প্রতিকূল পরিবেশ, নানা অনিয়ম ও নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ নদী তীরবর্তী হাট বাজারের বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাছাড়াও নদীর দু’কুল দখল হয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান নদী পদ্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা মাথাভাঙ্গা নদী। অবিভাক্ত নদীয়া জেলার প্রধান তিন নদীর মধ্যে মাথাভাঙ্গা ছিল প্রধান। পদ্মা নদীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়নগর-সুলতানপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। বহুবছর আগে এ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা বিশাল জনপদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ নদীকে ঘিরে নির্বাহ করতো তাদের জীবন-জীবিকা।
এ নদী একসময় খুব স্র্রোতস্বিনী ছিল। ১৮৬২ সালে তৎকালীন পূর্ববাংলার সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মাথাভাঙ্গা নদীপথেই কলকাতার সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ছিল। পদ্মা নদী থেকে জলঙ্গী নদীর উৎপত্তি স্থানের প্রায় ১৭ কিলোমিটার ভাটিতে মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া ও হাটুভাঙ্গা গ্রামের মাঝদিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী এ জেলায় প্রবেশ করেছে। কিছুদূর আসার পর এ নদীর একটি শাখা বের হয়ে কুমার নদ নামে পূর্বদিকে বয়ে গেছে।
মাথাভাঙ্গা নদী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ২৬টি এবং দামুড়হুদা উপজেলার ১৫টি গ্রাম পেরিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম সুলতানপুরের পাশ দিয়ে ভারতের নদীয়া জেলায় প্রবেশ করেছে। ভারতে মাথাভাঙ্গা নদী চুর্নী নদী নামে পরিচিত।
এরপর মাথাভাঙ্গা নদী দামুড়হুদা উপজেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে নদীয়া জেলায় ঢুকেছে।
উপজেলার হাউলী গ্রামের আব্দুল হালিম ও ইদ্রিস আলী আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় এই নদীর পানিতে আমার মা-চাচিরা রান্না বান্না করতেন, নদীর পানি আমরা খেতাম। এখন এতটাই নোংরা যে গোসল করতেও ভয় পাই। তা ছাড়াও হাউলী গ্রামের রাস্তার পশ্চিমে কবর স্থানের নিচ দিয়ে প্রবাহিত মাথাভাঙ্গা নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠেছে। নদীর স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জেগে উঠা চরটি অপসরণ করে নদীর পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচলের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন। মানুষ এখন মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে।
মাথাভাঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি হামিদুল হক মুন্সী বলেন, বলেন ভৈরব-কপোতাক্ষ নদ হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মূল নদী কাঠামো এবং মাথাভাঙ্গা তার চাবিকাঠি। মাথাভাঙ্গা নদীটি ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে মাথাভাঙ্গা থেকে ভৈরবের উৎসমুখ খুলে দিলেই তার শাখা কপোতাক্ষসহ এ অঞ্চলের সব নদী তাদের হারানো গতি ফিরে পাবে। ফলে এতদাঞ্চলের কৃষি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ নদ-নদীগুলো ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে।
গতবছরের ১ আগস্ট মাথাভাঙ্গা নদীতে ব্যাপক মাছের মড়ক দেখা দেয়। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি নদীতে নেমে তলদেশে কাঁথা-বালিশ থেকে শুরু করে আসবাবপত্রের ভাঙা অংশসহ পচা আবর্জনার বড় একটি স্তরের অস্তিত্ব পায়।
শহরের বর্জ্য যাতে নদীতে পড়তে না পারে, সে জন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইতোমধ্যে পৌরসভার নালার মুখে লোহার নেট লাগিয়ে দিয়েছে। মাথাভাঙ্গা নদী রক্ষায় আমরা আন্দোলন করছি। এই নদীর সঙ্গে আমাদেরও অস্তিত্বের সম্পর্ক। আমরা বিশ্বাস করি, নদী বাঁচলেই আমরা বাঁচব। তাই দাবি পূরণের জন্য এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে নদীটির ঐতিহ্য রক্ষায় একসঙ্গে দাবি পূরণের কাজ চালিয়ে যাব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, যদি মাথাভাঙ্গা নদী না বাঁচে, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব নদ-নদী বাঁচবে না। তাছাড়াও নদীর দু’কুল দখল করে চাষাবাদ করার কবলে পড়ে শুষ্ক মৌসুমে বেদখলের প্রবণতা জোরে সরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ নদীটি।
চুয়াডাঙ্গার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রটি বলেন, মাথাভাঙ্গার শাখা নদীগুলো পুনরায় খননের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এবার মাথাভাঙ্গা নদী দিয়ে সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা আছে। শীঘ্রই এ নিয়ে কাজ শুরু হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসোনা মিতা বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীটির ঐতিহ্য রক্ষায় ও দূষণমুক্ত করতে গণসচেতনামূলক প্রচারণাসহ নদী থেকে কোমর ও জোংড়া অপসরণ চলমান রয়েছে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট থেকে নদী অবৈধ দখলদারদের তালিকা পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রতিকূল পরিবেশ, নানা অনিয়ম ও নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ নদী তীরবর্তী হাট বাজারের বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তাছাড়াও নদীর দু’কুল দখল হয়ে যাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান নদী পদ্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা মাথাভাঙ্গা নদী। অবিভাক্ত নদীয়া জেলার প্রধান তিন নদীর মধ্যে মাথাভাঙ্গা ছিল প্রধান। পদ্মা নদীর দ্বিতীয় বৃহত্তম শাখা চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা সদর ও দামুড়হুদা উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম জয়নগর-সুলতানপুর গ্রামের পাশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। বহুবছর আগে এ নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা বিশাল জনপদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এ নদীকে ঘিরে নির্বাহ করতো তাদের জীবন-জীবিকা।
এ নদী একসময় খুব স্র্রোতস্বিনী ছিল। ১৮৬২ সালে তৎকালীন পূর্ববাংলার সঙ্গে কলকাতার রেল যোগাযোগ চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত এই মাথাভাঙ্গা নদীপথেই কলকাতার সঙ্গে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ছিল। পদ্মা নদী থেকে জলঙ্গী নদীর উৎপত্তি স্থানের প্রায় ১৭ কিলোমিটার ভাটিতে মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া ও হাটুভাঙ্গা গ্রামের মাঝদিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী এ জেলায় প্রবেশ করেছে। কিছুদূর আসার পর এ নদীর একটি শাখা বের হয়ে কুমার নদ নামে পূর্বদিকে বয়ে গেছে।
মাথাভাঙ্গা নদী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ২৬টি এবং দামুড়হুদা উপজেলার ১৫টি গ্রাম পেরিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম সুলতানপুরের পাশ দিয়ে ভারতের নদীয়া জেলায় প্রবেশ করেছে। ভারতে মাথাভাঙ্গা নদী চুর্নী নদী নামে পরিচিত।
এরপর মাথাভাঙ্গা নদী দামুড়হুদা উপজেলার বুক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে নদীয়া জেলায় ঢুকেছে।
উপজেলার হাউলী গ্রামের আব্দুল হালিম ও ইদ্রিস আলী আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় এই নদীর পানিতে আমার মা-চাচিরা রান্না বান্না করতেন, নদীর পানি আমরা খেতাম। এখন এতটাই নোংরা যে গোসল করতেও ভয় পাই। তা ছাড়াও হাউলী গ্রামের রাস্তার পশ্চিমে কবর স্থানের নিচ দিয়ে প্রবাহিত মাথাভাঙ্গা নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠেছে। নদীর স্বাভাবিকভাবে পানি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জেগে উঠা চরটি অপসরণ করে নদীর পানি স্বাভাবিকভাবে চলাচলের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন। মানুষ এখন মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে।
মাথাভাঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি হামিদুল হক মুন্সী বলেন, বলেন ভৈরব-কপোতাক্ষ নদ হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মূল নদী কাঠামো এবং মাথাভাঙ্গা তার চাবিকাঠি। মাথাভাঙ্গা নদীটি ড্রেজিং করে এর নাব্যতা ফিরিয়ে মাথাভাঙ্গা থেকে ভৈরবের উৎসমুখ খুলে দিলেই তার শাখা কপোতাক্ষসহ এ অঞ্চলের সব নদী তাদের হারানো গতি ফিরে পাবে। ফলে এতদাঞ্চলের কৃষি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ নদ-নদীগুলো ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে।
গতবছরের ১ আগস্ট মাথাভাঙ্গা নদীতে ব্যাপক মাছের মড়ক দেখা দেয়। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি নদীতে নেমে তলদেশে কাঁথা-বালিশ থেকে শুরু করে আসবাবপত্রের ভাঙা অংশসহ পচা আবর্জনার বড় একটি স্তরের অস্তিত্ব পায়।
শহরের বর্জ্য যাতে নদীতে পড়তে না পারে, সে জন্য তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ইতোমধ্যে পৌরসভার নালার মুখে লোহার নেট লাগিয়ে দিয়েছে। মাথাভাঙ্গা নদী রক্ষায় আমরা আন্দোলন করছি। এই নদীর সঙ্গে আমাদেরও অস্তিত্বের সম্পর্ক। আমরা বিশ্বাস করি, নদী বাঁচলেই আমরা বাঁচব। তাই দাবি পূরণের জন্য এলাকাবাসীর সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলে নদীটির ঐতিহ্য রক্ষায় একসঙ্গে দাবি পূরণের কাজ চালিয়ে যাব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, যদি মাথাভাঙ্গা নদী না বাঁচে, তাহলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এসব নদ-নদী বাঁচবে না। তাছাড়াও নদীর দু’কুল দখল করে চাষাবাদ করার কবলে পড়ে শুষ্ক মৌসুমে বেদখলের প্রবণতা জোরে সরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই চুয়াডাঙ্গা জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী এ নদীটি।
চুয়াডাঙ্গার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রটি বলেন, মাথাভাঙ্গার শাখা নদীগুলো পুনরায় খননের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এবার মাথাভাঙ্গা নদী দিয়ে সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনা আছে। শীঘ্রই এ নিয়ে কাজ শুরু হবে।
দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসোনা মিতা বলেন, মাথাভাঙ্গা নদীটির ঐতিহ্য রক্ষায় ও দূষণমুক্ত করতে গণসচেতনামূলক প্রচারণাসহ নদী থেকে কোমর ও জোংড়া অপসরণ চলমান রয়েছে। তাছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিকট থেকে নদী অবৈধ দখলদারদের তালিকা পেলে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।