‘চারদিকে থৈ থৈ পানি। বিলের মাঝে এক তলার ছাদে বসে আছেন কিছু মানুষ। কয়েকজন রয়েছেন দাঁড়িয়ে আবার কেউবা বসে। গোমতীর বাঁধ ভাঙনের চার দিন পেরিয়ে গেলেও তারা রয়েছন এখানে। দূর থেকে স্পিডবোট দেখে শুরু করেছেন চিৎকার। আর বলছেন- ও ভাই শুনছেন, আমাদের খাবার দরকার নেই। এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এমন কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তারা।’ সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল মধ্যপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। এরপরই দুটি বোট তাদের বাড়ির কাছে এগিয়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে ছাদ থেকে জানালা বেয়ে নেমে ওঠে পড়েন বোটে। এদিকে ত্রাণ সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবকরা ট্রাক্টরযোগে পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রাণ নিয়ে গেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে না পারায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। এতে ত্রাণের অভাবে অনেক কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন বানভাসিরা। এদিকে গোমতীর বাঁধ ভাঙনে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে দুর্গম এলাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে গোমতীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় একই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলায়। বর্তমানে তা উপজেলা ছাড়িয়ে প্লাবিত হয়েছে পাশর্^বর্তী ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলা। এছাড়া ফেনী থেকে আসা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা। জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ত্রাণের শতশত গাড়ি আসলেও জেলার দক্ষিণাঞ্চলে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ত্রাণ সংকট। সরেজমিনে কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্গম এলাকার পানিবন্দী মানুষেরা ত্রাণের অভাবে কষ্টে আছেন। তবে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের অভাব তেমন না থাকলেও বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকট রয়েছে। এদিকে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপরে থাকা কুমিল্লা গোমতী নদীর পানি ধীরগতিতে কমলেও বাড়ছে বাঁধ ভাঙনে প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা। তলিয়ে গেছে জেলার প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনকবলিত বুড়িচংয়ের লড়িবাগ গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, ঘরের সামনে বুকসমান পানি, বসার মতো অবস্থা নাই। বাড়িতেই থাকছি, চকির উপরে। কোনো রান্না নাই, খাওয়া দাওয়া নাই। এ গ্রামে ত্রাণ সহায়তা একেবারে অপ্রতুল। বানভাসি মানুষদের অভিযোগ, মূল সড়কের আশপাশে ত্রাণ দিয়েই অনেকে চলে যান। ভেতরের দিকে কেউ আসে না, তাই এখানকার মানুষ বঞ্চিত। এদিকে পানিতে ডুবে সোমবার সকালে বুড়িচংয়ের পশ্চিম সিংহ গ্রামের আল-আমিনের ছেলে মো. ইব্রাহিম (৪) ও দুপুরে আরাগ আনন্দপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (৯) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে জেলার সার্বিক চিত্রে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বানভাসি মানুষ।
এরই মধ্যে সোমবার দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজার সংলগ্ন সোনার বাংলা কলেজে বানভাসি মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ত্রাণ সহায়তা প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এ এক মানবিক বাংলাদেশ। দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে দেশের সব মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন শেষে মনে হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে সবারই সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার, বিমানবাহিনী উদ্ধার কাজ করছে। সেনাবাহিনী সবার সঙ্গে সমন্বয় করছে। বন্যার পর নানামুখী সমস্যা দেখা দেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অনেক ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। শাকসবজি শেষ। ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পর আমরা উর্বর মাটি পাব। সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা বিকল্প স্থানে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করছি। সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করতে সময় দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধীরে ধীরে কমে আসছে গোমতীর নদীর পানি। সোমবার রাত ৮টায় প্রাপ্ত রেকর্ড অনুযায়ী গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা চার দিন আগে ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
মঙ্গলবার, ২৭ আগস্ট ২০২৪
‘চারদিকে থৈ থৈ পানি। বিলের মাঝে এক তলার ছাদে বসে আছেন কিছু মানুষ। কয়েকজন রয়েছেন দাঁড়িয়ে আবার কেউবা বসে। গোমতীর বাঁধ ভাঙনের চার দিন পেরিয়ে গেলেও তারা রয়েছন এখানে। দূর থেকে স্পিডবোট দেখে শুরু করেছেন চিৎকার। আর বলছেন- ও ভাই শুনছেন, আমাদের খাবার দরকার নেই। এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এমন কথা বলেই কেঁদে ফেলেন তারা।’ সোমবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল মধ্যপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। এরপরই দুটি বোট তাদের বাড়ির কাছে এগিয়ে গেলে ঝুঁকি নিয়ে ছাদ থেকে জানালা বেয়ে নেমে ওঠে পড়েন বোটে। এদিকে ত্রাণ সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবকরা ট্রাক্টরযোগে পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রাণ নিয়ে গেলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাতে না পারায় বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকেই। এতে ত্রাণের অভাবে অনেক কষ্ট করে দিনাতিপাত করছেন বানভাসিরা। এদিকে গোমতীর বাঁধ ভাঙনে প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে দুর্গম এলাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়া গ্রামে গোমতীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় একই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। পর্যায়ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো উপজেলায়। বর্তমানে তা উপজেলা ছাড়িয়ে প্লাবিত হয়েছে পাশর্^বর্তী ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলা। এছাড়া ফেনী থেকে আসা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলা। জেলার বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ত্রাণের শতশত গাড়ি আসলেও জেলার দক্ষিণাঞ্চলে চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ত্রাণ সংকট। সরেজমিনে কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দুর্গম এলাকার পানিবন্দী মানুষেরা ত্রাণের অভাবে কষ্টে আছেন। তবে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের অভাব তেমন না থাকলেও বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের সংকট রয়েছে। এদিকে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার উপরে থাকা কুমিল্লা গোমতী নদীর পানি ধীরগতিতে কমলেও বাড়ছে বাঁধ ভাঙনে প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা। তলিয়ে গেছে জেলার প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। জেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া, চৌদ্দগ্রাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা। গোমতী নদীর বাঁধ ভাঙনকবলিত বুড়িচংয়ের লড়িবাগ গ্রামের জামাল মিয়া বলেন, ঘরের সামনে বুকসমান পানি, বসার মতো অবস্থা নাই। বাড়িতেই থাকছি, চকির উপরে। কোনো রান্না নাই, খাওয়া দাওয়া নাই। এ গ্রামে ত্রাণ সহায়তা একেবারে অপ্রতুল। বানভাসি মানুষদের অভিযোগ, মূল সড়কের আশপাশে ত্রাণ দিয়েই অনেকে চলে যান। ভেতরের দিকে কেউ আসে না, তাই এখানকার মানুষ বঞ্চিত। এদিকে পানিতে ডুবে সোমবার সকালে বুড়িচংয়ের পশ্চিম সিংহ গ্রামের আল-আমিনের ছেলে মো. ইব্রাহিম (৪) ও দুপুরে আরাগ আনন্দপুর গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে হাসিবুল ইসলাম (৯) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে জেলার সার্বিক চিত্রে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন বানভাসি মানুষ।
এরই মধ্যে সোমবার দুপুরে জেলার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার বাজার সংলগ্ন সোনার বাংলা কলেজে বানভাসি মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ত্রাণ সহায়তা প্রদান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘এ এক মানবিক বাংলাদেশ। দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে দেশের সব মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। কয়েকটি এলাকা পরিদর্শন শেষে মনে হয়েছে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। দুর্গম এলাকায় পৌঁছাতে সবারই সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, আনসার, বিমানবাহিনী উদ্ধার কাজ করছে। সেনাবাহিনী সবার সঙ্গে সমন্বয় করছে। বন্যার পর নানামুখী সমস্যা দেখা দেবে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, অনেক ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। শাকসবজি শেষ। ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পর আমরা উর্বর মাটি পাব। সে লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা বিকল্প স্থানে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করছি। সবজির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন করতে সময় দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন।
এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী প্রমুখ।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ধীরে ধীরে কমে আসছে গোমতীর নদীর পানি। সোমবার রাত ৮টায় প্রাপ্ত রেকর্ড অনুযায়ী গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা চার দিন আগে ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।