নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা কার্যকরের পর দেশের বাজারে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে বলে ‘গ্রে মার্কেটের’ ব্যবসায়ীরা যে শঙ্কার কথা বলছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন দেশি মোবাইল ফোন সেট উৎপাদকরা। তারা আশ্বস্ত করেছেন, এর ফলে হ্যান্ডসেটের দাম এক টাকাও বাড়বে না। উল্টো তাদের কারখানাগুলো পুরোদমে চালু করা গেলে হ্যান্ডসেটের দাম কমানোর পাশাপাশি রপ্তানিও করা যাবে বলেও আশা করছেন তারা। গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এমআইওবি) এর সভাপতি জাকারিয়া শহীদ।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে দেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ প্রক্রিয়ায় সিমকার্ডের মতো প্রতিটি হ্যান্ডসেটও নিবন্ধনের আওতায় আসবে। দেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশের বেশি হ্যান্ডসেট ‘গ্রে মার্কেট’ থেকে আসা। অর্থাৎ, কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দেশে আনা হয় এসব হ্যান্ডসেট। গ্রে মার্কেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ৯০ শতাংশ হ্যান্ডসেটের বাজার তাদের দখলে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের বাজারে মোবাইল ফোনের দাম বাড়িয়ে দেবে।
তবে দেশি উৎপাদকরা বলছেন, বর্তমানে দেশে আইফোন ছাড়া আর সব বৈশি^ক ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট তৈরি হয়। নিবন্ধনের আওতায় এলে দেশে কর ফাঁকি দিয়ে আসা মোবাইল ফোনের বাজার ছোট হবে আর দেশি হ্যান্ডসেটের বাজার বড় হবে। দেশে উৎপাদন বাড়লে মোবাইল ফোনের দামও কমবে।
সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবির সহসভাপতি রিজওয়ানুল হক বলছেন, আমাদের যে কারখানার সক্ষমতা তা দেশি চাহিদার চেয়ে বেশি। আমরা চাইলে রপ্তানিও করতে পারি। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন গ্রে মার্কেট ছোট ছিল। এখন তা ৬০ শতাংশের বেশি। তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশের মোবাইল ম্যানুফাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি দেখেন, এই ইন্ডাস্ট্রি টেকানোর পূর্ব শর্তই হচ্ছে আগে হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের বাধ্যবধকতা দিতে হবে, এনইআইআর ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। পাকিস্তানের উদাহরণ তুলে ধরে রিজওয়ানুল হক বলেন, আমরা বাংলাদেশে এনইআইআর প্রকল্প শুরু করি সাত বছর আগে। তারও দুই বছর পরে পাকিস্তান জানতে পারে যে বাংলাদেশে এটা হচ্ছে, এরপর তারা কিন্তু এটা শুরু করে বাস্তবায়নও করেছে প্রায় আমাদের চার বছর আগে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বাজারে কিন্তু ৯৯ শতাংশ বৈধ হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়।
এমআইওবি সদস্য ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো গার্মেন্টেসের মাধ্যমে সেলাই করে পয়সা রোজগার করি। এরপর সরকার অনুমতি দিল দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের জন্য। যেন আমরা দক্ষতা অর্জনের পর রপ্তানিও করতে পারি। এখন কারখানা হওয়ার পর আমরা দেখছি, অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রে’তে ইমপোর্ট করা শুরু করল। তাদের দৌরাত্ব্যের কারণে যারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় এখানে বিনিয়োগ করেছে, তারা আজকে বিপদে পড়েছে।
এমআইওবি সভাপতি ও এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বলেন, এর আগেও দুইবার এনইআইআর কার্যকর হয়েও নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল একটা মহলের কারণে। তারা নানা কথা বলে, মার্কেটে মনোপলি হবে, ভোগান্তি বাড়বে, তাদের ব্যবসায়ীরা না খেয়ে মারা যাবে, কিন্তু এরকম কিছুই হবে না। আমরা আশ^স্ত করছি এটা হওয়ার পর মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে না। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যেন ভোগান্তি না হয় এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা যেন সহজে সম্পন্ন করা যায়, আমরা সেরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আমাদের ২০ হাজার বিক্রয়কেরন্দ্র প্রায় এক লাখ লোক আছে তাদেরকে আমরা এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ১৭টি মোবাইল ফোন কারখানা দেশে উৎপাদন করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ সময় আরও জানানো হয়, অবৈধভাবে আমদানি হওয়ায় মোবাইল হ্যান্ডসেটের কারনে সরকার বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এক্সেল টেলিকম এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন টিপু, ভিভো বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইমাম উদ্দিন, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশন এর সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল কাপুরিয়া প্রমুখ।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা কার্যকরের পর দেশের বাজারে মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে বলে ‘গ্রে মার্কেটের’ ব্যবসায়ীরা যে শঙ্কার কথা বলছেন, তা উড়িয়ে দিয়েছেন দেশি মোবাইল ফোন সেট উৎপাদকরা। তারা আশ্বস্ত করেছেন, এর ফলে হ্যান্ডসেটের দাম এক টাকাও বাড়বে না। উল্টো তাদের কারখানাগুলো পুরোদমে চালু করা গেলে হ্যান্ডসেটের দাম কমানোর পাশাপাশি রপ্তানিও করা যাবে বলেও আশা করছেন তারা। গত ৫ নভেম্বর রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (এমআইওবি) এর সভাপতি জাকারিয়া শহীদ।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থেকে দেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ প্রক্রিয়ায় সিমকার্ডের মতো প্রতিটি হ্যান্ডসেটও নিবন্ধনের আওতায় আসবে। দেশের টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের ৬০ শতাংশের বেশি হ্যান্ডসেট ‘গ্রে মার্কেট’ থেকে আসা। অর্থাৎ, কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দেশে আনা হয় এসব হ্যান্ডসেট। গ্রে মার্কেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের ৯০ শতাংশ হ্যান্ডসেটের বাজার তাদের দখলে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের বাজারে মোবাইল ফোনের দাম বাড়িয়ে দেবে।
তবে দেশি উৎপাদকরা বলছেন, বর্তমানে দেশে আইফোন ছাড়া আর সব বৈশি^ক ব্র্যান্ডের মোবাইল সেট তৈরি হয়। নিবন্ধনের আওতায় এলে দেশে কর ফাঁকি দিয়ে আসা মোবাইল ফোনের বাজার ছোট হবে আর দেশি হ্যান্ডসেটের বাজার বড় হবে। দেশে উৎপাদন বাড়লে মোবাইল ফোনের দামও কমবে।
সংবাদ সম্মেলনে এমআইওবির সহসভাপতি রিজওয়ানুল হক বলছেন, আমাদের যে কারখানার সক্ষমতা তা দেশি চাহিদার চেয়ে বেশি। আমরা চাইলে রপ্তানিও করতে পারি। আমরা যখন শুরু করেছিলাম তখন গ্রে মার্কেট ছোট ছিল। এখন তা ৬০ শতাংশের বেশি। তিনি বলেন, পৃথিবীর যেকোনো দেশের মোবাইল ম্যানুফাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি দেখেন, এই ইন্ডাস্ট্রি টেকানোর পূর্ব শর্তই হচ্ছে আগে হ্যান্ডসেট নিবন্ধনের বাধ্যবধকতা দিতে হবে, এনইআইআর ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। পাকিস্তানের উদাহরণ তুলে ধরে রিজওয়ানুল হক বলেন, আমরা বাংলাদেশে এনইআইআর প্রকল্প শুরু করি সাত বছর আগে। তারও দুই বছর পরে পাকিস্তান জানতে পারে যে বাংলাদেশে এটা হচ্ছে, এরপর তারা কিন্তু এটা শুরু করে বাস্তবায়নও করেছে প্রায় আমাদের চার বছর আগে। এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বাজারে কিন্তু ৯৯ শতাংশ বৈধ হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়।
এমআইওবি সদস্য ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিস বিডি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা এখনো গার্মেন্টেসের মাধ্যমে সেলাই করে পয়সা রোজগার করি। এরপর সরকার অনুমতি দিল দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের জন্য। যেন আমরা দক্ষতা অর্জনের পর রপ্তানিও করতে পারি। এখন কারখানা হওয়ার পর আমরা দেখছি, অসাধু ব্যবসায়ীরা গ্রে’তে ইমপোর্ট করা শুরু করল। তাদের দৌরাত্ব্যের কারণে যারা জীবনের সমস্ত সঞ্চয় এখানে বিনিয়োগ করেছে, তারা আজকে বিপদে পড়েছে।
এমআইওবি সভাপতি ও এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ বলেন, এর আগেও দুইবার এনইআইআর কার্যকর হয়েও নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল একটা মহলের কারণে। তারা নানা কথা বলে, মার্কেটে মনোপলি হবে, ভোগান্তি বাড়বে, তাদের ব্যবসায়ীরা না খেয়ে মারা যাবে, কিন্তু এরকম কিছুই হবে না। আমরা আশ^স্ত করছি এটা হওয়ার পর মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে না। নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় যেন ভোগান্তি না হয় এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা যেন সহজে সম্পন্ন করা যায়, আমরা সেরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছি। আমাদের ২০ হাজার বিক্রয়কেরন্দ্র প্রায় এক লাখ লোক আছে তাদেরকে আমরা এই কাজের জন্য প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমানে দেশি-বিদেশি মিলে প্রায় ১৭টি মোবাইল ফোন কারখানা দেশে উৎপাদন করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছে, যেখানে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ সময় আরও জানানো হয়, অবৈধভাবে আমদানি হওয়ায় মোবাইল হ্যান্ডসেটের কারনে সরকার বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এক্সেল টেলিকম এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন টিপু, ভিভো বাংলাদেশের প্রতিনিধি ইমাম উদ্দিন, বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশন এর সাংগঠনিক সম্পাদক রাহুল কাপুরিয়া প্রমুখ।