চট্টগ্রামের আনোয়ারার কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (কেইপিজেড) দীর্ঘদিনের ভূমি জটিলতা কাটিয়ে বিদেশি বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং দুই লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রায় ২৬ বছর পর জমির মালিকানা স্বত্ব (দলিল) পেয়েছে কেইপিজেড। গত সোমবার দুই হাজার ৪৮৩ একর জমির এই দলিল হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে কেইপিজেড শুরু থেকেই পরিবেশবান্ধব অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ৮২২ একর জমিতে ৩০ লক্ষাধিক গাছ লাগানো হয়। এছাড়াও রয়েছে ৩৩টি লেক ও জলাশয়। এসব জলাশয়ে ৬০০ মিলিয়ন গ্যালন বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায়।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড। এ শিল্পাঞ্চলের জন্য ১৯৯৭ সালে দুই হাজার ৪৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে অধিগ্রহণকৃত জমি কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে সরকার। কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনে যায় ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে। বর্তমানে ইয়াংওয়ানের ৪৮টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এসব কারখানায় ৩৩ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু জমি আয়ত্বে থাকলেও মালিকানা স্বত্ব বা দলিল ছিল না। এখন দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানা স্বত্ব ফিরে পায় কোরিয়ান ইপিজেড।
এদিকে, গত সোমবার কেইপিজেড এলাকা পরিদর্শন করেছে চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। কেইপিজেড পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কিহাক সাং বাংলাদেশে বিদেশীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের নিকট দুই হাজার ৪৮৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জমি অধিগ্রহণ বুঝে পাওয়ার পর শিল্প-কারখানা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন মালিকানা স্বত্ব (দলিল) না থাকায় অনেকটা বেকায়দায় ছিল কর্তৃপক্ষ। বিনিয়োগ করতে আসা অনেক কোম্পানি ভূমি জটিলতার কারণে বিনিয়োগ না করে ফিরে গেছে।
এ বিষয়ে কেইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিনিয়োগের জন্য কেইপিজেড একটি আদর্শিক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ জায়গা। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিল্ডিং ভাড়ায় দিতাম। তারা সেখানে কারখানা তৈরি করে উৎপাদন করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেইপিজেডের দীর্ঘদিনের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করেছে। এখন বিনিয়োগ ভূমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ফিরে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বর্তমান সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের টানতে কাজ করে যাচ্ছে, এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহোদয়ের নির্দেশনায় কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে দুই হাজার ৪৮৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অধিগ্রহণকৃত জমি সংক্রান্ত জটিলতা মাত্র ২ মাসের মধ্যে নিরসন করা হয়েছে। এরফলে কোরিয়ান ইপিজেডে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম জেলায় দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ১৯৯৭ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে অধিগ্রহণ করা জমি আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু জমির দখল বুঝে পেলেও জমির মালিকানা বা দলিল পায়নি। প্রধান উপদেষ্টা স্যারের নির্দেশনা ও বেজার চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, জমির মালিকানা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা বড় বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে না। এখন দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। ইতোমধ্যে বিদেশি একটি বিনিয়োগকারী দল পরিদর্শন করে গেছেন।
কেইপিজেড কর্মকর্তারা জানান, একটি বিশ্বমানের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ চলছে। টেক্সটাইল জোনে ৫টি পোশাক তৈরির কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দুটি চালু করা হয়েছে। বাকি তিনটির ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া কেইপিজেডে ১০০ একর জমিতে আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটি আইটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কয়েকটি ভবন নির্মীয়মাণ রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০ একর জমির ওপর আইটি ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্সের জন্য ১৬টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। দুটি আইটি পার্ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আইটি পার্ক ছাড়াও স্কুল এন্ড কলেজ এবং ৬শ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মীয়মাণ রয়েছে। অন্যদিকে কেইপিজেডে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বিশাল সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫
চট্টগ্রামের আনোয়ারার কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (কেইপিজেড) দীর্ঘদিনের ভূমি জটিলতা কাটিয়ে বিদেশি বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা এবং দুই লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। প্রায় ২৬ বছর পর জমির মালিকানা স্বত্ব (দলিল) পেয়েছে কেইপিজেড। গত সোমবার দুই হাজার ৪৮৩ একর জমির এই দলিল হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক। এদিকে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে কেইপিজেড শুরু থেকেই পরিবেশবান্ধব অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ৮২২ একর জমিতে ৩০ লক্ষাধিক গাছ লাগানো হয়। এছাড়াও রয়েছে ৩৩টি লেক ও জলাশয়। এসব জলাশয়ে ৬০০ মিলিয়ন গ্যালন বৃষ্টির পানি ধরে রাখা যায়।
জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত কোরিয়ান ইপিজেড। এ শিল্পাঞ্চলের জন্য ১৯৯৭ সালে দুই হাজার ৪৯২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে অধিগ্রহণকৃত জমি কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করে সরকার। কারখানা স্থাপন ও উৎপাদনে যায় ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে। বর্তমানে ইয়াংওয়ানের ৪৮টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। এসব কারখানায় ৩৩ হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু জমি আয়ত্বে থাকলেও মালিকানা স্বত্ব বা দলিল ছিল না। এখন দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানা স্বত্ব ফিরে পায় কোরিয়ান ইপিজেড।
এদিকে, গত সোমবার কেইপিজেড এলাকা পরিদর্শন করেছে চীন, ভারত, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের ৬০ জন বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি। কেইপিজেড পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে কোরিয়ার বিশ্বখ্যাত কোম্পানি ইয়াংওয়ান করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কিহাক সাং বাংলাদেশে বিদেশীদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষের নিকট দুই হাজার ৪৮৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) ফরিদা খানম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জমি অধিগ্রহণ বুঝে পাওয়ার পর শিল্প-কারখানা নির্মাণ করা হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন মালিকানা স্বত্ব (দলিল) না থাকায় অনেকটা বেকায়দায় ছিল কর্তৃপক্ষ। বিনিয়োগ করতে আসা অনেক কোম্পানি ভূমি জটিলতার কারণে বিনিয়োগ না করে ফিরে গেছে।
এ বিষয়ে কেইপিজেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, বিনিয়োগের জন্য কেইপিজেড একটি আদর্শিক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ জায়গা। ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিনিয়োগকারীদের বিল্ডিং ভাড়ায় দিতাম। তারা সেখানে কারখানা তৈরি করে উৎপাদন করছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কেইপিজেডের দীর্ঘদিনের ভূমি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করেছে। এখন বিনিয়োগ ভূমিসংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী ফিরে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বর্তমান সরকার বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের টানতে কাজ করে যাচ্ছে, এজন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহোদয়ের নির্দেশনায় কোরিয়ান ইপিজেড কর্তৃপক্ষকে দুই হাজার ৪৮৩ একর জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অধিগ্রহণকৃত জমি সংক্রান্ত জটিলতা মাত্র ২ মাসের মধ্যে নিরসন করা হয়েছে। এরফলে কোরিয়ান ইপিজেডে বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম জেলায় দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এলএ) এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ১৯৯৭ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে কেইপিজেড কর্তৃপক্ষকে অধিগ্রহণ করা জমি আমরা বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু জমির দখল বুঝে পেলেও জমির মালিকানা বা দলিল পায়নি। প্রধান উপদেষ্টা স্যারের নির্দেশনা ও বেজার চেয়ারম্যানের প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যে দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, জমির মালিকানা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা বড় বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে না। এখন দলিল হস্তান্তরের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগকারী আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। ইতোমধ্যে বিদেশি একটি বিনিয়োগকারী দল পরিদর্শন করে গেছেন।
কেইপিজেড কর্মকর্তারা জানান, একটি বিশ্বমানের টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ চলছে। টেক্সটাইল জোনে ৫টি পোশাক তৈরির কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে দুটি চালু করা হয়েছে। বাকি তিনটির ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া কেইপিজেডে ১০০ একর জমিতে আইটি পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটি আইটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আরও কয়েকটি ভবন নির্মীয়মাণ রয়েছে। এছাড়া আরও ৫০ একর জমির ওপর আইটি ডেভেলপমেন্ট কমপ্লেক্সের জন্য ১৬টি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। দুটি আইটি পার্ক নির্মাণ কাজ শেষ হলে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। আইটি পার্ক ছাড়াও স্কুল এন্ড কলেজ এবং ৬শ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মীয়মাণ রয়েছে। অন্যদিকে কেইপিজেডে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বিশাল সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।