শ্যামপুর সুগার
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শ্যামপুর সুগার মিল চালুর প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে চলতি বছর আখ মাড়াই না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, শ্যামপুর সুগার মিল রংপুরের একমাত্র সরকারি ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেটি ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে স্থাপন করা হয়। ১৯৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মিলে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়। মিলটি চালুর পর শুধু একবারই লাভের মুখ দেখেছিল। বাকি মৌসুমগুলোতে লোকসান গুনতে হয়েছে। যার পরিমাণ দেড়শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মিলের অব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং সময়োপযোগী যন্ত্রপাতি স্থাপন না করাই মিলের লোকসানের অন্যতম কারণ। তবে মিলকে লাভজনক করতে দীর্ঘদিন ধরেই কর্মচারীরা নানা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। এসবের মধ্যে ছিল মিলে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, আখের মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশি চিনির আগ্রাসন বন্ধ এবং মিল এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। কিন্তু কর্মচারীদের দাবিতে কোনো সরকার কান দেননি। বরং মিলটিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে কখনো বিক্রির পাঁয়তারা করা হয়েছে। কখনোবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে কোনো কারণ ছাড়াই মিলের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকেই মিলটি চালুর জন্য কর্মচারী এবং এলাকাবাসী নানাভাবে দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো কাজ হয়নি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এলাকার লোকজন এবং কর্মচারীরা জোরালো দাবি জানালে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মিলটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তবে মিলটির পক্ষ থেকে এলাকায় পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়, চিনিকলের আখ মাড়াই স্থগিতের সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার প্রত্যাহার করেছেন এবং পুনরায় মিল চালুর লক্ষ্যে আখ রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোস্টারিংয়ে আখের মূল্য বেঁধে দেয়া হয়েছে প্রতি কুইন্টাল ৫৮৭ থেকে ৬০০ টাকা।
সম্প্রতি সরেজমিনে শ্যামপুর সুগার মিল এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় আখচাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিল সচল করতে হলে আখের প্রয়োজন। কিন্তু আখ রোপণ কার্যক্রম মিলের ছাপানো পোস্টারে শোভা পেলেও বাস্তবে তা নেই। আমি নিজেই আখ চাষ করিনি। আখের জমিতে আলু রোপণ করেছি। রংপুর জেলা কৃষক সমিতির সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোনো সরকার মিলটি সচল রাখার বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং মিলটি বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারেই যথেষ্ঠ আগ্রহী ছিল সবাই। কেননা এরশাদের সরকার শ্যামপুর সুগার মিলকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর করার চেষ্টা চালিয়েছে। খালেদা জিয়ার সরকার তা বিরাষ্ট্রীয় করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকার মাঠে পর্যাপ্ত আখ রেখে মিলটি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মিলটি চালুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পর্যন্ত আখ রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। অথচ মিল কর্তৃপক্ষ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছে আখ রোপণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আখ রোপণ কার্যক্রম চলছে তো মাঠকর্মী কই, সার-বীজ কই?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর সুগার মিলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপণে আখপ্রাপ্তি সাপেক্ষে মিলের কার্যক্রম চালুর কথা জানানো হয়েছে। একারণে শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিলের কাছে একটি প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছিল। যথাসময়ে সেটি প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ফিডব্যাক পাওয়া যায়নি। চাষিদের মাঝে সার এবং বীজ সরবরাহ করার জন্য যেই অর্থের প্রয়োজন তা এখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এছাড়া এসব মনিটরিংয়ের জন্য যে জনবল থাকা প্রয়োজন বর্তমানে সেটিও নেই। এই মুহূর্তে অর্থ এবং জনবল বরাদ্দ করা হলেও সামনের বছরও এই কারখানায় আখ মাড়াই করা সম্ভব হবে না। কারণ জমিতে আখ রোপণের পাশাপাশি কারখানাটিও মেরামত করা প্রয়োজন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কারখানাটি হয়তো মেরামত করা সম্ভব হবে, কিন্তু জমির অভাবে প্রয়োজনীয় আখ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।
শ্যামপুর সুগার
শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত শ্যামপুর সুগার মিল চালুর প্রজ্ঞাপন জারি হলেও এখনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে চলতি বছর আখ মাড়াই না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, শ্যামপুর সুগার মিল রংপুরের একমাত্র সরকারি ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেটি ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে স্থাপন করা হয়। ১৯৬৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই মিলে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হয়। মিলটি চালুর পর শুধু একবারই লাভের মুখ দেখেছিল। বাকি মৌসুমগুলোতে লোকসান গুনতে হয়েছে। যার পরিমাণ দেড়শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মিলের অব্যবস্থাপনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি এবং সময়োপযোগী যন্ত্রপাতি স্থাপন না করাই মিলের লোকসানের অন্যতম কারণ। তবে মিলকে লাভজনক করতে দীর্ঘদিন ধরেই কর্মচারীরা নানা দাবিতে আন্দোলন করেছেন। এসবের মধ্যে ছিল মিলে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ, আখের মূল্য বৃদ্ধি, বিদেশি চিনির আগ্রাসন বন্ধ এবং মিল এলাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি। কিন্তু কর্মচারীদের দাবিতে কোনো সরকার কান দেননি। বরং মিলটিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে কখনো বিক্রির পাঁয়তারা করা হয়েছে। কখনোবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে কোনো কারণ ছাড়াই মিলের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর থেকেই মিলটি চালুর জন্য কর্মচারী এবং এলাকাবাসী নানাভাবে দাবি জানিয়ে আসলেও কোনো কাজ হয়নি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর এলাকার লোকজন এবং কর্মচারীরা জোরালো দাবি জানালে, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মিলটি চালুর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তবে মিলটির পক্ষ থেকে এলাকায় পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয়, চিনিকলের আখ মাড়াই স্থগিতের সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার প্রত্যাহার করেছেন এবং পুনরায় মিল চালুর লক্ষ্যে আখ রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পোস্টারিংয়ে আখের মূল্য বেঁধে দেয়া হয়েছে প্রতি কুইন্টাল ৫৮৭ থেকে ৬০০ টাকা।
সম্প্রতি সরেজমিনে শ্যামপুর সুগার মিল এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় আখচাষি ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, মিল সচল করতে হলে আখের প্রয়োজন। কিন্তু আখ রোপণ কার্যক্রম মিলের ছাপানো পোস্টারে শোভা পেলেও বাস্তবে তা নেই। আমি নিজেই আখ চাষ করিনি। আখের জমিতে আলু রোপণ করেছি। রংপুর জেলা কৃষক সমিতির সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কোনো সরকার মিলটি সচল রাখার বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং মিলটি বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারেই যথেষ্ঠ আগ্রহী ছিল সবাই। কেননা এরশাদের সরকার শ্যামপুর সুগার মিলকে হোল্ডিং কোম্পানিতে রূপান্তর করার চেষ্টা চালিয়েছে। খালেদা জিয়ার সরকার তা বিরাষ্ট্রীয় করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকার মাঠে পর্যাপ্ত আখ রেখে মিলটি বন্ধ করে দিয়েছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মিলটি চালুর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেও এখন পর্যন্ত আখ রোপণ কার্যক্রম শুরু হয়নি। অথচ মিল কর্তৃপক্ষ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছে আখ রোপণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আখ রোপণ কার্যক্রম চলছে তো মাঠকর্মী কই, সার-বীজ কই?
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শ্যামপুর সুগার মিলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপণে আখপ্রাপ্তি সাপেক্ষে মিলের কার্যক্রম চালুর কথা জানানো হয়েছে। একারণে শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিলের কাছে একটি প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছিল। যথাসময়ে সেটি প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ফিডব্যাক পাওয়া যায়নি। চাষিদের মাঝে সার এবং বীজ সরবরাহ করার জন্য যেই অর্থের প্রয়োজন তা এখনও বরাদ্দ দেয়া হয়নি। এছাড়া এসব মনিটরিংয়ের জন্য যে জনবল থাকা প্রয়োজন বর্তমানে সেটিও নেই। এই মুহূর্তে অর্থ এবং জনবল বরাদ্দ করা হলেও সামনের বছরও এই কারখানায় আখ মাড়াই করা সম্ভব হবে না। কারণ জমিতে আখ রোপণের পাশাপাশি কারখানাটিও মেরামত করা প্রয়োজন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে কারখানাটি হয়তো মেরামত করা সম্ভব হবে, কিন্তু জমির অভাবে প্রয়োজনীয় আখ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।