alt

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

সংবাদ ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক। গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইআরআইয়ের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আইআরআই। একই সঙ্গে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে আট দফা সুপারিশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।

আন্তর্জাতিক নীতি ও নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশে পাঠায় আইআরআই। বাংলাদেশে গত ২০-২৪ অক্টোবর পর্যন্ত তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন। নির্বাচনী পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা মূল্যায়নের উদ্দেশে তারা নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মোট ২১টি বৈঠকে ৫৯ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপরই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইআরআই।

আরআইআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব প্রচেষ্টার পরও প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক। রাজনৈতিক সহিংসতার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা, স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাসের প্রবণতা এখনো রয়েছে। জনগণের আস্থা বজায় রাখতে ধারাবাহিক যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ অপরিহার্য।

আইআরআই বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছে, তরুণদের নেতৃত্বাধীন দলের আবির্ভাব ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রথমবারের মতো বিপুলসংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে সম্ভাব্য এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণে তাঁদের ধারাবাহিক ভূমিকারও আভাস আছে।

আইআরআই বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, নারীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি উগ্রপন্থী আন্দোলনের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর অসহিষ্ণু বয়ানের মতো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এসব বিষয় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক চর্চা ছাত্র আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মূল্যবোধগুলোকে কতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়, সেটা বাংলাদেশের রূপান্তরের ভবিষ্যৎ যাত্রা ঠিক করে দেবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার আন্দোলনের অঙ্গীকার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে কিনা, তা আগামী কয়েক মাসে স্পষ্ট হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার কর্মসূচির টেকসই বাস্তবায়নের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য নির্ভর করছে।

এতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের জন্য একটি নীলনকশা তুলে ধরেছে। তবে এর বাস্তবায়ন অনেকাংশেই পরবর্তী সংসদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। ধারাবাহিক সংলাপ, স্বচ্ছ নির্বাচন প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণের মাধ্যমে রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রতি জন আস্থা জোরদার করা অপরিহার্য।

রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই নারীরা এখন পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর অধিকার সুরক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশ, প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন এবং সংরক্ষিত আসনের বাইরেও অংশগ্রহণে উৎসাহ দিতে হবে।

আট সুপারিশ

আইআরআই মিশন নির্বাচন কমিশন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং অন্য নির্বাচনী অংশীজনের বিবেচনার জন্য আটটি সুপারিশ দিয়েছে। প্রাক-নির্বাচনী সময়ে এবং তারপরও এসব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা গেলে তা বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করবে।

১. রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যাতে সময়সীমা স্পষ্ট করা, বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার বজায় রাখার প্রকাশ্য অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে জুলাই সনদ প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের জন্য সুস্পষ্ট ও আইনি কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। গণভোটের সময় ও ক্রম নির্ধারণে স্বচ্ছ আইনি ব্যাখ্যা ও ব্যাপক রাজনৈতিক ঐকমত্যই নির্দেশক হওয়া উচিত। গণভোটের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া ও প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে, যা আস্থা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।

২. জুলাই সনদ সম্পর্কে জনগণের বোঝাপড়া নিশ্চিত করতে শক্তিশালী নাগরিক শিক্ষা উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তাবিত সংস্কার, বিশেষত সাংবিধানিক পরিবর্তন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে দেশব্যাপী ভোটারদের সচেতনতা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এসব শিক্ষা কার্যক্রমকে সর্বজনীন, সহজলভ্য এবং নতুন ভোটার, তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

৩. রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই নারীরা এখন পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর অধিকার সুরক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশ, প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন এবং সংরক্ষিত আসনের বাইরেও অংশগ্রহণে উৎসাহ দিতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নারীপ্রার্থী ও ভোটার উভয়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে দলগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিতে হবে।

৪. রাজনৈতিক দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করতে হবে, যাতে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, পদ্ধতিগত ও জবরদস্তি বা পক্ষপাতমুক্ত থাকে। মনোনয়ন পর্বে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারীপ্রার্থী ও প্রচারকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. নির্বাচন কমিশনকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে স্থানীয় উত্তেজনা প্রশমনে ও নির্বাচন-সংক্রান্ত সহিংসতা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। যৌথ পরিকল্পনা, স্বচ্ছ যোগাযোগ প্রক্রিয়া এবং সমন্বিত সাড়াদান প্রক্রিয়া জননিরাপত্তা ও ভোটারের আস্থা বজায় রাখতে অপরিহার্য।

৬. নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর স্বীকৃতির জন্য স্পষ্ট ও সহজলভ্য মানদ- ঠিক করতে হবে—যাতে যোগ্যতা, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পর্যালোচনার বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকে। কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে, যাতে জবাবদিহি ও আস্থা বৃদ্ধি পায়। স্বীকৃত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষতা ও অরাজনৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাদের কাজ বিশ্বাসযোগ্য হয়। নির্বাচন কমিশনকে এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতে হবে, যাতে হালনাগাদ তথ্যের বিনিময় ও কোন বিষয়ে উদ্বেগ থাকলে তার সমাধান নিশ্চিত করা যায়।

৭. নির্বাচন কমিশনকে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিতে হবে। এতে নাগরিক, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ আর্থিক প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনী বিধি যাচাই করতে পারবে। তহবিল গোপন রাখা বা ভুলভাবে উপস্থাপনের মতো লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট শাস্তি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জবাবদিহি ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য স্বাধীন নিরীক্ষা ও নাগরিক পর্যবেক্ষণকে উৎসাহিত করতে হবে।

৮. গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ প্রচার করতে হবে। সম্পাদকীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে এবং সাংবাদিকদের রাজনৈতিক বা আর্থিক চাপমুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। নাগরিক সমাজ ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে ভোটার সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে নাগরিকরা মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিত করতে পারে এবং অনলাইন আচরণের গণতান্ত্রিক প্রভাব বুঝতে পারে।

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন: প্রেস সচিব

ছবি

মেঘনা-ধনাগোদা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলেন সেতু বিভাগের সচিব

ছবি

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের রায় ‘অসৎ উদ্দেশ্যে’ দেয়া হয়েছিল দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের

হালদা নদীকে মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: দলগুলোকে দায়িত্ব দেয়ার চার দিনেও অগ্রগতি নেই

ছবি

শতভাগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনে বড় বাধা দুর্বল আইন, শক্তিশালীকরণের দাবি

ছবি

ইন্টারনেট বন্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, বিলুপ্ত হচ্ছে এনটিএমসি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৩৪ জন

ছবি

আওয়ামী লীগের চিঠিতে কোনও কাজ হবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জুলাইযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলমকে নির্যাতনের অভিযোগে জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশের চূড়ান্ত অনুমোদন

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা: হাই কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ১০ জনের

ছবি

আইসিটি মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা: “এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া”

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনবারেও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন

ছবি

নভেম্বর মাসেও কমছে না ডেঙ্গু, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

ছবি

সনদ, গণভোট: দলগুলোকে দ্রুত ‘সিদ্ধান্ত’ নেয়ার আহ্বান, নইলে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় মাধবদীতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

ছবি

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে: আইএসপিএবি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪৭ জন

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল চেয়ে আপিল

ছবি

দেশ কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর: সিইসি

tab

আইআরআইয়ের প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনও নাজুক

সংবাদ ডেস্ক

ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক। গতকাল বুধবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইআরআইয়ের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আইআরআই। একই সঙ্গে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে আট দফা সুপারিশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই)।

আন্তর্জাতিক নীতি ও নির্বাচনী বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন বাংলাদেশে পাঠায় আইআরআই। বাংলাদেশে গত ২০-২৪ অক্টোবর পর্যন্ত তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেন। নির্বাচনী পরিবেশ ও গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সম্ভাবনা মূল্যায়নের উদ্দেশে তারা নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা মোট ২১টি বৈঠকে ৫৯ জন অংশগ্রহণকারীর সঙ্গে আলোচনা করেন। এরপরই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আইআরআই।

আরআইআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব প্রচেষ্টার পরও প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ এখনো নাজুক। রাজনৈতিক সহিংসতার বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা, স্থানীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি অবিশ্বাসের প্রবণতা এখনো রয়েছে। জনগণের আস্থা বজায় রাখতে ধারাবাহিক যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ অপরিহার্য।

আইআরআই বাংলাদেশের প্রাক-নির্বাচনী পরিবেশ মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছে, তরুণদের নেতৃত্বাধীন দলের আবির্ভাব ও প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রথমবারের মতো বিপুলসংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিসরে সম্ভাব্য এক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ পরিস্থিতি দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণে তাঁদের ধারাবাহিক ভূমিকারও আভাস আছে।

আইআরআই বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, নারীর অপ্রতুল প্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি উগ্রপন্থী আন্দোলনের প্রতি ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর অসহিষ্ণু বয়ানের মতো চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এসব বিষয় বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক চর্চা ছাত্র আন্দোলন থেকে উদ্ভূত মূল্যবোধগুলোকে কতটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়, সেটা বাংলাদেশের রূপান্তরের ভবিষ্যৎ যাত্রা ঠিক করে দেবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সংস্কার আন্দোলনের অঙ্গীকার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে কিনা, তা আগামী কয়েক মাসে স্পষ্ট হবে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার কর্মসূচির টেকসই বাস্তবায়নের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য নির্ভর করছে।

এতে বলা হয়, জুলাই জাতীয় সনদ গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের জন্য একটি নীলনকশা তুলে ধরেছে। তবে এর বাস্তবায়ন অনেকাংশেই পরবর্তী সংসদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। ধারাবাহিক সংলাপ, স্বচ্ছ নির্বাচন প্রশাসন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বিশ্বাসযোগ্য অংশগ্রহণের মাধ্যমে রূপান্তর প্রক্রিয়ার প্রতি জন আস্থা জোরদার করা অপরিহার্য।

রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই নারীরা এখন পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর অধিকার সুরক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশ, প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন এবং সংরক্ষিত আসনের বাইরেও অংশগ্রহণে উৎসাহ দিতে হবে।

আট সুপারিশ

আইআরআই মিশন নির্বাচন কমিশন, সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং অন্য নির্বাচনী অংশীজনের বিবেচনার জন্য আটটি সুপারিশ দিয়েছে। প্রাক-নির্বাচনী সময়ে এবং তারপরও এসব ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা গেলে তা বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করবে।

১. রাজনৈতিক দলগুলোকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে যাতে সময়সীমা স্পষ্ট করা, বিতর্কিত বিষয়গুলোর সমাধান এবং গণতান্ত্রিক সংস্কার বজায় রাখার প্রকাশ্য অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে জুলাই সনদ প্রশ্নে গণভোট আয়োজনের জন্য সুস্পষ্ট ও আইনি কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। গণভোটের সময় ও ক্রম নির্ধারণে স্বচ্ছ আইনি ব্যাখ্যা ও ব্যাপক রাজনৈতিক ঐকমত্যই নির্দেশক হওয়া উচিত। গণভোটের উদ্দেশ্য, প্রক্রিয়া ও প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে স্পষ্টভাবে জানাতে হবে, যা আস্থা বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।

২. জুলাই সনদ সম্পর্কে জনগণের বোঝাপড়া নিশ্চিত করতে শক্তিশালী নাগরিক শিক্ষা উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তাবিত সংস্কার, বিশেষত সাংবিধানিক পরিবর্তন ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে দেশব্যাপী ভোটারদের সচেতনতা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এসব শিক্ষা কার্যক্রমকে সর্বজনীন, সহজলভ্য এবং নতুন ভোটার, তরুণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।

৩. রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই নারীরা এখন পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্ব পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে নারীর অধিকার সুরক্ষা, নেতৃত্ব বিকাশ, প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন এবং সংরক্ষিত আসনের বাইরেও অংশগ্রহণে উৎসাহ দিতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নারীপ্রার্থী ও ভোটার উভয়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে দলগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিতে হবে।

৪. রাজনৈতিক দলগুলোকে অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা জোরদার করতে হবে, যাতে প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, পদ্ধতিগত ও জবরদস্তি বা পক্ষপাতমুক্ত থাকে। মনোনয়ন পর্বে স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারীপ্রার্থী ও প্রচারকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. নির্বাচন কমিশনকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে স্থানীয় উত্তেজনা প্রশমনে ও নির্বাচন-সংক্রান্ত সহিংসতা প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। যৌথ পরিকল্পনা, স্বচ্ছ যোগাযোগ প্রক্রিয়া এবং সমন্বিত সাড়াদান প্রক্রিয়া জননিরাপত্তা ও ভোটারের আস্থা বজায় রাখতে অপরিহার্য।

৬. নির্বাচন কমিশনকে নাগরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর স্বীকৃতির জন্য স্পষ্ট ও সহজলভ্য মানদ- ঠিক করতে হবে—যাতে যোগ্যতা, মূল্যায়ন পদ্ধতি ও পর্যালোচনার বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকে। কোনো আবেদন প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে হবে, যাতে জবাবদিহি ও আস্থা বৃদ্ধি পায়। স্বীকৃত পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষতা ও অরাজনৈতিক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তাদের কাজ বিশ্বাসযোগ্য হয়। নির্বাচন কমিশনকে এসব পর্যবেক্ষক সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতে হবে, যাতে হালনাগাদ তথ্যের বিনিময় ও কোন বিষয়ে উদ্বেগ থাকলে তার সমাধান নিশ্চিত করা যায়।

৭. নির্বাচন কমিশনকে আইন সংশোধনের মাধ্যমে রাজনৈতিক তহবিল সংগ্রহ ও ব্যয়ের তথ্য জনগণের জন্য উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দিতে হবে। এতে নাগরিক, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজ আর্থিক প্রবাহ পর্যবেক্ষণ ও নির্বাচনী বিধি যাচাই করতে পারবে। তহবিল গোপন রাখা বা ভুলভাবে উপস্থাপনের মতো লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে স্পষ্ট শাস্তি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জবাবদিহি ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য স্বাধীন নিরীক্ষা ও নাগরিক পর্যবেক্ষণকে উৎসাহিত করতে হবে।

৮. গণমাধ্যমকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ প্রচার করতে হবে। সম্পাদকীয় স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে এবং সাংবাদিকদের রাজনৈতিক বা আর্থিক চাপমুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। নাগরিক সমাজ ও নির্বাচন কমিশনকে যৌথভাবে ভোটার সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে, যাতে নাগরিকরা মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য চিহ্নিত করতে পারে এবং অনলাইন আচরণের গণতান্ত্রিক প্রভাব বুঝতে পারে।

back to top