ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
এবার পবিত্র রমজান ও জাতীয় নির্বাচন প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। উভয় ঘটনাই নিত্যপণ্যের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য আগেভাগে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের তাগিদ দিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যবসায়ী নেতারা।
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ে রয়েছে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো নিয়মে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের পরামর্শ দেন এই বাজার বিশ্লেষক
গতকাল বুধবার এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই প্রশাসক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও পবিত্র রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এজন্য রোজায় ব্যবহৃত পণ্য আমদানি অবাধ করার জন্য এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে। এখন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যেন কোনো বিঘœ না ঘটে। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চাঁদাবাজি যেন কারণ না হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
কোনো পক্ষের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ন না হয় এবং খাদ্যে ভেজাল না মেশে—এজন্য এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম সঠিক, স্বাভাবিক ও সহজলভ্য রাখতে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আচরণেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে কোনো সমস্যা হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ চলছে।
তিনি বলেন, যখন তেলের দাম বাড়ে, তখন বাজারে তেল পাওয়া যায় না; মিলগুলোতেও মজুদ থাকে না। তখন বিশেষ ‘ডিও লেটার’-এর মাধ্যমে তেল বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে যায়, যারা পরে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে এই ডিও ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম বলেন, দেশে বছরে ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশ সরবরাহ করে তিনটি কোম্পানি। রমজান মাসে বাড়তি চাহিদা পূরণে সরকারকে ভোজ্যতেল আমদানিতে জোর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এর প্রভাব পড়ে সরবরাহে। এজন্য মিলগুলোতে গ্যাস সরবরাহে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানির খরচও বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, পণ্য আমদানি বাড়ালেও লাইটার জাহাজের স্বল্পতার কারণে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীরা সবকিছু শোষণ করছে। পণ্যে তিন টাকার মোড়ক লাগিয়ে ৪০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। একই সঙ্গে ফড়িয়া ও দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে। পুলিশ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে অনেক সময় সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। এ অবস্থা রেখে শুধু সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
স্বতন্ত্র বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচনের সময়ে বাজারে অতিরিক্ত টাকা সরবরাহ বাড়ে, যার ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
রমজানেও একই অবস্থা হয়। ফলে এ দুটি বিষয় মিলেই বাজার অস্থিতিশীল করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই ভোট ও রমজানে যাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ে রয়েছে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো নিয়মে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের পরামর্শ দেন এই বাজার বিশ্লেষক।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
এবার পবিত্র রমজান ও জাতীয় নির্বাচন প্রায় একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। উভয় ঘটনাই নিত্যপণ্যের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য আগেভাগে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের তাগিদ দিয়েছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও ব্যবসায়ী নেতারা।
মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ে রয়েছে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো নিয়মে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের পরামর্শ দেন এই বাজার বিশ্লেষক
গতকাল বুধবার এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি’ নিয়ে মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই প্রশাসক আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে বাজার স্থিতিশীল থাকলেও পবিত্র রমজানে খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে। এজন্য রোজায় ব্যবহৃত পণ্য আমদানি অবাধ করার জন্য এলসি মার্জিন কমানো হয়েছে। এখন বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী, আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি ও পরিবহন ব্যবস্থায় যেন কোনো বিঘœ না ঘটে। রমজানকে সামনে রেখে পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে চাঁদাবাজি যেন কারণ না হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
কোনো পক্ষের স্বার্থ যেন ক্ষুণ্ন না হয় এবং খাদ্যে ভেজাল না মেশে—এজন্য এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ী সমিতিগুলোকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, পণ্যের দাম সঠিক, স্বাভাবিক ও সহজলভ্য রাখতে শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, আচরণেও তার প্রতিফলন থাকতে হবে।
পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক থাকলে বাজারে কোনো সমস্যা হবে না। বর্তমানে ‘আন্ডাররেট’ চলছে।
তিনি বলেন, যখন তেলের দাম বাড়ে, তখন বাজারে তেল পাওয়া যায় না; মিলগুলোতেও মজুদ থাকে না। তখন বিশেষ ‘ডিও লেটার’-এর মাধ্যমে তেল বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে যায়, যারা পরে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে। ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে এই ডিও ব্যবস্থার ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে।
টিকে গ্রুপের পরিচালক আতাহার তাসলিম বলেন, দেশে বছরে ২২-২৩ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশ সরবরাহ করে তিনটি কোম্পানি। রমজান মাসে বাড়তি চাহিদা পূরণে সরকারকে ভোজ্যতেল আমদানিতে জোর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শীতকালে গ্যাসের সরবরাহ কমে যায়, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং এর প্রভাব পড়ে সরবরাহে। এজন্য মিলগুলোতে গ্যাস সরবরাহে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে।
মেইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুল হক বলেন, পোর্টে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় পণ্য আমদানির খরচও বেড়ে গেছে। ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, পণ্য আমদানি বাড়ালেও লাইটার জাহাজের স্বল্পতার কারণে সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
শ্যামবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফরিদ উদ্দিন বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীরা সবকিছু শোষণ করছে। পণ্যে তিন টাকার মোড়ক লাগিয়ে ৪০ টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। একই সঙ্গে ফড়িয়া ও দালালদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজিও বন্ধ করতে হবে। পুলিশ চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার পরিবর্তে অনেক সময় সহায়ক ভূমিকা নিচ্ছে। এ অবস্থা রেখে শুধু সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
স্বতন্ত্র বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান বলেন, নির্বাচনের সময়ে বাজারে অতিরিক্ত টাকা সরবরাহ বাড়ে, যার ফলে চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
রমজানেও একই অবস্থা হয়। ফলে এ দুটি বিষয় মিলেই বাজার অস্থিতিশীল করার অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই ভোট ও রমজানে যাতে পণ্যের সরবরাহ বাড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, এটা কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। নতুন সরকারের সময় ব্যবসায়ীরা ভয়ে রয়েছে। পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধির মাধ্যমে পুরোনো নিয়মে বাজার নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা শুরু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদারের পরামর্শ দেন এই বাজার বিশ্লেষক।