প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির আরো ‘অবনতি’ হয়েছে। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফেনীতে বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। পানি কমলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি এবং কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার ও বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ভোর রাত থেকে আবারো দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বিদ্যুৎবিহীন উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি এবং ফেনী থেকে আসা জোয়ারের পানি ডুকে পড়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলার মধ্যবর্তী এবং নিচু উপজেলা বিধায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। যার ফলে ক্রমেই ভোগান্তি বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের। আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটাছুটি করছে তারা।
অনেকে চৌকির উপর চৌকি দিয়ে বসবাস করলেও খাদ্যাভাবে ‘উপবাস’ আছেন অনেক এলাকাবাসী । বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক অন্ধকারে জীবন কাটছে। উপজেলার সব স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ওই কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন না খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি।
বর্তমানে বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি এবং শিশু সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। সামাজিক সংগঠনগুলো সড়কের পাশে এবং শহরকেন্দ্রিক ত্রাণ বিতরণ করার কারণে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন অনাহারে- অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বলে জানা গেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দাবি, সরকারিভাবে স্পিডবোট এবং আরো নৌকার ব্যবস্থা করা হলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যায় পানিবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব এবং সহজ হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌমুহনী-মাইজদী এবং চৌমুহনী-লক্ষীপুর প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থানে এবং উপজেলার সব অভ্যন্তরীর পাকা ও কাঁচা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ছোট ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় নৌকাই একমাত্র ভরসা। গত দুই-তিন দিনে কিছু নৌকা এসে পৌঁছানোর কারণে তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে যোগাযোগ। এদিকে, সড়কে যানবাহনে যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায়, দোকানপাট বন্ধ থাকায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওযায় মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। কর্মহীন এবংনিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কষ্টের শেষ নেই।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (ওএন্ডএম) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যার কারণে এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেগমগঞ্জে অবস্থিত নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টেশন এবং সাবস্টেশন বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলা শহর ও তার আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে একাধিকবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে গ্রামাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় বানভাসি মানুষের মাঝে হাহাকার বেড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফরসাল জানান, জেলায় ১ সে.মি. পানি বেড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানায়, ফেনীতে বন্যাকবলিত নিম্নঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ট্রলি ও ট্রাকে করে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন মানুষজন। দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও রাজাপুর, সিন্দুরপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর, রামনগর, ইয়াকুবপুর, মাতুভূঞা, জায়লস্কর, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার কিছু স্থানে মানুষজন এখনো পানিবন্দী রয়েছেন।
তবে পানি কমলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
রশুরাম উপজেলার টেটেশ্বর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি থেকে বাঁচলেও এখন মনে হয় খাবারের জন্য মরতে হবে। রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরে থাকা চাল, ডাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পানিতে ভিজে গেছে। আবার টাকা থাকলেও সরবরাহ না থাকায় বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। জেলায় একটি এবং ৬ উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি ও বৃষ্টিপাত
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত একটি স্টেশন রয়েছে। কুমিল্লার গোমতী নদী ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনীর পরশুরামের মুহুরী নদীর পরিস্থিতি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে জানা না গেলেও, উজানের তথ্যের ভিত্তিতে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ ত্রিপুরার বাগাফায় ১০ মিলিমিটার, ত্রিপুরার কুমারঘাটে ৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার, সুনামুরায় ৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার, সিপাহীজলায় ৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার, অমরপুরে ৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং গন্ধছড়ায় ১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য হারে টেকনাফে ১০, পটুয়াখালীতে ১৫ দশমিক ৫, সাতক্ষীরায় ২১ দশমিক ৬, বরিশাল ৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহের নিম্নঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী ও ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা জেলার নিম্নঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে যার ফলে এই অঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থতির আরও অবনতি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট, বিদ্যুৎবিহীন অধিকাংশ এলাকা
বেগমগঞ্জ(নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে আবারও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিদ্যুৎবিহীন উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। আজ দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি এবং ফেনী থেকে আসা জোয়ারের পানি ডুকে পড়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মধ্যবতী এবং নিচু উপজেলা বিধায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। যার ফলে ক্রমেই ভোগান্তি বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের। আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটাছুটি করছে তারা। মঙ্গলবার আরও কয়েক পরিবার আশ্রয়ণ কেন্দ্রে গেলেও অধিকাংশ পরিবারের লোকেরা বাড়িতেই রয়ে গেছেন। অনেকে চৌকির উপর চৌকি দিয়ে বসবাস করলেও খাদ্যাভাবে উপবাস আছেন অনেক এলাকাবাসী।পল্লি বিদূৎ বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধীক বিদুৎগ্রাহক অন্ধকারে মানবেতর জীবন কাটছে। উপজেলার সব স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ওই কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন না খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন ত্রাণ তৎপরতা চালালেও তা অপ্রতুল। এছাড়া গবাদি পশু নিয়েও মহাবিপাকে রয়েছে খামারিরা। পশুগুলোর নেই খাদ্য, নেই থাকার জায়গা। এদিকে, বর্তমানে বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি এবং শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। সামাজিক সংগঠনগুলো সড়কের পাশে এবং শহরকেন্দ্রিক ত্রাণ বিতরণ করার কারণে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন অনাহারে- অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বলে জানা গেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দাবি, সরকারিভাবে স্পিডবোট এবং আরো নৌকার ব্যবস্থা করা হলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যায় পানিবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব এবং সহজ হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌমুহনী-মাইজদী এবং চৌমুহনী-লক্ষীপুর প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থানে এবং উপজেলার সব অভ্যন্তরীর পাকা ও কাঁচা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ছোট ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় নৌকাই একমাত্র ভরসা। গত দুই-তিনদিনে কিছু নৌকা এসে পৌঁছানোর কারণে তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে যোগাযোগ। এদিকে, সড়কে যানবাহনে যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায়, দোকানপাট বন্ধ থাকায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওযায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কর্মহীন এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কষ্টের শেষ নেই। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (ওএন্ডএম) মো.মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যার কারণে এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেগমগঞ্জে অবস্থিত নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টেশান এবং সাবস্টেশন বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলা শহর ও তার আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে একাধিকবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে গ্রামাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় বানভাসি মানুষের মাঝে হাহাকার বেড়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীতে। আরও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে। নোয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফরসাল জানিয়েছেন জেলায় ১ সে. মি. পানি বেড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪
প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির আরো ‘অবনতি’ হয়েছে। জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফেনীতে বন্যাকবলিত নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। পানি কমলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি এবং কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার ও বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) ভোর রাত থেকে আবারো দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বিদ্যুৎবিহীন উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি এবং ফেনী থেকে আসা জোয়ারের পানি ডুকে পড়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলার মধ্যবর্তী এবং নিচু উপজেলা বিধায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। যার ফলে ক্রমেই ভোগান্তি বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের। আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটাছুটি করছে তারা।
অনেকে চৌকির উপর চৌকি দিয়ে বসবাস করলেও খাদ্যাভাবে ‘উপবাস’ আছেন অনেক এলাকাবাসী । বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক অন্ধকারে জীবন কাটছে। উপজেলার সব স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ওই কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন না খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি।
বর্তমানে বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি এবং শিশু সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। সামাজিক সংগঠনগুলো সড়কের পাশে এবং শহরকেন্দ্রিক ত্রাণ বিতরণ করার কারণে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন অনাহারে- অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বলে জানা গেছে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দাবি, সরকারিভাবে স্পিডবোট এবং আরো নৌকার ব্যবস্থা করা হলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যায় পানিবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব এবং সহজ হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌমুহনী-মাইজদী এবং চৌমুহনী-লক্ষীপুর প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থানে এবং উপজেলার সব অভ্যন্তরীর পাকা ও কাঁচা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ছোট ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় নৌকাই একমাত্র ভরসা। গত দুই-তিন দিনে কিছু নৌকা এসে পৌঁছানোর কারণে তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে যোগাযোগ। এদিকে, সড়কে যানবাহনে যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায়, দোকানপাট বন্ধ থাকায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওযায় মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। কর্মহীন এবংনিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কষ্টের শেষ নেই।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (ওএন্ডএম) মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যার কারণে এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেগমগঞ্জে অবস্থিত নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টেশন এবং সাবস্টেশন বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলা শহর ও তার আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে একাধিকবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে গ্রামাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় বানভাসি মানুষের মাঝে হাহাকার বেড়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফরসাল জানান, জেলায় ১ সে.মি. পানি বেড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
ফেনী প্রতিনিধি জানায়, ফেনীতে বন্যাকবলিত নিম্নঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। বন্যায় প্লাবিত হওয়া পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার কোথাও কোথাও এখনো পানি রয়েছে। সড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় ট্রলি ও ট্রাকে করে গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছেন মানুষজন। দাগনভূঞা উপজেলায় বন্যার পানি কমলেও রাজাপুর, সিন্দুরপুর, পূর্ব চন্দ্রপুর, রামনগর, ইয়াকুবপুর, মাতুভূঞা, জায়লস্কর, সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার কিছু স্থানে মানুষজন এখনো পানিবন্দী রয়েছেন।
তবে পানি কমলেও বন্যাকবলিত অনেক এলাকায় খাদ্য, নিরাপদ পানির সংকট ও বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় বানভাসি মানুষের ভোগান্তি এখনো কমেনি।
রশুরাম উপজেলার টেটেশ্বর এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানি থেকে বাঁচলেও এখন মনে হয় খাবারের জন্য মরতে হবে। রান্না করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। ঘরে থাকা চাল, ডাল, ধানসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পানিতে ভিজে গেছে। আবার টাকা থাকলেও সরবরাহ না থাকায় বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না।
ফেনী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে করে খাবার পাঠানো হচ্ছে। জেলায় একটি এবং ৬ উপজেলায় ছয়টি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি সাতটি হাসপাতালে মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি ও বৃষ্টিপাত
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে।
সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত একটি স্টেশন রয়েছে। কুমিল্লার গোমতী নদী ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফেনীর পরশুরামের মুহুরী নদীর পরিস্থিতি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে জানা না গেলেও, উজানের তথ্যের ভিত্তিতে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ ত্রিপুরার বাগাফায় ১০ মিলিমিটার, ত্রিপুরার কুমারঘাটে ৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার, সুনামুরায় ৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার, সিপাহীজলায় ৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার, অমরপুরে ৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং গন্ধছড়ায় ১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য হারে টেকনাফে ১০, পটুয়াখালীতে ১৫ দশমিক ৫, সাতক্ষীরায় ২১ দশমিক ৬, বরিশাল ৭ দশমিক ৬ মিলিমিটার এবং টেকনাফে ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বিগত ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশের অভ্যন্তরীণ অববাহিকাসমূহে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত পরিলক্ষিত হয়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত আছে। ফলে বর্তমানে পূর্বাঞ্চলীয় জেলাসমূহের নিম্নঞ্চলের বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ জেলার নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী ও ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা জেলার নিম্নঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। এ সময় এ অঞ্চলের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরী, কর্ণফুলী, হালদা ও অন্যান্য প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে যার ফলে এই অঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা-দুধকুমার নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থতির আরও অবনতি, খাদ্য ও ওষুধ সংকট, বিদ্যুৎবিহীন অধিকাংশ এলাকা
বেগমগঞ্জ(নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে আবারও দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিদ্যুৎবিহীন উপজেলার অধিকাংশ এলাকা। আজ দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি এবং ফেনী থেকে আসা জোয়ারের পানি ডুকে পড়ায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মধ্যবতী এবং নিচু উপজেলা বিধায় নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। যার ফলে ক্রমেই ভোগান্তি বাড়ছে পানিবন্দী মানুষের। আশ্রয়ের খোঁজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটাছুটি করছে তারা। মঙ্গলবার আরও কয়েক পরিবার আশ্রয়ণ কেন্দ্রে গেলেও অধিকাংশ পরিবারের লোকেরা বাড়িতেই রয়ে গেছেন। অনেকে চৌকির উপর চৌকি দিয়ে বসবাস করলেও খাদ্যাভাবে উপবাস আছেন অনেক এলাকাবাসী।পল্লি বিদূৎ বন্ধ থাকায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধীক বিদুৎগ্রাহক অন্ধকারে মানবেতর জীবন কাটছে। উপজেলার সব স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলেও ওই কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষ ঠিকমতো পাচ্ছেন না খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজন ত্রাণ তৎপরতা চালালেও তা অপ্রতুল। এছাড়া গবাদি পশু নিয়েও মহাবিপাকে রয়েছে খামারিরা। পশুগুলোর নেই খাদ্য, নেই থাকার জায়গা। এদিকে, বর্তমানে বন্যা দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি এবং শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না। সামাজিক সংগঠনগুলো সড়কের পাশে এবং শহরকেন্দ্রিক ত্রাণ বিতরণ করার কারণে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোকজন অনাহারে- অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে বলে জানা গেছে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর দাবি, সরকারিভাবে স্পিডবোট এবং আরো নৌকার ব্যবস্থা করা হলে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বন্যায় পানিবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব এবং সহজ হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌমুহনী-মাইজদী এবং চৌমুহনী-লক্ষীপুর প্রধান সড়কের অধিকাংশ স্থানে এবং উপজেলার সব অভ্যন্তরীর পাকা ও কাঁচা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে থাকায় ছোট ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এসব এলাকায় নৌকাই একমাত্র ভরসা। গত দুই-তিনদিনে কিছু নৌকা এসে পৌঁছানোর কারণে তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে যোগাযোগ। এদিকে, সড়কে যানবাহনে যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায়, দোকানপাট বন্ধ থাকায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওযায় মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কর্মহীন এবং নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কষ্টের শেষ নেই। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (ওএন্ডএম) মো.মাহবুবুর রহমান জানান, বন্যার কারণে এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেগমগঞ্জে অবস্থিত নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির স্টেশান এবং সাবস্টেশন বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলা শহর ও তার আশপাশের আশ্রয়কেন্দ্রে একাধিকবার সরকারি-বেসরকারি সহায়তা সংস্থা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে গ্রামাঞ্চলে যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাতে না পারায় বানভাসি মানুষের মাঝে হাহাকার বেড়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ তৎপরতা আমাদের অব্যাহত রয়েছে। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীতে। আরও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনাও রয়েছে। নোয়াখালী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফরসাল জানিয়েছেন জেলায় ১ সে. মি. পানি বেড়েছে। এতে নতুন করে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।