ভ্যালেন্সিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতে অবকাঠামো ধ্বংস, উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনী
স্পেন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশে আকস্মিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ৯৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে ভ্যালেন্সিয়ার বিভিন্ন ভবন ও সেতু ভেসে গেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মাত্র আট ঘণ্টায় ভ্যালেন্সিয়ার কিছু অংশে এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যার ফলে মহাসড়কগুলোতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কমলা উৎপাদনকারী অঞ্চল। বিশ্বে লেবুজাতীয় ফল রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষ দেশ স্পেনের মোট কমলা উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশই ভ্যালেন্সিয়া থেকে আসে। এ অঞ্চলের খামারগুলো ডুবে যাওয়ায় স্পেনের অর্থনীতি এবং রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্যায় সৃষ্ট তাণ্ডব ও বাসিন্দাদের বেঁচে থাকার লড়াই
ভ্যালেন্সিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে বন্যার পানির তোড়ে গাছপালা উপড়ে গেছে এবং ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। বন্যায় আটকে পড়া মানুষজন তাদের গাড়ির ছাদে উঠে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন।
ভ্যালেন্সিয়া শহরের একটি পেট্রল পাম্পে আটকে পড়া ডেনিশ ল্যাভাতি বলেন, “এটি যেন একটি নদী ছিল। দরজাগুলো ভেঙে পানি প্রবেশ করে। চারদিকে ২ মিটার গভীর পানির মধ্যে আমি এক কোনায় সারারাত কাটিয়েছি।” এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেকেই তাদের জীবনের জন্য বাঁচার লড়াই করেছেন।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও উদ্ধার অভিযান
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম আরও জোরালো করতে স্পেনের সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিতা রোবলেস জানান, উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত একটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। তারা কাদা ও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চিরুনি অভিযান চালাবে। এছাড়া, তাদের সঙ্গে ৫০টি মোবাইল মর্গও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা মরদেহ সনাক্তকরণ ও সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হবে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। বন্যার কারণে ভেঙে পড়া সেতু, ভবন এবং অন্যান্য অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
ক্ষতির পরিমাণ ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
ভ্যালেন্সিয়ায় এখন পর্যন্ত ৯২ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, ভ্যালেন্সিয়ার পাশের কাস্তিয়া লা মাঞ্চা অঞ্চলে আরও দুইজন এবং মালাগায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে, ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রোবলেস বলেন, “আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে মৃত্যুর সংখ্যা আর বাড়বে না, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আশাবাদী হতে পারছি না।”
ভ্যালেন্সিয়ার রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও বন্যা সতর্কতা
ভ্যালেন্সিয়ার তুরিস, চিবা ও বুনল এলাকায় মঙ্গলবার আট ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা আবহাওয়াবিদদের মতে অপ্রত্যাশিত ও বিরল। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা আইমেত মঙ্গলবার ওই এলাকাগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করে। বুধবার বৃষ্টি কমে আসার পর সতর্কতার মাত্রা কমিয়ে অ্যাম্বার অ্যালার্ট করা হয়েছে।
ভ্যালেন্সিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুশিয়ায়ও প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে।
ভ্যালেন্সিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে অপ্রত্যাশিত বৃষ্টিপাতে অবকাঠামো ধ্বংস, উদ্ধার তৎপরতায় সেনাবাহিনী
বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
স্পেন কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বন্যার মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলের ভ্যালেন্সিয়া প্রদেশে আকস্মিক বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যায় অন্তত ৯৫ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, আকস্মিক বন্যার কারণে ভ্যালেন্সিয়ার বিভিন্ন ভবন ও সেতু ভেসে গেছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মাত্র আট ঘণ্টায় ভ্যালেন্সিয়ার কিছু অংশে এক বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এতে দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্যার ফলে মহাসড়কগুলোতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ কমলা উৎপাদনকারী অঞ্চল। বিশ্বে লেবুজাতীয় ফল রপ্তানিতে অন্যতম শীর্ষ দেশ স্পেনের মোট কমলা উৎপাদনের দুই-তৃতীয়াংশই ভ্যালেন্সিয়া থেকে আসে। এ অঞ্চলের খামারগুলো ডুবে যাওয়ায় স্পেনের অর্থনীতি এবং রপ্তানি খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্যায় সৃষ্ট তাণ্ডব ও বাসিন্দাদের বেঁচে থাকার লড়াই
ভ্যালেন্সিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে বন্যার পানির তোড়ে গাছপালা উপড়ে গেছে এবং ভবনগুলোর বিভিন্ন অংশ পানির সঙ্গে ভেসে গেছে। বন্যায় আটকে পড়া মানুষজন তাদের গাড়ির ছাদে উঠে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করেছেন।
ভ্যালেন্সিয়া শহরের একটি পেট্রল পাম্পে আটকে পড়া ডেনিশ ল্যাভাতি বলেন, “এটি যেন একটি নদী ছিল। দরজাগুলো ভেঙে পানি প্রবেশ করে। চারদিকে ২ মিটার গভীর পানির মধ্যে আমি এক কোনায় সারারাত কাটিয়েছি।” এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অনেকেই তাদের জীবনের জন্য বাঁচার লড়াই করেছেন।
রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা ও উদ্ধার অভিযান
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং উদ্ধার কার্যক্রম আরও জোরালো করতে স্পেনের সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিতা রোবলেস জানান, উদ্ধার অভিযানে সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত একটি ইউনিট পাঠানো হয়েছে। তারা কাদা ও ধ্বংসাবশেষের মধ্যে চিরুনি অভিযান চালাবে। এছাড়া, তাদের সঙ্গে ৫০টি মোবাইল মর্গও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা মরদেহ সনাক্তকরণ ও সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হবে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী সানচেজ। বন্যার কারণে ভেঙে পড়া সেতু, ভবন এবং অন্যান্য অবকাঠামো পুনর্গঠনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
ক্ষতির পরিমাণ ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
ভ্যালেন্সিয়ায় এখন পর্যন্ত ৯২ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া, ভ্যালেন্সিয়ার পাশের কাস্তিয়া লা মাঞ্চা অঞ্চলে আরও দুইজন এবং মালাগায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির সরকার জানিয়েছে, এখনও অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে, ফলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রোবলেস বলেন, “আমরা এখনও নিশ্চিত নই যে মৃত্যুর সংখ্যা আর বাড়বে না, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আশাবাদী হতে পারছি না।”
ভ্যালেন্সিয়ার রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও বন্যা সতর্কতা
ভ্যালেন্সিয়ার তুরিস, চিবা ও বুনল এলাকায় মঙ্গলবার আট ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা আবহাওয়াবিদদের মতে অপ্রত্যাশিত ও বিরল। দেশটির আবহাওয়া সংস্থা আইমেত মঙ্গলবার ওই এলাকাগুলোতে রেড অ্যালার্ট জারি করে। বুধবার বৃষ্টি কমে আসার পর সতর্কতার মাত্রা কমিয়ে অ্যাম্বার অ্যালার্ট করা হয়েছে।
ভ্যালেন্সিয়ার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় আন্দালুশিয়ায়ও প্রবল বৃষ্টির কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে।