alt

সারাদেশ

আনন্দ-উল্লাস পদ্মা পারের মানুষের

পলাশ খান, জাজিরা (শরীয়তপুর) : মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

জাজিরা : পদ্মা সেতু চালুর তারিখ ঘোষণায় পদ্মা পারের মানুষের আনন্দ-উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ -সংবাদ

আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণার পরপরই উচ্ছ্বসিত হয়ে পরে পদ্মাপারের মানুষ।

মঙ্গলবার (২৪ মে) বিকেলের দিকে পদ্মা সেতু জাজিরা পয়েন্টে ঘুরে উচ্ছ্বাসের আমেজ দেখা যায় পদ্মা সেতু জাজিরা পয়েন্টের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌস মুন্সী বলেন, ‘অধীর অপেক্ষায় ছিলাম পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণার। খুবই আনন্দ লাগছে। এখন আর আমাদের ফেরি কিংবা লঞ্চে পারাপার হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হবে না। যখন ইচ্ছে তখনই সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিতে পারব। এছাড়া এই সেতু আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন করবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।’

পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকা ঘুরতে আসা জাজিরার বাসিন্দা বরকত মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে শুনে খুবই আনন্দ লাগছিল। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পদ্মা সেতুর শেষ কর্মযজ্ঞ দেখতে চলে আসলাম। যদিও সেনা সদস্যরা সেতুর কাছাকাছি যেতে দিচ্ছে না। তবুও দূর থেকেই দেখে শান্তি অনুভব করছি।

স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী খলিল মিয়া বলেন, ‘অনেকেই কইছে পদ্মা সেতু করে চালু হইবো তার কোন গেরান্টি নাই। আমার বিশ্বাস আছিল শেখ হাসিনা আমাগো আশা তারাতারি পূরণ করবো। আজকে হেই আশা পূরণ অইতাছে। অহন এই এলাকায় অনেক মানুষ ঘুরতে আইবো তাতে আমাগো ব্যবসা বড় করতে পারমু।’

জাজিরার ডুবিসায়বর বন্দরের ব্যবসায়ী নুরুল হক মোল্লা বলেন, ‘পদ্মা সেতু সারাদেশের বিস্ময় হলেও আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। যদিও পদ্মা সেতু থেকে আমাদের শরীয়তপুর জেলার অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। তবে আশা করি এজন্যও আমাদের বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আমাদের এ বন্দরে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা সব ধরনের পণ্য এখান থেকেই নেন। এসব পণ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়। নদীপথে পণ্য আমদানির যেমন বাড়তি খরচ, তেমনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেতু চালু হলে কম মূল্যে আনা-নেয়া সম্ভব হবে। তাতে সরাসরি উপকৃত হবেন সব পর্যায়ের গ্রাহকরা।’

জাজিরার বাসিন্দা সমাজকর্মী জামাল মাদবর বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-চিকিৎসা সবক্ষেত্রেই এখানকার মানুঘ ঢাকামুখী। অনেক সময় চিকিৎসা নিতে ঢাকা যেতে যেতেই রোগী মারা যায়। সবজি পচে যায় নদীর তীরেই। কখনও আবার আরিচা, চাঁদপুর বা চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা যেতে হয়। এতে যাতায়াত ভাড়া কয়েকগুণ বেশি গুনতে হয়। পদ্মা সেতু চালুর ঘোষণার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান হচ্ছে বলে আশা রাখি।’ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা শুনে শরীয়তপুর জেলা সদরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

তবে জাজিরার নাওডোবা এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা সংবাদের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, স্বপ্নের এই সেতুর জন্য জমি দিয়েছি। কিন্তু সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরের কোন সংযোগ সড়ক নেই। সেতু ঘিরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে তার সবই হচ্ছে মাদারীপুর জেলাকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ক্ষোভও আছে তাদের মধ্যে।

তাদের একজন বলেন, ‘এখনও তো কিছু দেখছি না। দোকানের বেচাকিনি আগে যেমন ছিল, এখনও তাই আছে। আমাদের এলাকায় তো বড় কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানও চালু করা হলো না।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এই জাজিরা উপজেলা তথা শরীয়তপুর জেলার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সাধিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বরগুনা। আমিও দক্ষিণাঞ্চলের একজন বাসিন্দা হিসেবে খুবই আনন্দিত।

সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। দুটি ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি রয়েছে। এসব কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য সেতু বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন। গত সপ্তাহে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশসুপারদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সভা করেছেন।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গত এপ্রিল মাসে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ, বাতি বসানোর কাজ (ল্যাম্পপোস্ট) শেষ হয়েছে। এখন তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। এ ছারা সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর সীমানা দেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোর কাজ চলছে।

সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুর আগেই দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। ১০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পাঁচ বছর যাবত ওই সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করছে। নদী শাসন কাজও প্রায় শেষ। জাজিরার নাওডোবা হতে শিবচরের মাদবরচর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী শাসন এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র। খুব কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য সেখানে প্রতি দিন শতশত মানুষ ভির করছেন।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু।

সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এক দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

ছবি

৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো তাপপ্রবাহ

সেনবাগে কলেজছাএ ও সুধারামে প্রবাসী খুনের পর বেপরোয়া কিশোর গ্যাং

ছবি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

দুর্বৃত্তের হামলায় ‘গুরুতর’ আহত যুবলীগ নেতা

ছবি

গাজীপুরে কাভার্ড ভ্যানে সিএনজির ধাক্কা নিহত-১ আহত-৪

ছবি

হাসপাতালে হিট ষ্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু

ছবি

লালমনিরহাটে হিট স্ট্রোকে অটোচালকের মৃত্যু

ছবি

গাজীপুরে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু

ছবি

পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

ছবি

গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

প্রিলি পরীক্ষায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার প্রার্থী বসেছে পরীক্ষায়

ছবি

মায়ানমার ফেরতঃ কারাগারে দুপুরে এক বেলা খাবার, সারাদিন ব্যস্ত ভারি কাজে

ছবি

বারিতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল শীর্ষক প্রশিক্ষণ

ছবি

গাজীপুরের কোনাবাড়ী জোনাল অফিসে পাওয়ার ট্রান্সফরমারে আগুন

ছবি

গাজীপুরে মরে যাচ্ছে মুরগি

ছবি

মেহেরপুরে মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন জেল

ছবি

দাবদাহে গলে যাচ্ছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পিচ

ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা

ছবি

হরিরামপুরে পূর্ব শত্রতার জেরে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, মেয়াদ আরও বাড়লো

হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

ঈদযাত্রা : মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ৫১ শতাংশ, সাড়ে ৪২ শতাংশ নিহত

ছবি

১৫ শ্রমিক নিয়ে সাজেকের খাদে ট্রাক, নিহত ৯

ছবি

রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

ছবি

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ছবি

বাসের ধাক্কায় চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু নরসিংদীর বাড়িতে কান্নার রোল

ছবি

অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান

ছবি

রাজশাহীতে বৃষ্টি নামাতে বিয়ের পিঁড়িতে দুই ব্যঙ

ছবি

রংপুরে সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবদল নেতাকে কারাগাওে পাঠানোর নির্দেশে বিক্ষোভ

ছবি

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ

ছবি

পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের লং মার্চ

ছবি

লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন হাজার হাজার মুসল্লি

ছবি

অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা! চুরি ঠেকাতে ৩ বছর শেকল বন্দি কিশোর

ছবি

ছাত্র হত্যায় যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

হোটেলে আটকে রেখে কিশোর ধর্ষণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

tab

সারাদেশ

আনন্দ-উল্লাস পদ্মা পারের মানুষের

পলাশ খান, জাজিরা (শরীয়তপুর)

জাজিরা : পদ্মা সেতু চালুর তারিখ ঘোষণায় পদ্মা পারের মানুষের আনন্দ-উল্লাস, মিষ্টি বিতরণ -সংবাদ

মঙ্গলবার, ২৪ মে ২০২২

আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ঘোষণার পরপরই উচ্ছ্বসিত হয়ে পরে পদ্মাপারের মানুষ।

মঙ্গলবার (২৪ মে) বিকেলের দিকে পদ্মা সেতু জাজিরা পয়েন্টে ঘুরে উচ্ছ্বাসের আমেজ দেখা যায় পদ্মা সেতু জাজিরা পয়েন্টের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফেরদৌস মুন্সী বলেন, ‘অধীর অপেক্ষায় ছিলাম পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঘোষণার। খুবই আনন্দ লাগছে। এখন আর আমাদের ফেরি কিংবা লঞ্চে পারাপার হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হবে না। যখন ইচ্ছে তখনই সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিতে পারব। এছাড়া এই সেতু আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন করবে, নতুন নতুন কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হবে।’

পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকা ঘুরতে আসা জাজিরার বাসিন্দা বরকত মোল্লা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে শুনে খুবই আনন্দ লাগছিল। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পদ্মা সেতুর শেষ কর্মযজ্ঞ দেখতে চলে আসলাম। যদিও সেনা সদস্যরা সেতুর কাছাকাছি যেতে দিচ্ছে না। তবুও দূর থেকেই দেখে শান্তি অনুভব করছি।

স্থানীয় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী খলিল মিয়া বলেন, ‘অনেকেই কইছে পদ্মা সেতু করে চালু হইবো তার কোন গেরান্টি নাই। আমার বিশ্বাস আছিল শেখ হাসিনা আমাগো আশা তারাতারি পূরণ করবো। আজকে হেই আশা পূরণ অইতাছে। অহন এই এলাকায় অনেক মানুষ ঘুরতে আইবো তাতে আমাগো ব্যবসা বড় করতে পারমু।’

জাজিরার ডুবিসায়বর বন্দরের ব্যবসায়ী নুরুল হক মোল্লা বলেন, ‘পদ্মা সেতু সারাদেশের বিস্ময় হলেও আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। যদিও পদ্মা সেতু থেকে আমাদের শরীয়তপুর জেলার অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। তবে আশা করি এজন্যও আমাদের বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আমাদের এ বন্দরে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা সব ধরনের পণ্য এখান থেকেই নেন। এসব পণ্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়। নদীপথে পণ্য আমদানির যেমন বাড়তি খরচ, তেমনি নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেতু চালু হলে কম মূল্যে আনা-নেয়া সম্ভব হবে। তাতে সরাসরি উপকৃত হবেন সব পর্যায়ের গ্রাহকরা।’

জাজিরার বাসিন্দা সমাজকর্মী জামাল মাদবর বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-চিকিৎসা সবক্ষেত্রেই এখানকার মানুঘ ঢাকামুখী। অনেক সময় চিকিৎসা নিতে ঢাকা যেতে যেতেই রোগী মারা যায়। সবজি পচে যায় নদীর তীরেই। কখনও আবার আরিচা, চাঁদপুর বা চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা যেতে হয়। এতে যাতায়াত ভাড়া কয়েকগুণ বেশি গুনতে হয়। পদ্মা সেতু চালুর ঘোষণার মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধান হচ্ছে বলে আশা রাখি।’ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঘোষণা শুনে শরীয়তপুর জেলা সদরে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।

তবে জাজিরার নাওডোবা এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা সংবাদের কাছে আক্ষেপ করে বলেন, স্বপ্নের এই সেতুর জন্য জমি দিয়েছি। কিন্তু সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরের কোন সংযোগ সড়ক নেই। সেতু ঘিরে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে তার সবই হচ্ছে মাদারীপুর জেলাকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ক্ষোভও আছে তাদের মধ্যে।

তাদের একজন বলেন, ‘এখনও তো কিছু দেখছি না। দোকানের বেচাকিনি আগে যেমন ছিল, এখনও তাই আছে। আমাদের এলাকায় তো বড় কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠানও চালু করা হলো না।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান সোহেল সংবাদকে বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এই জাজিরা উপজেলা তথা শরীয়তপুর জেলার আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সাধিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি বরগুনা। আমিও দক্ষিণাঞ্চলের একজন বাসিন্দা হিসেবে খুবই আনন্দিত।

সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মাণ শুরু করা হয়েছে। দুটি ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি রয়েছে। এসব কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য সেতু বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করছেন। গত সপ্তাহে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশসুপারদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা সভা করেছেন।

সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গত এপ্রিল মাসে সেতুতে পিচ ঢালাইয়ের কাজ, বাতি বসানোর কাজ (ল্যাম্পপোস্ট) শেষ হয়েছে। এখন তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজ চলছে। এ ছারা সেতুতে সাইন, সংকেত ও মার্কিং বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সেতুর সীমানা দেয়ালের ওপর স্টিলের রেলিং বসানোর কাজ চলছে।

সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুর আগেই দুই প্রান্তে নির্মাণ করা হয়েছে সংযোগ সড়ক। ১০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়কটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ পাঁচ বছর যাবত ওই সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করছে। নদী শাসন কাজও প্রায় শেষ। জাজিরার নাওডোবা হতে শিবচরের মাদবরচর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার নদী শাসন এলাকা এখন দৃষ্টিনন্দন বিনোদন কেন্দ্র। খুব কাছ থেকে সেতু দেখার জন্য সেখানে প্রতি দিন শতশত মানুষ ভির করছেন।

পদ্মা সেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪১ কোটি টাকার মতো।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সারা দেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে পদ্মা সেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু।

সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এক দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

back to top