আরো একটা প্রাসঙ্গিক বিষয় হচ্ছে কবিতার আকার। রবীন্দ্রনাথের কাছে পত্রিকা পাঠানোর সময় বুদ্ধদেব বসু যে চিঠি দিয়েছিলেন, সেখানে লিখেছিলেন, ‘একজন কবির রচনা আমরাই প্রথম প্রকাশ করলামÑ সমর সেন। এর ছোট ছোট কবিতাগুলো আমার নিজের কাছে খুব ভালো লেগেছে। এর বয়স অল্প। সাহিত্য ক্ষেত্রে ইনি এখনো অপরিচিত কিন্তু এর রচনার একটা বিশেষ স্বকীয়তা আছে যাতে এর সম্বন্ধে মস্ত আশা পোষণ করতে বাধে না।’ পৃথিবীতে একসময় মহাকাব্য লেখা হতো। এরপর দীর্ঘ কবিতা, তারপর আরো ছোট, এখন আরো ছোট কবিতা লেখা হচ্ছে। এই যে কবিতা ছোট হয়ে এল, এর একটা বড় কারণ হচ্ছে সময়ের পরিবর্তন। প্রাচীণকালে মানুষের ব্যস্ততা কম ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে দীর্ঘ দীর্ঘ কবিতা পড়ার সময় তাদের হাতে ছিল। মানুষ দিন দিন ব্যস্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে প্রায় বিশ শতকের শেষ পর্ব পর্যন্ত আধা সামন্ততান্ত্রিক আধা পুঁজিবাদী সমাজ টিকে ছিল। কিন্তু এখন আধা বলা যাবে না, বলা যায় সিকি সামন্ততান্ত্রিক আর বারো আনা পুঁজিবাদী সমাজের মধ্যে আমরা আছি। এই একুশ শতকের প্রথমার্ধেই আমাদের অর্থনীতি পুরোপুরি পুঁজিবাদে উত্তোরিত হবে। মানুষের জীবন হয়ে যাবে রোবটের মতো। সেই জীবনে কবিতা কিন্তু হারিয়ে যাবে না। বরং সঙ্কটাক্রান্ত মন আরো আরো বেশি করে কবিতাকে খুঁজবে। কিন্তু সময় কম। কবিতার পরিসর হবে ছোট, কিন্তু তার ব্যাপ্তি হবে অনেক ব্যাপক। ঠিক যে রকম প্রযুক্তি পণ্যের আকার ছোট হচ্ছে কিন্তু ক্ষমতা বাড়ছে। এই পরিবর্তিত জীবনকে সমর সেন বিশ শতকের প্রথমার্ধে দেখতে পেয়েছিলেন। ‘পড়ন্ত রোদে নগর লাল হল।/বহুদূর দেশে/পাহাড়ের ছায়া প্রান্তরে পড়ে;/সন্ধ্যার অন্ধকারে অন্ধ নদীর/মদির ক্লান্ত টান।/মেমনের স্তব্ধ মূর্তি/রাত্রি হয়ে এল শেষ/এবার ফেরাও মোরে।’ (এবার ফোরাও মোরে) সব মিলিয়ে আটটি চরণ আর আটাশটা শব্দের এই কবিতাটা একটা পূর্ণাঙ্গ কবিতা, যার পরিসর ছোট, কিন্তু ব্যপ্তি অনেক।
সমর সেন বেশি লেখেননি। মাত্র পাঁচটা কবিতার বই, ‘কয়েকটি কবিতা’ (১৯৩৭) ‘গ্রহণ’ (১৯৪০), ‘নানা কথা’ (১৯৪২), ‘খোলা চিঠি’ ১৯৪৩ এবং ‘তিনপুরুষ’ (১৯৪৪)। সাকল্যে ঊনআশিটা কবিতাÑ যা নিয়ে ১৯৫৪ সালে ‘সমর সেনের কবিতা’ প্রকাশিত হয়। এছাড়া তার আত্মজীবনীমূলক লেখা ‘বাবুবৃত্তান্ত’ নামে একটা গদ্য গ্রন্থ আছে। প্রশ্ন আসতে পারে এত অল্প কবিতা লিখে তিনি কীভাবে এত আলোচিত কবি হবেন। নিঃসন্দেহে কবিতার সংখ্যাগত বিচারের চেয়ে গুণগত বিচার পাঠকের কাছে বড় হবে। অনেক কম কবিতা লিখে অনেক বড় কবি হয়েছেন, বিশ্ব সাহিত্যে এমন দৃষ্টান্ত আছে। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন মারা যান, রেখে যান বিশাল এক কাব্য ভা ার। কিন্তু এর তের বছর পরে যখন ১৯৫৪ সালে জীবনানন্দ দাশ মারা যান, তখন তার প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা মাত্র ১৬২টি। অবশ্য তার মৃত্যুর পর কিছু অপ্রকাশিত কবিতা পাওয়া গেছে, যার সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু ওই অল্পসংখ্যক কবিতা নিয়েই জীবনান্দ প্রায় একশ’ বছর বাঙালি পাঠকদের আচ্ছন্ন করে রেখেছেন। সমর সেনের কবিতার গভীরতা এবং প্রাসঙ্গিকতা শত শত বছর বাঙালি কবিতার পাঠকদের কাব্য খোরাক যোগাতে পারে। ‘তুমি যেখানেই যাও,/কোনো চকিত মুহূর্তের নিঃশব্দতায়/হঠাৎ শুনতে পাবে/মৃত্যুর গম্ভীর অবিরাম পদক্ষেপ।/আর আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে?/তুমি যেখানেই যাও/আকাশের মহাশূন্য হতে জুপিটারের তীক্ষè দৃষ্টি/লেডার শুভ্র বুকে পড়বে’ (তুমি যেখানেই যাও)। এই কবিতা কোনো সময়ের জন্য লেখা সেটা একটা প্রশ্ন হতে পারে। উত্তর হতে পারে আগামীতে আরো যান্ত্রিক, আরো সংক্ষুব্ধ যে সময় আসছে, সেই সময়ের জন্য লেখা। বলা যেতে পারে জীবনানন্দের ‘আট বছর আগের একদিন’ যে রকম কালে কালে যুগে যুগে কবিতার পাঠকের বোধের জগতকে আলোকিত করছে, সমর সেনের ‘তুমি যেখানেই যাও’সহ অনেক কবিতাই সেরকম করতে থাকবে। তবে জীবনানন্দ যে রকম আবিষ্কৃত, সমর সেন ততোটা নয়। কিন্তু হতে হবে, কারণ, প্রকৃত কবিতা সামনে আসবেই।
২০১৬ সালে সমর সেনের জন্ম শতবার্ষিকী হয়ে গেল। এ উপলক্ষে বাংলাদেশে বড় কোনো উদযাপন অনুষ্ঠান হয়নি। কিন্তু পশ্চিম বাংলায় হয়েছে। অনেক অনুষ্ঠান প্রকাশনা হয়েছে। সেটা কি সমর সেন কলকাতার মানুষ ছিলেন বলে? মোটেই তা নয়। সেটা এই কারণে যে, সমর সেন সেখানে নতুন করে পঠিত হচ্ছে, নতুন করে প্রাসঙ্গিক হচ্ছে। সমর সেন নিজে জীবদ্দশায় জন্মদিন উদযাপনে উৎসাহী ছিলেন না। বাংলাদেশে তার জন্মদিন উপলক্ষে অনেক অনুষ্ঠান করতে হবে এমনটা নয়। শুধু এ দেশের কাব্য সংশ্লিষ্টরা সমর সেনের কবিতা আত্মস্থ করার চেষ্টা করলেই হবে। অবশ্যই সমর সেন নতুন করে আবিষ্কৃত হবেন।