alt

প্রযুক্তির ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে চাকরি হারাতে পারেন ১৮ লাখ মানুষ: বিআইডিএস

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) খাত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রোববার (৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত ‘প্রযুক্তি, সাপ্লাই চেইন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক অধিবেশনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে এ কথা বলা হয়। যৌথভাবে এ গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন বিআইডিএস’র গবেষক ড. মনজুর হোসেন, ড. কাজী ইকবাল ও জায়েদ বিন সাত্তার। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি)-এর নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির।

বিআইডিএস’র গবেষণা সহযোগী ফারহিন ইসলাম জানান, শুধুমাত্র আরএমজি খাতে ১০ লাখ চাকরি হারানোর আশঙ্কা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- অ-ধাতু, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়া সামগ্রী, ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্প।

উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এ হিসাব করেছি এটা ধরে নিয়ে যে, উৎপাদন খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে যদি উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ৫০ শতাংশ বাড়লেও চাকরি ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গিয়ে ২০ লাখেরও বেশি চাকরি সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কাগজেরপণ্য, কোক এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, অ-ধাতু খনিজ পণ্য, এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স নির্মাণ খাতে চাকরি বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটা বেকারত্ব আমরা অনুমান করেছি, তা শ্রম প্রতিস্থাপনকারী প্রযুক্তির চেয়ে শ্রম-বর্ধনকারী প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কম হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি। তবে যদি আমরা শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে পারি, তাহলে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। সেইসঙ্গে চাকরি বজায় রাখতে পারব। সরকারকে শ্রমশক্তি উন্নয়নের জন্য সরকারের আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘প্রযুক্তির প্রভাব কীভাবে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত। প্রযুক্তি গ্রহণের সময় তার সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

একই সঙ্গে গবেষণায় আরও উঠে আসে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৪ সালে দেশের এই খাতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে যা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক খাতের বেশির ভাগ উপখাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এই খাতের আটটি উপখাতের মধ্যে ছয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে; বেড়েছে মাত্র দুটিতে।

টেকনোলজি আপগ্রেডেশন অব দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক উপস্থাপনায় বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল দেখিয়েছেন, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের উপখাতগুলোর মধ্যে শুধু হোম টেক্সটাইল ও ওভেন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাকি ছয়টি খাত অর্থাৎ নিট লিনজারি, ডেনিম ট্রাউজার, সোয়েটার, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওভেন ট্রাউজার ও ওভেন শার্টে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে জ্যাকেটে। এই উপখাতে ২০১৪ সালে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

উপস্থাপনায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাত গত ১০ বছরে অনেক বেশি পুঁজিঘন হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকপ্রতি যন্ত্রের সংখ্যা কমেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে।

নারী শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে যে আরেকটি পরিবর্তন গত ১০ বছরে হয়েছে, তা হলো উৎপাদন খাতে প্রযুক্তি জানা মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই খাতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলী বেড়েছে। কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলে নারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এছাড়া বিএসসি শিল্প প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর সংখ্যা বেড়েছে। ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর পেশা তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে এই খাতে সম্প্রতি কয়েক বছরে নারীরা এসেছেন। এই খাত গত ১০ বছরে অনেক বড় হয়েছে বলে নন-টেকনিক্যাল মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

এ প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন বলেন, ‘এই যে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, এর সামাজিক প্রভাব আছে। বিষয়টি কী একেবারে বাজারের হাতে দেয়া হবে, নাকি এখানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কাজী ইকবাল বলেন, ‘নারীরা কোথায় কোথায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো দরকার। তাহলে নারীদের এই ঝরে পড়ার হার রোধ করা সম্ভব।’

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে, তা নয়। এর প্রভাব আছে। চীনে প্রযুক্তির কারণে ৩ শতাংশ ছাঁটাই হলেও ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সবখানেই থাকবে। ফলে দরকার হচ্ছে, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বা তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো, এবং প্রয়োজনবোধে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।’

অনুষ্ঠানে বিআইডিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিতে ২৬ ঘণ্টা ভোগান্তি

ছবি

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

ছবি

অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন, সামান্য বেড়েছে লেনদেন

ছবি

অক্টোবরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি জাতিসংঘকে জানাতে হবে

ছবি

শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত

ছবি

একনেকে ৮৩৩৩ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

ঢাকায় নিরাপত্তা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন নিয়ে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

ছবি

পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র মেজবাউল

ছবি

প্রথম চালানে ভারতে গেল সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ

ছবি

তাপমাত্রা বাড়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা: বিশ্বব্যাংক

ছবি

পাঁচ বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার প্রথম ধাপে প্রশাসক বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিরোধিতা করছে

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ৬শ’ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

ব্যবসা মাঝে মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো: অর্থ উপদেষ্টা.

ছবি

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা: একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে লেনোভো ভি সিরিজের নতুন ল্যাপটপ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরও কমতে পারে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

বাজারে গিগাবাইট এআই টপ ১০০ জেড৮৯০ পিসি

ছবি

কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সফটওয়্যার চালু করলো এনবিআর

ছবি

ট্রাস্ট ব্যাংকের এটিএম ও ডেবিট কার্ডসেবা সাময়িক বন্ধ থাকবে

ছবি

বেপজার ইপিজেডগুলোতে শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান শুরু

ছবি

বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে আরও ৫ সেবা যুক্ত

ছবি

এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পেছাতে ব্যবসায়ীদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান

ছবি

আড়াইগুণ প্রতিষ্ঠানের দরপতনে বাজার মূলধন কমলো ৩ হাজার কোটি টাকা

tab

প্রযুক্তির ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে চাকরি হারাতে পারেন ১৮ লাখ মানুষ: বিআইডিএস

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দেশে প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার ৫০ শতাংশ বাড়লে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হবে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) খাত। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রোববার (৮ ডিসেম্বর) আয়োজিত ‘প্রযুক্তি, সাপ্লাই চেইন ও প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান’ শীর্ষক এক অধিবেশনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রে এ কথা বলা হয়। যৌথভাবে এ গবেষণাপত্রটি তৈরি করেন বিআইডিএস’র গবেষক ড. মনজুর হোসেন, ড. কাজী ইকবাল ও জায়েদ বিন সাত্তার। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি)-এর নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির।

বিআইডিএস’র গবেষণা সহযোগী ফারহিন ইসলাম জানান, শুধুমাত্র আরএমজি খাতে ১০ লাখ চাকরি হারানোর আশঙ্কা করা হয়েছে। গবেষণায় আরও কিছু ক্ষতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে- অ-ধাতু, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়া সামগ্রী, ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্প।

উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা এ হিসাব করেছি এটা ধরে নিয়ে যে, উৎপাদন খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি। তবে যদি উৎপাদন খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়, তাহলে ২০২৫ সালের মধ্যে, প্রযুক্তিগত দক্ষতা ৫০ শতাংশ বাড়লেও চাকরি ক্ষতির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গিয়ে ২০ লাখেরও বেশি চাকরি সৃষ্টি হতে পারে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কাগজেরপণ্য, কোক এবং পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, অ-ধাতু খনিজ পণ্য, এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স নির্মাণ খাতে চাকরি বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটা বেকারত্ব আমরা অনুমান করেছি, তা শ্রম প্রতিস্থাপনকারী প্রযুক্তির চেয়ে শ্রম-বর্ধনকারী প্রযুক্তির মাধ্যমে অনেক কম হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি। তবে যদি আমরা শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে পারি, তাহলে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব। সেইসঙ্গে চাকরি বজায় রাখতে পারব। সরকারকে শ্রমশক্তি উন্নয়নের জন্য সরকারের আরও পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।’

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, ‘প্রযুক্তির প্রভাব কীভাবে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত। প্রযুক্তি গ্রহণের সময় তার সামাজিক প্রভাব বিবেচনায় নেয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

একই সঙ্গে গবেষণায় আরও উঠে আসে, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৪ সালে দেশের এই খাতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ, ২০২৩ সালে যা ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায়, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাক খাতের বেশির ভাগ উপখাতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে। এই খাতের আটটি উপখাতের মধ্যে ছয়টিতে নারীর অংশগ্রহণ কমেছে; বেড়েছে মাত্র দুটিতে।

টেকনোলজি আপগ্রেডেশন অব দ্য আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ শীর্ষক উপস্থাপনায় বিআইডিএসের গবেষক কাজী ইকবাল দেখিয়েছেন, গত ১০ বছরে তৈরি পোশাকের উপখাতগুলোর মধ্যে শুধু হোম টেক্সটাইল ও ওভেন খাতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। বাকি ছয়টি খাত অর্থাৎ নিট লিনজারি, ডেনিম ট্রাউজার, সোয়েটার, টি-শার্ট, জ্যাকেট, ওভেন ট্রাউজার ও ওভেন শার্টে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে জ্যাকেটে। এই উপখাতে ২০১৪ সালে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ; ২০২৩ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ২২ শতাংশ।

উপস্থাপনায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাত গত ১০ বছরে অনেক বেশি পুঁজিঘন হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রমিকপ্রতি যন্ত্রের সংখ্যা কমেছে। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর। সামগ্রিকভাবে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বেড়েছে।

নারী শ্রমিকদের সংখ্যা হ্রাসের সঙ্গে যে আরেকটি পরিবর্তন গত ১০ বছরে হয়েছে, তা হলো উৎপাদন খাতে প্রযুক্তি জানা মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। এই খাতে বিএসসি ও ডিপ্লোমা টেক্সটাইল প্রকৌশলী বেড়েছে। কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলে নারীর সংখ্যা খুবই নগণ্য। এছাড়া বিএসসি শিল্প প্রকৌশলী ও ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর সংখ্যা বেড়েছে। ডিপ্লোমা শিল্প প্রকৌশলীর পেশা তুলনামূলকভাবে নতুন। তবে এই খাতে সম্প্রতি কয়েক বছরে নারীরা এসেছেন। এই খাত গত ১০ বছরে অনেক বড় হয়েছে বলে নন-টেকনিক্যাল মানুষের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য।

এ প্রসঙ্গে বিনায়ক সেন বলেন, ‘এই যে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে নারীর শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ কমে যাচ্ছে, এর সামাজিক প্রভাব আছে। বিষয়টি কী একেবারে বাজারের হাতে দেয়া হবে, নাকি এখানে নারীদের অংশগ্রহণের হার বজায় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কাজী ইকবাল বলেন, ‘নারীরা কোথায় কোথায় প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে সমস্যার মুখে পড়ছেন, তা চিহ্নিত করে তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো দরকার। তাহলে নারীদের এই ঝরে পড়ার হার রোধ করা সম্ভব।’

এ প্রসঙ্গে বিআইডিএসের গবেষক মঞ্জুর আহমেদ বলেন, ‘দেশে এই মুহূর্তে প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের ছাঁটাই হচ্ছে, তা নয়। এর প্রভাব আছে। চীনে প্রযুক্তির কারণে ৩ শতাংশ ছাঁটাই হলেও ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া সবখানেই থাকবে। ফলে দরকার হচ্ছে, নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা বা তাদের নতুন দক্ষতা শেখানো, এবং প্রয়োজনবোধে নতুন জায়গায় নিয়ে যাওয়া।’

অনুষ্ঠানে বিআইডিএসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

back to top